আমার সাথে আমার বাবার সম্পর্ক খারাপ আপনার জন্য

কলেজের সেকেন্ড ইয়ারে উঠেই আমি বুঝতে পারি

জীবনটা মাধ্যমিক পরীক্ষা নয়

ঈশান থেকে এসপ্লানেড পর্যন্ত

একটা বিরাট আয়না

তাতে খাদ্য এবং খাদকের মুখ

কিন্তু দুজনের একজনও জানে না

কে খাবে আর কে খেতে দেবে

 

কলেজে ঢুকতেই একটি চমৎকার ছেলে এসে দাঁড়িয়েছিল আমার 

চৌকাঠে

দুটো স্বপ্নের চোখ, এলোমেলো চুল

হাতে পেঙ্গুইন পেপারব্যাগ

ঠোঁটে সারাক্ষণ বগ্ম্যান, কুরোসোয়া, আইনস্টাইন

 

কিন্তু একটা ফিল্ম ফেস্টিভাল থেকে আরেকটি ফিল্ম ফেস্টিভালে

পৌঁছতেই বুঝতে পারলাম

আমি আধখাওয়া এক আপেল

এবং চমৎকার সেই ছেলেটি – আমার এক বছরের প্রেমিক

আরেকটি আধখাওয়া আপেলের সঙ্গে বকখালিতে ধরা পড়ল

 

থানা, পুলিশ, লোকাল কমিটি সব যথাযোগ্য মর্যাদায় পার হয়ে

একটি বৃষ্টির দুপুরে সে আমাকে বলল,

“হাই বেবি, আই রিয়েলি লাভ ইউ

চল্ , এবার আমরা তিনজন মিলে চাঁদিপুর যাব”

 

চড় কষাতে পারিনি সেদিন

ঘর বন্ধ করে কেঁদেছিলাম

চোখের জলে আপনার গীতবিতানের সাইত্রিশ নম্বর পৃষ্ঠাটা ভিজে গেল

ভিজে গিয়েছিল সেই গানটা

“তুমি যে চেয়ে আছ আকাশ ভরে”

 

এরপর আমার জিন্সের জ্যাকেট, টাইটান ঘড়ি, আমার ইকনমিক্স অনার্স

সমস্ত কিছুকেই আকাশ মনে হয়েছিল

আপনাকে আর আপনার আকাশকে এত ভালোলাগেনি এর আগে

 

রাত জেগে এরপর গীতবিতান পড়েছি

এত আকাশ আপনার গানে?

কি করেছেন আকাশ নিয়ে?

তবে কি সত্যিই আমার মুক্তি এই আকাশে?

 

ঠিক এই সময়টায় বাবার সঙ্গে আমার সব শেষ হয়ে গেল

বাবা বললেন,

মূর্খ – তুই মেয়ে না হয়ে ছেলে হলে

আমার ভয় ছিল না

এত গীতবিতান পড়ার কি আছে?

 

রাবিশ!

 

সেদিনই বাড়ি ছেড়ে চলে যাব ভেবেছিলাম – পারিনি

সেদিনই ঘুমের বড়ি খাব ভেবেছিলাম – পারিনি

তার বদলে বাবার মুখের ওপর দাঁড়িয়ে বললাম –

তুমি আমার বাবা নও

তুমি আমার বাবা নও

অন্য একজন কোথাও আছেন, তিনিই আমার বাবা

 

ওপরতলার রাজনীতি করা বাবার অহং সাঙ্ঘাতিক

ঠাস করে আমাকে চড় মেরে বললেন,

তোমার যা লাগবে টাকা পয়সা সব পাবে

তবে আজ থেকে তুমি আর আমাকে পাবে না

মনে রেখ।

 

সামনেই ফাইনাল

কি হবে জানিনা

কিন্তু ভালো আমাকে করতেই হবে –

নিজের পায়ে দাঁড়াতেই হবে

 

চোখের জলে ভিজে গেছিল সেদিন পৃষ্ঠাগুলো

সাইত্রিশ, আটান্ন, দুশো বারো, তিপ্পান্ন

পৃষ্ঠাগুলো যেন আমার ভেজা চোখের মতো

আমি হাত দিই ভেজা পাতায়

আর কে যেন হাত রাখে আমার পিঠে

কবে – কবে সেই হাত আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরবে?

 

হ্যাঁ আপনি – আপনিই সেই গীতবিতানের লেখক

আমার মতো অজস্র মেয়েকে আপনি আকাশ দিয়েছেন , 

হেমন্ত দিয়েছেন, শ্রাবন দিয়েছেন

কিন্তু আপনি যেমন দিয়েছেন নিয়েছেনও তেমনি

 

তবে নিন আরো নিন

আরো আরো

আপনি যত নেবেন আমি তত ভালো থাকব

 

আমাকে নিঙরে নিন।

 

আমাকে আমার বাবা বোঝেনি

আপনার আকাশ তাই আমার আকাশ

 

আচ্ছা আপনি কখনও আমায় ভুল বুঝবেন না তো

Subodh Sarkar ।। সুবোধ সরকার