পাঁচ
বছর দুই গত হইয়াছে। নির্মলা অনুসন্ধান করিয়া জানিয়াছে যে, খবরের কাগজের খবর ঝুটা নয়। লাবণ্য যথার্থই পাবনার মেয়ে-ইস্কুলের পরিদর্শক হইয়া আসিতেছে।
আজ হরিশ একটু সকাল সকাল আদালত হইতে ফিরিয়া ছোটবোন উমাকে জানাইল যে, রাত্রের ট্রেনে তাহাকে বিশেষ জরুরি কাজে কলিকাতায় যাইতে হইবে, ফিরিতে বোধ হয় দিন-চারেক বিলম্ব হইবে। বিছানা এবং প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড় যেন চাকরকে দিয়া ঠিক করিয়া রাখা হয়।
দিন-পনরো হইল স্বামী-স্ত্রীতে বাক্যালাপ বন্ধ ছিল।
রেলওয়ে স্টেশন দূরে,—রাত্রি আটটার মধ্যেই মোটরে বাহির হইয়া পড়িতে হইবে। সন্ধ্যার পরে সে মকদ্দমার দরকারী কাগজপত্র হ্যান্ডব্যাগে গুছাইয়া লইতেছিল, নির্মলা আসিয়া প্রবেশ করিল।
হরিশ মুখ তুলিয়া চাহিয়া দেখিল, কিছু বলিল না।
নির্মলা ক্ষণকাল মৌন থাকিয়া প্রশ্ন করিল, আজ কলকাতায় যাচ্চ নাকি?
হরিশ কহিল, হুঁ।
কেন?
কেন আবার কি? মক্কেলের কাজ—হাইকোর্টে মকদ্দমা আছে।
চল না, আমিও তোমার সঙ্গে যাই।
তুমি যাবে? গিয়ে কোথায় থাকবে শুনি?
নির্মলা কহিল, যেখানে হোক। তোমার সঙ্গে গাছতলায় থাকতেও আমার লজ্জা নেই।
কথাটি ভাল, এবং সতী স্ত্রীরই উপযুক্ত। কিন্তু হরিশের সর্বাঙ্গে যেন বিছুটি মাখাইয়া দিল। কহিল, তোমার লজ্জা না থাক, আমার আছে। আমি গাছতলার পরিবর্তে আপাততঃ কোন এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে উঠব স্থির করেছি।
নির্মলা বলিল, তাহলে ত ভালই হ’লো। তাঁর বাড়িতেও স্ত্রী আছে, ছেলে-মেয়ে আছে, আমার কোন অসুবিধে হবে না।
হরিশ কহিল, না, সে হবে না। বলা নেই কহা নেই, বিনা আহ্বানে পরের বাড়ি তোমাকে নিয়ে গিয়ে আমি উঠতে পারব না।
নির্মলা বলিল, পারবে না সে জানি, আমাকে সঙ্গে নিয়ে লাবণ্যর ওখানে ওঠা যায় না।
হরিশ ক্ষেপিয়া গেল। হাত-মুখ নাড়িয়া চিৎকার করিয়া কহিল, তুমি যেমন নোংরা তেমনি মন্দ। সে বিধবা ভদ্রমহিলা, আমিই বা সেখানে যাব কেন, সেই বা আমাকে যেতে বলবে কেন? তা ছাড়া, আমার সময় বা কৈ? কলকাতায় গিয়ে পরের কাজে ত নিঃশ্বাস ফেলবারও ফুরসত পাব না।
পাবে গো পাবে।—এই বলিয়া নির্মলা ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল।
দিন-তিনেক পরে হরিশ কলিকাতা হইতে ফিরিয়া আসিলে স্ত্রী কহিল, চার-পাঁচ দিন বলে গেলে, তিন দিনেই ফিরে এলে যে বড়?
হরিশ কহিল, কাজ চুকে গেল, চলে এলাম।
গল্প : সতী Chapter : 5 Page: 10
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 229