রমেশ। হাঁ, রমার মাসীর মুখেও একথা শুনছিলাম।

বেণী। এই হোলো তার জাতক্রোধ। কিন্তু মেয়েমানুষের এত দর্প আমারও সহ্য হল না। আমিও রেগে বলে ফেললাম, আচ্ছা, ফিরে আসুক সে, তার পরে এর বিচার হবে। কিন্তু খুন করা যে তার অভ্যেস ভাই। তোমাকে খুন করতে আকবর লেঠেলকে পাঠিয়েছিল মনে নেই? কিন্তু তোমার কাছে ত চালাকি খাটেনি—তুমিই উলটে শিখিয়ে দিয়েছিলে! কিন্তু আমাকে খুন করা আর শক্ত কি?

রমেশ। তার পরে?

বেণী। তার পরে কি আর মনে আছে ভাই? কে কিসে করে যে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল, সেখানে কি হল, কে দেখলে কিছুই জানিনে। এ যাত্রা যে রক্ষে পেয়েচি সে কেবল মায়ের পুণ্যে। এমন মা কি আর আছে রমেশ!

[রমেশের মুখে ও মনের মধ্যে কত কি যে হইতে লাগিল
তাহার নির্দেশ নাই,—কিন্তু সে একটা কথাও কহিল না]

বেণী। গাড়ি তৈরি ভাই। আর দেরি নয়,—বাড়ি চল্‌। মায়ের কাছে তোরে একবার পৌঁছে দিয়ে আমি বাঁচি।

রমেশ। চলুন। জেলের মধ্যেই শুনেছিলাম রমা নাকি বড় পীড়িত?

বেণী। ভগবানের দণ্ড রমেশ—এ যে তাঁরই রাজ্য, এ কি সবাই মনে রাখে? জগদীশ্বর! চল ভাই, ঘরে চল।

[সকলের প্রস্থান]

পঞ্চম দৃশ্য

রমার কক্ষ

[রমেশ প্রবেশ করিয়া রমাকে দেখিয়া চমকিয়া গেল]

রমেশ। তোমার এত অসুখ করেচে তা ত আমি ভাবিনি!

[রমা শয্যা হইতে কোনমতে উঠিয়া রমেশের পায়ের কাছে প্রণাম করিল ]

রমেশ। এখন কেমন আছ রানী?

রমা। আমাকে আপনি রমা বলেই ডাকবেন।

রমেশ। বেশ তাই। শুনেছিলাম তুমি অসুস্থ ছিলে। এখন কেমন আছ এই খবরটাই জানতে চাচ্ছিলাম। নইলে, নাম তোমার যাই হোক, সে ধরে ডাকবার আমার ইচ্ছেও নেই, আবশ্যকও নেই।

রমা। এখন আমি ভাল আছি। আমি ডেকে পাঠিয়েচি বলে আপনি হয়ত খুব আশ্চর্য হয়েচেন, কিন্তু—

রমেশ। না, হইনি। তোমার কোন কাজে আশ্চর্য হবার দিন আমার কেটে গেছে। কিন্তু ডেকে পাঠিয়েচ কেন শুনি?

রমা। (ক্ষণকাল অধোমুখে নিরুত্তর হইয়া থাকিয়া) রমেশদা, আজ দুটি কাজের জন্যে তোমাকে কষ্ট দিয়ে ডেকে এনেচি। কত যে অপরাধ করেচি সে ত জানি, তবুও আমি নিশ্চয় জানতাম তুমি আসবেই। আর আমার এই শেষ অনুরোধ-দুটিও অস্বীকার করবে না।

Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়