আই লাভ ইউ, ম্যান – ৩

০১.

এক আজ আরেক শনিবার।

গল্পের তৃতীয় এবং শেষ অংশটুকু শোনাবে আজ রানা। সেই রকমই কথা ছিল।

কিন্তু ভয় পেয়েছে সোহানা। লক্ষ করেছে সে, দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই কেমন যেন বিষন্ন আর গম্ভীর হয়ে উঠছে রানা। মুখের দিকে তাকানো যায় না। মাঝে মাঝে সন্দেহ হয়েছে তার, রানাকে এই অতীত স্মৃতি রোমন্থনে বাধ্য করাটা কি সত্যিই উচিত হল? আশ্চর্য এক কাহিনী জানা যাচ্ছে বটে, মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছে সে, নতুন করে চিনছে রানাকে, জানছে-কিন্তু গল্পটা বলতে গিয়ে কি যে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হচ্ছে রানার মধ্যে, সেটাও তার নজর এড়ায়নি। ওকে কষ্ট দিতে রীতিমত খারাপ লাগছে তার এখন। অথচ শেষ পর্যায়ে এসে এখন…ঠিক কি করা উচিত বুঝে উঠতে পারছে না সোহানা।

দুপুর দুটো। অফিস ছুটি।

আগে থেকেই তৈরি হয়ে আছে সোহানা। নিজের রুম থেকে রানা বেরুতেই ওকে অনুসরণ করল সে, ধরে ফেলল এলিভেটরের কাছে এসে। তোমার সঙ্গে যাচ্ছি আমি, ভয়ে ভয়ে মৃদুকণ্ঠে বলল।

ঘাড় ফিরিয়ে দেখল তাকে রানা। ধমক খাবার জন্যে মনে মনে তৈরি হয়ে গেল সোহানা। কিন্তু ওকে বিস্মিত করে দিয়ে মৃদু গলায় রানা শুধু বলল, এসো।

নিচে নেমে লাল ডাটসানে উঠল রানা। পাশের সিটে সোহানা উঠে বসতেই স্টার্ট দিয়ে ছেড়ে দিল গাড়ি। পথে কোন কথা হল না। একটা চাইনিজ রেস্তোরায় ঢুকে প্রায় নীরবেই লাঞ্চ সারল ওরা।

কি হয়েছে তোমার, রানা? খাবার থেকে হঠাৎ মুখ তুলে জানতে চাইল সোহানা।

সোহানার মুখের দিকে তাকাল না রানা। চেহারায় সেই বিষন্ন ভাবটা রয়েছে এখনও। মৃদু কণ্ঠে বলল, কিছু না।

ম্লান দেখাচ্ছে তোমাকে। কি যেন ভাবছ।

সোহানা, নিচু গলায় বলল রানা, তোমার মনে আছে, গল্পটা তোমাকে শোনাতে চাইনি আমি?

আছে।

অনেক চেষ্টা করেছিলাম এড়িয়ে যাবার?

হ্যাঁ।

কেন জানো?

কেন?

ভয়ে।

ভয়ে? ভুরু কুঁচকে উঠল সোহানার। কিসের ভয়?

জবাব দিল না রানা। গম্ভীর। আর কোন প্রশ্ন করতে সাহস পেল না সোহানা।

লাঞ্চ সেরে সোহানাকে নিয়ে সোজা বাড়িতে চলে এল রানা। মনে মনে স্থির করেছে, দুপুরেই শুরু করবে আজ, যেমন করে হোক আজই শেষ করতে হবে ওর গল্পটা, তারপর মুছে ফেলতে হবে সবকিছু মনের পর্দা থেকে।

কফি? জানতে চাইল সোহানা।

ইয়েস, থ্যাংকিউ।

বাড়ির সামনের খোলা বারান্দায় পাশাপাশি বসল ওরা সোফায়। পাশের টিপয়ে কফির কাপ, সামনে সুন্দর সবুজ ঘাসে ছাওয়া লন, সাজানো ফুলের বেড, শজনে আর কৃষ্ণচূড়ার ডালে ছোট ছোট পাখিদের ব্যস্ততা। রানার একটা হাত তুলে নিল সোহানা নিজের হাতে।

ভয় কেন, রানা?

ভয় লাগে, তার কারণ, সোহানার হাতে মৃদু চাপ দিল রানা, স্মৃতি বড় বেদনাদায়ক, সোহানা। পুরানো সেইসব দিনের কথা আমি স্মরণ করতে চাই না। কিন্তু একবার যখন শুরু করেছি, সব মনে পড়ে যাচ্ছে-এ যেন ঠিক খুঁচিয়ে পুরানো ক্ষতটাকে দগদগে করে তোলা।

রানার চোখেমুখে ব্যথার ছাপ উঠতে দেখে সোহানা বলল, তবে না হয়…

না, তা হয় না, এপাশ-ওপাশ মাথা নাড়ল রানা। শুরু করার পর থেকে প্রতিটা খুঁটিনাটি সব মনে পড়ে যাচ্ছে আমার। এখন যদি শেষ না করি, তুমি তো কষ্ট পাবেই, নিজেও কষ্ট পাব। শুরু করি তাহলে, কেমন?

<

Super User