মায়ানমার সরকার মাত্র সাতদিনের ভিসা ইস্যু করেছে। আজ তার প্রথম দিন।

হংকঙের কাই টাক এয়ারপোর্ট থেকে প্লেন ধরল রানা। মায়ানমার এয়ারওয়েজের ননস্টপ ফ্লাইট। সামনে-পিছনের, দুই কেবিনের চারজন স্টুয়ার্ডই বার্মিজ পরনে বহুরঙা সারং, তার উপর স্বচ্ছ কাপড়ের ঢোলা ব্লাউজ পরেছে। এই পরিচ্ছদের নীচের অংশটাকে লুঙ্গিও বলা হয়, আর উপরের অংশটাকে বলে ইঙ্গি।

বার্মিজ বিমানবালারা আইল ধরে আসা-যাওয়া করছে, রানা। তাদের হাঁটার ভঙ্গির মধ্যে অদ্ভুত এক ঝাঁকি আবিষ্কার করল, যে। কারণে ইঙ্গির ভিতর তাদের উন্নত স্তন প্রতি মুহূর্তে লাফাচ্ছে।

দৃশ্যটা রানাকে মনে করিয়ে দিল কাল রাতে কী উপভোগ করেছে ও।

বিছানায় ওর বুকের সঙ্গে সেঁটে এসে নন্দিনী অপরূপা আদুরে। সুরে আবদার করেছে, আরেকটা দিন থাকো না, প্লিজ!

একটা মেয়েকে যতই ভালো লাগুক, তার সঙ্গে যতই ঘনিষ্ঠতা জন্মাক, এক নম্বরে থাকবে কাজ।

এবং পাশাপাশি সতর্কতা। সেই সতর্কতার কারণেই নন্দিনীকে রানা বলেনি যে মায়ানমারে যাচ্ছে ও। যদি সম্ভব হয় যতটা সম্ভব কম মিথ্যেকথা বলতে চায়।

নন্দিনী অনেক কথাই বলেছে, তা থেকে ধরে নেওয়া চলে আগামী কয়েকদিন মায়ানমারে ঢুকছে না সে। আশা করা যায় তার আগেই দেশটা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে রানা, পকেটে মাইক্রোফিল্মটা নিয়ে।

ঘনিষ্ঠ মুহূর্তগুলো স্মৃতির পথ ধরে ফিরে ফিরে আসছে মনে।

ব্যাপারটা সত্যি খুব মজার আর অবাক করা।

কোনটা?

তুমিই প্রথমপুরুষ যাকে বিশ্বাস করেছি, যার সঙ্গে নিজেকে আমার সম্পূর্ণ নিরাপদ মনে হয়েছে। আমি অত্যন্ত লজ্জা আর অসহায় বোধ করতাম…

লাজুক? হ্যাঁ, হেসে উঠে বলল রানা। অসহায়? নেভার!

আপনি সন্তুষ্ট, সার? সংবিৎ ফিরল বিমানবালার মধুর কণ্ঠে।

ওহ, ইয়েস! বলল রানা, হঠাৎ করে উপলব্ধি করল নন্দিনী শুধু ওর শারীরিক চাহিদা মেটানোর একটা মেশিন নয়, তারচেয়েও অর্থবহ কিছু। মেয়েটার সরলতা ওর ভালো লেগেছে। এমনকী আত্মসমর্পণের ভঙ্গিটিও।

তবে কাজের প্রাধান্য আগে। নন্দিনী অপরূপাকে এড়িয়ে না গিয়ে আর কোন উপায় ছিল না ওর। নতুন একটা অ্যাসাইমেনন্টে রয়েছে ও, এখনও জানে না মাইক্রোফিল্মটা কোথায় আছে। জানার পর ঝামেলা আরও বাড়বে। হাতে পেতে হবে ওটাকে, তারপর সবাইকে ফাঁকি দিয়ে মায়ানমার থেকে বের করে নিয়ে যেতে হবে।

বলা যায় না, হয়তো এই মুহূর্তেও ওর উপর নজর রাখা হচ্ছে। প্যাসেঞ্জার সেজে ওর আশপাশেই হয়তো বসে আছে কেউ। কিংবা বিমানবালাদের কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শত্রুপক্ষ তো অনেক, তাদের সবার সম্পর্কে ওর ধারণাও নেই।

.

