বেণী। (আতঙ্কে পরিপূর্ণ হইয়া) সনাতন, আমার ওপরেই কেন এত রাগ বলতে পারিস?

সনাতন। তা আর পারিনে বড়বাবু? আপনিই যে সকল নষ্টের গোড়া তা কারও জানতে বাকী নেই।

[বেণী চুপ করিয়া রহিল, ভয়ে বুকের ভিতর তাহার টিপটিপ করিতেছিল]

বিশ্বেশ্বরী। গাঙ্গুলী-ঠাকুরপো, ছোটলোকের মুখে এত আস্পর্ধার কথা শুনেও যে বড় চুপ করে আছ?

[বেণী বক্রচক্ষে মায়ের প্রতি ক্রুদ্ধ দৃষ্টিপাত করিয়াও নীরব হইয়া রহিল]

গোবিন্দ। হাঁ সনাতন, বিপিন মোড়লের বাড়িতেই তা হলে আড্ডা বল? সেখানে কি করে তারা বলতে পারিস?

সনাতন। কি করে তা জানিনে। কিন্তু ভাল চাও ত ও-মতলব কোরো না ঠাকুর। তারা ছোট-বড় সবাই ভাই-সম্পর্ক পাতিয়েচে। এক মন, এক প্রাণ। ছোটবাবুর জেল হওয়া থেকে সব রাগে বারুদ হয়ে আছে, তার মধ্যে গিয়ে চকমকি ঠুকে আগুন জ্বালতে যেয়ো না গাঙ্গুলীমশাই। এই তোমাদের সাবধান করে দিয়ে গেলাম।

[প্রস্থান]

[সনাতন প্রস্থান করিলে সকলেই কিছুক্ষণ নীরবে থাকিয়া]

বেণী। ব্যাপার শুনলে রমা?

[রমা মুচকিয়া হাসিল, কথা কহিল না। হাসি দেখিয়া বেণীর গা জ্বলিয়া গেল]

বেণী। শালা ভৈরবের জন্যেই এত কাণ্ড। আর তুমি না যাবে সেখানে, না তাকে ছাড়িয়ে দেবে তো এ—সব কিছুই হয় না। খেতো শালা মার,—তোমার কি!

[রমা পুনরায় একটু হাসিল, জবাব দিল না]

বেণী। তুমি ত হাসবেই রমা। মেয়েমানুষ, বাড়ির বার হতে ত হয় না,—কিন্তু আমাদের উপায় কি হবে বল ত? সত্যি সত্যিই যদি একদিন মাথা ফাটিয়ে দেয়? মেয়েমানুষদের সঙ্গে কাজ করতে গেলেই এই দশা হয়।

[রমা বিস্মিত-মুখে শুধু তাহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিল]

বেণী। গোবিন্দখুড়ো, চুপ করে বসে থাকলে কি হবে? আমার দরোয়ান আর চাকর দু’জনকে একবার ডেকে পাঠাও না? গোটা দুই আলো যেন সঙ্গে কোরে আনে।

গোবিন্দ। এস না, বাইরে গিয়ে ডাকতে পাঠাই। আর ভয়টা কিসের? না হয়, আমি নিজে গিয়ে তোমাকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসব।

[উভয়ের প্রস্থান]

Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়