প্রথমে একটু দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলাম, বলল রবিন। তোমার সাইকেলটা দেখলাম মঞ্চের গায়ে ঠেকা দেয়া। চকের চিহ্ন দেখে ঢুকেছি, কিন্তু কোন পথে বেরিয়েছ, তার কোন চিহ্ন নেই।
মাথা নাড়ল কিশোর। যাওয়ার আগে বুদ্ধি করে তোমাদের জানিয়ে ভালই করেছি, বেঁচে গেছি, নইলে যা বিপদে পড়েছিলাম।
কথা হচ্ছে পরদিন সকালে। ছোট খাঁড়িটার কাছে এসে বসে আছে ওরা। পরনে সাঁতারের পোশাক।
আগের দিন রাতে বাড়ি ফিরেই টিনহাকে ফোন করেছে কিশোর, জানিয়েছে সে ভাল আছে। বোট খুঁজতে যাওয়ায় আর কোন অসুবিধে নেই।
রবিন বুঝতে পেরেছে আগে, কিশোরকে জানাল মুসা। পথে তেলের দাগ দেখতে পেলাম। কাছেই চকের দাগ। রবিন অনুমান করল, পুরানো একটা গাড়ি পঁড়িয়েছিল ওখানে, এঞ্জিন থেকে তেল ঝরে।
তা বুঝেছি, রবিন বলল, কিন্তু একশ গজ দূরে আরেকটা তেলের দাগ। আবিষ্কার করেছে মুসাই। ওটা না দেখলে তোমাকে খুঁজে পেতাম না। দুগ ধরে এগিয়ে গেলাম। দেখি, ভাঙা বাড়ির ড্রাইভওয়েতে দাঁড়িয়ে আছে ঝরঝরে একটা লিমোসিন।
শব্দ শুনে ঘুরে তাকাল ওরা। একটা ট্রাক, কাঁচা রাস্তা ধরে পরে ধীরে পিছিয়ে আসছে, এদিকেই। ট্রাকের পেছনে ফোম-রবারে আবৃত রোভার। ওর চোখ বন্ধ, ভাব দেখে মনে হচ্ছে যে আরামেই আছে।
সৈকতের সরু চিলতেটুকু পেরিয়ে পানির কিনারে নেমে গেল ট্রাক। পেছনের চাকার অ্যাকসেল এখন পানির নিচে। খাঁড়ির এই পারটা বেছে নিয়েছে টিনহা, তার কারণ জায়গাটা খুব ঢালু। কিনার থেকে কয়েক গজ দূরেই পানি এত বেশি গভীর, সহজেই সাঁতরাতে পারবে রোভার।
ট্রাক থেকে নামল টিনহা আর তার মেকলিকান বন্ধু। টিনহার পরনে সাঁতারের পোশাক, গলায় ঝুলছে স্কুবা গগলস। ঘুরে ট্রাকের পেছনে চলে এল সে, পানিতে দাঁড়িয়ে আলতো চাপড় মেরে আদর করল রোভারকে।
মস্ত বড় ট্রাক, ক্রেনও আছে। হাত তুলে মুসাকে ডাকল টিনহা। কাছে গিয়ে দেখল মুসা, বেশ চওড়া একটা ক্যানভাসের বেল্ট আটকে দেয়া হয়েছে রোভারের শরীরের মাঝামাঝি এমন জায়গায়, যাতে ওটা ধরে ঝোলালে দুদিকের ভারসাম্য বজায় থাকে।
মুসাকে সাহায্য করতে বলল টিনহা।
মুসা আর মেকসিকান লোকটা মিলে ক্রেনের হুক ঢুকিয়ে দিল ক্যানভাসের বেল্টের মধ্যে, রোভারের পিঠের কাছে। এঞ্জিন চালু করে টান দিতেই শুন্যে উঠে গেল রোভার। তার মাথায় আরেকবার চাপড় দিয়ে ভয় পেতে নিষেধ করল টিনহা।
সামান্যতম উদ্বিগ্ন মনে হচ্ছে না তিমিটাকে। চোখ মেলে দেখছে লেজ নাড়ছে। কিশোর আর রবিনও এসে দাঁড়িয়েছে ওখানে। তিন কিশোর মিলে ঠেলে বুলন্ত তিমিটাকে নিয়ে গেল বেশি পানির ওপর। চেঁচিয়ে নামানোর নির্দেশ দিন টিনহা ক্রেন ড্রাইভারকে।
আস্তে করে পানিতে নামিয়ে দেয়া হলো রোভারকে। বেল্ট খুলে দিল মুসা। সাঁতরাতে শুরু করল তিমি, আবার নিজের জগতে, স্বাধীন খোনা দুনিয়ায় ফিরে এসেছে। এক ছুটে চলে গেল কয়েক গজ দুরে।
রোভার, রোভার, দাঁড়াও, ডাকল টিনহা।
সঙ্গে সঙ্গে থেমে গেল রোভার। শরীর বঁকিয়ে ঘুরে গেল মুহর্তে, ছুটে এল, কোমর পানিতে দাঁড়িয়ে থাকা টিনহার গায়ে মুখ ঘষল। মাথায় চাপড় মেরে ওকে আদর করল টিনহা।
ও-কে,মেকসিকান বন্ধুকে বলল টিনহা, মুচাস গ্রেশাস!
