প্রাঙ্গণে মোটর দাঁড়াইয়া। কাছে, দূরে বাটীর সকলেই উপস্থিত। মেয়েরা দ্বিতলের বারান্দায় দাঁড়াইয়া চোখ মুছিতেছে, বিপ্রদাস উঠিতে গিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, দ্বিজুকে দেখচি নে কেন?
কে একজন বলিল, তিনি বাড়ি নেই, কি-একটা কাজে বাইরে গেছেন। শুনিয়া বিপ্রদাস হাসিয়া বলিলেন, পালিয়েছে। সেটা শুধু মুখেই গোঁয়ার, নইলে ভীতুর অগ্রগণ্য।
বন্দনার হাত ধরিয়া দাঁড়াইয়াছিল বাসু। বলিল, তুমি আবার কবে আসবে বাবা? একটু শিগগির করে এসো।
বিপ্রদাস হাসিয়া তাহার মাথায় একবার হাত বুলাইয়া দিলেন, এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন না।
বন্দনা শাশুড়ীর পায়ের ধূলা লইল। তিনি বলিলেন, বাসু রইলো ছোট-বৌমা। আর রইলেন মন্দিরে তোমার শ্বশুরকুলের রাধাগোবিন্দজী। ফিরে কখনো এলে তোমার কাছ থেকে এঁদের নেবো। এই বলিয়া তিনি আঁচলে চোখ মুছিলেন।
বন্দনা দূর হইতে বিপ্রদাসকে প্রণাম করিল। তার পরে কাছে আসিয়া সজলচক্ষে বাষ্পরুদ্ধ স্বরে কহিল, কলকাতায় পূজোর ঘরে যে-মূর্তি একদিন আপনার লুকিয়ে দেখেছিলুম, আজ আবার সেই মূর্তিই আমার চোখে পড়লো, বড়দা। আর আমার শোক নেই, ঠিকানা আপনার নাই বা পেলুম, জানি, মনের মধ্যে যেদিন ডাক দেবো আসতেই হবে আপনাকে। যতই না না বলুন, এ কথা কোনমতেই মিথ্যে হবে না।
বিপ্রদাস শুধু একটু হাসিলেন। যেমন করিয়া ছেলের উত্তর এড়াইয়া গেলেন তেমনি করিয়া বন্দনারও।
গাড়ি ছাড়িয়া দিল।
উপন্যাস : বিপ্রদাস Chapter : 26 Page: 151
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: বিপ্রদাস
- Read Time: 1 min
- Hits: 251