বিকেলের দিকে মায়ানমার জাতীয় মিউজিয়ামে পৌছাল রানা।

ট্যাক্সি ছেড়ে দিয়ে পায়ে হেঁটে এল ও। সরু রাস্তাটার নাম পিয়ারে স্ট্রিট, সেটা ধরে খানিক হাঁটার পর ডান দিকে বাঁক ঘুরে চলে এল শয়ে ডাগন প্যাগোডা রোড। প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে। কালচারাল ইনস্টিটিউট তৈরি করা হয় এখানে। ধীরে ধীরে ওটার। পাশে বিরাট সব দালান গড়ে উঠেছে-ন্যাশনাল মিউজিয়াম, ন্যাশনাল আর্ট গ্যালারি, ন্যাশনাল লাইব্রেরি আর ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অভ মিউজিক, ড্রামা অ্যান্ড ডান্স।

ঘাড় ফিরিয়ে ফেলে আসা ফাঁকা রাস্তাটার দিকে তাকাল রানা। একটা বিড়াল পর্যন্ত নেই। ছায়ার ভিতরও কিছু নড়ছে না।

মিনিস্ট্রি অভ কালচার লেখা প্রবেশপথ দিয়ে ভিতরে ঢুকল রানা। মিউজিয়ামে পৌছাবার আগে মার্বেল পাথরের তিন প্রস্থ সিঁড়ির ধাপ টপকাতে হলো ওকে।

বিখ্যাত লায়ন থ্রোন বসানো হয়েছে একটা খিলানের পাশে। ১৯৬৪ সালে বার্মাকে ওটা ফিরিয়ে দেয় ব্রিটেন। রানা বিশেষ। আগ্রহ বোধ করছে না। সম্পূর্ণ অন্য এক কাল আর অন্য এক সংস্কৃতির খোঁজে এসেছে ও।

এই সময় নোটিশটা চোখে পড়ল, ইংরেজি আর বার্মিজ ভাষায় ছাপা হয়েছে।

হান সাম্রাজ্যের আর্টিফ্যাক্ট মাত্র আজ সকাল থেকে প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়েছে। করিডর ধরে এগিয়ে ডান দিকে বাঁক নিল রানা, দুটো হল আর একটা গ্যালারিকে পাশ কাটাল। এবার সামনে পড়ল একজন ইউনিফর্ম পরা গার্ড।

অ্যাডমিশন ফি হিসাবে অল্প কিছু কিয়াত দিয়ে ভিতরে ঢুকল। রানা, তারপর সরাসরি সেন্ট্রাল ডিসপ্লের কাছে চলে এল, তোউ ওয়ান-এর কাফন-সুট দেখার জন্য অস্থির হয়ে আছে।

ওয়াইন রঙের ভেলভেট রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে জেড পাথরের তৈরি বেরিয়াল সুট। কাঠের ফ্রেম দিয়ে বানানো, কাঁচ মোড়া একটা কেস-এর ভিতর। কেসটার পাশে আরেকজন গার্ডকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। এর আগে ডেথ সুটের শুধু একটা ফটো দেখেছে রানা, উপলব্ধি করল সেই ফটোয় জিনিসটার প্রতি সুবিচার করা হয়নি।

নীল-সবুজ বেরিয়াল আর্মার সম্পর্কে চোখ ঝলসানো শব্দ দুটোই শুধু মানায়। সোনার খুদে পাত আর জেড বসিয়ে গোটা জিনিসটা বোনা হয়েছে, ব্যবহার করা হয়েছে সোনারই তৈরি সুতো বা তার। আমারটা ছাড়া হান রাজকুমারীর কিছুই আর অবশিষ্ট নেই, তা সত্ত্বেও চাপা ফিসফাস আর নড়াচড়ার খসখস শব্দের ভিতর তার উপস্থিতি যেন অনুভব করা যায়-জেদি আর উদাসীন।

আর বোধহয় দশ-বারোজন ভিজিটর ধীর পায়ে ঘুরে ঘুরে প্রদর্শনীটা দেখছে, বেশিরভাগই ইউরোপ-আমেরিকার শ্বেতাঙ্গ-নিশ্চয় ট্যুরিস্টই হবে।

না, তাদের মধ্যে সিআইএ আর বিআইবি-র সেই দুজন নেই।

কেসটার সামনে থেকে সরে যেতে হলো রানাকে। ধরেই নিতে হয় কারও না কারও নজর আছে ওর উপর। তাদেরকে বুঝতে দেওয়া উচিত নয় ডেথ সুটটার প্রতি বিশেষ দুর্বলতা আছে ওর।

দূরে কোথাও গেল না, কাছেই থাকল রানা। এদিক-ওদিক। হাঁটা-চলার ফাঁকে ভালো করে দেখছে সুটটাকে।

