বিলাস। তুমি বুঝছ না বাবা—(বিলাস বাধা দিতে চাহিল)
রাস। এই সামান্য অসুখেই মাথা হারিয়ো না বিলাস। স্থির হও! মঙ্গলময় জগদীশ্বর যে শুধু আমাদের পরীক্ষা করবার জন্যই বিপদ পাঠিয়ে দেন, বিপদে পড়লে তোমরা সকলের আগে এই কথাটাই কেন ভুলে যাও—আমি ত ভেবে পাইনে। (একটু স্থির থাকিয়া) আর তাই যদি একটা ভুল অসুখের কথা বলেই থাকেন, তাতেই বা কি? কত পাস-করা ভাল ভাল, বিচক্ষণ ডাক্তারেরও যে ভ্রম হয়, ইনি ত ছেলেমানুষ। যাক। (নরেনের প্রতি) জ্বর ত তা হলে অতি সামান্যই আপনি বলছেন। চিন্তা করবার কোনই কারণ নেই—এই ত আপনার মত।
নরেন। আমার মতামতে কি আসে-যায় রাসবিহারীবাবু? আমার ওপর ত নির্ভর করছেন না। বরং তার চেয়ে কোন ভাল পাস-করা বিচক্ষণ ডাক্তার দেখিয়ে তাঁর অভিমত নিন।
বিলাস। (চেঁচাইয়া উঠিয়া) তুমি কার সঙ্গে কথা কইছ, মনে করে কথা কয়ো বলে দিচ্ছি। এ-ঘর না হয়ে, আর কোথাও হলে তোমার বিদ্রূপ করা—
[বিজয়া মুখ ফিরাইয়া ব্যথিত সুরে]
বিজয়া। আমি যতদিন বাঁচব নরেনবাবু, আপনার কাছে কৃতজ্ঞ হয়ে থাকব। কিন্তু এঁরা যখন অন্য ডাক্তার দিয়ে আমার চিকিৎসা করা স্থির করেছেন, তখন আর আপনি অনর্থক অপমান সইবেন না।
[পুনরায় মুখ ফিরাইয়া শুইল]
রাস। (ব্যস্ত হইয়া) বিলক্ষণ, যাঁকে তুমি ডেকে পাঠিয়েছ তাঁকে অপমান করে কার সাধ্য মা? (ক্ষণকাল পরে) এ কথাও সত্যি বিলাস! এই অসংযত ব্যবহারের জন্য তোমার অনুতপ্ত হওয়া উচিত। মানি, সমস্তই মানি যে মা বিজয়ার অসুখের গুরুত্ব কল্পনা করেই তোমার মানসিক চঞ্চলতা শতগুণে বেড়ে গেছে, তবু—স্থির ত তোমাকে হতেই হবে। সমস্ত ভাল-মন্দ সমস্ত দায়িত্ব ত শুধু তোমারই মাথায় বাবা! মঙ্গলময়ের ইচ্ছায় যে গুরুভার একদিন তোমাকেই শুধু বহন করতে হবে—এ ত শুধু তারই পরীক্ষার সূচনা—(নরেন নিঃশব্দে লাঠি ও ছোট ব্যাগটি তুলিয়া লইল) নরেনবাবু, আপনার সঙ্গে একটা জরুরি কথা আলোচনা করবার আছে—চলুন।
[রাসবিহারী নরেনকে লইয়া রঙ্গমঞ্চের সম্মুখের দিকে আসিতেই মধ্যের পর্দা পড়িয়া রোগীর কক্ষটিকে সম্পূর্ণ আবৃত করিয়া দিল। উভয়ে মুখোমুখি দুইখানি চৌকিতে উপবেশন করিল]
রাস। পাঁচজনের সামনে তোমায় বাবুই বলি, আর যাই বলি, বাবা, এটা কিন্তু ভুলতে পারিনে, তুমি আমাদের সেই জগদীশের ছেলে। নইলে তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছিলুম এ কথা তোমার মুখের ওপর বলে তোমাকে ক্লেশ দিতুম না।
নরেন। যা সত্য তাই বলেছেন—এতে দুঃখ করবার কিছু নেই।
রাস। না না, ও কথা বলো না নরেন। কঠোর কথা মনে বাজে বৈ কি! যে শোনে তার ত বাজেই, যে বলে তারও বড় কম বাজে না বাবা। জগদীশ্বর! কিন্তু তুমি, বাবা, বিলাসের মনের অবস্থা বুঝে মনের মধ্যে কোনও ক্ষোভ রাখতে পারবে না। আর একটা অনুরোধ আমার এই রইল, এদের বিবাহ ত সামনের বৈশাখেই হবে, যদি কলকাতাতেই থাকো বাবা, শুভকর্মে যোগ দিতে হবে। না বললে চলবে না।
নরেন। আচ্ছা। কিন্তু—
নাটক : বিজয়া Chapter : 2 Page: 38
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 286