গানফায়ারের রীফকে ভয় করতে শুরু করেছে রডরিক আর ল্যাম্পনি। সামুদ্রিক ভূত আর পেত্নীদের অস্তিত্ব সম্পর্কে ওদের বিশ্বাস এত বেশি দৃঢ় যে ব্যর্থ হব জেনে ওদের সে-বিশ্বাস কখনও আমি ভাঙার চেষ্টা করিনি।
আমাদেরকে একের পর এক দুর্ঘটনা আর মন্দ ভাগ্যের শিকার হতে দেখে রাফেলাও কেমন যেন ঘাবড়ে গেছে, রডরিক আর ল্যাম্পনির প্ররোচনায় সে-ও বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। অলৌকিক শক্তির ওপর। ওদের ধারণা, গান ফায়ার রীফ একটা অভিশপ্ত জায়গা।
আমার কি মনে হয়, জানো? হাসির সঙ্গে কথাটা বলছে বটে রাফেলা, কিন্তু এর সবটাই কৌতুক নয়। মনে হয়, নিহত মুঘল রাজকুমাররা গুপ্তধনের পিছু নিয়ে গান ফায়ার রীফে চলে এসেছে, নিজেদের ধন-সম্পদ পাহারা দিচ্ছে ওরা… রোদ ঝলমলে এই। উজ্জ্বল সকালেও ভয়ে মুখ শুকিয়ে গেল রডরিক আর ল্যাম্পনির। বড়লাট জনি আপটেইল জোড়া, গতকাল যাদেরকে মেরেছি আমরা, জানো কারা ওরা? ওরাই সেই নিহত মুঘল রাজকুমার, ছদ্মবেশ নিয়ে ওদের আত্মারা হাঙ্গর সেজে ছিল…
রডরিকের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে পচা এক ডজন বালিহাঁস দিয়ে নাস্তা করেছে সে। দ্রুত ক্রস চিহ্ন আঁকল নিজের বুকে।
মিস রাফেলা, অস্বাভাবিক গম্ভীর হয়ে বলল ল্যাম্পনি, দয়া করে এ-ধরনের অশুভ কথা আপনি আর মুখে আনবেন না।
আনবেন না! ল্যাম্পনিকে সমর্থন করে বলল রডরিক।
আরে, তোমরা ব্যাপারটা এত সিরিয়াসলি নিচ্ছ কেন! আমি তো ঠাট্টা করছিলাম, প্রতিবাদের সুরে বলল রাফেলা।
এ-ধরনের ঠাট্টা দয়া করে আর কখনও করবেন না। আমরা ভূত পেত্নী-এই সব বিশ্বাস করি, শুধু তাই নয়, ওদেরকে সম্মান দিই, শ্রদ্ধা করি।
তাই নাকি! রাফেলা আহত হয়েছে, তাই একটু বিদ্রুপের সুরে বলল কথাটা।
আপনার হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে এসব আপনি বিশ্বাস করেন না, বলল ল্যাম্পনি। বিশ্বাস করুন বা না করুন, আমরা। জানি, ওরা আছে। আমাকে একটা পেত্নী একবার…
ধাক্কা দিয়ে একটা কবরের ভেতর ফেলে দিয়েছিল, ল্যাম্পনির হয়ে কথাটা শেষ করলাম আমি। গল্পটা জানা আছে আমার। ল্যাম্পনি আর রডরিকের মুখে অমন একশোবার এ গল্প শোনার সৌভাগ্য হয়েছে। আমার ধারণা, অন্ধকারে পা পিছলে পড়ে গিয়েছিল ও কবরটার ভেতর।
আর রডরিকের পেছনে প্রায় এ বছর ধরে লেগেছিল একটা। ভূত সুযোগ পেলেই সে…
রডরিকের বুকে পেচ্ছাব করে দিত, এবারও ল্যাম্পনির হয়ে কথাটা শেষ করলাম আমি। এ-গল্পটাও ওদের মুখ থেকে শুনতে হয়েছে আমাকে। রডরিক যখন বছরের মধ্যে দশ মাস মদ খেয়েল্যাম্পনির ভাষায় গরুর লাদার মত-পড়ে থাকত, তখনকার ঘটনা এটা। নেশা ভাঙার পর প্রায়ই নাকি এই ভূতের প্রস্রাব আবিষ্কার করত সে তার বুকে-শার্টটা ভিজে সপসপে হয়ে থাকত, আর সে কি দুর্গন্ধ! আমার ধারণা, মদ খেয়ে বেহুঁশ অবস্থায় বমি করে শার্টটা ভিজিয়ে রাখত রডরিক।
