তাঁকে চেনেন? না মা, তিনি বাড়ি নেই, ছেলে পড়াতে গেছেন। এলেন বলে।
আর রেণু কেমন আছে ফটিকের মা?
তেমনি, কি জানি কেন জ্বরটা ছাড়চে না মা, সকলের বড় ভাবনা হয়েছে।
কে দেখছে?
আমাদের বিনোদ ডাক্তার। এখনি আসবেন তিনি। আপনি কে মা?
আমি এঁদের গাঁয়ের বৌ ফটিকের মা, খুব দূর-সম্পর্কের আত্মীয়। কলকাতায় থাকি, শুনতে পেলুম রেণুর অসুখ, তাই খবর নিতে এলুম। কর্তা আমাকে জানেন।
তাঁকে খবর দিয়ে আসবো কি?
না, দরকার নেই ফটিকের মা, আমি নিজেই যাচ্চি ওপরে। তুমি তেল নিয়ে এসো গে।
দরোয়ান দাঁড়াইয়া ছিল, তাহাকে কহিল, তুমি মোড়ে গিয়ে দাঁড়াও গে মহাদেব, আমার সময় হলে তোমাকে ডেকে পাঠাবো, গাড়িটা যেন সেইখানেই দাঁড়িয়ে থাকে।
বহুৎ আচ্ছা মাইজী, বলিয়া মহাদেব চলিয়া গেল।
সবিতা উপরে উঠিয়া বারান্দার যে দিকটায় কর্তা রান্নার ব্যাপারে ব্যতিব্যস্ত সেখানে গিয়া দাঁড়াইল। পায়ের শব্দ কর্তার কানে গেল, কিন্তু ফিরিয়া দেখিবার ফুরসত নাই, কহিলেন, তেল আনলে? জলটা ফুটে উঠেচে ফটিকের মা, আলু-পটোল একসঙ্গে চড়াবো, না পটোলটা আগে সেদ্ধ করে নেবো?
সবিতা কহিলেন, একসঙ্গেই দাও মেজকর্তা, যা হোক একটা হবেই।
ব্রজবাবু ফিরিয়া চাহিয়া কহিলেন, নতুন-বৌ! কখন এলে? বসো। না না, মাটিতে না—মাটিতে না, বড় ধুলো। আমি আসন দিচ্চি, বলিয়া হাতের পাত্রটা তাড়াতাড়ি নামাইয়া রাখিতেছিলেন, সবিতা হাত বাড়াইয়া বাধা দিল,—করচো কি? তুমি হাতে করে আসন দিলে আমি বসবো কি করে?
তা বটে। কিন্তু এখন আর দোষ নেই—দিই না ও-ঘর থেকে একটা এনে?
না।
সবিতা সেইখানে মাটিতে বসিয়া পড়িয়া বলিল, দোষ সেদিনও ছিল, আজও আছে, মরণের পরেও থাকবে মেজকর্তা। কিন্তু সে-কথা আজ থাক। বামুন কি পাওয়া যাচ্চে না?
পাওয়া অনেক যায় নতুন-বৌ, কিন্তু গলায় একটা পৈতে থাকলেই ত হাতে খাওয়া যায় না। রাখাল কাল একজনকে ধরে এনেছিল, কিন্তু বিশ্বাস করতে পারলাম না। আবার কাল একজনকে ধরে আনবে বলে গেছে।
কিন্তু এ লোকটাও যে তোমার জেরায় টিকবে না মেজকর্তা।
ব্রজবাবু হাসিলেন, কহিলেন, আশ্চর্য নয়, অন্ততঃ সেই ভয়ই করি। কিন্তু উপায় কি!
সবিতা কহিল, আমি যদি কাউকে ধরে এনে বলি রাখতে—রাখবে মেজকর্তা?
ব্রজবাবু বলিলেন, নিশ্চয় রাখবো।
উপন্যাস : শেষের পরিচয় (অসমাপ্ত উপন্যাস) Chapter : 7 Page: 76
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: শেষের পরিচয় (অসমাপ্ত উপন্যাস)
- Read Time: 1 min
- Hits: 199