ইংলিশে অনার্স থাকায় ইকবাল আমেরিকা গিয়ে খুব ভালো চাকরি পেল। সেখানে একটানা দশ বছর থেকে প্রচুর টাকা উপার্জন করে দেশে ফিরল। অবশ্য এর মধ্যে খালেককে মাঝে মাঝে বেশ কিছু টাকা পাঠিয়েছে। খালেক সেই টাকা দিয়ে প্রথমে চার কামরা করে আট কামরার দোতলা বাড়ি করেছে। তারপর মালেকার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু মালেকা কিছুতেই বিয়ে করতে রাজি হল না, বলল, আমি এম.এ. পাশ করে শিক্ষকতা করব। এম.এ পাশ করা পর্যন্ত খালেক ও ফরিদা মেয়েকে বোঝাল, কিন্তু কোনো লাভ হল না। বড় ভাই হিসাবে রেফাতও বোনকে বোঝাতে কম করল না। তার কথাও শুনল না। তারা বুঝতে পারল, মালেকা ইকবালকে ভুলতে পারে নি। সে ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। তাই তার বিয়ের চেষ্টা বাদ দিয়ে রেফাতের বিয়ে দিয়েছে। অবশ্য খালেক রেফাতের বিয়ের আগে মালেকার বিয়েতে অমত ও পড়াশোনা করার কথা জানিয়ে রেফাতের বিয়েতে আসবার জন্য ইকবালকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল। চিঠি পড়ে ইকবাল ভাবল, নিশ্চয় আমার জন্যই মালেকা বিয়েতে অমত করেছে। রেফাতের বিয়েতে কয়েকদিনের জন্য আসার ইচ্ছা থাকলেও মালেকার কথা জেনে আসেনি।

ইকবাল ঢাকায় পৌঁছে খালেক চাচার বাড়িতে উঠল।

খালেক, ফরিদা ও রেফাত খুব সমাদর করল। পরিচয় হওয়ার পর রেফাতের স্ত্রীও তাকে সম্মানের সাথে খাতির যত্ন করল।

মালেকাকে দেখতে না পেয়ে এক সময় ইকবাল রেফাতের স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করল, মালেকা কি কোথাও গেছে? তাকে দেখছি না যে?

রেফাতের স্ত্রী বলল, মালেকা বছর দুয়েক হল ফরিদপুর মহিলা কলেজে অধ্যাপনা করছে। সেখানেই মেয়েদের হোস্টেলে থাকে। কলেজ বন্ধ থাকলে মাঝে মাঝে আসে। আপনার চিঠি এসেছে কিনা জিজ্ঞেস করে। আপনার চিঠি খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ে।

আপনারা তার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন নি?

এমন সময় খালেক সেখানে এসে কথাটা শুনতে পেয়ে বলল, তা আর করিনি বাবা, কিন্তু সে রাজি হয়নি। তারপর বলল, মালেকা যে ফরিদপুর মহিলা কলেজে। অধ্যাপনা করছে, তা নিশ্চয় বৌমার কাছে শুনেছ?

ইকবাল বলল, জ্বি। মালেকা কেন বিয়ে করতে চায় না তা বুঝতে পেরে ইকবাল নিজের কাছে খুব ছোট হয়ে গেল। বলল, ঠিকানাটা দিন, কয়েকদিনের মধ্যে গ্রামের বাড়িতে যাব, আমি সময় করে তার সাথে দেখা করব।

খালেক বলল, হ্যাঁ বাবা তাই করো। তাকে একটু বুঝিয়ে বলো তো, পুরুষই হোক আর মেয়েই হোক, বিয়ে না করলে জীবনে সুখ-শান্তি পাওয়া যায় না। তুমি। বোঝালে নিশ্চয় শুনবে।

ইকবাল বলল, ঠিক আছে চাচা, যা বলার আমি বলব, আপনারা আর চিন্তা করবেন না।

দিন দুয়েক পর খালেক স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে ইকবালকে বলল, আমরা ছাড়া তোমার কোনো গার্জেন নেই। তোমার বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে। হাদিসে আছে, সামর্থবান অবস্থায় বিয়ের বয়স হলে বিয়ে করা সুন্নত। তুমিও বোধহয়, হাদিসটা জান। তাই আমরা তোমার বিয়ে দিতে চাই। তুমি ঘুরে এস, এদিকে আমরা মেয়ে দেখি।

ইকবাল বলল, আমিও ভেবেছি এবার বিয়ে করব। আর আমি গ্রামের বাড়িতে থাকতে চাই, তাই গ্রামের মেয়েকে বিয়ে করার আমার ইচ্ছা। মেয়ে পছন্দ হওয়ার পর আপনাদের খবর দেব। আপনারা ছাড়া আমার যখন কেউ নেই তখন আপনারা গিয়ে বিয়ের কাজ সমাধা করবেন। ফরিদপুর থেকে মালেকাকেও নিয়ে আসব।

