রমা। (অতি বিস্ময়ে তাহার মুখের প্রতি চাহিয়া) বল কি বড়দা, রমেশদাকে দেবে তুমি জেলে?
বেণী। কেন, সে কি পীর প্যাগম্বর? বাগে পেলে তাকে ছাড়তে হবে নাকি? তুই বলিস কি?
রমা। (মৃদুকণ্ঠে) রমেশদা যদি জেলেই যান, সে কি আমাদেরই কলঙ্ক নয়?
বেণী। কেন? কেন শুনি?
রমা। আমাদেরই আত্মীয়, আমরা না বাঁচালে লোকে ত আমাদেরই ছি ছি করবে।
বেণী। যে যেমন কাজ করবে সে তার তেমন ফল ভুগবে। আমাদের কি?
রমা। রমেশদা ত সত্যিই আর চুরি-ডাকাতি কোরে বেড়ান না। বরঞ্চ পরের ভালোর জন্যেই নিজের সর্বস্ব দিচ্চেন সে কথা ত কারো কাছে চাপা নেই। তার পরে আমাদেরও ত গাঁয়ে মুখ দেখাতে হবে।
বেণী। তোর হলো কি বল ত বোন?
রমা। গাঁয়ের লোকে ভয়ে মুখের সামনে কিছু না বলুক আড়ালে বলবেই। তুমি বলবে আড়ালে রাজার মাকেও ডাইনি বলে। কিন্তু ভগবান ত আছেন? নিরপরাধীকে মিছে কোরে শাস্তি দেওয়ালে তিনি ত রেহাই দেবেন না!
বেণী। হা রে কপাল! সে ছোঁড়া বুঝি ঠাকুর-দেবতা কিছু মানে? শিবের মন্দিরটা ভেঙ্গে পড়চে—মেরামত করবার জন্যে তার কাছে লোক পাঠাতে সে হাঁকিয়ে দিয়ে বলেছিল, যারা তোমাদের পাঠিয়েচে তাদের বল গে বাজে খরচ করবার টাকা নেই আমার। শোন কথা! এটা হলো বাজে খরচ, আর কাজের খরচ হচ্চে ছোটলোকদের ইস্কুল করে দেওয়া! তা ছাড়া বামুনের ছেলে সন্ধ্যা-আহ্নিক কিছুই করে না, শুনি মোছলমানের হাতে পর্যন্ত জল খায়! দু’পাতা ইংরেজি পড়ে আর কি তার জাতজন্ম আছে দিদি, কিছুই নেই। শাস্তি তার গেছে কোথা? সমস্তই তোলা আছে, তা একদিন সবাই দেখবে।
[রমা নীরব]
বেণী। এখন যাই, সময় মত আর একবার দেখা করব। বাইরে বোধ করি এতক্ষণে গোবিন্দখুড়ো এসে বসে আছে।
রমা। আমিও এখন যাই বড়দা।
[উভয়ের প্রস্থান ]
[রমেশের প্রবেশ]
রমেশ। রাধা, রাধা!
[দাসীর প্রবেশ]
রাধা। কেন ছোটবাবু?
রমেশ। জ্যাঠাইমা কি পূজোর ঘর থেকে বেরিয়েচেন? তখন একটা কথা তাঁকে বলতে ভুলেছিলাম।
রাধা। এখনো বেরোন নি। ডেকে দেব?
রমেশ। না না, থাক। বিকেলে আসবো তাঁকে বোলো।
রাধা। আচ্ছা।
[দাসীর প্রস্থান]
[দ্রুতপদে গোপাল সরকারের প্রবেশ]
রমেশ। আপনি এখানে যে?
নাটক : রমা Chapter : 3 Page: 52
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 180