শিরোমণি। তাতে আর সন্দেহ কি হুজুর!
জীবানন্দ। না, আমার সন্দেহ নেই, তবে আর কারও না সন্দেহ থাকে। আচ্ছা, নমস্কার শিরোমণিমশায়, চললাম। (হাসিয়া) কিন্তু ভৈরবী-বিদায়ের পালাটা শেষ করা চাই। প্রফুল্ল, যাওয়া যাক।
[প্রস্থান
শিরোমণি। (জমিদার সত্যই গেল কিনা উঁকি মারিয়া দেখিয়া) জনার্দন, কিরূপ মনে হয় ভায়া?
জনার্দন। মনে ত অনেক কিছুই হয়।
শিরোমণি। মহাপাপিষ্ঠ—লজ্জা-শরম আদৌ নেই।
জনার্দন। (গম্ভীরমুখে) না।
শিরোমণি। ভারী দুর্মুখ। মানীর মান-মর্যাদার জ্ঞান নেই।
জনার্দন। না।
শিরোমণি। কিন্তু দেখলে ভায়া কথার ভঙ্গী? সোজা না বাঁকা, সত্য না মিথ্যা, তামাশা না তিরস্কার, ভেবে পাওয়াই দায়। অর্ধেক কথা ত বোঝাই গেল না, যেন হেঁয়ালি। পাষণ্ড সত্যি বললে, না আমাদের বাঁদর নাচালে ঠিক ঠাহর করা গেল না। জানে সব, কি বল?
[জনার্দন নিরুত্তর]
শিরোমণি। যা ভাবা গিয়েছিল ব্যাটা হাবা-গোবা নয়—বিশেষ সুবিধে হবে না বলেই যেন শঙ্কা হচ্চে, না?
জনার্দন। মায়ের অভিরুচি।
শিরোমণি। তার আর কথা কি! কিন্তু ব্যাপারটা যেন খিচুড়ি পাকিয়ে গেল। না গেল একে ধরা, না গেল তাকে মারা। তোমার কি ভায়া, পয়সার জোর আছে, ছুঁড়ী যক্ষের মত আগলে আছে, গেলে সুমুখের বাগান-বেড়াটা তোমার টানা দিয়ে চৌকোস হতে পারবে।কিন্তু বাঘের গর্তের মুখে ফাঁদ পাততে গিয়ে না শেষে আমি মারা পড়ি।
জনার্দন। আপনি কি ভয় পেয়ে গেলেন নাকি?
শিরোমণি। না না, ভয় নয়,—কিন্তু তুমিও যে খুব ভরসা পেলে তা ত তোমারও মুখ দেখে অনুভব হচ্ছে না। হুজুরটি ত কানকাটা সেপাই—কথাও যেমন হেঁয়ালি, কাজও তেমনি অদ্ভুত। ও যে ধরে গলা টিপে মদ খাইয়ে দেয়নি এই আশ্চর্য। এককড়ির মুখে ভৈরবী ঠাকরুনের হুমকিও ত শুনলে? তোমরা চুপ করে ছিলে, আমিই মেলা কথা কয়েছি—ভাল করিনি। কি জানি, এককোড়ে ব্যাটা ভেতরে ভেতরে সব বলে দেয় নাকি। দুয়ের মাঝখানে পড়ে শেষকালে না বেড়াজালে ধরা পড়ি।
জনার্দন। (উদাস-কণ্ঠে) সকলই চণ্ডীর ইচ্ছে। বেলা হলো, সন্ধ্যের পর একবার আসবেন।
শিরোমণি। তা আসব। কিন্তু ঐ যে আবার এঁরা ফিরে আসচেন হে!
[মন্দির-প্রাঙ্গণের একটা দ্বার দিয়া ষোড়শী ও তাহার পশ্চাতে সাগর ও তাহার সঙ্গী প্রবেশ করিল। অন্য দ্বার দিয়া জীবানন্দ, প্রফুল্ল, ভৃত্য ও কয়েকজন পাইক প্রবেশ করিল]
জীবানন্দ। চলে যাচ্ছিলাম, শুধু তোমাকে আসতে দেখে ফিরে এলাম। এককড়িকে দিয়ে তোমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলাম এবং তারই মুখে তোমার জবাবও শুনলাম। তোমার বিরুদ্ধে রাজার আদালতে গিয়ে দাঁড়াবার বুদ্ধি আমার নেই, কিন্তু নিজের প্রজাদের শাসনে রাখবার বিদ্যেও জানি। সমস্ত গ্রামের প্রার্থনা-মত তোমার সম্বন্ধে কি আদেশ করেছি শুনেছ?
ষোড়শী। না।
জীবানন্দ। তোমাকে বিদায় করা হয়েছে। নতুন ভৈরবী করে, তাকে মন্দিরের ভার দেওয়া হবে। অভিষেকের দিনও স্থির হয়ে গেছে। তুমি রায়মশায় প্রভৃতির হাতে দেবীর সমস্ত অস্থাবর সম্পত্তি বুঝিয়ে দিয়ে আমার গোমস্তার হাতে সিন্দুকের চাবি দেবে। এ বিষয়ে তোমার কিছু বলবার আছে?
ষোড়শী। আমার বক্তব্যে আপনার কি কিছু প্রয়োজন আছে?
নাটক : ষোড়শী Chapter : 1 Page: 21
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 147