খালেক বলল, তুমি যা ভালো বুঝবে করবে। তাতে আমরাও খুশি।

পাঁচদিন থেকে ইকবাল গ্রামের বাড়িতে রওয়ানা দিল। যখন বাড়িতে এসে পৌঁছাল তখন বিকেল পাঁচটা।

গেঁদু মুন্সীর মেয়ে আসমাকে বিয়ে করে দাইহানের অবস্থা ফিরে গেছে। গেঁদু মুন্সী বিয়ের সময় মেয়েকে পাঁচ বিঘে জমি দিয়েছেন। কাজেমের ভিটের পাশে নিজের জায়গায় দু’কামরা ঘর করে দিয়েছেন। হালের গরুও দিয়েছেন। তাছাড়া সমন্ধী শাকিল বোনকে সুখি করার জন্য সবদিক থেকে দাইহানকে সাহায্য করে। দাইহান খুব কর্মঠ ছেলে। শ্বশুর ও সমন্ধির সাহায্য সহযোগিতায় অবস্থা ফিরিয়ে ফেলেছে। শ্বশুরের কথা মতো কাজেম সেখের ভিটেয় তরি-তরকারি চাষ করে।

ইকবাল গ্রামে পৌঁছে আসরের আজান শুনে মসজিদে গেল। ব্রীফকেস ও চামড়ার ব্যাগটা বারান্দায় রেখে অযু করে মসজিদে ঢুকে দেখল, মসজিদের অবস্থা খুব জরাজীর্ণ। তার মনে হল, পনের বছর আগে যখন একবার এসেছিল তখন এতটা জরাজীর্ণ ছিল না। মোটামুটি নামায পড়ার যোগ্য ছিল। কিন্তু এখন পাকা মেঝে চটা উঠে খাবলা খাবলা হয়ে গেছে। বেড়াগুলোও নষ্ট হয়ে গেছে। টিনের চালটা মর্চে পড়ে অনেক জায়গায় ফুটো হয়ে গেছে। দরজা ও জানালার একটারও পাল্লা নেই। ছেঁড়া খেজুর চাটাই বিছিয়ে পাঁচ-ছজন ছেলে বুড়ো মুসুল্লীকে জামাত করে নামায পড়তে দেখে সেও তাদের সঙ্গে জামাতে সামিল হল।

মুসুল্লীদের মধ্যে কাজেমের চাচাতো ভাই ফজল ছিল। তার ছেলে দাইহান ও গেঁদু মুন্সীও ছিল। নামাযের পর দাড়ি রাখা ইকবালকে তারা চিনতে পারল না। গেঁদু মুন্সী জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কোন গ্রামের মানুষ?

ইকবাল বলল, আমি ঢাকা থেকে গ্রাম দেখতে এসেছি। আপনারা কেউ যদি আমাকে কয়েক দিন থাকার জায়গা দেন, তাহলে খুব উপকার হত।

পনের ষোল বছর আগে দাইহান চার পাঁচ দিন ইকবালের সঙ্গে থেকেছে। তাই ইকবালের মুখে দাড়ি থাকা সত্ত্বেও চেনা চেনা মনে হল। বলল, আপনাকে আগে কোথাও দেখেছি বলে মনে হচ্ছে।

ইকবাল দু’জনকে ছাড়া সবাইকে চিনতে পেরেছে। দাইহান থেমে যেতে তার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিয়ে বলল, আপনাকেও আমার চেনা চেনা লাগছে। যদি দয়া করে কয়েক দিন আপনাদের বাড়িতে রাখেন, তাহলে আমার ইচ্ছাটা পূরণ হত। অবশ্য যে কয়েকদিন থাকব, খরচাপাতি দিয়েই থাকব।

ইকবাল চোখ টিপ দিতে ও তার কথা শুনে দাইহান চিনতে পারল। সেই সাথে বুঝতে পারল, ইকবাল পরিচয় গোপন করতে চায়। তাই সেও ইকবালকে চোখ টিপে জানিয়ে দিল তাকে চিনতে পেরেছে। তারপর কৃপণ শ্বশুরকে খুশি করার জন্য তার দিকে তাকিয়ে বলল, উনি যখন খরচপাতি দিয়ে থাকতে চাচ্ছেন তখন আমাদের বাড়িতে না হয় ক’টা দিন থাকুক আপনি কি বলেন আব্বা?

