অবিনাশ কহিলেন, বলেন কি?
আশুবাবু তেমনিভাবেই বলিয়া উঠিলেন, ভয় নেই, ভয় নেই প্রফেসর, সমস্ত ভুলে গেছি। দীর্ঘকাল যাযাবরবৃত্তি অবলম্বন করে মেয়ে নিয়ে এখানে সেখানে টোল ফেলে বেড়াই, ঐ যা বললেন সমস্ত চিত্ততলটা একেবারে ধুয়েমুছে নিষ্পাপ নিষ্কলুষ হয়ে গেছে। ছাপছোপ কোথাও কিছু বাকী নেই। সে যাই হোক, দয়া করে ব্যাপারটা যেন আর অক্ষয়বাবুর গোচর করবেন না।
অবিনাশ হাসিয়া বলিলেন, অক্ষয়কে আপনার ভারী ভয়?
আশুবাবু তৎক্ষনাৎ স্বীকার করিয়া কহিলেন, হাঁ। একে বাতের জ্বালায় বাঁচিনে, তাতে ওঁর কৌতূহল জাগ্রত হলে এক্কেবারে মারা যাব।
মনোরমা রাগিয়াও হাসিয়া ফেলিল, বলিল, বাবা, এ তোমার বড় অন্যায়।
বাবা বলিলেন, অন্যায় হোক মা, আত্মরক্ষায় সকলেরই অধিকার আছে।
শুনিয়া সকলেই হাসিতে লাগিল; মনোরমা জিজ্ঞাসা করিল, আচ্ছা বাবা, মানুষের সমাজে অক্ষয়বাবুর মত লোকের কি প্রয়োজন নেই তুমি মনে কর?
আশুবাবু বলিলেন, তোমার ঐ প্রয়োজন শব্দটাই যে সংসারে সবচেয়ে গোলমেলে বস্তু, মা। আগে ওর নিষ্পত্তি হোক, তবে তোমার প্রশ্নের যথার্থ উত্তর দেওয়া যাবে। কিন্তু সে ত হবার নয়, তাই চিরকালই এই নিয়ে তর্ক চলেছে, মীমাংসা আর হলো না।
মনোরমা ক্ষুণ্ণ হইয়া কহিল, তুমি সব কথার জবাবই এমনি এড়িয়ে চলে যাও বাবা, কখনো স্পষ্ট করে কিছু বল না। এ তোমার বড় অন্যায়।
আশুবাবু হাসিমুখে কহিলেন, স্পষ্ট করে বলবার মত বিদ্যে-বুদ্ধি তোর বাপের নেই মণি,—সে তোর কপাল। এখন খামকা আমার ওপর রাগ করলে চলবে কেন বলত?
অজিত হঠাৎ উঠিয়া দাঁড়াইয়া কহিল, মাথাটা একটু ধরেছে, বাইরে বাইরে খানিক ঘুরে আসি গে।
আশুবাবু ব্যস্ত হইয়া বলিলেন, মাথার অপরাধ নেই বাবা, কিন্তু এই হিমে? এই অন্ধকারে?
দক্ষিণের একটা খোলা জানালা দিয়া অনেকখানি স্নিগ্ধ জ্যোৎস্না নীচের কার্পেটের উপর ছড়াইয়া পড়িয়াছিল, অজিত সেইদিকে তাঁহার দৃষ্টি আকৃষ্ট করিয়া কহিল, হিম হয়ত একটু পড়চে, কিন্তু অন্ধকার নেই। যাই, একটু ঘুরে আসি।
কিন্তু হেঁটে বেড়িয়ো না!
না, গাড়িতেই যাবো।
গাড়ির ঢাকনাটা তুলে দিয়ো অজিত, যেন হিম লাগে না।
অজিত সম্মত হইল। আশুবাবু বলিলেন, তা হলে অবিনাশবাবুকেও অমনি পৌঁছে দিয়ে যেয়ো। কিন্তু, ফিরতে যেন দেরি না হয়।
আচ্ছা, বলিয়া অজিত অবিনাশবাবুকে সঙ্গে করিয়া বাহির হইয়া গেলে আশুবাবু মৃদু হাস্য করিয়া কহিলেন, এ ছেলের মোটরে ঘোরা বাতিক দেখচি এখনো যায়নি। এ ঠাণ্ডায় চললো বেড়াতে।
উপন্যাস : শেষ প্রশ্ন Chapter : 7 Page: 39
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: শেষ প্রশ্ন
- Read Time: 1 min
- Hits: 163