খোকন যাবে বাণিজ্যে
 বন্দে আলি মিয়া

         খোকার বাড়ি কমলডাঙার গাঁয়
শালিক ঘুঘু ডাকে সেথায় সবুজ পাতার ছায়।
সেইখানেতে ফোটে শালুক চলনবিলের জলে
পানকৌড়ি ডুব ভাঙিয়া সাঁতার দিয়া চলে,
সেই বিলেতে দাম বেঁধেছে কলমীকাজল লতা
সেথায় বসে ডাহুক বক জানায় মনের কথা।
পাল তুলিয়া ওই গাঁ পানে নৌকা ভেসে যায়
মাঝিরা সব বৈঠা ফেলে সারির গান গায়।
সে গান শুনি খোকনমণি রইতে নারে ঘরে
বেরিয়ে আসে আগড় খুলি চলনবিলের চরে।
চেয়ে থাকে চোখ তুলে সে দূরের সীমানায়
যখন বড়ো হবে খোকন যাবে সে ওই গাঁয়।
খোকন যাবে বাণিজ্যেতে দশখান যাবে না’
লোকজন যে কত যাবে নাই তার ঠিকানা।
নিদ্রাবতী কন্যা আছে কোন বা অচিন দেশে
নৌকা নিয়ে ঘুরে ফিরে সেথায় যাবে শেষে।
সোনার কাঠি ছুঁইয়ে তার ভাঙিয়ে দেবে ঘুম
তাহারে নিয়ে ঘরেতে আসি লাগিয়ে দেবে ধুম।

.        খোকন থাকে কমলডাঙার গাঁয়
ফুলের বনে প্রজাপতির সাথে সে বেড়ায়।
তালিপাতার আবডালেতে চাঁদ যে ওঠে রাতে
বাঁশের বনের দীঘল ছায়া পড়ে আঙিনাতে।
জোনাকিরা হীরার মতো জ্বলে কেবল জ্বলে
ঘুমপরীরা দল বাঁধিয়া নাচে গাছের তলে।
খোকার গায়ে কাতুকুতু দেয় সে স্বপনবুড়ি
ঘুমের ঘোরে হাসে সে তাই আঙুলে দেয় তুড়ি।
পঙ্খীরাজে চড়ে খোকন মায়ার দেশে যায়
পিছন হতে দত্যিদানা ধরতে পিছু ধায়।
বার সিপাহী খোকন দাঁড়ায় খুলে তরোয়াল
বাঁ হাতে তার ঝল্ কে ওঠে মকরমুখী ঢাল।
সড়কি হাতে বাগিয়ে ধরে খোকন যায় তেড়ে
পালিয়ে বাঁচে দৈত্যরা সব---পালায় দেশ ছেড়ে।
ঘোড়ায় চড়ে হাওয়ার বেগে এগিয়ে আরো যায়
সোনার গাছে মাণিক ফলে দেখতে সে দেশ পায়।
হীরার ফল জ্বলে সেথায় মুক্তা পাহাড় ঘিরে
কোঁচড় ভরে নিয়ে খোকা আসবে দেশে ফিরে।
মা দেখে খুব হবেন খুশি---চুমো খাবেন মুখে
গর্ব ভরে খোকন বসে হাসবে মনের সুখে।

Bande Ali Mia ।। বন্দে আলী মিঞা