ওগো খোলা জানালা, তোমার জন্মদিনটির মাথা
বুকে টেনে ঘ্রাণ নিই কিছুক্ষণ। কতবার দেখেছি তোমাকে
স্নোহার্দ্র দৃষ্টিতে আর কতবার খুব কাছে নিয়ে
গালে গাল রাখতেই আমার হৃদয়
হয়েছে উৎসব, তার হিশেব কি রেখেছি কখনও? কোনওদিন
ভুলেও ভাবিনি তুমি স্পন্দহীন জড়বস্তু কোনও।
দিবারাত্রি পেয়েছি তোমার সাড়া আর
ধূসর আমাকে সাজিয়েছে নানা রূপে ওগো খোলা জানালা আমার।

আজ যে তোমার জন্মদিন, কে আমাকে বলে গেল? বলে গেল
ইট বালি কাঠ লোহালক্কড় এবং নীল পাখি।
ওগো খোলা জানালা, তোমার জন্মদিন উপলক্ষে
স্বপ্নে-পাওয়া কেক আমি আজ কাটব না, জ্বালব না
একটিও মোমবাতি। তীক্ষ্ম ব্লেডে ঝরাব বুকের রক্তধারা,
তুমি চেটে খেও। কালপুরুষ আসবে নেমে ঘরে।

ওগো খোলা জানালা, কত যে ভালো লাগে
আমার, যখন ভাবি অন্ধকার, রোদ, জ্যোৎস্না, হাওয়া-
সবাইকে ডেকে নাও ভেতরে উদার আমন্ত্রণে। মাঝে-মাঝে
একটি কি দু’টি পাখি অথবা প্রফুল্ল প্রজাপতি
হয়েছে অতিথি ক্ষণিকের। অবশ্য কখনও কোনও
জোনাকিরা আসে না, অথচ কোনও কোনও মধ্যরাতে
তোমার ঈষৎ ইশারায়
ডানা-অলা-কেশর-দোলানো ঘোড়া আসে;
তার পিঠে চড়ে সাত আসমানে উড়ে বেড়িয়েছি
বহুবার সগৌরবে। আমার পছন্দ এই উড্ডয়ন আর
যখন হঠাৎ দেখি তুমি ধরে আছ স্নেহভরে
তার মুখ, যাকে
একবার ছুঁয়ে দেখবার বাসনায় যুগ যুগ প্রতীক্ষা মানিয়ে যায়।

কখনও নিমগ্ন গোধূলিতে ঘরে ঢুকে চমকিত
তাকিয়ে সম্মুখে দেখি মেঘনার কিছু ঢেউ তোমার সৌজন্যে খেলা করে
তোমারই শরীরে, ঘরময়, ভিজি জলহীন জলে
কী সহজে অবিরল। লাল নীল পদ্ম ভাসে, জলপরী জল

ছিটোয় আমাকে লক্ষ্য করে। কখনও-বা
প্রখর দুপুরে দ্যাখো আমি একটি কবিতা লিখে
ফেলার প্রয়াসে কয়েকটি অপ্রাপ্ত শব্দের খোঁজে
কীরকম নাজেহাল ক্রমাগত। কৌতুক তোমার
ঠোঁটে ফোটে; পরে সেই অন্বিষ্ট, অধরা পঙ্‌ক্তিমালা
ধরা দিলে সারা ঘরে বেজে ওঠে তোমার সানন্দ করতালি।

ওগো খোলা জানালা আমার,
যত অভিমান করো কিংবা রাগে ফোঁসো,
যতদিন স্পন্দমান বুক নিয়ে আছি, ততদিন
নীল আকাশের মতো নিজেকে উন্মুক্ত রেখো সকল সময়।

Shamsur Rahman।। শামসুর রাহমান