জ্বলজ্বলে মধ্য-দুপুরে নদীর বুকে ইলিশের আচমকা
লাফিয়ে ওঠার মতো হঠাৎ আলোর ঝলকানি
হয়ে যায় কোনো কোনো স্মৃতি। সেই কাঙ্ক্ষিত আলো
আদর বুলোয় অস্তিত্বে, সুর হয়ে ঝরে, ভুলিয়ে দেয় হঠাৎ
নেকড়ের মতো ঝাঁপিয়ে-পড়া মৃত্যুচিন্তা। বস্তুত
সুন্দরের বন্দনা-গীত রচনায় কাটে নানা প্রহর।

এই যে কখনো কখনো কোনো দুপুর, গোধূলিবেলা,
নিস্তব্ধ মধ্যরাতে খাতার পাতায় ঝুঁকে-থাকা নিষ্ক্রিয়
কলম হাতে, অথচ একটি পঙ্‌ক্তিও প্রস্ফুটিত নয়, তখন
তুমি কি দেখতে পাও কয়েকটি কঙ্কাল এসে দাঁড়িয়েছে
তোমার নির্ঘুম ঘরে? তোমার অনুরোধের তোয়াক্কা না করেই
ওরা গরহাজির, অদৃশ্য চেয়ারে বসে পড়ে। ওদের বিকট,
নিঃশব্দ হাসি আমাকে ক্রুশবিদ্ধ করে যেন ঘেন্না-ছড়ানো
অবহেলায়। আমাকে বিপন্ন দেখে অধিকতর কৌতুকপ্রবণ,
নিষ্ঠুর, করাত সরবরাহ করে অদৃশ্য অপশক্তি!

আতঙ্কিত নিরুপায় আমি প্রাণপণ চিৎকার করতে গিয়ে
মূক হয়ে থাকি, এদিক ওদিক তাকাই। উদ্ধারের বাণী নয়, কতিপয়
কঙ্কালের অট্রহাসি আমার ছোট ঘরটিকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার
অভিলাষে আরো বেশি কট্রর, তুমুল হয়ে ওঠে। বেপরোয়া আমি
কঙ্কালদের তাণ্ডব থেকে মুক্তির আশা মহান কবিদের নানা
কাব্যগ্রন্থ হাতে নিয়ে ওদের ক্ষান্ত করতে গিয়ে আরো বেশি উপহাস্য,
বিড়ম্বিত হই। কঙ্কালেরা সেই সব কালজয়ী সৃষ্টিকে দূরে ছুড়ে
ফেলে মেদমাংসচর্মহীন পদতলে চটকাতে চটকাতে মাটিতে
মিশিয়ে দেয়। দু হাতে মুখ ঢেকে গোরস্তানের নৈশ স্তব্ধতায়
স্তম্ভিত, ভীত, সন্ত্রস্ত আমি নির্জ্ঞান হয়ে যাই।
১০-১০-২০০২

Shamsur Rahman।। শামসুর রাহমান