তাকে জবাব দিলেন আপনি, কিন্তু আমার নাম করতে গেলেন কেন?

বেশ কথা! তুমি সেক্রেটারী, তোমার ঘোরতর আপত্তি তাকে না জানিয়ে চলে?

শুধু আমার আপত্তি, আপনার নয়?

নিশ্চয়!

জানিয়েছেন তাকে?

নিশ্চয় জানিয়েছি।

জলধির মুখে আর কথা যোগালো না, শুধু স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো।

এককড়ি খসড়ার কাগজগুলো একে একে গুছিয়ে নিয়ে জলধির পানে এগিয়ে দিলে, বললে, পড়ে দেখ।

লেখা শেষ হোক না দাদা, ঢের সময় আছে।

তার ঔদাসীন্যে এককড়ি বিস্ময়াপন্ন হয়ে বললে, কোথায় ঢের সময়! ছাপতে হবে, যেখানে যত মেম্বার আছে সার্‌কুলেট করতে হবে,—গড়িমসির ত কাজ নয়। এই দিকটায় আমার চোখ খুলে দিয়ে তুমি মস্ত কাজ করেছ, জলধি। সত্যই ত। চরিত্রই যদি না রইলো ত রইলো কি? সঙ্ঘ দাঁড়াবে কিসের ’পরে? এখন থেকে এই সুনামই হবে আমাদের সবচেয়ে বড় asset—সত্যিকার মূলধন। সঙ্ঘ-সংক্রান্ত যে যেখানে আছে—পেড্‌ বা আনপেড্‌—সকলেই বুঝবে এদিকে সেক্রেটারীর লেশমাত্র গাফিলতি নেই। সে মণির মতো কাজের লোককেও বিদায় দিতে একমুহূর্ত বিলম্ব করেনি। আমি তোমাকে congratulate করি জলধি।

জলধি অন্তরে জ্বলে গিয়ে বললে, আপনার ইচ্ছেটা কি মণির ব্যাপার আমরা ঢাক পিটে সর্বত্র প্রচার করি?

তা না হোক, কিন্তু দলের লোকে ত জানবেই, চাপা দেবে কি করে, আর দিয়েই বা লাভ হবে কি?

অর্থাৎ, কল্যাণ-সঙ্ঘের পক্ষ থেকে মণিমালার এই হবে বিদায় অভিনন্দন! না দাদা, মাপ করুন, রাজী হতে পারলাম না। আর কিছু না মনে করি, সঙ্ঘের কল্যাণে এই তিনটে বছর তার অবিশ্রান্ত খাটুনি ভুলতে পারবো না।

ভোলার কথা নয় হে জলধি, কিন্তু উপায় কি? আমাদের কাগজপত্রে মণির বদলে অজয়ের দস্তখত দেখলে দলের লোকে কারণটা জানতে চাইবেই, তখন ঢাকবে কি করে?

জলধি কথাটা ভাল বুঝতে পারলে না,—অজয় আবার কে এলো দাদা?

এককড়ি বললে, সেই ত মণির জায়গায় কাজ করবে। Economics-এ এম. এ., একটুর জন্যে first class-টা গেছে, নইলে যে-কোন কলেজে দেড়-শ’ টাকা তার ঘোচায় কে? মাইনে বাড়াতে হয়নি,—পঞ্চাশ টাকাতেই রাজী হলো। কুড়িয়ে পাওয়া বললেই হয়।

জলধির রাগের সীমা রইলো না, কিন্তু যথাসাধ্য চেপে রেখে প্রশ্ন করলে—রত্নটি কুড়িয়ে পেলেন কখন?

আজ সকালেই। অজয়ের বাপের সঙ্গে সামান্য পরিচয় ছিল, বছর-খানেক ধরে সে ছেলের জন্যে একটা সুপারিশ-চিঠি চাইছিল মামার ওপরে। নানা কারণে দিতে পারিনি, তাই—

তাই মামার দায় আমার কাঁধে চাপালেন?

না হে না। সে কাল থেকে যখন অফিসের ভার নেবে, তার কাজ দেখে তুমি খুশী হবে। মণির চেয়ে অযোগ্য হবে না বলে দিলাম।

Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়