পাক পবিত্রতা অর্জনের জন্য কম না পাক অবস্থায় পানি দ্বারা শরীরের কতিপয় নির্দিষ্ট অঙ্গ-প্রতঙ্গ, যেমন–হাত, পা, মুখমন্ডল শরীয়তের রীতি-নীতি অনুযায়ী ধৌত করা এবং মাথায় কমপক্ষে চারভাগের একভাগ মাসেহ করাকে অজু বলা হয়।
ওজুর ফরজ
ওজুতে মোট চারটি ফরয। যেমন–
- সমস্ত মুখমন্ডল একবার ধৌত করা
- উভয় হাতের কনুই সহ একবার ধৌত করা
- মাথার চারভাগের একভাগ মাসেহ করা
- উভয় পা টাকনুসহ একবার ধৌত করা
ইহার মধ্যে একটি অঙ্গ ছুটে গেলে বা একটি পশমের গোড়াও শুকনো থাকলে ওজু শুদ্ধ হবে না। (মাজমাউন আনাহোর)
ওজুর সুন্নতসমূহ
ওজুতে মোট চৌদ্দটি সুন্নত। যেমন–
- বিসমিল্লাহ বলে ওজু শুরু করা
- উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করা
- তিনবার কুলি করা
- নাকে পানি দিয়ে তিনবার পরিস্কার করা
- মেসওয়াক করা
- সমস্ত মাথা একবার মাসেহ করা
- প্রতি অঙ্গ তিনবার করে ধৌত করা
- কান মাসেহ করা
- উভয় হাতের আঙুল মাসেহ করা
- উভয় পাতের আঙুল মাসেহ করা
- নিয়ত করা
- দাড়ি ঘন হলে খিলাল করা
- এক অঙ্গ না শুকাতে অপর অঙ্গ ধৌত করা
- ধারাবাহিকতা রক্ষা করা এবং পানি বেশি খরচ না করা।
ওজুর মুস্তাহাবসমূহ
ওজুর ভিতর মোট চৌদ্দটি কাজ মুস্তাহাব। যেমন–
- ডান অঙ্গ হতে ওজু শুরু করা
- ওজু করে নামাজের জন্য তৈরী থাকা
- ওজুর নিয়ত মুখে ও অন্তরে বলা
- ওজুর দোয়াসমূহ পাঠ করা
- আংটি থাকলে উহা নেড়ে চেড়ে ধোয়া
- সমস্ত মাথা, কান, ঘাড় মাসেহ করা
- ওজু শেষে একবার সূরা ক্বদর পাঠ করা
- প্রতি অঙ্গ ধোয়ার সময় বিসমিল্লাহ বলা
- কেবলামুখী হয়ে বসা
- ওজু করার সময় কোন কথা না বলা
- উচ্চস্থানে বসে ওজু করা
- ওজু শেষে অবশিষ্ট কিছু পানি দাঁড়িয়ে কেবলা মুখী হয়ে পান করা
- ওজু করার পর দুই রাকআত তাহিয়্যাতুল ওজু নামায আদায় করা
- আকাশের দিকে মুখ করে কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করা
ওজুর মাকরুহসমূহ
- মুখের মধ্যে জোরে পানি ছিটিয়ে দেয়া
- ওজর ব্যতীত বাম হাত দ্বারা মুখে ও নাকে পানি দেয়া ও ডান হাত দ্বারা নাক পরিস্কার করা
- ওজুর সময় বাজে কথা বলা
- ওজুর অঙ্গ সমূহ তিনবারের বেশি ধোয়া
- যে পাত্রের দিকে দৃষ্টি যায় না সেই পাত্র দ্বারা ওজু করা
- ওজুর পানির মধ্যে ইচ্ছেকৃতভাবে থুথু ফেলা
- ওজর ব্যতীত অপরের সাহায্যে ওজু করা
ওজু ভঙ্গের কারণসমূহ
- পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হওয়া। যেমন- পেশাব, পায়খানা, রক্ত-পূঁজ ইত্যাদি
- মুখ ভরে বমি হওয়া
- শরীরের কোন ক্ষতস্থান হতে রক্ত, পুঁজ কিংবা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া
- নামাযের ভিতর উচ্চস্বরে হাসা
- নেশার বস্তু পান করে নেশাগ্রস্থ বা বেহুশ হলে
- চিত বা কাত হয়ে অথবা কোন কিছুতে ঠেস দিয়ে নিদ্রা গেলে
- দাঁতের গোড়ালী বা মুখের মধ্য হতে রক্ত বের হলে
- উলঙ্গ অবস্থায় নর-নারীর যৌনাঙ্গ একত্রিত হলে
- তায়াম্মুম অবস্থায় পানি পেয়ে ওজু করতে সক্ষম হলে
মেসওয়াকের বিবরণ
নামায পড়ার নিমিত্তে ওজু করার আগে স্ত্রী-পুরুষ সবাই মেসওয়াক করা খুব ছওয়াবের কাজ। মেসওয়াক করে নামায পড়লে সকল রাকাতে ৯০ রাকাতের ছওয়াব পাওয়া যায়।
ওজুর নিয়ত
নাওয়াইতু আন আতাওয়াযযালা লিরাফইল হাদাসি ওয়াসতি-বাহাতাল্লিস সালাতি ওয়া তাকাবরুবান ইল্লাল্লাহি তাআ’লা।
ওজুর দোয়া
বিসমিল্লাহিল আ’লিয়্যিল আ’যীম ওয়ালহামদু লিল্লাহি আ’লা দীনিল ইসলামি আল ইসলামু হাককুন ওয়াল কুফরু বাতিলুন।
ওজুর শেষান্তে দোয়া
আল্লাহুম্মাজ আ’লনী মিনাত্তাওয়াবীনা ওয়াজআ’লনী মিনাল মুতাতাহহিরীনা ওয়াজয়া’লনী মিন ই’বাদিকাস্ সালিহীনা সোবহানাকা ওয়া আতুবু ইলাইকা।
<