খরচপাতি দিয়ে থাকবে শুনে গেঁদু মুন্সী না করতে পারলেন না। তবু জামাইকে একটু দুরে নিয়ে গিয়ে ফিস ফিস করে বললেন, রাখতে চাও রাখ। কিন্তু খুব, সাবধানে থেক। অনেকে ডাকাতি করার জন্য এরকম ভালো মানুষ সেজে আসে।

দাইহানের হাসি পেল। চেপে রেখে বলল, আপনি ঠিক কথা বলেছেন। তবে ওনাকে দেখে সে রকম মনে হচ্ছে না। তবু খুব সাবধানে থাকব। তারপর শ্বশুরকে নিয়ে ফিরে এসে ইকবালকে বলল, চলুন আমার কাছে থাকবেন।

দাইহান ইকবালকে সঙ্গে নিয়ে যেতে যেতে বলল, প্রথমে তোমাকে চিনতে পারিনি। তুমি যখন চোখ টিপ দিলে তখন চিনতে পারলাম। তারপর বলল, দাদি তোমার কথা প্রায় বলে। মাঝে মাঝে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলে, কাজেমের ছেলে থাকতে তার ভিটে শূন্য হয়ে পড়ে আছে।

ইকবাল বলল, ভিটে শূন্য থাকবে কেন? তোমরা তো রয়েছ?

দাইহান বলল, সে অনেক কথা, পরে সব বলব। এখন শুধু এটুকু জেনে রাখ, আমি মুন্সী চাচার মেয়ে আসমাকে বিয়ে করেছি। তারপর জমিও ঘর করে দেওয়ার কথা বলে বলল, তোমাদের ভিটের পাশেই আমরা থাকি। তবে তোমাদের ভিটেতে আমি তরি-তরকারির চাষ করি।

আসমার কথা শুনে ইকবালের রুকসানাকে মনে পড়ল। সেই সাথে মনের মধ্যে একটা আলোড়ন অনুভব করল। ভাবল, ওর কাছে নিশ্চয় রুকসানার খবর জানা যাবে। মনের ভাব গোপন করে বলল, তাই নাকি? তাহলে তো তোমার ভাগ্য খুলে গেছে?

হ্যাঁ তা খুলেছে। আল্লাহর রহমতে আমাদের কোনো অভাব নেই।

আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে ইকবাল বলল, দাইহান ভাই, তোমাকে আমার একটা উপকার করতে হবে। কাজটা তেমন কঠিন না হলেও কঠিন।

তুমি বল ইকবাল, যদি অন্যায় কোনো কিছু না হয়, তবে ইনশাআল্লাহ যত কঠিন কাজ হোক না কেন করে দেব।

পরে তোমাকে সব কিছু বলব, এখন শুধু এতটুকু বলছি, আমি এখানে থাকার জন্য এসেছি। আর আমি যে কাজেম সেখের ছেলে ইকবাল, তা গ্রামের কোনো লোক যেন জানতে না পারে।

দাদি ও আসমার কাছেও কি গোপন রাখতে হবে?

তাদেরকে যা বলার আমি বলব। আর তোমার শ্বশুর মুন্সী চাচা ও তোমার আব্বাকে বলব। নচেৎ বেশি দিন থাকতে দেখলে গ্রামের পাঁচজন পাঁচ কথা বলবে। কেউ কিছু বললে ওঁরাই তাদেরকে যা বলার বলবেন।

ততক্ষণে তারা দাইহানের ঘরে পৌঁছে গেল।

রহিমন ঘরের বারান্দায় নামায পড়ে দাইহানের আট মাসের মেয়েকে কোলে নিয়ে মসল্লার উপর বসে তসবীহ পড়ছিল। আর আসমা উঠোনের একপাশে মুরগী হাঁসকে কুঁড়ো ফ্যানের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়াচ্ছিল। সাড়া শব্দ না দিয়ে স্বামীকে একজন দাড়িওয়ালা লোককে নিয়ে আসতে দেখে রেগে গিয়ে বাঁ হাতে ঘোমটা টেনে তাড়াতাড়ি রান্না ঘরের পিছনে চলে গেল।

রহিমন ঐ একই কারণে ঘোমটা টেনে রেগে গেল।

দাইহান হেসে উঠে বলল, তোমরা কাকে দেখে ঘোমটা দিচ্ছ, এত আমাদের। কাজেম চাচার ছেলে ইকবাল।

দাদি ঘোমটা সরিয়ে দাইহানকে বলল, তাই বল, সাড়া শব্দ না দিয়ে বেগানা লোককে নিয়ে আসতে দেখে আমি তো রেগে গিয়েছিলাম।

ইকবাল দাদিকে সালাম করে বলল, কেমন আছেন?

রহিমন তার মাথায় হাত বুলিয়ে চুমো খেয়ে বলল, আল্লাহ খুব ভালো রেখেছে। ভাই। তুমি কেমন আছ? এতদিন আসনি কেন? তোমার কথা মনে পড়লে চোখে পানি আসে।

আর পানি আসবে না। এখানে থাকব বলে একেবারে চলে এসেছি। তারপর তার কোল থেকে বাচ্চাটাকে নিয়ে বলল, বাহ! খুব সুন্দর মেয়ে তো? তারপর দাইহানের। দিকে তাকিয়ে বলল, নিশ্চয় তোমার মেয়ে? কি নাম রেখেছ?

