বেণী।অনেক চাল ভেবে কাজ করতে হয় দিদি, নইলে শত্রুকে জব্দ করা যায় না। সেদিন মনিবের হুকুমে যে ভজুয়া লাঠি-হাতে বাড়ি চড়াও হয়ে মাছ আদায় করতে এসেছিল সে কথা তুমি যদি না থানায় লিখিয়ে দিতে, আজ কি ব্যাটাকে এমন হাজতে পোরা যেত? অমনি ঐ সঙ্গে রমেশের নামটাও যদি দু’কথা বাড়িয়ে-গুছিয়ে লিখিয়ে দিতিস বোন! আমার কথাটায় তখন তোরা ত কেউ কান দিলিনে। না না না, তোমাকে সাক্ষী দিতে যেতে হবে না। আর তাই যদি হয়, তাতেই বা কি! জমিদারি রাখতে গেলে কিছুতে হটলে চলে না।—কিন্তু রমেশও কষ্ট দিতে আমাদের ছাড়বে না, দাদামশায়ের লাখো টাকা মেরেচে,—পীরপুরে খুলেচে ইস্কুল। এমনিই ত মুসলমান প্রজারা জমিদার বলে মানতে চায় না, তার উপর লেখাপড়া শিখলে জমিদারি রাখা না-রাখা আমাদের সমান হবে তা এখন থেকে বলে রাখচি।
রমা। আচ্ছা বড়দা, বিষয়-সম্পত্তি যদি নষ্ট হয়েই যায় তাতে রমেশদার নিজের ক্ষতিও কি কম?
বেণী। (ঈষৎ চিন্তা করিয়া) হুঁ। কি জানো রমা, এতে নিজের ক্ষতি ভাববার বিষয়ই নয়। আমরা দু’জনে জব্দ হলেই ও খুশী। দেখচ না, এসে পর্যন্ত কিরকম টাকা ছড়াচ্চে? ছোটলোকদের মধ্যে ‘ ছোটবাবু’ ‘ছোটবাবু’ একটা সাড়া পড়ে গেছে। যেন ওই একটা মানুষ আর আমরা দু’ঘর কিছুই নয়। কিন্তু বেশী দিন এ চলবে না। এই যে তাকে পুলিসের নজরে তুমি খাড়া কোরে দিয়েচ বোন, এতেই তাকে শেষ হতে হবে।
রমা। আমি লিখিয়ে দিয়েছিলাম রমেশদা জানতে পেরেচেন?
বেণী। ঠিক জানিনে। কিন্তু জানতে পারবেই। ভজুয়ার মামলায় সব কথাই উঠবে কিনা।
রমা। (ক্ষণকাল নিস্তব্ধ থাকিয়া) আচ্ছা বড়দা, আজকাল ওঁর নামই বুঝি সকলের মুখে মুখে?
বেণী। হুঁ। তা একরকম তাই বটে। কিন্তু আমিও অল্পে ছাড়ব না রমা। সে যে লেখাপড়া শিখিয়ে সমস্ত প্রজা বিগড়ে তুলবে, আর জমিদার হয়ে আমি মুখ বুজে সইব তা যেন কেউ স্বপ্নেও না ভাবে। এই ব্যাটা ভৈরব আচায্যি ভজুয়ার হয়ে সাক্ষী দিয়ে কি কোরে মেয়ের বিয়ে দেয়, তা একবার দেখতে হবে।
রমা। বল কি বড়দা?
বেণী। তা একবার নেড়েচেড়ে দেখতে হবে না? আমার বিপক্ষে আদালতে দাঁড়িয়ে কি কোরে ছেলেপুলে নিয়ে গাঁয়ে বাস করে তার খবর নিতে হবে না?—আর আচায্যি ত চুনো-পুঁটি; রুই-কাতলাও আছে। দেখি গোবিন্দখুড়ো কি বলে! দেশে ডাকাতি ত লেগেই আছে, এবার চাকরকে যদি জেলে পুরতে পারি ত মনিবকে পুরতেও বেশী বেগ পেতে হবে না।
নাটক : রমা Chapter : 3 Page: 51
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 214