যজ্ঞ। সেই জন্যেই ত সুরো জোর করে বিয়ে দিলে।
পিসিমা। সুরো বুঝি বিয়ে দিয়েচে?
যজ্ঞ। সেই ত দিলে, কিন্তু কপাল মন্দ—বৌ নিয়ে ঘর করা চলে না।
পিসীমা। কেন রে?
যজ্ঞ। জানো ত পিসীমা, আমার নর-গণ, বৌয়ের হ’ল রাক্ষস-গণ। একসঙ্গে থাকলে গণৎকার বলে—বাঁচি না বাঁচি।
পিসীমা। ষাট ষাট, সে কথা—
যজ্ঞ। তখন তাড়াতাড়ি এসব দেখা হয়নি, এখন ত তোমার কাছে থাকবে, মাসে পঞ্চাশ টাকা পাঠাব, তাতে চলবে না পিসীমা?
পিসীমা। হ্যাঁ তা চলে যাবে। পাড়াগাঁয়ে বিশেষ কষ্ট হবে না। আহা, চাঁদের মত মেয়ে, ডাগর হয়েচে, হাঁরে যজ্ঞ, একটা শান্তি-স্বস্ত্যয়ন করলে হয় না?
যজ্ঞ। হতে পারে। আমি ভট্টাচার্যের মত নিয়ে যা ভাল হয় তোমাকে জানাব।
পিসীমা। তা জানাস বাছা।
সন্ধ্যার সময় বৌকে কাছে ডাকিয়া যজ্ঞদত্ত কহিল, তবে তুমি এখানেই থাক।
সে ঘাড় নাড়িয়া বলিল, আচ্ছা।
যা তোমার দরকার হবে আমাকে জানিয়ো।
আচ্ছা।
তুমি চিঠি লিখতে জান?
না।
তবে কি করে জানাবে?
নববধূ গৃহপালিতা হরিণীর মত চক্ষু দুইটি স্বামীর মুখের উপর রাখিয়া চুপ করিয়া রহিল। যজ্ঞদত্তও মুখ ফিরাইয়া চলিয়া গেল।
পিসীমার বাটীতে বৌ ভোরে উঠিয়া কাজ করিতে লাগিল। বসিয়া থাকিতে সে শিখে নাই, নূতন লোক হইলেও সে পরিচিতের মত ঘরকন্নার কাজ করিতে শুরু করিল। দুই-চার দিনেই পিসীমা বুঝিলেন, এমন মেয়ে সবাই গর্ভে ধরে না।
বৌয়ের অনেক গহনা, পাড়াসুদ্ধ ঝেঁটিয়ে লোক তা দেখতে আসে।
কে দিয়েচে গা? তোমার বাপ?
না, বাপ-মা আমার নাই, ঠাকুরঝি দিয়েচেন।
দু-একজন সমবয়সীর সহিত ভাব হইলে তাহারা খুঁটিয়া খুঁটিয়া কথা বাহির করিবার চেষ্টা করিতে লাগিল। তোমার ঠাকুরঝি বুঝি খুব বড়লোক?
হ্যাঁ।
সব গহনা তারি?
সব। তাঁর দরকার নেই, তিনি বিধবা, এ-সব পরেন না।
কত বয়স বৌ?
আমাদের চেয়ে কিছু বড়। তিনি জোর করে আমার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন।
তোমার বর বুঝি তাঁর খুব অনুগত?
হ্যাঁ, তিনি সতীলক্ষ্মী, সবাই তাঁকে ভালবাসে।
গল্প : আলো ও ছায়া Chapter : 5 Page: 10
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 286