প্রমাণ সাইজের ওই জেড আর্মার সুটের ভিতর কোথাও, রানা। নিশ্চিত, হয় মিন ভাইরা বা তাদের বিশ্বস্ত কোন লোক ফিল্মের একটা রোল লুকিয়ে রেখেছে। ওই রোলটা উদ্ধার করতে হবে। রানাকে। উদ্ধার করতে হবে ওর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবার আগেই, অর্থাৎ সাতদিনের মধ্যে।

গার্ড আর লোকজনের সামনে কেসটা সার্চ করা সম্ভব নয়। ওকে অপেক্ষা করতে হবে মিউজিয়াম খালি না হওয়া পর্যন্ত।

ঘোরাফেরা করার সময় চোখ-কান খোলা রেখেছে রানা। এখন পর্যন্ত কাউকে সন্দেহজনক চরিত্র বলে মনে হয়নি। তবে গার্ড লোকটা বারকয়েক তাকিয়েছে ওর দিকে।

এবার রানাও তার দিকে সরাসরি তাকাল। জানত চোখাচোখি হবে, হলোও। আর চোখাচোখি হতেই অমায়িক হাসল রানা, জিজ্ঞেস করল, কিউরেটরের সঙ্গে কি আলাপ করা সম্ভব, যিনি এই প্রদর্শনীর চার্জে আছেন?

নো ইংলিশ, বলে মাথা নাড়ল গার্ড।

ওন নে পার দে, আবার শুরু করল রানা, এবার স্থানীয় ভাষায়। চায়া-জু পায়ু-পাহ…

কী জানতে চায় বোঝাতে খানিক সময় লাগল রানার, তবে বোঝার পর বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাসল গার্ড। আপনি আমাদের ভাষা শিখেছেন, সেজন্যে ধন্যবাদ, সার! বলল সে। তারপর হাত তুলে গ্যালারির শেষ মাথাটা দেখিয়ে দিল রানাকে। ওদিকে সরু একটা করিডর দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি অনেকগুলো অফিস কামরা।

মিস্টার থাইগন লোবাংকে চাইবেন।

কিন্তু ব্যাপারটা অত সহজ হলো না। এগজিবিট হলের শেষ মাথায় পৌছানোর পর ইউনিফর্ম পরা আরেকজন সশস্ত্র গার্ড ওর পথ আগলে দাঁড়াল। চিনারা, কিংবা হয়তো বার্মিজরা কোন ঝুঁকি নিচ্ছে না; আয়োজন দেখে মনে হবে বিখ্যাত হীরে কোহিনুরকে পাহারা দিচ্ছে।

নো অ্যালাওয়িং, বলল গার্ড, কোমরের হোলস্টারে হাত। ফুটওয়্যারিঙ নট অ্যালাওয়িং।

মিস্টার থাইগন লোবাং, বলল রানা।

নো অ্যালাওয়িং, মুখস্থ বুলি আওড়াচ্ছে গার্ড। নো অ্যালাওয়িং।

আমি ব্যাটা তোর চাকরি খাওয়িং। সকৌতুকে ভয় দেখাল রানা। ভালো চাস তো থাইগন সাহেবকে জলদি খবর দেয়িং।

কী বুঝল আল্লাহ মালুম, পথ ছেড়ে দিল গার্ড, হাত তুলে দেখাল কোনদিকে যেতে হবে।

করিডর ধরে কিছু দূর আসার পর কিউরেটরের অফিসটা খুঁজে পেল রানা।

নক করল রানা। দরজা খুলল সুট-টাই পরা মধ্য বয়স্ক এক ভদ্রলোক। পেঁচার মত বড়বড় চোখ তার। মোটা কাঁচের চশমার ভিতর দিয়ে চোখ মিটমিট করে ভালো করে দেখছেন আগন্তুককে। আমি আপনার কোন সাহায্যে আসতে পারি? জানতে চাইলেন থাইগন লোবাং, পরিষ্কার ইংরেজিতে।

আশা করি, বলল রানা, তারপর নিজের পরিচয় দিল। আপনার প্রদর্শনী আমাকে মুগ্ধ করেছে, মিস্টার লোবাং। ওরিয়েন্টাল আর্ট আমার প্রথম দুর্বলতা, বিশেষ করে হান সাম্রাজ্যের মেয়াদ কালের। স্বীকার না করলে অন্যায় হবে-এক ছাদের নীচে এত সমৃদ্ধ কালেকশান অন্য কোথাও আমি দেখিনি।

