চাহিলেন, তার পরে পরিশ্রান্তের মত দেয়ালে ঠেস দিয়া এলাইয়া পড়িলেন। লজ্জা ও অপমানের শূল যেন তাঁহার বুকখানা এফোঁড়-ওফোঁড় করিয়া দিয়া গেল। পরক্ষণেই বিপিন আসিয়া উপস্থিত হইলেন। সম্মুখেই স্ত্রীকে ওভাবে বসিয়া থাকিতে দেখিয়া কাছে আসিয়া উদ্বিগ্ন-মুখে প্রশ্ন করিলেন, ও কি, খাবার নিয়ে অমন করে বসে যে?
হেমাঙ্গিনী জবাব দিলেন না। বিপিন অধিকতর উৎকণ্ঠিত হইয়া বলিলেন, আবার জ্বর হল নাকি? অভুক্ত ভাতের থালাটার পানে চোখ পড়ায় বলিলেন, এখানে এত ভাত ফেলে উঠে গেল কে? ললিত বুঝি?
হেমাঙ্গিনী উঠিয়া বসিয়া বলিলেন, না, সে নয়ওবাড়ির কেষ্টা খাচ্ছিল, তোমার ভয়ে দোরের আড়ালে লুকিয়েছে।
কেন?
হেমাঙ্গিনী বলিলেন, কেন, তা তুমিই ভাল জান। আর শুধু সে নয়। তুমি আসচ খবর দিয়েই উমাও ছুটে পালিয়েচে।
বিপিন মনে মনে বুঝিলেন, স্ত্রীর কথাবার্তা বাঁকা পথ ধরিয়াছে। তাই বোধ করি সোজা পথে ফিরাইবার অভিপ্রায়ে সহাস্যে বলিলেন, ও বেটি পালাতে গেল কি দুঃখে?
হেমাঙ্গিনী বলিলেন, কি জানি? বোধ করি, মায়ের অপমান চোখে দেখবার ভয়েই পালিয়েচে। পরক্ষণে একটা নিঃশ্বাস ফেলিয়া কহিলেন, কেষ্ট পরের ছেলে, সে ত লুকোবেই। পেটের মেয়েটা পর্যন্ত বিশ্বাস করতে পারলে না যে, তার মায়ের কাউকে ডেকে একমুঠো ভাত দেবার আধিকারটুকুও আছে।
এবার বিপিন টের পাইলেন, ব্যাপারটা সত্যই বিশ্রী হইয়া উঠিয়াছে। অতএব পাছে একেবারে বাড়াবাড়িতে গিয়া পৌঁছায়, এজন্য অভিযোগটাকে সামান্য পরিহাসে পরিণত করিয়া চোখ টিপিয়া ঘাড় নাড়িয়া বলিলেন, নাতোমার কোন অধিকার নেই। ভিখিরি এলে ভিক্ষেও না। সে যাককাল থেকে আর মাথা ধরেনি ত? আমি মনে করচি, শহর থেকে কেদার ডাক্তারকে ডেকে পাঠাইনা হয় একবার কলকাতায়
অসুখ ও চিকিৎসার পারামর্শটা ঐখানেই থামিয়া গেল। হেমাঙ্গিনী জিজ্ঞাসা করিলেন, উমার সামনে তুমি কেষ্টকে কিছু বলেছিলে?
বিপিন যেন আকাশ হইতে পড়িলেনআমি? কৈ না। ওহোসেদিন যেন মনে হচ্চে বলেছিলুমবৌঠান রাগ করেনদাদা বিরক্ত হনউমা বোধ করি সেখানে দাঁড়িয়েছিলকি জান
জানি, বলিয়া হেমাঙ্গিনী কথাটা চাপা দিয়া দিলেন। বিপিন ঘরে ঢুকিতেই তিনি
গল্প : মেজদিদি Chapter : 6 Page: 16
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 215