দাইহান হাসি মুখে বলল, ও আসমার মেয়ে। নাম যয়নাব বিনতে দাইহান। আর ছেলেটা আমার। তার নাম ইব্রাহীম বিন দাইহান। দু’টো নামই আসমা রেখেছে।

ইকবাল হেসে উঠে বলল, নাম অনুযায়ী ছেলে মেয়ে দুটোই তো তোমার। আসমার বলছ কেন?

তা জানি না। আসমা সব সময় ঐ কথা বলে, তাই বললাম।

তা তোমার ছেলেকে দেখছি না কেন?

আমার সমন্ধীর কোনো সন্তান হয়নি। যয়নাব হওয়ার পর থেকে সে মামা-মামীর কাছেই থাকে।

দাদি দাইহানকে বলল, ইকবালকে বসার জায়গা দিবিতো। তারপর ইকবালকে বলল, যয়নাবকে আমার কোলে দাও ভাই, তোমার কাপড়ে পেশাব করে দেবে।

আসমা ইকবালকে চিনতে পেরে হাত ধুয়ে এসে আড়াল থেকে এতক্ষণ তাদের কথা শুনছিল। এবার ঘর থেকে একটা চেয়ার এনে বারান্দায় রেখে ঘোমটার ভেতর থেকে সালাম দিয়ে বলল, কেমন আছেন ইকবাল ভাই?

ইকবাল সালামের উত্তর দিয়ে বলল, আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। তারপর বলল, দাইহান ভাইয়ের কাছে তোমার কথা শুনে খুব খুশি হয়েছি।

আপনি বসুন ইকবাল ভাই, আমি নাস্তার ব্যবস্থা করি। কথা শেষ করে ঘরে ঢুকে গেল।

ইকবাল চেয়ারে না বসে দাদির পাশে মসল্লায় বসতে গেলে রহিমন বলল, এখানে বসছ কেন? চেয়ারে বস।

ইকবাল বলল, আপনি মুরুব্বি মানুষ। মুরুব্বিকে নিচে বসিয়ে চেয়ারে বসা আদবের বরখেলাপ। তারপর দাইহানকে বলল, আসার পর থেকে তোমাদের অনেক। কিছু পরিবর্তন দেখছি। তার মধ্যে তোমাকে নামায পড়তে দেখলাম, আসমাকেও পর্দা করতে দেখলাম।

দাইহান বলার আগে দাদি বলল, যা কিছু দেখছ সব আসমার জন্য হয়েছে। আর পর্দার কথা যে বললে, আসমার ভাবি আমাদেরকে তবলীগ করে। শুধু আমাদেরকে নয়, গ্রামের সব মেয়েদেরকে কুরআন হাদিসের কথা বলে পর্দা করতে শিখিয়েছে। আসমাও এখন তার সাথে তবলীগ করে। আসমার ভাবির মা-বাবা একবার এসেছিল। তারাও তবলীগ করে নামায পড়তে ও নামায রোযার অনেক মসলাও শিখিয়েছে। শাকিলের সমন্ধি ঢাকায় বিয়ে করেছে। সেই মেয়ের স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে তবলীগে ভিড়িয়েছে।

শুকুর আলহামদুলিল্লাহ বলে ইকবাল বলল, খুব ভালো কথা শুনলাম। প্রতিটি গ্রামে যদি এরকম মেয়ে একজনও থাকত, তাহলে কতই না ভালো হত।

নাস্তা খেতে খেতে মাগরিবের নামাযের সময় হয়ে গেল। মসজিদে যাওয়ার সময় ইকবাল দাইহানকে বলল, নামায পড়ে ফেরার সময় তোমার সমন্ধি শ্বশুর ও তোমার আব্বাকে সঙ্গে নিয়ে আসবে। ওঁদের সামনেই সবকিছু বলতে চাই। কারণ ওঁদেরও সাহায্য আমার দরকার।

দাইহান বলল, বেশ তাই হবে। মাগরিবের নামাযে চৌদ্দ পনের জন মুসুল্লী নামায পড়তে এল।

আসরের সময় যারা এসেছিল, তারা ছাড়া সবাই দাইহানকে ইকবালের কথা জিজ্ঞেস করল।

ইকবাল আসরের সময় যা বলেছিল, দাইহান সেই কথা বলে বলল, উনি কয়েকদিন আমার কাছে থাকবেন। তারপর সমন্ধি, শ্বশুর ও আব্বাকে দরকার আছে। বলে ঘরে নিয়ে এল।

দাইহান স্ত্রী ও মেয়ে নিয়ে একরুমে থাকে। অন্য রুমে দাদি থাকে। আসমা মাগরিবের নামায পড়ে দাদির রুমের এক পাশে ইকবালের থাকার ব্যবস্থা করছে।

