দ্বিতীয় অধ্যায়
১ম প্রকরণ—বিদ্যাসমুদ্দেশ; আম্বীক্ষিকী—স্থাপনা
বিদ্যা চারি প্রকার—যথা, (১) আম্বীক্ষিকী (অধ্যাত্মবিদ্যা ; মতান্তরে, হেতুবিদ্যা), (২) ত্রয়ী (ঋক্, যজুঃ ও সাম-বেদাত্মক বিদ্যা), (৩) বার্তা (কৃষি, পশুপালন ও বাণিজ্যাত্মক বিদ্যা) ও (৪) দণ্ডনীতি (বা রাজনীতি বিদ্যা)। I
মানব বা মনুশিষ্যদিগের মতে বিদ্যা তিন প্রকার, যথা—ত্রয়ী, বার্ত্তা ও দণ্ডনীতি। কারণ, আম্বীক্ষিকী বিদ্যা (ত্রয়ী বিদ্যার অ -বিচারকারিণী বলিয়া) ত্রয়ীরই অন্তর্গত বলিয়া ধরা যায়।
বাৰ্হস্পত্য বা বৃহস্পতি শিষ্যদিগের মতে বিদ্যা দুই প্রকার, যথা—বার্তা ও দণ্ডনীতি। কারণ, লোকযাত্রাবিৎ (অর্থাৎ বাৰ্ত্ত ও দণ্ডনীতিতে অভিজ্ঞ) জনের পক্ষে ত্রয়ী আবরণ-মাত্র (অর্থাৎ নাস্তিকতাদি-জনিত নিন্দা হইতে রক্ষা পাওয়ার উপায় মাত্র, তাই ইহার বিদ্যাত্ব-স্বীকারের প্রয়োজন বড় একটা নাই বলিলেই চলে)।
ঔশনস বা শুক্র শিষ্যদিগের মতে বিদ্যা কেবল একটি মাত্রই হইতে পারে এবং তাহা দণ্ডনীতি। কারণ, এই বিদ্যাতেই অন্যান্য সব বিদ্যার (যোগক্ষেমরূপ) ক্রিয়াকলাপ প্রতিষ্ঠিত আছে। (অর্থাৎ দণ্ডনীতিই অপর তিন বিদ্যার যোগক্ষেম সাধন করিতে পারে)।
কিন্তু, কৌটিল্যের মতে উক্ত চারিটিই বিদ্যা বলিয়া পরিগণিত হইবার যোগ্য আম্বীক্ষিকী কারণ, সবগুলি বিদ্যারই সেই জন্য বিদ্যাত্ৰ আছে মনে করিতে হইবে, যে-জন্য সেই সবগুলি দ্বারাই লোকের ধৰ্ম্ম ও অর্থের বেদন বা জ্ঞান হয়।
(এখন আম্বীক্ষিকী বিদ্যার স্বরূপ বলা হইতেছে—) সাংখ্য-শাস্ত্র, যোগশাস্ত্র ও লোকায়ত-শাস্ত্র—এই তিনটি শাস্ত্রই আম্বীক্ষিকীর অন্তর্ভুক্ত। ত্রয়ীতে ধর্ম ও অধৰ্মই প্রধানতঃ প্রতিপাদিত আছে। বার্তাতে অর্থ ও অনর্থ প্রতিপাদিত আছে। এবং দণ্ডনীতিতে নয় ও অপনয় প্রতিপাদিত আছে। ত্রয়ী প্রভৃতি তিনটি বিদ্যার বল (প্রাধান্ত) ও অবল (অপ্রাধান্ত) হেতুদ্বারা নিৰ্দ্ধারণ করে বলিয়া আল্পীক্ষিকী-বিদ্যা লোকের উপকার করিয়া থাকে) ইহা ব্যসন ও অদ্ভু্যদয়ের উৎপত্তিতে (মানুষের) বুদ্ধিকে অবিচলিত রাখে, এবং ইহা (মানুষের) প্রজ্ঞা (জ্ঞান), বাক্যপ্রয়োগ ও কৰ্ম্মকরণ বিষয়ে পটুতা উৎপাদন করিয়া থাকে।
এই আম্বীক্ষিকী বিদ্যা (অপর) সব বিদ্যার প্রদীপ-স্বরূপ, সৰ্ব্বকর্মের উপায় বা সাধন-স্বরূপ, এবং সৰ্ব্বপ্রকার (বৈদিক ও লৌকিক) ধর্মের আশ্রয়-স্বরূপ বলিয়া সৰ্ব্বদাই বিবেচিত হয় ॥১।।
কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্রে বিনয়াধিকারিক-নামক প্রথম অধিকরণে বিদ্যাসমুদ্দেশনামক প্রকরণে আম্বীক্ষিকী-স্থাপনা-নামক দ্বিতীয় অধ্যায় সমাপ্ত।