যাই হোক, চ্যানেল ধরে এগোবার পথে আমাদের মধ্যে আর কোন কথা হল না। ওরা তিনজনেই অস্বাভাবিক গম্ভীর।
অবশেষ রীফের নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছুলাম আমরা। হোয়েলবোটটাকে পুলের এক জায়গায় স্থির করল রডরিক।
বোতে বসে আছি আমি। ওরা তিনজন একসঙ্গে মুখ তুলে তাকাল আমার দিকে। ওদের ওপর দৃষ্টি বুলিয়ে মনে মনে হাসলাম আমি, বুঝলাম তিনজনই আতঙ্কিত হয়ে ভাবছে কাকে সঙ্গে নিয়ে পানির নিচে নামতে চাইব আমি আজ। গতকালকের ঘটনা দগদগে ঘায়ের মত জ্বলজ্বল করছে ওদের স্মৃতিতে।
আমি একাই নামছি, বললাম ওদেরকে। স্বস্তির সঙ্গে নড়েচড়ে বসল তিনজনই।
আমি না হয় যাই তোমার সঙ্গে, স্রেফ ভদ্রতার খাতিরে, অনিচ্ছাসত্ত্বেও বলল রাফেলা।
পরে, বললাম ওকে। প্রথমে আমি দেখে আসি হাঙ্গর আছে কিনা। যে-সব জিনিস ফেলে রেখে এসেছি কাল, সেগুলোও নিয়ে আসব আমি।
অত্যন্ত সাবধানে নামলাম। বোটের নিচে ঝুলে থাকলাম পাঁচ মিনিট, তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে দেখে নিচ্ছি পুলের গভীর প্রদেশ পর্যন্ত ভীতিকর বিশাল আকৃতি-গুলোর কোন আভাস পাওয়া যায় কিনা। রাতের জোয়ার এসে পানি বদলে দিয়েছে পুলের, আগের পানির সঙ্গে ভেসে গেছে মরা মাছের সব রক্ত আর মাংস কণা। স্পিয়ার, খালি স্কুবা সেট, নষ্ট ডিমাণ্ড ভাল নিয়ে পানির ওপর ফিরে এলাম আমি। পুলে হাঙ্গর নেই শুনে আজ এই প্রথম হাসল আমার ক্রুরা।
ওদেরকে উৎসাহিত করার জন্যে বললাম, ঠিক আছে, আজই আমরা হোন্ডটা ভাঙতে যাচ্ছি।
তুমি খোলের ভেতর দিয়ে ঢুকতে চাও, মাসুদ? জানতে চাইল রডরিক।
খোল ভাঙতে হলে এক জোড়া প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটাতে হবে, বললাম আমি। তা আমি চাই না। প্যাসেঞ্জার ডেক দিয়ে হোল্ডের কুয়ায় ঢুকতে চাই। সহজে ওদেরকে বোঝাবার জন্যে ব্যাখ্যা করার সঙ্গে সঙ্গে স্লেটে একটা নকশা আঁকছি আমি। জাহাজটা উল্টে গেছে, তার মানে জায়গা বদল করেছে তার কার্গো। ওই বাল্কহেডের ঠিক পেছনে গাদা হয়ে আছে সব। এখানটায় যদি ফাটল সৃষ্টি করতে পারি, এক এক করে সব কার্গো কম্প্যানিয়নওয়ে দিয়ে টেনে আনতে পারব আমরা।
ওখান থেকে গানপোর্ট অনেক জটিল আর দুরের পথ, মাথায় সী ক্যাপ তুলে ন্যাড়া গম্বুজটা চিন্তিত ভঙ্গিতে চুলকাচ্ছে রডরিক।
গানপোর্ট আর গানডেক মইয়ের কাছে দুটো কপিকল তৈরি করে নেয়া যায়।
মেলা কাজ, বিষন্ন দেখাচ্ছে রডরিককে।
ঠিক, বললাম আমি। তাই হোল্ডে ঢোকার পথ হয়ে গেলে তোমাকে দরকার হবে ওখানে আমার। রাফেলার দিকে তাকালাম আমি। এক্সপ্লোসিভ সেট করার কাজে সাহায্য দরকার আমার, তোমাকে নিয়ে যেতে চাই আমি।
আসলে গতকালের ভয়টা থেকে বের করে আনতে চাই ওকে আমি। কুয়ার দেয়াল ভেঙে আজ আমরা ক্যাম্পে ফিরে যাব। বিস্ফোরণের পরপরই পানিতে নামতে যাবার মত ভুল আর আমরা করছি না। রাতের মধ্যে মরা মাছ ভাসিয়ে নিয়ে যাবে জোয়ারের স্রোত। কাল আবার ফিরে আসব আমরা।
