সংসারে শতকরা নব্বইটা জাতির সম্বন্ধে কমবেশি এই উক্তি বর্ণে বর্ণে প্রয়োগ করা যায়। আমেরিকার বোস্টন শহরের মত স্থানেও ১৮৫০ অব্দ পর্যন্ত স্থান নারীর স্থান কোথায় ছিল, History of Women’s Suffrage হইতে উদ্ধৃত করিতেছি; উক্ত গ্রন্থে নারী বিবাহ করিবার পূর্বে তাহার সমস্ত সম্পত্তি ভাবী স্বামীকে লিখিয়া দিবার পরেও ‘She was not a person,’ ‘not recognised as a citizen,’ ‘was little better then a domestic servant.’ “By the English common law her husband was her lord and master,” “he could punish her with a stick,” “the common law of the state of Massachusets held man and wife to be one person, but that person was the husband,” “she had no personal rights and could hardly call her soul her own.” অথচ, আমেরিকার নারীজাতির আশ্চর্য স্বাধীনতার কথা কতই না শোনা যায়! সেদেশেও এদেশের মত লাঠিবাজি ছিল এবং নালিশ করিয়াও প্রতিকার হইত না।
এইখানে একটা প্রশ্ন মনে উঠে; সংসারে মানবজাতির কোন্ অবস্থায় নারীর উপর প্রথম নির্যাতন শুরু হইয়াছিল? মানুষ যখন পশুর মত ছিল,—তখন হইতে, না কতক মানুষের মত হইবার পর হইতে? এ সম্বন্ধে কোন সমাজতত্ত্ববিদই ঠিক কিছু বলিতে পারেন না। পারিবার কথাও নয়। কারণ প্রত্যেক জাতির মধ্যেই, তিনি সুসভ্যই হউন, আর অসভ্যই হউন, নর-নারীর সম্বন্ধটা এতই জটিল, এতই রহস্যে ঢাকা যে, বাহিরের লোকের বাহির হইতে দেখিয়া কিছুতেই তাহা ঠিক করিয়া বলিবার জো নাই। লেটুর যখন প্রথম প্রচার করিয়াছিলেন, পৃথিবীর সমস্ত অসভ্যেরাই নারীজাতিকে যৎপরোনাস্তি যন্ত্রণা দেয়, তখন তিনি নিজের বুদ্ধির উপর নির্ভর করিয়াই বলিয়াছিলেন, এবং তখন অনেকেই সে কথা বিশ্বাস করিয়াছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি অনেক পণ্ডিতই তাহাতে ধীরে ধীরে আস্থাশূন্য হইয়া পড়িতেছেন। বস্তুতঃ, নর-নারীর সম্বন্ধটা কিছুতেই এমন হইতে পারে না যাহাতে “extreme and unmitigated oppression constantly subjected to unimaginable cruelty and violence by the savage”. খাঁটি সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিতে পারা যায়। এমন হইলে সংসারে মানবজাতিই লোপ পাইত। এই সত্যটা সমস্ত আলোচনার মধ্যে মনে করিয়া না রাখিলেই ভুল হইবে। তবে তাঁহারও কথাটা যে বারো-আনা সত্য, তাহাতে সন্দেহ নাই। উপরন্তু Haddon সাহেব যে জোর করিয়া তাঁহার Head Hunters গ্রন্থে বলিয়াছেন, ‘by no means down-trodden or ill-used,’ সে কথাটাও নিতান্ত অশ্রদ্ধেয়। যদিও তাঁহার এই কথাটার অনুকূলে কয়েকটা অসভ্য জাতির মধ্যে দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়, যথা, ভারতের খাসিয়া রমণীরা বিরক্ত হইলে স্বামীকে গৃহ হইতে বহিষ্কৃত করিয়া দেয়। নিকারাগুয়া ও টাহিটির স্ত্রীলোকেরাও স্বামীকে তাড়াইয়া দিয়া পুনরায় বিবাহ করে। আপাচ জাতিরা লড়াইয়ে হারিয়া আসিলে স্ত্রীরা স্বামীদের ঘরে ঢুকিতে দেয় না।
প্রবন্ধ : নারীর মূল্য Chapter : 1 Page: 27
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 214