নিঃশেষ না হবার অন্য হেতু আছে, রমেন। কারণ, মানুষকে রাখার ভার পুরুষের ’পরে নেই, সে আছে আর একজনের ’পরে। তাই ত দেখি নরনারী এতকাল একসঙ্গে থেকেও আজও সন্ধির একটা ফরমূলা খুঁজে পেল না, কোন্ পথে দুঃখের নিরসন, সে দিকটাই তাদের চোখে পড়লো না, চিরদিন কানা হয়ে রইলো।
রমেন আস্তে আস্তে বললে, মণি, কেন জানিনে, কিন্তু মনে হচ্ছে আজ তোমার মনটা অত্যন্ত উদ্ভ্রান্ত হয়ে আছে।
উদ্ভ্রান্ত? হতে পারে। কিন্তু একটা প্রশ্নের হঠাৎ জবাব পেয়ে গেলাম। ভেবেছিলাম ওদের অনুরোধ শুনবো না, বিবাহ-বিচ্ছেদের প্রস্তাব আমার মুখ দিয়ে বার হবে না, কিন্তু এখন স্থির করলাম, এ প্রস্তাব আমি নিজেই আনবো।
রমেন একটু হেসে বললে, সে না হয় করলে, কিন্তু জিনিসটা ভাল কি মন্দ, মানুষের অভিজ্ঞতায় এর দাম কি নির্দিষ্ট হয়েছে, তার কি জ্ঞান তোমার আছে মণি?
মণি বললে, কোন জ্ঞানই নেই,—ইতিহাস ত জানিনে,—আর যেটুকু আছে সে-ও তুমি ইচ্ছে করলে খণ্ড খণ্ড করে দিতে পারো, কিন্তু তোমার কথা আমি শুনবো না। বরঞ্চ এই কথাই জোর করে বলবো, আমার অন্তরের সত্য অনুভূতি আমাকে সত্য পথ দেখিয়ে দেবে। দেবেই দেবে।
সত্য অনুভূতি পেলে কখন?
এইমাত্র। তুমি পরিহাসের ছলে যা বললে তার মধ্যে।
সে কি কখনো হয়?
হয় রমেন, হয়। গল্প শোনোনি, আমাদের লালাবাবু মেছুনির মুখের একটা উড়ো কথা শুনে সংসারত্যাগ করে গিয়েছিলেন। অথচ কত লোক ত দিন-রাত শোনে, তারা কি ঘরদোর ফেলে সন্ন্যাসী হয়ে যায়? কিন্তু যে শুনতে পায় সে-ই শুনতে পায়।
মণি, তুমি যে এতবড় পাগল আমার ধারণা ছিল না।
মণি হেসে বললে, পাগলই ত। নইলে কি দেশের জন্যে জেল খাটতে যেতে পারতাম ? প্রাণ দিতেও রাজী ছিলাম। তুমি পারো?
সে পরীক্ষা ত আমাকে দিতে হয়নি, মণি!
পরীক্ষা দেবার দিন যদি আসে পারবে দিতে?
রমেন হঠাৎ এ প্রশ্নের জবাব খুঁজে পেলে না। এমনি সময়ে দোরের বাইরে থেকে ডাক এল, মণি, আসতে পারি কি?
মণি খুশী হয়ে সাড়া দিলে, আসুন আসুন, জলধিবাবু! (বিচিত্রা – বৈশাখ ১৩৪৩)
[অসম্পূর্ণ]
পুস্তকাকারে অপ্রকাশিত রচনা : আগামীকাল Chapter : 3 Page: 20
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 214