পরদিন প্রাতঃকালেই যাদব ছোটবধুর যাইবার অনুমতি দিয়া একখানি পত্র পাঠাইয়া দিলেন। বিন্দুর পিতা পীড়িত, সে যেন অবিলম্বে যাত্রা করে। বিন্দু সজল-চোখে গাড়িতে গিয়া উঠিল।
বামুনঠাকরুন গাড়ির কাছে আসিয়া বলিলেন, বাপকে ভালো দেখে শিগগির ফিরে এসো মা।
বিন্দু নামিয়া আসিয়া তাঁহার পদধূলি লইতেই তিনি অত্যন্ত সঙ্কুচিত হইয়া পড়িলেন।
বিন্দুকে এমন নত, এমন নম্র হইতে কেহ কোনদিন দেখে নাই। পায়ের ধূলা মাথায় তুলিয়া লইয়া বিন্দু কহিল,—না মেয়ে, যাই হোক, তুমি ব্রাহ্মণের মেয়ে, বয়সে বড়—আশীর্বাদ কর, যেন আর ফিরতে না হয়, এই যাওয়াই যেন আমার শেষ যাওয়া হয়।
বামুনমেয়ে তদুত্তরে কিছুই বলিতে পারিলেন না—বিন্দুর শীর্ণ ক্লিষ্ট মুখখানির পানে চাহিয়া কাঁদিয়া ফেলিলেন।
এলোকেশী উপস্থিত ছিলেন, খনখন করিয়া বলিয়া উঠিলেন, ও কি কথা ছোটবৌ? আর কারো বাপ-মায়ের কি অসুখ হয় না?
বিন্দু জবাব দিল না, মুখ ফিরাইয়া চোখ মুছিল। কিছুক্ষণ পরে বলিল,—তোমাকেও নমস্কার করি ঠাকুরঝি—চললুম আমি।
ঠাকুরঝি বলিলেন, যাও দিদি, যাও। আমি ঘরে রইলুম, সমস্তই দেখতে শুনতে পারব।
বিন্দু আর কথা কহিল না, কোচম্যান গাড়ি ছাড়িয়া দিল।
অন্নপূর্ণা বামুনঠাকরুনের মুখে এ কথা শুনিয়া চুপ করিয়া রহিলেন, ইতিপূর্বে কোন দিন বিন্দু অমূল্যকে ছাড়িয়া বাপের বাড়ি যায় নাই—আজ এক মাসের উপর হইল, সে একবার তাহাকে চোখের দেখা দেখিতে পায় নাই—তাহার দুঃখ অন্নপূর্ণা বুঝিলেন।
রাত্রে অমূল্য বাপের কাছে শুইয়া আস্তে আস্তে গল্প করিতেছিল।
নীচে প্রদীপের আলোকে কাঁথা সেলাই করিতে করিতে অন্নপূর্ণা সহসা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া বলিয়া উঠিলেন, ষাট! ষাট! যাবার সময় বলে গেল কিনা এই যাওয়াই যেন শেষ যাওয়া হয়! মা দুর্গা করুন, বাছা আমার ভালয় ভালয় ফিরে আসুক।
কথাটা শুনিতে পাইয়া যাদব উঠিয়া বসিয়া বলিলেন, আগাগোড়াই কাজটা ভাল করনি বড়বৌ! আমার মাকে তোমরা কেউ চিনলে না!
অন্নপূর্ণা বলিলেন, সেও ত একবার দিদি বলে এল না! তার ছেলেকেও ত সে জোর করে নিয়ে যেতে পারত, তাও ত করলে না! সেদিন সমস্তদিন খাটুনির পর ঘরে ফিরে এলুম—উলটে কতকগুলো শক্ত কথা শুনিয়ে দিলে!
গল্প : বিন্দুর ছেলে Chapter : 8 Page: 44
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 223