ললনা একটা টাকা বাহির করিয়া দিয়া বলিল, কৃষ্ণপিসিমা বললেন, আর কাটলেও রক্ত নেই, কুটলেও মাংস নেই। তোমার বাবাকে কিছু উপায় করতে বল, না হলে আমি দুঃখী মানুষ আর টাকাকড়ি কিছুই দিতে পারব না।
সকল কাজকর্ম সেদিনের মত সম্পন্ন হইলে ললনা মাধবের নিকট আসিয়া বসিল।
মাধব বলিল, দিদি, তার কি হল?
কার কি মাধু?
মাধু একটু থামিয়া বলিল, সেখানে যাবার?
ললনাও অল্প থামিল, অল্প চিন্তা করিল, তাহার পর বলিল, সেই কথাই আজ তোকে বলব মাধু।
মাধব আগ্রহে একেবারে উঠিয়া বসিল—কি দিদি? কবে যাওয়া হবে?
আমি কাল যাব।
কাল যাবে? আর আমি?
আমি আগে যাই, তার পরে যেয়ো।
মাধব ব্যস্ততাসহ বলিল, কেন একসঙ্গেই যাই চল না !
ললনা বলিল, না, তা হলে মা বড় কাঁদবেন।
মাধব ক্ষুণ্ণ হইল—কাঁদুক গে।
ছিঃ তা কি হয়? আমি যাই।
আবার কবে আসবে?
তুমি যেদিন যাবে, সেইদিন আর একবার আসব।
তার মধ্যে আর আসবে না?
না।
আমি কবে যাব?
আমি যেদিন নিতে আসব।
আসবে?
হাঁ।
তুমি গেলে মা কাঁদবেন?
বোধ হয়।
মাধব কিছুক্ষণ নিরুত্তর থাকিয়া বলিল, দিদি, তবে কাজ নেই।
কেন ভাই?
মা কাঁদবে মনে হলে আমার ওখানে যেতেই ইচ্ছে হয় না।
তবে তুই যাবিনে?
মাধব আবার কিছুক্ষণ মৌন হইয়া রহিল, তাহার পর বলিল, হ্যাঁ যাব।
তবে আমি কাল যাব?
যেয়ো।
আমাকে না দেখতে পেলে কাঁদবি নে?
কবে আমাকে নিতে আসবে?
আর কিছুদিন পরে।
তবে যাও, আমি কাঁদব না।
মাধবের অলক্ষিতে ললনা দুই-এক ফোঁটা অশ্রু মুছিয়া ফেলিল। সস্নেহে তাহার মাথায় হাত রাখিয়া বলিল, আমি গেলে এসব কথা মাকে বলো না।
না।
মা যখন যা বলবেন, তাই শুনো—কিছুতে যেন মার মনে কষ্ট না হয়। ঠিক সময়ে ওষুধ খেয়ো।
খাব।
কিছুক্ষণ থামিয়া ললনা আবার বলিল, মাধু, সদাদাদাকে তোমার মনে আছে?
আছে।
তিনি যদি আসেন—যদি তোমাকে দেখতে আসেন—
উপন্যাস : শুভদা (অধ্যায় ১) Chapter : 13 Page: 59
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: শুভদা (অধ্যায় ১)
- Read Time: 1 min
- Hits: 202