আপনি এগজিবিট উপভোগ করছেন, সেজন্যে আমি খুশি। ভদ্রলোক হাসছেন।

দারুণ উপভোগ করছি, বড় ভালো লাগছে। তোউ ওয়ানএর বেরিয়াল সুট উজ্জ্বল একটা অর্জন-বিস্মিত করে। মাথা দোলাল রানা, পণ্ডিত বা সমঝদাররা যেমন দোলান। আর যদি তায়াং ঘোড়সওয়ার-এর প্রসঙ্গ তোলেন-আমার জানামতে। চয়েনসেন থেকে পাওয়া গেছে ওটা-ফর্ম আর মুভমেন্টের এমন সুষ্ঠু সংশ্লেষণ খুব কমই চোখে পড়ে, হোমওঅর্কে ফাঁকি না। দেওয়ায় গড় গড় করে বলে যাচ্ছে রানা।

প্লিজ, বললেন থাইগন লোবাং, হাত তুলে অফিস কামরার ভিতরটা দেখালেন। একটু বসবেন না? আপনার মত একজন বোদ্ধার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ খুব কমই জোটে ভাগ্যে। তারমানে এই নয় যে পণ্ডিতের অভাব, অভাব আসলে সফিসটিকেশনের।

নিজেকে আমি সম্মানিত বোধ করছি, মিস্টার লোবাং।

ওদের পিছনে বন্ধ হয়ে গেল দরজা।

.

আধঘণ্টা পর কিউরেটর মহোদয়ের অফিস থেকে সহাস্যে বেরিয়ে এল রানা। থাইগন লোবাং আজ রাতে ওর সঙ্গে ডিনার খাচ্ছেন। সত্যি কথা বলতে কি, ওর অতিথি হবার প্রস্তাব পেয়ে দ্রলোক রীতিমত সম্মানিত বোধ করছেন।

এখন রানার কাজ হবে, নিজের উদ্দেশ্য বুঝতে না দিয়ে প্রদর্শনী সম্পর্কে তাঁর কাছ থেকে যত বেশি সম্ভব তথ্য আদায় করা। ডিটেইলড় ফ্লোর প্ল্যান থেকে শুরু করে মিউজিয়ামের সিকিউরিটি অ্যারেঞ্জমেন্টের সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয় জানতে হবে ওকে।

পরিস্থিতি বেশ অনুকূল হয়ে উঠছে।

তারপর, সন্ধ্যার প্রথম লগ্নে ডিনারে বসে, আরও আশাবাদী হয়ে ওঠার কারণ দেখতে পেল রানা। শেরাটন ইন্টারন্যাশনালের রেস্তোরা ফ্যান্টাসিতে বসে ইরাবতী নদীতে নৌকার আসা-যাওয়া দেখল ওরা, সুস্বাদু চিনা রেসিপির স্বাদ নিল, আর স্থানীয় এক গায়িকার সুরেলা কণ্ঠের গান শুনল। আরও একটা কাজ খুব মন দিয়ে করল রানা-থাইগন লোবাং কথা বলে গেলেন, ও শুনল।

ভদ্রলোক সারাক্ষণ হাসলেন আর নিজেকে প্রকাশ করার তাগিদে সাড়া দিলেন।

কী জানেন, বললেন তিনি, খাওয়াদাওয়া শেষ হতে রানার কাছ থেকে বার্মার সবচেয়ে দামী চুরুট আর ব্র্যান্ডি গ্রহণ করার পর, সব মিলিয়ে বলতে হয় মিউজিয়ামের জন্য ব্যাপারটা স্রেফ একটা কালচারাল কু। চিন বন্ধু রাষ্ট্র হলেও, এতদিন আমাদের রক্ষণশীলতা এ-ধরনের সাংস্কৃতিক বিনিময় অনুমোদন করেনি। এরকম একটা পরিস্থিতিতে ধার পাওয়া হান আর্টিফ্যাক্ট দুদেশের জনগণের মধ্যে শুভেচ্ছা আর সৌহার্দের আবহ তৈরি করবে। খুবই দুঃখের বিষয় ইয়াঙ্গুনের এত কম লোককে টানতে পারছে। প্রদর্শনীটা…।

রাজধানীর লোকেরা হয়তো মিউজিয়ামে চিনা গার্ড পছন্দ করছে না, বলল রানা।

চিনা গার্ড? অসম্ভব, মিস্টার সম্ভব! এগজিবিটের সঙ্গে পাঠাতে চেয়েছিল ওরা, কিন্তু আমরা রাজি হইনি। সিকিউরিটির দিকটা আমরা নিজেরাই দেখছি…