নিঃশব্দে মাথা কাত করে রাজি হল রাফেলা।
পানিতে নেমে গানপোর্ট দিয়ে ভোরের আলোর ভেতর ঢুকলাম আমরা। প্রথমবার এসে নাইলন লাইন বেঁধে রেখে গিয়েছিলাম, সেটাই আমাদেরকে গাইড করে গানডেক, সেখান থেকে কম্প্যানিয়ন ল্যাডার ধরে প্যাসেঞ্জার ডেক, তারপর টানেলের ভেতর দিয়ে ফরওয়ার্ড হোল্ডের বেঢপ ভাবে ফুলে থাকা বাল্কহেডের সামনে নিয়ে এল।
বাল্কহেডের কোণে এবং মাঝখানে ছয়টা হাফস্টিক জেলিগনাইট পেরেক দিয়ে আটকালাম আমি। রাফেলা টর্চের আলো ফেলে সাহায্য করল আমাকে।
হোয়েলবোটে ফিরে এসে আমরা যখন স্কুবা গিয়ার খুলছি, এই সময় বিস্ফোরণ ঘটাল রডরিক। বিস্ফোণের ধাক্কাটা জাহাজের খোলই বেশিরভাগ হজম করে নিল, পানির ওপর ক্ষীণ একটা স্পন্দন ছাড়া আর কিছুই টের পেলাম না আমরা।
তখুনি পুল ত্যাগ করলাম আমরা। সামনে একটা অলস দিন, তাই দেখে খুব খুশি রাফেলা। আবার আগামীকাল ফিরব আমরা, ইতিমধ্যে আজকের মরা মাছগুলোকে জোয়ারের স্রোত এসে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।
বিকেলে আমি আর রাফেলা দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে এলাম পিকনিক করতে। এক ঝুড়ি ভর্তি খাবারদাবার নিয়ে এসেছি আমরা, তার সঙ্গে রয়েছে এক বোতল স্কচ হুইস্কি আর এক বোতল শ্যাম্পেন। এসবের সঙ্গে যোগ হল বালি খুঁড়ে বের করা বড় আকারের স্যাণ্ড ক্ল্যাম। এগুলো জলজ লতাপাতা দিয়ে মুড়ে আবার আমি বালিতে পুঁতে রাখলাম, তার ওপর কাঠ জড়ো করে একটা আগুন জ্বালল রাফেলা।
সূর্য নেমে এল দিগন্তরেখার ওপর। ওদিকে মুখে তোলার উপযুক্ত হয়ে উঠেছে ক্ল্যামগুলোও। শ্যাম্পেন, খাবার, অস্তগামী সূর্যের টকটকে লাল আভা আর ঠাণ্ডা বাতাস নরম একটা প্রতিক্রিয়া ঘটাল রাফেলার ওপর। ওর চোখে এসে বাসা বাঁধল ঝলমলে স্বপ্নেরা, গায়ের সোনা রঙ গলতে শুরু করেছে। আর। আকাশ থেকে লালিমার শেষ রেশটুকু মুছে নিয়ে সূর্য পথ করে দিল ইয়া বড় এক মানসপ্রিয়া চঁাদকে।
সমস্ত বিশ্ব চরাচর মুগ্ধ বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে আছে। কি বিশাল আকাশ! সেখানে এরই মধ্যে অনন্তের পথে চোখ জ্বেলে রওনা হয়েছে তারার দল। আর মাটির পৃথিবীতে আমরা দুজন দুজনের হাতে হাত রেখে চোখে চোখ রেখে অপলক তাকিয়ে আছি, বুকে জ্বলছে নির্বাক অনন্ত প্রেম। কিছু বলতে চাইল রাফেলা, কিন্তু সন্ধ্যার কোমল সৌন্দর্য বিহ্বল করে ফেলেছে ওকে, গলা বুজে গেছে ওর। আর আমি, এই মহান সৌন্দর্যের অপার মহিমা এক বিন্দু নষ্ট করতে চাই না বলে কথা বলার কোন চেষ্টাই করলাম না।
প্রকৃতির অমিয় সুধা আকণ্ঠ পান করে নেশাগ্রস্ত মাতালের মত উঠে দাঁড়ালাম আমরা, খালি পায়ে ভিজে বালির ওপর দিয়ে হেঁটে ফিরে আসছি হাত ধরাধরি করে ক্যাম্পের দিকে। সৌজন্যের সঙ্গে আমাদেরকে পথ দেখাচ্ছে হলুদ চাঁদটা।
.
