মুখ ফিরিয়ে খাঁচাগুলোর দিকে তাকাল দুই গোয়েন্দা। চুপ করে বসে আছে। পাখিগুলো, যেন প্রাণ নেই। নড়ছেও না। কথা বলার মুড যে নেই বোঝাই যাচ্ছে।
খাঁচার দিকে চেয়ে মেজাজ আবার খারাপ হয়ে গেল হাইমাসের। লাফিয়ে উঠে গটমট করে গিয়ে দাঁড়াল টেবিলের কাছে। গর্জে উঠল, বল, হারামজাদারা। জলদি বল সিলভার কি শিখিয়েছে? এই, শুনছিস? বলবি?
ভয় পেয়ে আরও দূরে সরার চেষ্টা করল কাকাতুয়াগুলো, খাঁচার কোণে জড়সড় হয়ে রইল।
এই রকমই করে, জানাল মিসেস হাইমাস। প্রথম পাখিটা আনার পর থেকেই খালি ধমকাচ্ছে। কোনোটাকে বাদ দিচ্ছে না।
এ-কারণেই মুখ খুলছে না ওরা, হয়তো, রবিন বলল। খুব নাজুক স্বভাব। জোরে কোন শব্দ করলে, কিংবা জায়গা বদলালে চুপ হয়ে যায়।
ফিরে এসে ধপাস করে সোফায় গড়িয়ে পড়ল পাহাড়। আর ধৈর্য নেই! গুঙিয়ে উঠল হাইমাস। এভাবে আর কত? ওদিকে পিছে লেগেছে শেপা। যখনতখন এসে হাজির হতে পারে। সাংঘাতিক লোক।
তাহলে বসে আছো কেন, বাপু? টাকার লোভ ছেড়ে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যাও না, তাহলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়, কথাগুলো বলতে ইচ্ছে করল মুসার। বলল, কয়েকটা বুলি বা মেসেজও বলা যায়, জানি আমরা। কিন্তু মাথামুণ্ড কিছুই বুঝতে পারছি না আমি। তবে, আমরা আপনার কাছে যা যা জানলাম, কিশোরকে জানালে হয়তো উপায় একটা করে ফেলতে পারবে।
এক কাজ করি না কেন? পরামর্শ দিল রবিন। যে কটা মেসেজ জানি, লিখে ফেলি কাগজে। তারপর দেখি, কোন মানে বের করা যায় কিনা।
ভাল কথা বলেছ, তর্জনী নাচাল মিসেস হাইমাস। স্বামীকে বলল, তোমাকে সেদিনই বলেছি, ছেলেগুলো চালাক। ওদের সঙ্গে কথা বলো।
তা বলেছ। কিন্তু কতখানি দুশ্চিন্তায় রয়েছি:.
রাখো তোমার দুশ্চিন্তা, মুখ ঝামটা দিল মিসেস। এক কথা শুনতে শুনতে কান পচে গেল। রবিন, আমি একটা প্রস্তাব দিচ্ছি। ভেবে দেখো। ছবিটা যদি বের করে দিতে পারো, এক হাজার ডলার পুরস্কার দেব।
খাইছে! চেঁচিয়ে উঠল মুসা। এই রবিন, দেরি করছ কেন? শুরু করে দাও।
দাঁড়াও, হাত তুলল হাইমাস, আরেকটা কথা মনে পড়েছে। চিঠিতে সিলভার লিখেছিল, সাত ভাগে ভাগ করেছে সে মেসেজটা। সিরিয়ালি সাজিয়েছে। এভাবে ও লিটল বো-পীপ এক নম্বর, দুই-বিলি শেকসপীয়ার, তিনব্ল্যাকবিয়ার্ড, চার-রবিন হুড, পাঁচ-শারলক হোমস, ছয়-ক্যাপ্টেন কিড, এবং সাত–স্কারফেস।
ভাল পয়েন্ট মনে করেছেন, বলল রবিন, খসখস করে লিখে চলেছে নোটবুকে। নইলে উল্টোপাল্টা লিখতাম, ধাধার সমাধান হয়তো হত না।
লিখে এক টানে ফড়াত করে ছিড়ে কাগজটা হাইমাসকে দেখাল রবিন। লিখেছে :
স্যাপ্টেন লঙ জন সিলভারের মেসেজ (অসম্পূর্ণ)
১। লিটল বো-পীপ : লিটল বো-পীপ হ্যাজ লস্ট হার শীপ অ্যাণ্ড ডাজ নো হোয়্যার টু ফাইণ্ড ইট। কল অন শারলক হোমস।
২। বিলি শেকসপীয়ার : টু বি অর নট টু বি, দ্যাট ইজ দা কোয়েশচেন।
৩। ব্ল্যাকবিয়ার্ড : আয়্যাম ব্ল্যাকবিয়ার্ড দা পাইরেট, অ্যাণ্ড আহ্যাভ বারিড মাই ট্রেজার হোয়্যার ডেড ম্যান গার্ড ইট এভার। ইয়ো-হো-হো অ্যান্ড অ্যা বটল অভ রাম।
৪। রবিন হুড : ?
