পঞ্চম পরিচ্ছেদ
জয়া! জ্ঞান হইলে, প্রথমে চক্ষুরুন্মীলন করিয়া সুরেন্দ্রনাথ আকুলভাবে বলিয়া উঠিলেন, জয়া! পার্শ্বে মালতী বসিয়া শুশ্রূষা করিতেছিল আর চক্ষু মুছিতেছিল, তাঁহার কথার ভাবে সে আরো অধিক করিয়া চক্ষু মুছিতে লাগিল। তিনি কিন্তু তাহা দেখিলেন না; একবারমাত্র চাহিয়া ছিলেন, তাহার পর চক্ষু মুদ্রিত করিয়া রহিলেন।
অনেকক্ষণ এইভাবে থাকিয়া দীর্ঘশ্বাস মোচন করিয়া বলিলেন, জয়ার কোন সংবাদ পাওয়া যায় নাই?
নিকটে একজন পুরাতন ভৃত্য বসিয়াছিল, সে কাতরভাবে কহিল, না।
পাওয়া যায় নাই? তবে বোধ হয় সে আর বাঁচিয়া নাই।
ভৃত্য ভাবিয়া চিন্তিয়া বলিল, বোধ হয়।
সুরেন্দ্রবাবু জিজ্ঞাসা করিলেন, রাত্রি কত হইয়াছে?
প্রায় দশটা।
দশটা? তবু সংবাদ নাই?
ভৃত্য উত্তর দিল, না।
সুরেন্দ্রবাবু অধিকতর হতাশ হইয়া কপালে করাঘাত করিলেন, বলিলেন, তোমরা সবাই যাও— সমস্ত শহরে সমস্ত গঙ্গার ধারে সন্ধান কর গে।
ভৃত্য মনে মনে ভাবিল, মন্দ হুকুম নয়! মুখে বলিল, যে আজ্ঞা... পরে তথা হইতে উঠিয়া আসিয়া আপনার নির্দিষ্ট শয্যায় শয়ন করিয়া রহিল।
কক্ষে মালতী ভিন্ন আর কেহ নাই, কিন্তু সুরেন্দ্রনাথ কোন কথা কহিলেন না, নিঃশব্দে অজস্র রোদন করিতে লাগিলেন। এইভাবে সময় অতিবাহিত হইয়া চলিতে লাগিল। কামরার দেয়ালে যে ঘড়িটা ছিল সেটা আপনার মনে এগারটার পরে বারোটা, তাহার পর একটা, দুইটা, তিনটা, চারিটা— তাহার পুঁজিপাটা সমস্ত বাজাইয়া চলিতে লাগিল, কিন্তু কেহই তাহা লক্ষ্য করিতেছে বলিয়া বোধ হইল না। সুরেন্দ্রনাথ এপাশ ওপাশ করিতে লাগিলেন, মালতী পাশে বসিয়া তাঁহার যন্ত্রণা দেখিতে লাগিল, আর চক্ষু মুছিতে লাগিল; তাহারও কষ্ট হইয়াছে, লজ্জা হইয়াছে এবং ততোধিক নিজের উপর ঘৃণা হইয়াছে। ভূত ভবিষ্যৎ বর্তমান সে ভাবিয়া দেখিতেছিল।
একে ত কলিকাতার গঙ্গা সমস্ত রাত্রিই প্রায় নিদ্রা যান না, এখন আবার চারিটা বাজিয়া গিয়াছে— চতুষ্পার্শ্বে অল্প ঈষৎ বেশ সাড়াশব্দ হইতেছে।
উপন্যাস : শুভদা (অধ্যায় ২) Chapter : 5 Page: 21
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: শুভদা (অধ্যায় ২)
- Read Time: 1 min
- Hits: 124