হেসে গিয়ে ট্রাকে উঠল মেকসিকান। জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে বলল, বুয়েনা সুয়েরটি, স্টার্ট দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেল সে।
রেডি? তিন গোয়েন্দাকে জিজ্ঞেস করল টিনই। সাগরের দিকে চেয়ে দেখল, একশো গজ দূরে তাদের জন্যে অপেক্ষা করছে উলফের কেবিন ক্রুজার। কিশোর, টেপ রেকর্ডারটা নিয়ে নাও। রোভার আমার কাছছাড়া হবে না, জানি, তবু যন্ত্রটা সঙ্গে থাকা ভাল। বলা তো যায় না।
আমি বলি কি, পানিতে টিনহার পাশে চলে এল কিশোর।
কি?
ভেবে দেখলাম, রেকর্ডারটা নিয়ে রবিনের এখানে থাকা উচিত।
কেন?
কেন, সেটা বলল কিশোর। উলফকে বিশ্বাস কি? একাই হয়তো মেকসিকো উপকূলে গিয়ে ক্যালকুলেটরের চালান দিয়ে আসতে পারবে, ক্যাপটেন শ্যাটানোগার দরকার পড়বে না। সেক্ষেত্রে আপনার শেয়ার মারা যেতে পারে। রবিন থাক এখানে।
তাতে কি লাভ?
খুলে বলল কিশোর।
মন দিয়ে শুনল টিনহা। তারপর বলল, তারিখের ব্যাপারে তুমি শিওর?
শিওর। মেকসিকান ইমিগ্রেশন অফিসে খোজ নিয়েছি। লাপাজ থেকেই বোট ছেড়েছিল।
চুপচাপ ভাল কিছুক্ষণ টিনহা। ওকে, গগলসটা পরে নিল চোখে। রবিনকে ছাড়াই পারব আমরা। রোভার, এসো যাই।
দ্রুত সাঁতরে চলল টিনহা। পাশে রোভার। পেছনে কিশোর, টিনহা আর তিমিটার সঙ্গে তাল রাখতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে।
সৈকতে এসে উঠল মুসা। একটা প্লাসটিকের ব্যাগে করে ছোট একটা ওয়াকিটকি নিয়ে এসেছে কিশোর, খাঁড়ির কাছে ফেলে রেখে গেছে, ওটা ঝুলিয়ে নিল কোমরে।
এটা নিয়ে সাঁতরাতে পারবে? জিজ্ঞেস করল রবিন।
পারব, বলল মুসা। যথেষ্ট ভারি, কিন্তু পানিতে নামলে ভার কমে যাবে।
মূসাকে নেমে যেতে দেখল রবিন। গলা পানিতে নেমে সাঁতরাতে শুরু করেছে। পানি নিরোধক ব্যাগে রয়েছে ওয়াকি টকি, পানি ঢুকবে না। ভেতরে বাতাস রয়ে গেছে, ভেসে উঠেছে ব্যাগটা। সাঁতরাতে অসুবিধে হচ্ছে না মুসার, অল্পক্ষণেই ধরে ফেলল কিশোরকে।
পানির কিনার থেকে উঠে এল রবিন। আগের বাক্সটাতেই রয়েছে টেপরেকর্ডার, ওটা তুলে নিয়ে চলে এল তোর সাইকেলের কাছে। পেছনের ক্যারিয়ারে পুটুলি করে রেখেছে তার সোয়েটার, ওটার ভেতর থেকে বের করল। আরেকটা ওয়াকিটকি। আনটেনা তুলে দিয়ে সুইচ টিপে অন করল যন্ত্রটা। শব্দ গ্রহণের জন্যে তৈরি।
শুকনো একটা জুতসই পাথর খুঁজে নিল রবিন, সোয়েটারটা তার ওপর বিছিয়ে আরাম করে বসল, ওয়াকি টকিটা রাখল কোলে। পাশে রাখল রেকর্ডারের বাক্স। উলফের বোটের কাছে প্রায় পৌঁছে গেছে টিনহা আর রোভার, দেখা যাচ্ছে।
