বিন্দু অপ্রতিভ হইয়া হাসিয়া বলিল, মতলব ঘোরেনি, দিদি। কিন্তু ভাবচি আড়ালে থাকা এক, আর চোখের সামনে এক। পোড়োরা সব দুষ্ট ছেলে, ওকে ছোটটি পেয়ে যদি মারধর করে।
অন্নপূর্ণা বলিলেন, করলেই বা। ছেলেরা মারামারি করেই। তা ছাড়া সকলের ছেলেই সমান ছোটবৌ, তাদের বাপ-মা প্রাণ ধরে যদি পাঠশালে দিতে পেরে থাকে, তুই পারবি নে কেন?
পরের সঙ্গে তুলনা করাটা বিন্দু একেবারে পছন্দ করিত না। তাই বোধ করি মনে মনে অসন্তুষ্ট হইয়া বলিল—তোমার এক কথা দিদি! ধর, কেউ যদি ওর চোখে কলমের খোঁচাই দিয়ে দেয়—তা হলে?
অন্নপূর্ণা তাহার মনের ভাব বুঝিয়া হাসিয়া বলিলেন, তা হলে ডাক্তার দেখাবি। কিন্তু সত্যি বলচি তোকে, আমি ত সাত দিন সাত রাত বসে ভাবলেও খোঁচাখুঁচির কথা মনে করতে পারতুম না। এত ছেলে পড়ে, কে কার চোখে কলমের খোঁচা দেয় তাও ত শুনিনি।
বিন্দু কহিল, তুমি শোননি বলেই কি এমন কান্ড হতে পারে না? দৈবাতের কথা কে বলতে পারে? আচ্ছা, বেশ ত তুমি একবার বলেই দেখ না, তারপর যা হয় হবে।
অন্নপূর্ণা গম্ভীর হইয়া বলিলেন, যা হবে, তা দেখতেই পাচ্ছি। তুই একবার যখন ধরেচিস তখন কি আর না করে ছাড়বি? কিন্তু আমি অমন অনাছিষ্টি কথা মুখে আনতে পারব না। আর তুইও ত কথা ক’স—নিজেই বল গে না।
এবার বিন্দু রাগ করিল, বলিল, বলবই ত। এত দূরে রোজ রোজ আমি ছেলে পাঠাতে পারব না—এতে কারুর ভাল লাগুক, আর না লাগুক, আর এতে ওর বিদ্যে হোক আর নাই হোক। হাঁ কদম, তোকে না বললুম সিদে দিয়ে আসতে? হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছিস যে?
তাহার ক্রুদ্ধভাব লক্ষ্য করিয়া অন্নপূর্ণা ব্যস্ত হইয়া বলিলেন, সিদে দিচ্চি। একেবারে এত উতলা হোসনে ছোটবৌ! আচ্ছা, ছেলে কি তোর বড় হবে না? তুই কি চিরকাল তাকে আঁচল-চাপা দিয়ে রাখতে পারবি? এটা ভাবিস না কেন?
ছোটবৌ সে কথার জবাব না দিয়া বলিল, কদম, সিদে দিয়ে গুরুমশায়ের পায়ের ধূলো একটু তার মাথায় দিয়ে, ছেলে ফিরিয়ে আন গে। তাঁকেও একবার বিকেলবেলা আসতে বলিস।—যে বুঝবে না, তাকে আর বোঝাব কি করে? বলচি ছোটটি পেয়ে যদি কেউ মারধর করে,—না, চিরকাল কি তুই আঁচল-চাপা দিয়ে রাখতে পারবি? কি পারব, না পারব, সে পরামর্শ ত নিতে আসিনি।
গল্প : বিন্দুর ছেলে Chapter : 2 Page: 5
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 199