মা। কোন্‌ কথা?

সু। কোন্‌ কথা! কালিকার কথা আজই ভুলিয়া গেলে?

মা। ভুলি নাই, মনে আছে।

সু। তা ত থাকিবেই, কিন্তু ভাবিয়া দেখিয়াছিলে কি?

মা। দেখিয়াছি। বিবাহ কিছুতেই হয় না।

সু। হয় না? সে আবার কি?

মা। সেকথা ত পূর্বেই বলিয়াছি।

সু। বলিয়াছ আমার মাথা আর মুণ্ড। বিবাহ আমি করিবই।

মা। আমি হইতে দিব না। একমাসের উপর হইল এখানে আসিয়াছি; যদি এতই মনে ছিল তবে পূর্বে করিলে না কেন? এখন সবাই জানিয়াছে তুমি মৃত জয়াবতীর স্থানে আর একজনকে কলিকাতা হইতে আনিয়াছ।

সুরেন্দ্রনাথ একটু অন্যমনস্ক হইলেন—বলিলেন, আমিও তা ভাবিতেছিলাম, হোক গে—আমি—

মা। তাহা হইলে আমি বিষ খাইব।

সুরেন্দ্রনাথ ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন, সেকথা পরে বোঝা যাইবে। আপাততঃ এখন সাতদিনের মধ্যেই সমস্ত আয়োজন করিব।

মা। তবে সাতদিনের মধ্যেই আমাকে আর দেখিতে পাইবে না।

সুরেন্দ্রনাথ বিস্মিতভাবে কিছুক্ষণ তাহার মুখপানে চাহিয়া রহিলেন, তাহার পর বলিলেন, কোথায় যাইবে?

মা। যেখানে ইচ্ছা।

সু। মরিবে?

মা। মরিব না—কেন না মরিতে আমি পারিব না। তবে যেপথে ভাসিয়াছিলাম আবার সেই পথেই ভাসিয়া যাব।

সু। তবু বন্ধন পরিবে না?

মা। না।

সেরূপ দৃঢ় স্বর শুনিয়া সুরেন্দ্রনাথ বিলক্ষণ বুঝিলেন যে, মালতী মিথ্যা কহিতেছে না, একটু চিন্তা করিলেন, পরে শুষ্ক হাস্য করিয়া বলিলেন, তুমি কি করিবে? ইহা তোমাদের স্বধর্ম! ভাল, তাই হউক।

মালতী এবার আর কোন উত্তর দিল না। মৌনমুখে এ তিরস্কার সহ্য করিয়া রহিল। বহুক্ষণ ধরিয়া কেহ কোন কথা কহিল না। পরে সুরেন্দ্রনাথ বলিলেন, বাড়িতে টাকা পাঠাইয়াছিলে?

মালতী তখন কাঁদিতেছিল—মাথা নাড়িয়া জানাইল যে পাঠান হয় নাই।

সু। কেন পাঠাও নাই?

মালতী মৌন হইয়া রহিল। এবার তিনি বুঝিলেন যে মালতী কাঁদিতেছে। বলিলেন, হাতে টাকা ছিল না?

মা। না।

সু। কিছুই ছিল না?

মা। না।

সু। এতদিন আসিয়াছ, হাতে কিছুই হয় নাই?

Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়