স্বাগত জানাল উলফ। টিনহাকে টেনে তোলার জন্যে একটা হাত বাড়িয়ে দিল।
চাইলও না টিনহা। রোভার, থাকো এখানে, বলে কাঠের নিচু রেলিঙ ধরে এক ঝটকায় উঠে পড়ল, স্বচ্ছন্দে।
টিনহার মত এত সহজে উঠতে পারল না কিশোর, বেগ পেতে হলো। পেছনে কয়েক গজ দূরে চুপ করে ভেসে রয়েছে মুসা।
যন্ত্রপাতিগুলো পরীক্ষা করব, মিস্টার উলফ? কিশোর বলল।
হ্যাঁ হ্যাঁ, এসে, কিশোরকে ককপিটে নিয়ে এল উলফ। ছোট্ট ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন ক্যামেরাটা দেখাল।
পরীক্ষা করে দেখল ওটা কিশোর, হুইলের ওপরে বালক হেডের সঙ্গে আটকানো মনিটর স্ক্রীনটাও দেখল।
পানির নিচে কাজ করবে ক্যামেরাটা? শিওর? জিজ্ঞেস করল।
নিশ্চয়। ওশন ওয়াল্ড থেকে ধার নিয়েছে টিনহা। ওখানে প্রায় সারাক্ষণই কাজ চলে এটা দিয়ে, সারাক্ষণকে উচ্চারণ করল সারা-কখণ। আর কোন প্রশ্ন আছে?
আরও অনেক প্রশ্ন তৈরি করে ফেলেছে কিশোর, করেই যাবে একের পর এক, যতক্ষণ না মুসা কাজ সারে। জাহাজে উঠে কোমর থেকে প্রাসটিকের ব্যাগ খুলে জাহাজের পেছনের অংশে লুকাতে হবে, উলফকে না দেখিয়ে।
কিশোর ভাল অভিনেতা, তবে বোকর ভান করার মত এত ভাল কোন অভিনয় করতে পারে না। বোকা বোকা ভাব দেখিয়ে বলল, আমি ভাবছি, পানির নিচ থেকে রেঞ্জ কতখানি দেবে? বোটের কত কাছে থাকা লাগবে রোভারের?
পঞ্চাশ গজ দুরে থাকলেও স্পষ্ট ছবি আসবে, চকচক করে বিরক্ত প্রকাশ করছে যেন উলফের টাক। টিনহা তোমাকে এসব বলেনি?
হ্যাঁ, মনে হয় বলেছে। কিন্তু রোভারের মাথায় সার্চলাইট বেঁধে… আর বলার দরকার নেই, থেমে গেল কিশোর। মুসা এসে দাঁড়িয়েছে পেছনের ডেকে। কিশোরের চোখে চোখ পড়তেই ভেজা চুলে আঙুল চালাল–সংকেত : নিরাপদে লুকিয়ে রাখা হয়েছে ব্যাগটা।
ও, হ্যাঁ, খুব শক্তিশালী লাইট তো, হবে মনে হয়, আগের কথাটা শেষ করল কিশোর, হঠাৎফেন বুঝতে পেরেছে সব কিছু।
চলো তাহলে, কাজ সারা যাক। ডেকে বেরিয়ে এল উলফ।
রেলিঙে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে রোভারের সঙ্গে কথা বলেছে টিনহা, তাকে বলল উলক, আরেকটা ছেলে কোথায়? তিনজন ছিল না?
ঠাণ্ডা লেগেছে, পেছন থেকে চট করে জবাব দিল মুসা! খাঁড়ির কাছে বসিয়ে রেখে এসেছি। ভাবলাম
থাকুক, আউটবোর্ড মোটরের থ্রটলে গিয়ে হাত রেখে টিনহার দিকে ফিরল উলফ, কত জোরে সাঁতরাতে পারবে মাছটা?