পরদিন সকালেই পুলে পৌঁছুলাম আমরা। হোয়েলবোট থেকে কপিকল সরঞ্জাম নামালাম রডরিক আর আমি। গানডেকে সেগুলো রেখে খোলের ভেতর ঢুকলাম আমরা।
কুয়ার বাইরের গায়ে ফিট করা বিস্ফোরক ডেকিং আর প্যাসেঞ্জার কেবিনের বাল্কহেডগুলো ধসিয়ে দিয়েছে, লম্বা। প্যাসেজটার চারভাগের এক ভাগ চাপা পড়ে গেছে তাতে।
রডরিককে কপিকল তৈরির কাজে লাগিয়ে দিয়ে ভেসে চলে এলাম আমি সবচেয়ে কাছের কেবিনটায়। বিধ্বস্ত, ফাটল ধরা প্যানেলিংগুলো দেখে নিলাম টর্চের আলো ফেলে। আর সব জায়গার মত কেবিনের ভেতরেও মোটা জলজ উদ্ভিদের পিচ্ছিল স্তর জমেছে, তবে এর নিচে সাধারণ ফার্নিচারের আকারগুলো চিনতে পারছি আমি।
ডেক অর্থাৎ মেঝেতে হাজারটা জিনিস ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এখানে সেখানে থামছি আমি, এটা সেটা তুলে পরীক্ষা করছি। চীনামাটির ভাঙা প্লেট রূপোর তৈরি মল, চুলের কাটা, কসমেটিক পট, সেন্ট বটল, ছোটখাট ধাতব জিনিস, এবং ভাঁজ করা মসৃণ কাদা যেগুলো এককালে কাপড় ছিল-এই সব দেখার ফাঁকে রিস্টওয়াচে টর্চের আলো ফেললাম আমি। ওপরে ওঠার সময় হয়েছে আমাদের, এয়ার বটল বদলাতে হবে। ঘুরতে যাচ্ছি, এই সময় চারকোণা একটা জিনিস চোখে পড়ল আমার। টর্চের আলো ফেলে এগিয়ে গেলাম সেটার দিকে। কাদা আর শ্যাওলার স্তর সরিয়ে হাতে তুলে নিলাম জিনিসটা। কাঠের একটা বাক্স। আকারে পোর্টেবল ট্রানজিসটার রেডিওর চেয়ে বড় নয়। কিন্তু ঢাকনাটা মাদার-অব-পার্ল আর টরটয়েজ শেল দিয়ে সুন্দর কারুকাজ করা। বাক্সটা বগলদাবা করে বেরিয়ে এলাম আমি। কপিকল তৈরি শেষ করে গানডেক মইয়ের পাশে আমার জন্যে অপেক্ষা করছে রডরিক।
হোয়েলবোটের পাশে ভেসে উঠে বাক্সটা ধরিয়ে দিলাম আমি ল্যাম্পনির হাতে।
একেবারে খালি হাতে ফিরে আসনি, সেজন্যে ধন্যবাদ! একটু বিদ্রুপের সুরে কথাটা বলে আমাদের জন্যে কফি তৈরি করতে বসল রাফেলা।
নতুন স্কুবা বলে আমাদের জন্যে ডিমাণ্ড ভালভ চার্জ করছে। ল্যাম্পনি, একটা চুরুট ধরিয়ে বাক্সটা নিয়ে বসলাম আমি।
সময় আর লোনা পানি বাক্সটার ক্ষতি করতে কিছু বাকি রাখেনি। ওপরের ছাল পচে কাদা হয়ে গেছে। রোজউডে চিড় ধরেছে, তালা আর আঙটা ক্ষয়ে গেছে অর্ধেক।
গলুইয়ে আমার পাশে এসে বসল রাফেলা, সাগ্রহে তাকিয়ে আছে বাক্সটার দিকে। সঙ্গে সঙ্গে চিনতে পারল ও, বলল, কি বল তো এটা? লেডিস জুয়েল বক্স। খোল, রানা। দেখি কি আছে ভেতরে।
তালার ভেতর একটা স্ক্রু ড্রাইভার ঢুকিয়ে চাপ দিতেই আঙটা খুলে গেল, লাফিয়ে উঠে ঢাকনিটা চলে গেল পেছন দিকে।
ওমা! চোখ দুটো বিস্ফারিত করে বিস্মিত আনন্দে চেঁচিয়ে উঠল রাফেলা। তার হাতটাই সবার আগে ঢুকে গেল বাক্সের ভেতর, প্রকাণ্ড একটা লকেট সহ মোটা চেইন তুলে নিয়ে বেরিয়ে এল হাতটা। কম করেও আট ভরি সোনার ওটা।
বাক্সের ভেতর সবাই এখন হাত ভরছে। সোনা আর নীলা পাথর দিয়ে তৈরি কানের একজোড়া দুল বের করে আনল। ল্যাম্পনি, সেটা তার পুরানো তামার ইয়াররিঙ জোড়াকে কান থেকে হটিয়ে দিয়ে জায়গা দখল করল। ওদিকে প্রায় এক পাউণ্ড ওজনের একজোড়া ব্রেসলেট আর দশ ভরি ওজনের একটা নেকলেস নিয়েছে রডরিক, নেকলেসটা গলায় পরে হাসছে সে।
