বিজয়া। আপনি কখন এলেন কাকাবাবু!
রাস। (শুষ্কহাস্যে) প্রায় আধঘণ্টা হলো এসে ঐ সামনের বারান্দায় বসে। কিন্তু তুমি কথাবার্তায় বড় ব্যস্ত বলে আর ডাকলাম না। ঐ বুঝি সেই জগদীশের ছেলে? কি চায় ও?
বিজয়া। (মৃদুস্বরে) একটা microscope বিক্রি করে উনি চলে যেতে চান। তাই দেখাচ্ছিলেন।
বিলাস। (গর্জন করিয়া) microscope! ঠকাবার জায়গা পেলে না বুঝি!
[নরেন ধীরে ধীরে অন্য দ্বার দিয়া বাহির হইয়া গেল]
রাস। আহা, ও-কথা বলো কেন? তার উদ্দেশ্য ত আমরা জানিনে। ভালও ত হতে পারে। অবশ্য জোর করে কিছুই বলা যায় না—সেও ঠিক। তা সে যাই হোক গে ওতে আমাদের আবশ্যক কি? দূরবীন হলেও না হয় কখনো কালেভদ্রে দূরেটুরে দেখতে কাজে লাগতে পারে।
[আলো হাতে করিয়া কালীপদ প্রবেশ করিল]
রাস। কালীপদ, সেই বাবুটি বোধ করি ওদিকে কোথাও বসে অপেক্ষা করছে, তাকে বলে দাওগে—ঐ যন্ত্রটা আমরা কিনতে পারব না—আমাদের দরকার নেই। এসে নিয়ে চলে যাক।
বিজয়া। (ভয়ে ভয়ে) তাঁকে বলেছি আমি নেব।
রাস। (আশ্চর্য হইয়া) নেবে? কেন, ওতে প্রয়োজন কি?
[বিজয়া নীরব]
রাস। উনি দাম কত চান?
বিজয়া। দুশো টাকা।
রাস। দুশো? দুশো টাকা চায়? বিলাস ত তাহলে নেহাত—কি বল বিলাস? কলেজে তোমাদের F. A.class-এ Chemistry তে এ-সব অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করেছ, দুশো টাকা একটা microscope এর দাম? এ ত কেউ কখনো শোনেনি। কালীপদ, যা ওকে নিয়ে যেতে বলে আয়। এ-সব ফন্দি এখানে খাটবে না।
বিজয়া। কালীপদ, তুমি তোমার কাজে যাও। তাঁকে যা বলবার আমি নিজেই বলব।
[কালীপদর প্রস্থান
বিলাস।(শ্লেষ করিয়া) কেন বাবা তুমি মিথ্যে অপমান হতে গেলে? ওঁর হয়ত এখনো কিছু দেখিয়ে নিতে বাকী আছে। (রাসবিহারী নীরব) আমরাও অনেক রকম microscope দেখেছি বাবা, কিন্তু হোহো করে হাসবার বিষয় কোনটার মধ্যে পাইনি।
[বিজয়া তাহার দিকে সম্পূর্ণ পিছন ফিরিয়া রাসবিহারীকে]
বিজয়া। আমার সঙ্গে কি আপনার কোন বিশেষ কথা আছে কাকাবাবু?
রাস। (অলক্ষ্যে পুত্রের প্রতি ক্রুদ্ধ কটাক্ষ করিয়া ধীরভাবে) কথা আছে বৈ কি মা। কিন্তু কিনবে বলে কি ওকে সত্যিই কথা দিয়ে ফেলেছ? সে যদি হয়ে থাকে ত নিতেই হবে। দাম ওর যাই হোক তবু নিতে হবে। সংসারে ঠকা-জেতাটাই বড় কথা নয় বিজয়া, সত্যটাই বড়। সত্যভ্রষ্ট হতে ত তোমাকে আমি বলতে পারব না।
বিলাস। তাই বলে ঠকিয়ে নিয়ে যাবে?
রাস। যাক। নিক ও ঠকিয়ে। জগদীশের ছেলের কাছে এর বেশি প্রত্যাশা করো না বিলাস। কালীপদ গিয়ে বলে আসুক কাল এসে যেন কাছারি থেকে টাকাটা নিয়ে যায়।
বিজয়া। যা বলবার আমিই তাঁকে বলব। আর কারো বলার আবশ্যক নেই কাকাবাবু।
রাস। বেশ বেশ তাই বলো মা। বলে দিও ওর কোন ভয় নেই, দুশো টাকাই যেন নিয়ে যায়।
বিজয়া । রাত হয়ে যাচ্ছে, ওঁকে অনেক দূর যেতে হবে। কাল কি আপনার সঙ্গে কথা হতে পারে না কাকাবাবু?
নাটক : বিজয়া Chapter : 2 Page: 23
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 528