ও মাছ নয়, রেগে উঠল টিনহা। অত্যন্ত ভদ্র, সত্য, বুদ্ধিমান, স্তন্যপায়ী প্রাণী।…হ্যাঁ, চাইলে ঘণ্টায় পনেরো মাইল বেগে ছুটতে পারবে। কিন্তু আপনি বেশি জোরে চালাবেন না বোট। আট নটের নিচে রাখবেন। নইলে ও তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে যাবে।
জো হুকুম, থ্রটল ঠেলে দিয়ে হুইল ধরল উলফ। খোল সাগরের দিকে বোটের নাক ঘোরাল।
টিনহা আগের জায়গায়ই রইল। খেলতে খেলতে বোটের সঙ্গে এগোচ্ছে রোভার, ওটার সঙ্গে কথা বলছে। তিমিট কখনও শাঁ করে ছুটে যাচ্ছে দূরে, পরক্ষণেই ডাইভ দিয়ে চলে আসছে আবার, ভুসস করে মাথা তুলছে বোটের পাশে।
জরুরী একটা কথা জানার জন্যে উসখুস করছে কিশোর, কিন্তু সে বোকা সেজে রয়েছে, তার জিজ্ঞেস করাটা উচিত হবে না। আপাতত বোকা থাকারই ইচ্ছে। মুসার কাছে এসে ফিসফিস করে বলল সে-কথা, কি জিজ্ঞেস করতে হবে শিখিয়ে দিল।
উলফের কাছে গিয়ে বলল মুসা, তীর থেকে কতদূরে পাওয়া গিয়েছিল আপনাদেরকে?।
মাইল পাঁচেক, সামনে সাগরের দিকে তাকিয়ে জবাব দিল উলফ। কোস্টগার্ডরা তাই বলেছে।
মুসার দিকে চেয়ে নীরবে ঠোঁট নাড়ল কিশোর।
বুঝল মুসা। উলফকে আবার জিজ্ঞেস করল, কতক্ষণ ছিলেন পানিতে?
এই ঘণ্টা দুয়েক।
আবার ঠোঁট নাড়ল কিশোর।
মুসা বলল, জোয়ার ছিল, না ভাটা?
অন্ধকার হয়ে এসেছিল, মনে করার চেষ্টা চালাচ্ছে উলফ। আর যা বড় বড় ঢেউ, ভালমত কিছু দেখারই উপায় ছিল না। তবে ঢেউয়ের মাথার যখন উঠে যাচ্ছিলাম, তখন তীর চোখে পড়ছিল। চেষ্টা করেও তীরের কাছে যেতে পারছিলাম না। বোধহয় ভাটাই ছিল তখন।
মনে মনে দ্রুত হিসেব শুরু করল কিশোর। ঝড়ের সময় উত্তর-পশ্চিম থেকে বইছিল হাওয়া, তীর বরাবর ঠেলে নেয়ার কথা দুজনকে। লাইফ-জ্যাকেট পরা ছিল, ওই অবস্থায় হাত পা নড়ানোই মুশকিল, নিশ্চয় সঁতরে বিশেষ এগোতে পারেনি। তাছাড়া ঢেউয়ের জন্যে এগোচ্ছে না পিছাচ্ছে সেটাও ভাল মত দেখার উপায় ছিল না। বলছে, দু-ঘন্টা ছিল পানিতে, ডাটা হলে ওই সময়ে অন্তত দুমাইল সরে গেছে সাগরের দিকে। কোস্ট গার্ডরা পেয়েছে ওদেরকে পাঁচ মাইল দূরে, তারমানে তীর থেকে তিন মাইল দূরে ডুবেছে বোট।
মুসাকে চোখের ইশারায় কাছে ডাকল কিশোর। ফিসফিস করে জানাল।
ডেকে কয়েক মুহূর্ত পায়চারি করল মুসা, হিসেব করার ভান করল, তারপর আবার উলকের কাছে গিয়ে বলল, তীর থেকে মাইল তিনেক দূরে ডুবেছিল বোট, না?