আমার বেগমকে মানাবে এটা, মন্তব্য করল সে।
উচ্চ-মধ্যবিত্ত কোন এক গৃহিণীর ব্যক্তিগত গহনাগাটির বাক্স এটা, কোন অলঙ্কারই খুব একটা বেশি দামী নয়, কিন্তু সংগ্রহের। সংখ্যা এবং প্রত্যেকটির নির্মাণ সৌন্দর্য অতুলনীয়। বলাই বাহুল্য, বেশিরভাগ অলঙ্কার দখল করে নিল মিস রাফেলা, তবে ওদের কাড়াকাড়ি থেকে সাদামাঠা একটা সোনার ওয়েডিং ব্যাণ্ড কোনরকমে ছিনিয়ে নিতে পারলাম আমি।
ওটা দিয়ে কি করবে তুমি? রুখে উঠে জানতে চাইল। রাফেলা, বাক্সের ছোট্ট একটা জিনিসও হাতছাড়া করতে রাজি নয় ও।
কি করব তা আমার মনই জানে, বললাম ওকে। তবে শেষ পর্যন্ত এটা তোমার ভাগেই পড়বে। কথাটা শেষ করে ভুরু নাচিয়ে হাসলাম আমি, কিন্তু হাসির তাৎপর্যটুকু বৃথা গেল, কারণ এরই মধ্যে আমার ওপর আগ্রহ হারিয়ে আবার বাক্সটার দিকে সম্পূর্ণ মনোযোগ ঢেলে দিয়েছে রাফেলা। ভেতরে হাত ঢুকিয়ে হাতড়াচ্ছে।
রডরিকের দিকে চোখ পড়তে বিস্ময়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম আমি। প্রকাও কালো-পাহাড়টা বাঙালী নববধূর মত গহনায় ঢাকা পড়ে গেছে। পানিতে আবার ওকে নামাতে ঝামেলা পোহাতে হল আমাকে, কিন্তু প্যাসেঞ্জার ডেকে একবার আমরা নামতেই ধ্বংস স্কুপের মাঝখানে ঝাঁপিয়ে পড়ে দানবের মত কাজে লেগে গেল সে।
কপিকল আর আমাদের দুজনের মিলিত শক্তি দিয়ে প্যাসেজ থেকে ধসে পড়া প্যানেলিং আর টিম্বার বাল্ক সরালাম আমরা, সব গানডেকে নিয়ে এসে একধারে জড়ো করে রাখলাম।
ফরওয়ার্ড হোল্ডের কুয়ার কাছে যখন পৌঁছুলাম প্রায় শেষ হয়ে এসেছে আমাদের এয়ার সাপ্লাই। কুয়ার ভারি প্ল্যাঙ্কের দেয়াল বিস্ফোরণের ধাক্কায় ভেঙে গেছে, গর্তের ভেতর দেখা যাচ্ছে নিরেট মালপত্রের কালো আকৃতি।
পরদিন বিকেলে হোল্ডে ঢুকলাম আমরা। আশা করিনি আমাদের সামনে কাজের এতবড় একটা পাহাড় রয়েছে। হোল্ডের কার্গোগুলো লোনা পানিতে একশো বছরের বেশি ডুবে রয়েছে। নব্বই ভাগ কনটেইনার পচে খসে পড়েছে, ভেতরের জিনিসগুলো কালো এবং শক্ত কাদায় পরিণত হয়েছে। এই কাদার সঙ্গে জড়িয়ে এবং গেঁথে রয়েছে লোহার কনটেইনার, ধাতব এবং পচনশীল নয় এমন সব জিনিসপত্র। এসব উদ্ধার করার জন্যে এই কাদা খুঁড়তে হবে আমাদেরকে।
কাজে হাত দিতে না দিতে দেখা দিল আরেক সমস্যা। কাদার ঢিপি একটু ছুঁলেই সঙ্গে সঙ্গে কালো রঙের জঞ্জাল মেঘের মত উঠছে পানিতে, সেই মেঘগুলোকে ভেদ করতে পারছে না। টর্চের আলো, ফলে গাঢ় অন্ধকার ঘিরে ধরছে আমাদেরকে।
বাধ্য হয়ে শুধু হাতের স্পর্শ দিয়ে কাজ করছি আমরা। অস্বস্তিকর পরিবেশ, কাজও এগোচ্ছে অত্যন্ত ধীর গতিতে। কাদার ভেতর নিরেট কিছু হাতে পড়লেই সেটাকে আমরা টেনে টুনে বের করে আনছি, তারপর ঠেলেঠুলে প্যাসেজ দিয়ে নিয়ে এসে কপিকলের সাহায্যে গানডেকে নামাচ্ছি, তারপর পরীক্ষা করে দেখছি জিনিসটা কি আনলাম। ভেতরের জিনিস বের করার জন্যে কখনও আমাদেরকে কন্টেইনারের বাকিটুকু ভেঙে ফেলতে হচ্ছে।