দাইহান সবাইকে নিয়ে সেই রুমে বসল।

ইকবাল দাইহানের কানে কানে বলল, তুমি দাদিকে ও আসমাকে ডেকে নিয়ে এস।

দাইহান পাশের রুমে গিয়ে তাদেরকে ইকবালের কথা জানাল।

আসমা দাদিকে বলল, তুমি যয়নাবকে নিয়ে যাও। আমি চা-এর ব্যবস্থা করে আসছি।

কিছুক্ষণের মধ্যে আসমা চোখ দুটো ছাড়া গায়ে মাথায় চার জড়িয়ে চা বিস্কুট নিয়ে এসে সবাইকে পরিবেশন করে চলে গেল। একটু পরে একটা বড় পিরিচে পান, সুপুরি, চুন ও জর্দা নিয়ে ফিরে এসে সবার সামনে রাখল।

গেঁদু মুন্সী ও ফজল আসমাকে ঢাকার লোকের সামনে আসতে দেখে বেশ অবাক হলেন। ভাবলেন, একটা পরপুরুষের সামনে আসা কী তার ঠিক হল?

চা-খাওয়ার পর পান মুখে দিয়ে গেঁদু মুন্সী জামাইকে বললেন, কি দরকারে ডেকে আনলে বল।

দাইহান কিছু বলার আগে ইকবাল বলল, আমি আপনাদের ডেকে আনতে বলেছিলাম। তারপর বলল, আসরের সময় মসজিদে যে কথা বলেছিলাম, তা ঠিক নয়। আমি কাজেমের ছেলে ইকবাল। প্রায় পনের বছর আগে এস.এস.সি. পাশ করে একবার এসে পাঁচদিন ছিলাম। সে কথা নিশ্চয় আপনাদের মনে আছে। তারপর ঢাকায় গিয়ে আরো লেখাপড়া করে চাকরি নিয়ে আমেরিকা চলে গিয়েছিলাম। চাকরি করার সাথে সাথে হোমিওপ্যাথিক কলেজে পড়াশোনা করে ডিগ্রি নিয়েছি। সেখানে দশ বছর থেকে কয়েকদিন হল ফিরেছি। আমার আব্বা-আম্মা একরকম বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। তাই ঠিক করেছি, তাদের নামে প্রথমে একটা দাঁতব্য চিকিৎসালয় খুলে গ্রামের গরিব লোকদের চিকিৎসা করব। তারপর আল্লাহ রাজি থাকলে, একটা হাসপাতাল খুলব। সেখানেও গরীবদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা হবে। আপনাদের সাহায্য সহযোগিতা না পেলে আমার একার দ্বারা কিছুই সম্ভব হবে না। আশা করি, আপনারা আমাকে সাহায্য করবেন।

ইকবালের কথা শুনে সকলে অবাক হয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। কোনো কথা বলতে পারল না।

ইকবাল বলল, আপনারা কিছু বলছেন না কেন?

গেঁদু মুন্সী বললেন, কিন্তু বাবাজি, তুমি যা বললে তা করতে তো প্রচুর টাকা লাগবে, এতটাকা তোমাকে কে দেবে?

ইকবাল বলল, আল্লাহ দেবেন। আল্লাহ ও তাঁর রসুল (দঃ) কে খুশি করার উদ্দেশ্যে যে কোনো মহৎ কাজে হাত দিলে আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন। আমার বেশ কিছু টাকা আছে। তারপর আপনাদের উৎসাহ ও সহযোগিতা পেলে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে সাহায্য চাইব। আপনারা রাজি আছেন কিনা বলুন।

গেঁদু মুন্সী বলল, ভালো কাজে রাজি হব না কেন?

ফজল, শাকিল ও দাইহান এক সঙ্গে বলে উঠল, আমরাও রাজি।

আসমা বলল, ইকবাল ভাই, তুমি আল্লাহর নাম নিয়ে কাজে নেমে পড়। আমিও ভাবি বাড়ি বাড়ি ঘুরে মেয়েদের কাছ থেকে সাহায্য চাইব।

আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে ইকবাল বলল, এবার এখানে যে কয়জন আছেন, সবাইয়ের কাছে আমার বিশেষ অনুরোধ, আমি যে মরহুম কাজেম সেখের ছেলে ইকবাল, একথা গোপন রাখতে হবে। আপনারা এই কয়েকজন ছাড়া একটা পশু পাখিও যেন আমার পরিচয় জানতে না পারে। আমার কথা শুনে আপনারা খুব অবাক হচ্ছেন বুঝতে পারছি। কিন্তু কেন আমার পরিচয় গোপন করতে বললাম, সে কথা ইনশাআল্লাহ সময় মতো একদিন সবাই জানতে পারবেন। আর একটা কথা আসবার সময় বাসে ফুকরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের হেড মাস্টারের সঙ্গে আলাপ করে জানতে পারলাম, ঐ স্কুলের জন্য একজন ইংলিশের টিচার দরকার। আমি ঐ স্কুলে জয়েন করতে চাই। সে কথা হেডমাস্টারকে জানাতে উনি বললেন, আপনার কাগজপত্র নিয়ে কবে আসছেন বলুন। আমি কমিটিকে জানিয়ে সেদিন থাকতে বলব। পরশু বৃহস্পতিবার যাব বলেছি। স্কুলে মাস্টারীটা পেলে সেখানে কিছুদিন থেকে আমাদের ভিটেয় দু’কামরা ঘর তুলব। একটায় আমি থাকব, আর অন্যটায় ডিসপেন্সরী করব। তারপর ধীরে সুস্থে হাসপাতালের কাজে হাত দেব। অবশ্য তার আগে হাসপাতালের জন্য জমি কিনব। তারপর এই গ্রামের ও আশপাশের গ্রামের লোকজন নিয়ে একটা সভা করব। এখন আপনাদেরকে কথা দিতে হবে, আমার পরিচয় গোপন রাখবেন।

সবাই আরো বেশি অবাক হল। প্রথমে গেঁদু মুন্সীই বলল, তুমি আমাদের কাজেমের ছেলে। গ্রামের মানুষের জন্য যখন এতকিছু করতে চাচ্ছ তখন তোমার কথা রাখাইতো আমাদের উচিত। তারপর ফজলের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি কী। বল ফজল?

ফজল বলল, আপনি ঠিক কথা বলেছেন। ও আমার চাচাতো ভাই এর ছেলে। ওর কথা রাখব না তো কার কথা রাখব। তারপর ইকবালকে বলল, আমরা থাকতে তুমি অন্য জায়গায় থাকবে কেন? যতদিন না ঘর তৈরি হচ্ছে ততদিন তুমি দাইহানের কাছেই থাকবে।

ইকবাল বলল, পরিচয় গোপন রাখার জন্য কিছুদিন অন্য জায়গায় থাকা দরকার।

ফজল বলল, ঠিক আছে, তুমি যা ভালো বুঝো করো।

ফজল থেমে যেতে শাকিলও বলল, আমরাও তোমার পরিচয় গোপন রাখব।

আসমা বলল, ইকবাল ভাই, তুমি নিশ্চিত থাক, আমি সবাইকে ম্যানেজ করব।

ইকবাল আলহামদুলিল্লাহ বলে বলল, আর একটা কথা, আমার পুরোনাম ইকবাল হোসেন, এখন থেকে হোসেন বলে ডাকবেন। ভুলেও ইকবাল নামে ডাকবেন না।

সবার আগে আসমা বলল, এব্যাপারেও ও আমি সবাইকে সামলাব।

এমন সময় এশার আজান হতে গেঁদু মুন্সী বলল, চলো সবাই মসজিদে যাই।

যেতে যেতে ইকবাল বলল, মসজিদের অবস্থা দেখে আমার খুব দুঃখ হচ্ছে। গ্রামে এতলোক বাস করে, মসজিদের দিকে কারো লক্ষ্য নেই। আল্লাহ রাজি থাকলে আব্বা আম্মার রুহের মাগফেরাতর জন্য সবকিছুর আগে মসজিদটা পাকা করব।

দাইহান বলল, তুমি খুব সুন্দর কথা বলেছ। তুমি শুরু কর, আমরাও যতটা পারি সাহায্য করব।

নামায পড়ে ইকবালকে নিয়ে দাইহান ফিরে এলে আসমা স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বলল, তুমি ইকবাল ভাইকে, থুড়ি, হোসেন ভাইকে নিয়ে গল্প কর। রান্না এখনো শেষ হয়নি। হলে খাওয়ার ব্যবস্থা করব।

দাইহান হেসে বলল, তখন তুমিই সব কিছু সামলাবে বলে নিজেই এখন ভুল করে ফেললে।

হোসেন বলল, প্রথম প্রথম সবারই এরকম ভুল হয়।

পরের দিন সকালে দাইহান পান্তা খেয়ে স্ত্রীকে বলল, আমি কামলাদের নিয়ে ক্ষেতে যাচ্ছি, ফিরতে দেরি হতে পারে। হোসেন ফিরলে নাস্তা খাইয়ে দিও।

আসমা বলল, হোসেন ভাই কোথায়?

সে নামায পড়ে মসজিদ থেকে বেরিয়ে বলল, প্রতিদিন সকালে ঘণ্টা খানেক হাঁটা তার অভ্যাস। হাঁটতে গেছে।

ঠিক আছে, আমি নাস্তা বানাই, তুমি তাড়াতাড়ি ফিরো।

হোসেন হাঁটতে হাঁটতে ফুকরা গ্রামে এসে একজনকে হেড মাস্টার লতিফ স্যারের বাড়ি কোনখানে জিজ্ঞেস করল।

লতিফ স্যারও ফজরের নামায পড়ে প্রতিদিন কিছুক্ষণ হাঁটেন। আজও হাঁটতে বেরিয়েছিলেন। ফেরার সময় গতকালের বাসে যে ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। তাকে একজনের সঙ্গে কথা বলতে দেখে সালাম দিয়ে বললেন, এত সকালে আপনি?