জানলে কি করে? মুসার দিকে তাকাল উলক।
আপনার কথা থেকে।
হুঁ, আমারও তাই ধারণা, ঘড়ির দিকে চেয়ে কি হিসেব করল উলফ। এঞ্জিন নিউট্রাল করে নিল, মিনিটখানেক আপন গতিতে চলল ঘোট। এসে গেছি, টিনহার দিকে ফিরে বলল সে। মাছটাকে লাগাম… টিনহাকে কড়া চোখে চাইতে দেখে থেমে গেল। না, মানে স্তন্যপায়ী জীবটাকে পাঠানো যায় এবার। আমরা পৌঁছে গেছি।
এক জায়গায় ভাসছে এখন বোট, মৃদু ঢেউয়ে দুলছে।
রোভার, কাছে এসো, রোভার, টিনহা ডাকল। ডেকে ফেলে রেখেছে ক্যানভাসের কলারটা, টেলিভিশন-ক্যামেরা আর সার্চলাইট ওতে বেঁধে রেখেছে আগেই। ওগুলো তুলে নিয়ে পানিতে নামল সে। তিমির মাথা গলিয়ে পরিয়ে দেবে ক্যানভাসের কলার, সামনের দুই পাখনার ঠিক পেছনে রেখে শক্ত করে বাকলেস আটকে দিলে হাজার ঝাকুনিতেও আর খুলে আসবে না।
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে কিশোর। তিন মাইল দূরে ডুবেছে বোট, কিন্তু কোন জায়গা থেকে তিন মাইল? উলফের স্পষ্ট ধারণা নেই। এখানে দু-পাশের দশ মাইলের মধ্যে যে কোন জায়গায় ডুবে থাকতে পারে। এতবড় এলাকায় ছোট্ট একটা বোট খোঁজা খড়ের গাদায় সুচ খোঁজার সামিল, সেটা তিমিকে দিয়ে খোঁজালেও।
কলার পরিয়ে ডেকে ফিরে এল টিনহা। তার পাশে এসে নিচু গলায় জিজ্ঞেস করল কিশোর, আপনার বাবা আর কিছু বলতে পেরেছেন? ঝড়ের সময়কার কথা?
মাথা নাড়ল টিনহা। নাহ আর কিছু না। যা বলেছে, বলেছি তোমাকে।
কি বলেছে, মনে আছে কিশোরের। দুটো পোলের ওপর নজর রাখতে বলেছে। কিছু একটা নিশ্চয় বোঝাতে চেয়েছে। কি?
তিন মাইল দূরের তীরের দিকে তাকাল কিশোর।
তেমন কিছুই দেখার নেই। পাহাড়ের উঁচু উঁচু চূড়া, ওপাশে কি আছে কিছুই চোখে পড়ছে না, শুধু আরও উঁচু পর্বতের চূড়া ছাড়া। পাহাড়ের ওপর মাঝেমধ্যে দাঁড়িয়ে আছে একআধটা নিঃসঙ্গ বাড়িঘর। টেলিভিশনের একটা রিলে টাওয়ার আছে, আরেক পাহাড়ের মাথায় একটা ক্যাকটরি, অনেক উঁচু চিমনি।
ওয়েট স্যুট পরে নাও, মুসা, কানে এল টিনহার কথা। এয়ার ট্যাংকগুলো চেক করে নেয়া দরকার।
পাহাড়গুলোর দিকে তাকিয়েই রয়েছে কিশোর, নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটার সময় এত জোরে টান মারছে, প্রায় থুতনির কাছে চলে আসছে ঠোঁট।
ক্যাপটেন শ্যাটানোগা অভিজ্ঞ নাবিক, ভাবছে কিশোর। বোট ডুবে যাচ্ছে। বুঝতে পেরে নিশ্চয় কোন না কোন নিশানা রেখেছে। যদি খালি ভালমত কথা বলতে পারত…
টেলিভিশন টাওয়ার আর ফ্যাকটরির চিমনির ওপর দ্রুত বার দুই আসা যাওয়া করল কিশোরের দৃষ্টি। হঠাৎ পরিষ্কার হয়ে গেল ব্যাপারটা।
দুই পোল!
প্রায় ছুটে এসে উলফের বাহু খামচে ধরল কিশোর। বোকা সেজে থাকার সময় এখন নয়। চেঁচিয়ে বলল, ওই পোল দুটো এক লাইনে আনু।
কি? বোকার মত কি ভ্যাড়ভাড় করছ?
বোট ডুবে যাওয়ার সময় লক্ষ রেখেছিলেন ক্যাপটেন শাটানোগা। চিহ্ন রেখেছিলেন। ওই যে টেলিভিশন টাওয়ার, আর ওই যে চিমনি।
কী।
দেখতে পাচ্ছেন না? কিশোরের মনে হলো এখন উলফই বোকার অভিনয় করছে। বোটটা পেতে চান? জাহাজ সরিয়ে নিন। ওই পোল দুটোর দিকে লক্ষ রেখে পিছান, এদিক ওদিক সরান, যতক্ষণ না জাহাজের সঙ্গে এক লাইনে আসে ও দুটো।
<