পরীক্ষা করে দেখার পর যেগুলো ফালতু বা অল্প মূল্যের। সেগুলোকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছি কাজের জায়গাটা পরিষ্কার রাখার জন্যে। প্রথম দিন কাজের শেষে আমরা মাত্র একটা জিনিস উদ্ধার করলাম যেটাকে হোয়েলবোটে তুলব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শক্ত কাঠের একটা বাক্স, ওপরটা চামড়া দিয়ে আর কোণগুলো মোটা পিতলের পাত দিয়ে মোড়া। আকারে বড় একটা কেবিন ট্রাঙ্কের মত।
বাক্সটা এত ভারী যে দুজনে ধরেও সেটাকে আমরা তুলতে। পারলাম না। শুধু ওজন লক্ষ্য করেই প্রচণ্ড আশা জাগল আমার। বিশ্বাস করতে শুরু করেছি এর ভেতর বাঘ সিংহাসনের একটা অংশ নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু বাক্সটা উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ভারতীয় গ্রামের একজন ছুতোর মিস্ত্রি আর তার ছেলেদের তৈরি বলে মনে হয় না, তবে বোম্বে থেকে জাহাজে তোলার আগে সিংহাসনটা নতুন করে প্যাক করাও হয়ে থাকতে পারে।
এই বাক্সে সিংহাসনের কোন অংশ যদি থাকে, পানির মত সহজ হয়ে যাবে আমাদের বাকি কাজ। তখন আমরা জানতে পারব ঠিক কি ধরনের আরও বাক্স খুঁজছি আমরা। কপিকল আর নিজেদের গায়ের জোর খাটিয়ে গানডেকে, সেখান থেকে গানপোর্টে বের করে আনলাম আমরা বাক্সটাকে। ওপরে ওঠাবার সময় খুলে বা ভেঙে যেতে পারে, তাই একটা নাইলনের কার্গো নেট দিয়ে জড়িয়ে ফেলা হল ওটাকে। এরপর নেটের সঙ্গে বাঁধলাম ক্যানভাসের কয়েকটা এয়ারব্যাগ। সেগুলো আমাদের এয়ার বটলের বাতাস দিয়ে ভরা হল।
তোলার সময় দরকার মত এয়ারব্যাগের বাতাস কমিয়ে বাড়িয়ে দিয়ে সোজা হোয়েলবোটের দিকে কোর্স কন্ট্রোল করছি আমরা। ভেসে উঠলাম হোয়েলবোটের পাশে, ল্যাম্পনি আমাদেরকে ছয়টা নাইলন স্লিং ধরিয়ে দিল, সেগুলো দিয়ে বাক্সটা বেঁধে তারপর বোটে উঠলাম।
এত বেশি ওজন বাক্সটার, বোটের কিনারা দিয়ে সেটাকে তোলার সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেল আমাদের। আমরা তিনজন মিলে টেনে তুলতে গেলেই বোট কাত হয়ে যাচ্ছে, যে-কোন মুহূর্তে উল্টে যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত একটা মাস্তুল খাড়া করতে হল, সেটাকে আমরা ডেরিক হিসেবে ব্যবহার করলাম। অগত্যা বাধ্য হয়ে পানি থেকে উঠে ঝুলতে ঝুলতে এগিয়ে এসে বোটে নামল বাক্সটা। এক মুহূর্ত দেরি না করে হোয়েলবোটে ঘুরিয়ে নিল রডরিক, দ্বীপে ফিরছি আমরা। জোয়ারের ফোলা, ফাঁপা স্রোত পিছু নিয়েছে আমাদের।
রক্তের ভেতর টগবগ করে ফুটছে প্রচণ্ড কৌতূহল, রাফেলা একটা প্রস্তাব দিতেই আমরা সবাই চিৎকার করে তাকে সমর্থন করলাম। ঠিক হল, বাক্সটাকে গুহার ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হবে না, তার আগে সৈকতেই খুলে দেখতে হবে কি আছে ওটার ভেতর।
জেনি বারের সাহায্যে ঢাকনাটাকে আক্রমণ করল রডরিক। ওর ঘাড়ের ওপর হুমড়ি খেয়ে রয়েছে পাশাপাশি রাফেলা আর ল্যাম্পনি। ঢাকনির তালাটা প্রকাণ্ড, কিন্তু লোনা পানিতে অনেকদিন পড়ে থাকায় ক্ষয়ে গেছে পিতল। প্রথমদিকে খুব সাহসের সঙ্গে প্রতিরোধ করল সেটা রডরিকের অত্যাচার, তারপর। দুটুকরো হয়ে ভেঙে গেল। ঢাকনিটা তুলল রডরিক।
সঙ্গে সঙ্গে হতাশার একটা ধাক্কা অনুভব করলাম বুকে। দেখতে পাচ্ছি, সিংহাসন নেই এর ভেতর। কিন্তু রাফেলা যখন হাত ঢুকিয়ে ভেতর থেকে একটা গোল থালা বের করে এনে পরীক্ষা করতে শুরু করল, টনক নড়ে গেল আমার–বুঝলাম, অত্যন্ত দামী একটা সম্পদ পেয়ে গেছি আমরা।
