গোপাল। অপেক্ষা করবার সময় নেই ছোটবাবু, আপনাকে চতুর্দিকে খুঁজে বেড়াচ্চি। শুনেচেন ভৈরব আচায্যির কাণ্ড? শুনেচেন, কি সর্বনাশ আমাদের সে করেচে?
রমেশ। কে না।
গোপাল। কর্তা স্বর্গীয় হলেন, শোকে-দুঃখে ভাবলাম আর না, এবারে শান্তি হব। কিন্তু হোতে দিলে না। আপনি কিন্তু আমাকে বাধা দিতে পারবেন না ছোটবাবু, আচায্যিকে আমি শাস্তি দেবো, দেবো, দেবো! এর প্রতিশোধ নেবো, নেবো, নেবো! আমি আজই যাচ্চি সদরে।
রমেশ। ব্যাপার কি সরকারমশাই? আপনার মত শান্ত মানুষে এতখানি উতলা হয়ে উঠেচে, কি করলেন আচায্যিমশাই?
গোপাল। কি করলেন? নেমকহারাম, শয়তান! তখনি মনে হয়েছিল, যাক ওর ভিটেমাটি বিক্রি হয়ে, আমরা এতে মাথা দেব না। কিন্তু তখনি ভয় হোলো কর্তা হয়ত স্বর্গে থেকে দুঃখ পাবেন। জানি ত তাঁর স্বভাব। তাই আপনাকে নিষেধ করতে পারলাম না।
রমেশ। তবুও যে কিছুই বুঝলাম না সরকারমশাই?
গোপাল। সেদিন আপনার আদেশ-মত সদরে গিয়ে ওর ডিক্রির টাকাটা জমা দিয়ে মকদ্দমার সমস্ত ব্যবস্থা স্থির কোরে এলাম, আর আজ এইমাত্র খবর পেলাম—পরশু ভৈরব আচায্যি নিজে গিয়ে দরখাস্ত কোরে মামলা তুলে নিয়েছে। দেনা স্বীকার করেচে।
রমেশ। তার মানে?
গোপাল। তার মানে জমা দেওয়া অতগুলো টাকা আমাদের গেল। আমাদের মাথায় কাঁটাল ভেঙ্গে তিনজনে এখন বখরা করে খাবে। গোবিন্দ গাঙ্গুলী, বড়বাবু, আর ও নিজে। শোনেন নি সকাল থেকে আচায্যিবাড়িতে রোশনচৌকির সানাইয়ের বাদ্যি? ঘটা কোরে হবে দৌহিত্রের অন্নপ্রাশন, ওই টাকায় দেশসুদ্ধ বামুনের দল ফলার করে বাঁচবে। অথচ আপনার স্থান নেই,—স্থান হয়েচে গোবিন্দ গাঙ্গুলীদের। আপনাকে করেছে তারা ‘ একঘরে’।
রমেশ। ভৈরব আচায্যি? পারলে করতে সে?
গোপাল। পারলে বৈ কি। পাড়াগাঁয়ের লোকে পারে না কি তাই শুধু আমার জানতে বাকী। আমি চললাম। ৬০
রমেশ। যান। আমি শুধু ভাবি, এ মহাপাতকের প্রায়শ্চিত্ত হবে কিসে?
গোপাল। আমার সাক্ষী আছে, আদালত খোলা আছে, আমি তাকে সহজে ছাড়ব না ছোটবাবু।
[প্রস্থান]
রমেশ। জানিনে আইনে কি বলে। জানিনে কৃতঘ্নতার দণ্ড আদালতে হয় কি না। কিন্তু থাক সে! আমি নিলাম আজ নিজের হাতে এই ভার। কেবল সহ্য করে যাওয়াই জগতে পরম ধর্ম নয়।
[প্রস্থান]
নাটক : রমা Chapter : 3 Page: 53
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 283