সকলেই চেনে না কবিকে, কেউ কেউ চেনে তাকে
প্রচণ্ড হৈ-হল্লা, ভিড়ে অথবা বিজনে
কখনও সখনও। কেউ চিনলেও দূরে সরে যায়
কিছুই না বলে, কেউ কাছে এসে খানিক দ্বিধায়
নাম জেনে নিতে চায় পরখ করার
বাসনায়, প্রকৃতই এ লোকটা কি তিনিই যিনি
কোনও সিঁড়ি কিংবা সাঁকো ছাড়াই দূরের নীলিমায়
চলে যান সহজে বেড়ান হেঁটে নক্ষত্রের অসীম উদ্যানে?

যার এই পর্যটন বারবার কখনও আকাশে,
কখনওবা অশেষ রহস্যময় জলজ পাতালে,
তিনিই তো, পথচারী জেনে যায়, ছায়াপথ বেয়ে পুনরায়
মাটিতে আসেন নেমে, জড়িয়ে ধরেন বুকে তার
ক্ষেতের সোনালি ধান। ভেজা তাজা ঘাস আর নবান্নের ঘ্রাণ
তাকে দিয়ে লিখায় নিভৃতে
পৌঁষের প্রহরে কত গান এবং কবিতা। তাকে ঘিরে
পথিকের কৌতূহল মিটলেই মৃদু হেসে ভিড়ে মিশে যায়।
সকলেই চেনে না কবিকে, কেউ কেউ চেনে তাকে। অভিনেতা,
সফল ঔপন্যাসিক, ব্যান্ডশিল্পী , এমন কী টিভির ঘোষক
বস্তুত হ্যামিলনের বাঁশিঅলা; রাম ও রহিম
তাদের পেছনে ধায় খরা ও বর্ষার, দ্রুত পায়ে পায়ে ঘোরে।
তা ঘুরুক, নন্দিত তাদের ঘিরে সর্বত্র বাড়ুক কলরব,
ক্ষতি নেই। সকলেই চেনে না কবিকে,
কাঙ্ক্ষিত এমন তথ্য। নিঃসঙ্গতা ছাড়া
সাধকের সিদ্ধি ধু ধু নিঃসীম প্রান্তরে শুধু মায়ামৃগ, হায়!
২৫.১২.৯৮

Shamsur Rahman।। শামসুর রাহমান