প্রথম দর্শনেই থালাটাকে সোনার তৈরি বলে মনে হল আমার। বাক্সের ভেতর আশ্চর্য সুন্দরভাবে তৈরি করা র্যাক থেকে একটা প্লেট ছোঁ মেরে তুলে নিলাম আমি, নেড়েচেড়ে দেখে বুঝলাম সোনা নয়, এগুলো রূপোর তৈরি, তবে সোনার প্রলেপ। দিয়ে পালিশ করা হয়েছে।
সোনার প্লেটিং থাকায় একশো বছর ধরে চেষ্টা করেও লোনা পানি সেটটার কোন ক্ষতি করতে পারেনি। মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে আছি হাতে ধরা প্লেটটার দিকে। একজন অভিজ্ঞ রৌপ্যকারের সারা জীবনের সাধনার ফসল এই অপূর্ব সুন্দর শিল্পকর্ম, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই আমার মনে। প্লেটের মাঝখানে এই সেটের মালিকের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক প্রতিক চিহ্ন ফুটে এবং ফুলে রয়েছে, আর কিনারা বরাবর গায়ে গা ঠেকিয়ে রয়েছে। প্রাকৃতিক দৃশ্য-বনভূমি, হরিণ, মুসলমানী পোশাক পরা শিকারি শাহজাদা এবং পাখি।
প্রায় দুই পাউণ্ড ওজন হবে আমার হাতের এই প্লেটের, সেটাকে একপাশে সরিয়ে রেখে বাক্সের ভেতর থেকে এক এক করে বের করলাম বাকিগুলো। বাক্সটা অস্বাভাবিক ভারী লাগছিল, তার কারণ বোঝা গেল এখন। সেটে রয়েছে ছত্রিশ জন। মেহমানকে পরিবেশন করার জন্যে প্রয়োজনীয় সমস্ত ডিশ, প্লেট, আর কাটলারি। হাত ধোঁয়ার গামলা, স্যুপের গামলা, মাছের প্লেট, ডেজার্টের গামলা, বোন আর সাইড প্লেট, ওয়াইন কুলার, ডিশ কাভার, হরেক রকম পেয়ালা-সবগুলোয় ফুটে রয়েছে একই প্রতীক চিহ্ন আর প্রাকৃতিক দৃশ্য। সার্ভিং ডিশগুলো এক একটা বাচ্চাদের বেদিং টাবের মত বড়।
লেডিস অ্যাও জেন্টলমেন, ওদেরকে বললাম আমি, তোমাদের চেয়ারম্যান হিসেবে সম্পূর্ণ নিশ্চয়তা দিয়ে এই আশ্বাস আমি দিচ্ছি যে আমাদের অভিযান এরই মধ্যে লাভের মুখ দেখতে পেয়েছে।
স্কিপারের নেশা হয়েছে, সবজান্তার ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বলল ল্যাম্পনি। চকচকে কিছু ডিশ আর প্লেটের কি আর এমন মূল্য হতে পারে শুনি?
মুঘল সম্রাটদের মাত্র কয়েকটা স্বয়ংসম্পূর্ণ রূপোর ডিনার সেটের মধ্যে এটা একটা, ওদেরকে জানালাম আমি। এটা একটা অমূল্য সম্পদ।
কত? জানতে চাইল রডরিক। সন্দেহের দোলায় দুলছে সে।
গুড গড, তা আমি জানব কিভাবে! কার হাতে তৈরি এবং কে মালিক ছিল তার ওপর নির্ভর করছে এর গুরুত্ব আর অ্যান্টিক ভ্যালু। খোদ কোন একজন সম্রাটের হতে পারে এটা। সেক্ষেত্রে এর মূল্য হবে কল্পনাতীত। আবার এটা একজন সিপাহশালারের জিনিসও হতে পারে, হতে পারে কোন রাজকুমারের। সেক্ষেত্রেও প্রচুর অ্যান্টিক ভ্যালু রয়েছে এর।
রডরিকের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে ওর কাছে যেন আমি এক মুঠো হলুদ বালি সোনার গুঁড়ো হিসেবে বিক্রি করার চেষ্টা করছি।
কত? প্রশ্নটা আবার করল সে।
অ্যান্টিক কেনাবেচা করে এমন একটা প্রতিষ্ঠান, ধর, এক লাখ পাউণ্ড দিয়ে সাগ্রহে কিনতে চাইবে।
কে পাগল? জানতে চাইল রডরিক। সিরিয়াস দেখাচ্ছে ওকে। যারা অ্যান্টিকের ব্যবসা করে? নাকি তুমি?