৫। শারলক হোমস : ?
৬। ক্যাপ্টেন কিড : ?
৭। ক্ষারফেস : আই নেভার গিভ আ সাকার অ্যান ইন ব্রেক।
তাহলে, রবিন বলল, সাতটার মাঝে চারটা মেসেজই জেনে গেলাম। ব্ল্যাকবিয়ার্ডকে যে পেয়েছে তিন গোয়েন্দা, সেকথা হাইমাস দম্পতিকে জানানোর ইচ্ছে নেই। ব্ল্যাকবিয়ার্ডের বুলি শুনেছি, স্যানটিনোর ভাতিজা ডিয়েগোর কাছে।
হতাশায় চোখের দু-ধারে ভাজ পড়ল হাইমাসের। কিছু বোঝা যায় না…কিচ্ছু না।
হাইম, স্বামীর চেয়ে স্ত্রীর মেজাজ অনেক ঠাণ্ডা, বুদ্ধিও রাখে, এত ভেঙে পড়ছ কেন? দেখিই না চেষ্টা করে। প্রথম কাকাতুয়াটার কথাই ধরি, বো-পীপ তার ভেড়া হারিয়েছে বলছে। ধরে নেয়া যায়, ছবিটার কথা বলছে। ওটাও তো একরকম হারানোই আছে এখন। কোথায় আছে জানে না, তারমানে আমরা জানি না।
বেশ, হলো, বলল হাইমাস। কিন্তু শারলক হোমসকে ডাকার মানে কি?
বুঝতে পারছি না। এবার দু-নম্বরটার কথা ধরা যাক। বিলি শেকসপীয়ার বলে, টু বি অর নট টু বি…
ও ভাবে বলে না, তোতলায়, ফাঁস করে দিল মুসা।
তোতলায়! কাকাতুয়া? আঁতকে উঠেছে হাইমাস। না, আর হলো না। এ রহস্যের সমাধান আমার কাজ নয়। গোঙাতে শুরু করল সে। লরা, পেটটা চিনচিন করছে আবার।
কতবার বলেছি, উত্তেজিত হয়ো না, উদ্বিগ্ন হলো মিসেস।
ডাক্তারও তো বারণ করেছে। একটা ছবির জন্যে মিছেমিছি…হ্যাঁ, যা বলছিলাম, দুই নম্বর মেসেজ কিছুই বুঝছি না। তিন নম্বরে বোধহয় বোঝাতে চাইছে, কোন এলাকায় লুকানো রয়েছে ছবিটা।
হোয়্যার ডেড ম্যান গার্ড ইট এভার, এক হাতে পেট চেপে ধরে আরেক হাতে কপালের ঘাম মুছল হাইমাস। কোন জলদস্যুর দ্বীপ মনে হচ্ছে। জলদস্যু
আর গুপধনের গল্প দারুণ ভালবাসত জন সিলভার।
হ্যাঁ, জলদস্যুর দ্বীপের মতই শোনায়, একমত হলো মিসেস হাইমাস। ভালমত ভাবতে হবে।
কিন্তু ওই সাত নম্বরটা কি? ভুরু নাচাল হাইমাস। একটা আমেরিকান স্নাঙ, শুনে মনে হয় এক ডাকাত আরেক ডাকাতকে তার ন্যায্য পাওনা কিংবা অধিকার দিতে চাইছে না। কিংবা কোন সমঝোতায় আসতে চাইছে না। এর একটাই মানে, আপনাদের পাওনা দেয়ার ইচ্ছে নেই সিলভারের, আমাদের সঙ্গে কোন চুক্তিতে আসতে রাজি নয়।
বাকি তিনটে মেসেজ পেলে হয়তো কিছু বোঝা যাবে, বলল মিসেস। ওগুলো ছাড়া হবে না।
এক কাজ করলে হয়, আঙুলে চুটকি বাজাল রবিন।
কী? এক সঙ্গে প্রশ্ন করল মিস্টার আর মিসেস।
রবিন হুড, শারলক হোমস আর ক্যাপ্টেন কিড তো আছেই। ওদের দিয়ে কথা বলালে হয়। তারপর সঙ্কেতের মানে বের করে ফেলতে পারবে কিশোর।
কিন্তু কথা তো বলে না, মুখ গোমড়া হয়ে গেল হাইমাসের। ওই দেখো না, কেমন চুপ করে আছে? চেঁ-টোও করছে না।
স্যানটিনো হয়তো বলাতে পারবে, বলল মুসা। তিন হপ্তা কাকাতুয়াগুলোকে পুষেছে, তাকে ওরা চেনে। আমার মনে হয় ও চেষ্টা করলে পারবেই।
ঠিক বলেছ, লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল হাইমাস, দুলে উঠল জালার মত পেট, স্যানটিনো পারবে। চলো, এক্ষুণি।
<