একটা মোটেই বাড়ি কিন্তু বাসিন্দা তো অনেকজনা,
একজনা সে গ্রাম্য বটে, অন্যজনা খুব শহুরে।
একই তাদের দেহের গড়ন এবং একই চলার ধরন,
এক আসরে সবাই বসে, গল্পগুজব মেলে ডানা।

একজনা সে শূন্যতাকে প্রতিযোগী ঠাউরে নিয়ে
কী-যে একটা নেশায় ঘোরে মেতে ওঠে কথা বলায়,
মনের নিচে মন লুকিয়ে নীবর থাকে অন্যজনা।
কেউ আমুদে, সঙ্গীপ্রিয় কেউবা ভীষণ লাজুক একা।

কারও কথায় জুঁইয়ের মতো রুচি ঝরে সকল সময়,
কারও মুখে অষ্টপ্রহর পাঁচমিশালি খিস্তি ছোটে।
কেউ হামেশা সত্য কথা বলছে যেন জেদের বশে,
মজার লোভে যখন তখন কেউ খামোকা মিথ্যে রটায়।
একজনা সে পাখির মেলায় বেড়ায় ঘুরে, আদর করে
ঈষদুষ্ণ পালকে হাত দেয় বুলিয়ে, পাখিগুলো
অবিশ্বাসে হঠাৎ উড়ে কক্‌খনো তো যায় না দূরে।
অন্যজনা দীর্ঘ বিলে বনবাদাড়ে ঘোর শিকারি।

কেউ প্রফুল্ল রোদের মতো সুস্থ সতেজ, কেউবা ভোগে
দারুণ গাঢ় কালো রঙের জটিল কোনো অসুস্থতায়।
নিজের মনের বন্দিশালায় কেউ পোষে এক গুপ্তঘাতক,
কেউবা যেন খেলার ঝোঁকে যুপকাঠে তার বাড়ায় মাথা।
কেউ আকাশে মেঘে মেঘে নিত্য করে ঘোড়সওয়ারি,
কেউবা ঝরায় স্বেদ কণিকা ফুটপাতেরই রুক্ষ ধূলায়।
নিজস্ব তার শস্য নিয়ে গানের স্রোতে কেউ ভেসে যায়,
কেউবা বলে আকাল আমায় নাকাল করে বারেবারে।

একটা মোটেই বাড়ি কিন্তু বাসিন্দা তো অনেকজনা।
এই বাড়িটার বাসিন্দারা একই সঙ্গে বাইরে বেরোয়া,
একই সঙ্গে ফিরে আসে, ঘুমিয়ে পড়ে এক বিছানায়।
কতটুকু সত্য কে যে বলা হায়রে সহজ তো নয়।

Shamsur Rahman।। শামসুর রাহমান