কথাটা সত্যি রডরিক, আমার হয়ে উত্তর দিল রাফেলা। রানা বরং বেশ একটু কমিয়ে বলছে। এর দাম আরও অনেক বেশি।
নিজের বিচার বুদ্ধি এবং সৌজন্য বোধ, এই দুই শক্তির মাঝখানের ফাটলে আটকা পড়ে গেছে এবার রডরিক। রাফেলাকে মিথ্যেবাদিনী বলা অভদ্রতা হয়ে যায়, ওদিকে নিজের বিচার বুদ্ধি দিয়ে কোনমতেই বিশ্বাস করতে পারছে না যে এই সামান্য জিনিসের দাম এক লাখ পাউণ্ড হতে পারে। শেষ পর্যন্ত মধ্যপন্থা অবলম্বন করল সে-স্রেফ বোবা বনে গেল।
তবে, নারকেল গাছের ভেতর দিয়ে আমরা সবাই টেনে হিঁচড়ে বাক্সটাকে যখন গুহার দিকে নিয়ে যাচ্ছি, ওর আচরণের মধ্যে সতর্কতা এবং শ্রদ্ধা লক্ষ করলাম আমি। পানির ক্যানগুলোর পেছনে রাখলাম আমরা। তখুনি আমি ছুটে গিয়ে নিয়ে এলাম আনকোরা নতুন একটা হুইস্কির বোতল।
সিংহাসন যদি নাও পাই, ওদেরকে জানালাম আমি, আমার। মনে কোন খেদ থাকবে না।
ঢক ঢক করে গ্লাসের হুইস্কিটুকু শেষ করে বলল রডরিক, এক লাখ পাউণ্ড…হতেও পারে। দুনিয়ায় পাগল-ছাগলের তো আর কোন অভাব নেই।
ওই হোল্ড আর কেবিনগুলো আরও সাবধানে দেখতে হবে আমাদেরকে। কিছু যদি হাতের ছোঁয়া এড়িয়ে যায়, মূল্যবান জিনিস থেকে বঞ্চিত হব আমরা।
ঠিক তাই, আমাকে সমর্থন করে বলল রাফেলা। রূপপার ডিশ আর প্লেটের চেয়ে ছোট জিনিসগুলোরও সাংঘাতিক অ্যান্টিক
ভ্যালু রয়েছে। কিছুই ওখানে ফেলে রেখে আসা চলবে না।
সমস্যা হল একটু ছোঁয়া লাগলেই কাদার মেঘ সব অন্ধকার। করে দিচ্ছে, নিজের নাকের ডগা পর্যন্ত দেখতে পাই না, অসন্তুষ্ট হয়ে বলল রডরিক।
হুইস্কি ঢেলে ওর গ্লাসটা আরেকবার ভরে দিয়ে বললাম আমি, আচ্ছা, রডরিক, তোমার সেজো কাকার একটা সেন্ট্রিফিউগাল ওয়াটার পাম্প আছে, মাঙ্কি বে-তে, জানো তো?
আছে। কেন?
ওটা তার কাছ থেকে কদিনের জন্যে ধার চেয়ে আনতে পারবে তুমি?
চোখ মুখ পাকিয়ে গভীরভাবে দুশ্চিন্তা করছে রডরিক। একটু পর মুখ তুলে বলল। তোমার নাম করে চাইলে দেবে। কিন্তু কি হবে ওটা দিয়ে?
একটা ড্রজ পাম্প হিসেবে ব্যবহার করতে চাই ওটাকে আমি, দুপায়ের মাঝখানে মাটির ওপর একটা নকশা এঁকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিচ্ছি ওদেরকে। পাম্প। হোয়েলবোটে সেট করব আমরা, স্টিম হোসটা নেমে যাবে ভোরের আলোর ভেতরএইভাবে, আঙুল দিয়ে একে দেখালাম ওদেরকে। হোল্ড পরিষ্কার করার জন্যে ওখানে ওটাকে একটা ভ্যাকিউম ক্লিনার হিসেবে ব্যবহার করব আমরা-কাদা, আর তার সঙ্গে টুকিটাকি সব জিনিস টেনে তুলে আনবে বোটের ওপর…
হেই, স্কিপার, দারুণ বুদ্ধি বের করেছ! সঙ্গে সঙ্গে উৎসাহ দেখাল ল্যাম্পনি। তারপর আমরা কাদা থেকে খুঁটে তুলে নিতে পারব যা কিছু মূল্যবান বলে মনে হবে…
হ্যাঁ, বললাম আমি।
আরও এক ঘন্টা আলোচনা করে মূল ধারণার গলদগুলো দূর করলাম আমরা। এতক্ষণ অসীম শক্তির পরিচয় দিয়ে কোনরকমে উৎসাহ দেখানো থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পেরেছে রডরিক, কিন্তু শেষ দিকে নিজেকে চেপে রাখতে পারল না সে, ছোট্ট করে মন্তব্য করল, হ্যাঁ, এতে কাজ হতেও পারে।
যাও তাহলে, পাম্পটা নিয়ে এসো।
গলাটা আর একটু ভিজিয়ে নিই, অলস ভঙ্গিতে আড়মোড়া ভাঙল রডরিক।
অর্ধেক খালি বোতলটা ওর হাতে ধরিয়ে দিলাম আমি, বললাম, এটা সঙ্গে করে নিয়ে যাও, তাতে সময় বাঁচবে।
একলাখ পাউণ্ড, বিড় বিড় করে বলল রডরিক, উঠে দাঁড়াল সে। কি জানি, হতেও পারে!
ব্যাপারটা নিয়ে এখনও সশব্দে মাথা ঘামাচ্ছে ও, বুঝতে পেরে অবাক হলাম আমি।
ওভারকোট নিয়ে আসার জন্যে গুহার ভেতর গিয়ে ঢুকেছে রডরিক। রাফেলা বলল, কারও চোখে যাতে পড়ে না যায় সেব্যাপারে ওকে তুমি সাবধান করে দেবে না?
রডরিক আমার চেয়ে অনেক বেশি সাবধানী, জানালাম ওকে।
<