হোসেন সালামের উত্তর দিয়ে বলল, প্রতিদিন ভোরে হাঁটা আমার অভ্যাস। তাই হাঁটতে হাঁটতে আপনার সঙ্গে দেখা করতে এলাম, কয়েকটা কথা বলব বলে।

লতিফ স্যার বললেন, আমিও প্রতিদিন ভোরে হাঁটি। চলুন বাসায় গিয়ে আলাপ করি।

লতিফ স্যারের বাড়ি চন্দ্র দিঘলিয়া গ্রামে। উনি প্রায় পনের বছর ফুকরা বালিকা। উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে কাজ করছেন। স্কুল থেকে অল্প দূরে বিঘে খানেক। জমি কিনে বাড়ি করে সপরিবারে থাকেন। ওঁর স্ত্রী ও ফুকরা সরকারী প্রাইমারী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা। তাদের দুই ছেলে এক মেয়ে। ছেলে দুটো হাইস্কুলে আর মেয়েটা প্রাইমারী স্কুলে পড়ে। পুরো বাস্তুটা বেড়া দিয়ে ঘেরা। বাড়ির চার পাশে। সুপারী ও অন্যান্য ফলের গাছ। দুই রুমের টিন সেড বাড়ি। একটা বেড়ার বৈঠকখানা। বেশ ছিমছাম পরিবেশ।

লতিফ স্যার হোসেনকে সঙ্গে করে বৈঠকখানায় এসে বসতে বলে বললেন, আমি একটু আসছি।

হোসেন বলল, স্যার, কিছু মনে করবেন না। যদি কোনো প্রয়োজন থাকে যান। আর যদি আমাকে উপলক্ষ্য করে যান, তাহলে বসুন। মনিং ওয়াকের সময় আমি কিছু। খাই না। দু’একটা কথা বলেই চলে যাব। আল্লাহ রাজি থাকলে আপ্যায়নের দিনতো পালিয়ে যাচ্ছে না।

লতিফ স্যার বসে মৃদু হেসে বললেন, আপনি দেখছি আমার মতো। আমিও এই সময়ে কিছুই খাই না। যাক কি বলবেন বলে এসেছেন বলুন।

হোসেন বলল, স্কুল কমিটি যদি আমাকে পছন্দ করেন, তা হলে দু’একমাস কারো বাড়ির সদরে থাকার ব্যবস্থা করে দিতে বলবেন। আব্বা-আম্মা মারা যাওয়ার পর এক আত্মীয় আমাদের ঘরে থাকত। কয়েক বছর হল তারা নেই। তাই শূন্য ভিটেয় ঘর করার জন্য দু’এক মাস থাকতে চাই।

লতিফ স্যার বললেন, ঠিক আছে আমি চেষ্টা করব। তারপর বললেন, স্কুলের সেক্রেটারী শিক্ষিত ও অবস্থাপন্ন লোক। আমার মনে হয়, আমি বললে উনি না করতে পারবেন না।

তাহলে আসি স্যার বলে হোসেন সালাম বিনিময় করে বিদায় নিয়ে চলে এল। ঘরে ফিরে এলে আসমা বলল, হাত মুখ ধুয়ে এস, আমি নাস্তা নিয়ে আসি। হোসেন বলল, দাইহান ভাই কোথায়? কামলাদের নিয়ে ক্ষেতে গেছে। সে আসুক এক সঙ্গে খাব।

সে পান্তা খেয়ে গেছে। যাওয়ার সময় বলে গেছে তোমাকে নাস্তা দিতে। তার ফিরতে দেরি হবে।

নাস্তা খেতে দিয়ে আসমা বলল, হোসেন ভাই দু’একটা কথা বলব। কিছু মনে করবে না বল।

হোসেন বলল, কিছু মনে করব কেন? কি বলতে চাও বল।

বাহিরবাগের রুকসানার কথা তোমার মনে আছে?

হোসেন মুখে খাবার তুলেছিল, আসমার কথা শুনে চমকে উঠে হাত নামিয়ে নিয়ে কয়েক সেকেণ্ড তার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় তার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়। এত বছর যার সঙ্গে যোগাযোগ নেই, তার কথা তো ভুলে যাওয়াই স্বাভাবিক। তারপর খেতে শুরু করল।

সে কিন্তু তোমাকে ভুলেনি।

হোসেন আবার চমকে উঠে বলল, এটা তোমার ভুল কথা।

ভুল নয় হোসেন ভাই, চন্দ্র-সূর্যের মতো সত্য।

তাই যদি হয়, সেটা আমার সৌভাগ্য।

তোমার সৌভাগ্য রুকসানার দুর্ভাগ্য ডেকে এনেছে।

তা কেন? সে ধনী কন্যা। নিশ্চয় স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে সংসার করছে?

