লক্ষ করি, প পাড়ার একজন তরুণের সাধনায় এক
ফুলের বাগান সৃষ্টি হয়েছে, শোভায় যার প্রতিবেশী আমি
মুগ্ধ হই, যুবকের উদ্যম, সৌন্দর্যেবোধ আমার মানসে
অন্য এক পরা বাস্তবের
অপরূপ উদ্যানের জন্ম দেয়। নিজের অজ্ঞাতে
অন্য এক জগতের বাসিন্দার জন্য প্রবেশপত্র পাই।

মাঝে মাধ্যে এই তরুণকে কে এক রূপসী তরুণীর হাত
ধ’রে হেঁটে যেতে দেখি। উভয়ের মুখে অপরূপ আভা,
ভালবাসা সে-আভার জন্মভূমি সুনিশ্চিত। যুবার সত্তায়,
যতদূর জেনেছি, প্রগতিশীল চেতনায় ধারা বয়,
মার্কসবাদে আস্থা তার এখনও উজ্জ্বল,
অটল। ফলত বস্তাপচা রাজনীতি শত হস্ত দূরে থাকে।

জনগণমনে নানা অভিযোগ জমতে জমতে অকস্মাৎ
একদিন সারা দেশ তুমুল গর্জনে
কেঁপে ওঠে-সভায়, মিছিলে
প্রতিক্রিয়াপ্রিয় প্রতিষ্ঠান বড় বেশি বিদ্ধ হয়
বক্তাদের স্ফুলিঙ্গ-ছিটানো বক্তৃতায়, মিছিলের
শ্লোগানে শ্লোগানে প্রতিষ্ঠান পতনের সম্ভাবনা প্রজ্বলিত!
এদিকে অসুস্থ, প্রায় গৃহবন্দি আমি, জেনে যাই-
আমার পাড়ার সেই প্রগতির সাধক তরুণ,-
এলো সে বাড়িতে মধ্যরাতে
ত্র্যাম্বুলেন্সে বেজায় কাতর হয়ে জখমি শরীরে-
হারালো সে এক পা গুলির
স্বৈরাচারে। কাটে তার সঙ্গীহীন পঙ্গুত্বের কঠোর জীবন!

বন্ধুদের অনেকেই আজকাল ভুলেও দেয় না দেখা, আর
সেই সুন্দরীর পদচ্ছাপ
পড়ে না বাগানে তার, পঙ্গুত্বকে মেনে নিয়ে যুবা
কখনও দূরের আকাশের নীল আর
কখনও নিজের হাতে-গড়া বাগানের দ্রুতগামী মৃত্যু দেখে
কাটায় ধূসর দিন, কাঁটাময় অমাবস্যা-রাত।
১-৪-২০০৩

Shamsur Rahman।। শামসুর রাহমান