বাচ্চারা, সব তো সারি সারি বসে আছো ইশকুলের বেঞ্চিতে। জানো, তোমাদের পাছার নিচে পেতে দেওয়া ইত্যাকার চেয়ার-টেবিল-বেঞ্চির কাঠ একদা কখনো শুধু গাছ ছিল, বৃহত্তর বনভূমি ছিল, ছিল শাখা-প্রশাখার সঙ্গে পাখপাখালির, বাতাসবাহিত মূর্চ্ছনা? একটা সময় এবং একটা গাছই নাকি বলতে পারত মানুষের কমপক্ষে তিন প্রজন্মের কাহিনি, আনন্দ-বেদনার ভুলভুলাইয়া উপাখ্যান
কিন্তু মানুষের গল্প বলতে পারা গাছগুলো এখন কাঠ, মনোহারী ফার্নিচার। সবশেষে খড়ি। খড়ির অন্ত্যেষ্টির পর কয়লা। কয়লারও মুক্তি নেই যতক্ষণ সে না হচ্ছে পিওর ছাই। ভোরবেলা, গলি দিয়ে ছাইবিক্রেতার গলা ভেসে যায়…ছাই নিবেন নি…ছাই? নারীর গলায় গাছ পুড়ে যাওয়া সুর
কখন যেন আসে বিষণ্ন দুপুর
বাচ্চারা, বইপত্র আর কি পড়বে? বরং পড়ো, কবেকার কাঠের বেঞ্চিতে ব্লেড কেটে লেখা দুইটি অক্ষর…তু+ম; এর অর্থ কী? তু কে? ম কে? কোন সময়ের নামের আদ্যাক্ষর তারা? বেঞ্চকে জিজ্ঞেস করো
তবে দুঃখ হচ্ছে এই ভেবে যে, তোমাদের পাছার নিচের মরা গাছ একদিন খড়ি হয়ে পুড়ে ছাই হওয়ার আগেই তোমরা বাচ্চার বাপ হয়ে, মা হয়ে, বুড়ো হয়ে, বুড়ি হয়ে মরে যেতে পারো। আর তাই তোমাদের জন্য আমার দুঃখ নেই, গাছের জন্যই একটু আধটু দুঃখটুখ্য হয়। দুঃখগুলো উড়ে যায় পার্বতীপুর
তাকিয়ে থাকে বিষণ্ন দুপুর
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ২৯, ২০১১