তাই যদি হতো, তা হলে তার কথা তোমার কাছে তুলতাম না। সে তোমার স্মৃতিকে আঁকড়ে মা-বাবা, ভাই-ভাবিদের সঙ্গে যুদ্ধ করে দিনের পর দিন নিজেকে ক্ষয় করে চলেছে।

সে কি? এখনো বিয়ে করেনি?

তাহলে ঐ কথা বললাম কেন?

তুমি তার সম্পর্কে কতটা জান?

শুধু তার সম্পর্কে নয়, আমাদের দুজনের মধ্যে এত গভীর সম্পর্ক যে, একে অপরের কাছে কোনো কিছু গোপন নেই। তাই আমার জীবনে ঝড় তুফানের কথা সে যেমন জানে। আমিও তার জীবনের ঝড় তুফানের কথা জানি। রুকসানা যদি আমার ঝড় তুফানে হস্তক্ষেপ না করত, তাহলে তোমার দাইহান ভাইকে পেতাম না। বিষ খেয়ে জীবন দিতে হত। এই যে সুখের সংসার দেখছ, তা স্বপ্নই থেকে যেত। তারপর রুকসানা কিভাবে তাকে সাহায্য করেছিল বলে বলল, যে আমাকে আত্মহত্যার মতো জঘন্য পাপ থেকে বাঁচাল, যে আমার স্বপ্নকে সফল করল, তার জন্য এতদিন কিছু করার অপেক্ষায় ছিলাম। নামায পড়ে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করতাম “আল্লাহ গো, আমার সই যেমন তোমার দয়ার আমার স্বপ্নকে সফল করিয়েছে, তোমার দয়ায় আমিও যেন তার স্বপ্ন সফল করাতে পারি, সেই সুযোগ আমাকে দাও।”

আল্লাহ এতদিনে আমার দোয়া কবুল করেছেন। তাই তুমি এসেছ। পনের ষোল বছর আগে যখন তুমি এসেছিলে তখন সেকথা আমার মুখে শুনে রুকসানার মুখে যে আনন্দের ঝলক দেখেছিলাম, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। তারপর আমাকে দিয়ে তোমাকে দেখা করতে বলেছিল। তুমি না গিয়ে যে কথা বলেছিলে, সেকথা শুনে তার মুখে যে বেদনার ছাপ ফুটে উঠতে দেখেছিলাম, তাও ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। তারপর কয়েক সেকেণ্ড চুপ করে থেকে ভিজে গলায় বলল, আল্লাহর কসম করে বলত, রুকসানার কথা তুমি ভুলে গেছ?

আসমার কথা শুনতে শুনতে হোসেনের মনে আনন্দের বান ডাকতে শুরু করেছে। মনে মনে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বলল, তার কথা মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ভুলতে পারব না।

তাহলে আমার ভাবা কি অন্যায় হবে। তার জন্যেই আজও তুমি বিয়ে করনি?

না অন্যায় হবে না, বরং সেটাই সত্য।

আল হামদুলিল্লাহ বলে আসমা বলল, আজই আমি রুকসানাকে নিয়ে আসার জন্য ইব্রাহীমের আব্বাকে পাঠাব।

হোসেন বলল, এত ব্যস্ত হয়ো না। তুমি যখন আমাদের সবকিছু জান, তখন তোমার কাছে কোনো কিছু গোপন করব না। যা বলছি মন দিয়ে শোন, এখন এসব কথা এতটুকু চিন্তা করো না। যখন সময় হবে তখন আমিই তোমাকে বলব। আল্লাহ রাজি থাকলে তোমার আমার ও রুকসানার স্বপ্ন একদিন সফল হবেই। তারপর জিজ্ঞেস করল, দাইহান ভাই কী আমার ও রুকসানার ব্যাপারটা জানে?

হ্যাঁ জানে। আমি তাকে একদিন তোমাদের দুজনের সব কথা বলে ঢাকায় খোঁজ নেওয়ার জন্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু বিনা ঠিকানায় অতবড় শহরে কি খুঁজে পাওয়া সম্ভব। তাই কয়েকদিন পরে বিফল হয়ে ফিরে আসে।

এখন দাইহান ভাইকে কিছু বলো না।

কিন্তু সে যদি আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করে?

করলে সংক্ষেপে আমার মতামত জানাবে।

মেয়ের কান্না শুনে আসমা বলল, যয়নাব দোলায় ঘুমিয়েছিল। উঠে পড়েছে। কথা বলতে বলতে চায়ের কথা ভুলে গেছি। কথা শেষ করে আসমা চলে গেল। একটু পরে যয়নাবকে কোলে নিয়ে চা হাতে করে ফিরে এল।

<

Super User