ইতিমধ্যে রানার জানা হয়ে গেছে মিউজিয়াম কখন খোলে, কখন বন্ধ হয়, অ্যালার্ম নেটওঅর্ক কীভাবে কাজ করে, ভিতরে ঢোকার সম্ভাব্য পথ ইত্যাদি। সেক্ষেত্রে আপনাদের দায়িত্ব অনেক বেড়েছে, বলল ও। কিছু চুরি হলে…

চুরি যাতে না হয় তার জন্য কড়া পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে, মিস্টার সম্ভব, আশ্বস্ত করার সুরে বললেন কিউরেটর ভদ্রলোক।

কিছু মনে করবেন না, মিস্টার লোবাং, আমি কিন্তু কোথাও কড়া পাহারা দেখিনি। গার্ড আছে ঠিকই, কিন্তু তাদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। তবে রাতে যদি তাদের সংখ্যা বাড়ানো হয় তা হলে। আলাদা কথা।

হেসে ফেললেন থাইগন লোবাং। আপনি আসলে ভুলে যাচ্ছেন, মিস্টার সম্ভব, মায়ানমার শাসন করছে একটা সামরিক জান্তা। এরা অত্যন্ত দক্ষ, অত্যন্ত বিচক্ষণ আর ক্রিমিনালদের ব্যাপারে নিষ্ঠুর…

আচ্ছা!

কে চুরি করবে, বলুন, ধরা পড়লে যদি তার বাপ-ভাইকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়? এ-ধরনের বেশ কিছু বিধি চালু করায়। আমাদের ক্রাইম খুবই কমে গেছে। আপনি বলছেন গার্ডের সংখ্যা কম, আসলে বেশি-হারটা হলো-একজন হলেই যেখানে কাজ। চলে সেখানে আমরা তিনজনকে রেখেছি।

জানা কথা রাতে নিশ্চয়ই আরও বাড়ানো হয়।

মাথা নাড়লেন কিউরেটর। রাত একটার পর থেকে সকাল ছটা পর্যন্ত রাজধানীর সব রাস্তাতেই পুলিশের টহল থাকে, ওই সময় মিউজিয়ামের গার্ডদের ছুটি, তারা ঘুমাতে চলে যায়। গর্বের হাসি হাসলেন তিনি। এত কথা বলে আপনাকে আমি শুধু বোঝাতে চাইছি, আমাদের সমাজে চোর এখন প্রায় না থাকারই মত। তবে বাদ দিন, আসুন সাম্প্রতিক আবিষ্কার চয়াংশা সম্পর্কে আলাপ করি।

আবারও, হোমওঅর্ক ভালো করে শেখা ছিল বলে, কঠিন একটা পরীক্ষায় উতরে গেল রানা। আপনি আসলে লেডি সিন চুই-এর সমাধির কথা বলছেন।

ঠিক ধরেছেন, বলে চওড়া হাসি উপহার দিলেন কিউরেটর ভদ্রলোক, রানার জ্ঞান দেখে খুশি।

আমাকে সবচেয়ে উত্তেজিত করেছে ফেই আই, ফ্লাইং গারমেন্ট-চয়াং ও-র অবিশ্বাস্য কীর্তির বর্ণনা আছে যাতে।

হ্যাঁ, অবশ্যই, সন্তুষ্টচিত্তে সায় দিয়ে মাথা ঝাঁকালেন লোবাং। খুবই বিস্ময়কর একটা আর্টিফ্যাক্ট। আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে। যে চয়া ও-ই অমরত্ব লাভের জন্যে অমৃত চুরি করেছিলেন, তারপর একটা ড্রাগনের ডানায় চড়ে পালিয়ে…

ড্রাগনের ডানার কথা যখন উঠলই, এদিকে একটা ক্ষুধার্ত মেয়েকে খাওয়ানোর জন্যে গরম ডিনার পাওয়া যাবে কি?

ঝট করে ঘাড় ফিরিয়ে পিছন দিকে তাকাল রানা। ভুরু কেঁাচকাল, পরক্ষণে হাসল। তারপর দেখা গেল চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে।

নন্দিনী অপরূপা তার পেলব বাহু বাড়িয়ে দিল ওর দিকে। সারপ্রাইজ, সম্ভব মহাশয়, সারপ্রাইজ! শিশুসুলভ সরল হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে আছে মুখ, রানার বিস্ময় মন ভরে উপভোগ করছে।

<

Super User