বহু রক্তপাত, বহু ধ্বংস আর সৃজনের অন্তরঙ্গ
একটি শতাব্দী অবসিত হলে আরেক শতাব্দী সাবলীল
উদয়ের পথে এসে দাঁড়ায় এবং শুরু হয়
নতুনের জয়ধ্বনি, তবু পুরোনোর কিছু পরাজয় স্মৃতি,
কিছু ঝাঁঝ রয়ে যায়। মানবের দীপ্ত পরিচয়, কীর্তিগাথা
জেগে থাকে; একটি নিবাসে কয়েকটি শতকের বসবাস
আমরা দেখতে যাই কখনও কখনও। গৌরী, তুমি
দ্বিতীয় র্যা মেসিসের অস্থিচর্মসার
প্রাচীন শরীর দেখে মুখ মুহূর্তেই
ফিরিয়ে নিয়েছ জানি সুদূর মিসরে। আর আমি
অন্য কোনওখানে নেফিরেত্তির মূর্তির দিকে বিমুগ্ধ তাকিয়ে
কাটিয়ে দিয়েছি বহুক্ষণ, কল্পনায়
হয়েছি বিভোর। চেতনায়
রৌদ্রজ্যোৎস্না খেলা করে বারবার মিউজিয়ামের
প্রদর্শনী কক্ষে আর সদর সিঁড়িতে।

গৌরী, তুমি আর আমি কখনও হঠাৎ
জাদুঘরে মিলিত হয়েছি,
যদিও যুগলবন্দি সুরে মেতে পাশাপাশি
দু’জন দেখিনি কোনওদিন কোনও মমি
অথবা সুদূর শতাব্দীর তৈজসপত্তর কিংবা অলঙ্কার।

মিউজিয়ামের অডিটরিয়ামে, সিঁড়িতে পেয়েছি
সান্নিধ্য তোমার কালেভদ্রে, বলেছ নানান কথা
স্বপ্ন জাগানিয়া সুরে। তোমার মনের কথামালা
ঝরেছে মুক্তোর মতো। এইসব মুক্তো, হায়,
আমাদের চিরপ্রস্থানের পরে কখনও সঞ্চিত
থাকবে না কোনও জাদুঘরে।
১২.২.৯৯

Shamsur Rahman।। শামসুর রাহমান