রাতে আবার জোর বৃষ্টি শুরু হলো। ঝরলো পরদিন সারাটা কেলা। ইস্কুলে যেতে হলো তিন গোয়েন্দাকে। ক্লাসে বসে তলোয়ারটার কথা আলোচনার সুযোগ পেলো না।
বিকেলে ভাইকে চাবিটা দেখাতে নিয়ে গেল রিগো। তিন কাউবয়ের কথা বললো। রিগোও চিনতে পারলো না ওদের। চাবিটাও না। পোড়া গোলাবাড়িতে কেন এসেছিলো ওরা, তা-ও বুঝতে না পেরে অনুমানে বললো, মিস্টার ডয়েল জোর করে আমাদের তাড়াতে চান আরকি। সেজন্যেই গুণ্ডাপাণ্ডা ভাড়া করেছেন।
ডিনারের পর আবার বেরোলো সেদিন তিন গোয়েন্দা। হিসটোরিক্যাল সোসাইটি আর লাইব্রেরিতে তথ্য খুঁজতে। আবার ঘাটতে লাগলো গাদা গাদা পুরনো খবরের কাগজ, জার্নাল, ডায়রি, মেমোয়ার, আর্মি রিপোর্ট। নতুন কিছুই পেলো না।
কোনোদিনই আর থামবে না বলে যেন জেদ ধরেছে বৃষ্টি। পড়েই চলেছে, পড়েই চলেছে, একটান। সেদিন রাতে পড়লে, পরদিন বুধবারেও কমতি নেই। বন্যা হতে পারেঃ জনগণকে হুঁশিয়ার করে দিলো কাউন্টি। ইস্কুল ছুটির পর বাড়িতে কাজ সারতে গেল রবিন আর মুসা। ভাইকে দেখতে গেল পিনটু। হিসটোরিক্যাল সোসাইটিতে গেল আবার কিশোর।
কাজ শেষ করে হেডকোয়ার্টারে চলে এলো রবিন আর মুসা। কিশোরফেরেনি। পিনটুও আসেনি। ভেজা রেনকোট ছড়িয়ে দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো ওদের জন্যে
রবিন, তলোয়ারটা পাবো তো? আর তেমন আশা করতে পারছে না মুসা।
জানি না,মুসার মতোই নিরাশায় ভুগছে রবিন।
আগে এলো পিনটু। দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে এসে ট্র্যাপডোর দিয়ে ঢুকলো ট্রেলারে। গত দুই দিন তার সঙ্গে দেখা হয়নি গোয়েন্দাদের। বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে ছেলেটাকে।
কি ব্যাপার? শঙ্কিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো রবিন। তোমার ভাইয়ের কিছু হয়েছে?
ভাইয়ার কিছু হয়নি, তবে আমরা শেষ! ভেজা জ্যাকেটটা খুলে ওদের পাশে বসে পড়লো পিনটু। আমাদের মর্টগেজের কাগজ ছিলো সিনর হেরিয়ানোর কাছে।
তিনি সেটা বিক্রি করে দিয়েছেন মিস্টার ডয়েলকে।
বলো কি কপাল কুঁচকে ফেললো মুসা।
কিন্তু তিনি তো বলেছিলেন…
বলেছিলেন আরও সময় দেবেন, রবিনের কথাটা শেষ করে দিলো পিনটু। কিন্তু আমাদের জন্যেই সেটা করতে পারলেন না। ভাইয়ার জামিনের টাকা দরকার। আর নিজের ইচ্ছেয় বিক্রি করেননি হেরিয়ানা, ভাইয়ার সঙ্গে আলোচনা করেই করেছেন। ভাইয়াই চাপাচাপি করেছে করতে।
হুঁহ! গেল তাহলে, বলে চুপ হয়ে গেল রবিন।
তলোয়ারটাও পাওয়ার আশা নেই, এদিকে জমিও…, কিশোরকে দেখে থেমে গেল মুসা।
ভিজে চুপচুপে হয়ে আছে গোয়েন্দাপ্রধান। হাঁপাচ্ছে। জানালো, শুঁটকি ব্যাটা পিছু নিয়েছিলো। অনেক কষ্টে খসিয়ে এসে লাল-কুকুর-চার দিয়ে ঢুকলাম।
পিছু নিয়েছিলো কেন? পিনটু জিজ্ঞেস করলো।
জিজ্ঞেস তো আর করিনি,ভোতা গলায় জবাব দিলো কিশোর। আমার রয়েছে তাড়া, ওকে জিজ্ঞেস করার সময় কোথায়? যতো তাড়াতাড়ি পারলাম চলে এলাম। কি পেয়েছি, শোনো…
ধুড়ুম করে কি যেন পড়লো, ট্রেলারের বাইরের জঞ্জালের মাঝে। আরেকবার হলো শব্দ। বাইরের বৃষ্টির মধ্যে থেকে ভেসে এলো টেরিয়ারের কণ্ঠ, শার্লকের বাচ্চা! এখানেই কোথাও লুকিয়েছে, আমি জানি!
দড়াম করে আবার কিছু একটা বাড়ি লাগলো এসে ট্রেলারের গায়ে। গোয়েন্দারা কোথায় লুকিয়েছে জানে না, তবে আন্দাজ করতে পারছে জঞ্জালের ভেতরেই কোথাও রয়েছে। চেঁচিয়ে বললো, নিজেদের খুব চালাক ভাবো, না? বারোটা বাজিয়ে ছাড়বো এবার মেকসিকান ছাগলগুলোর। শনিবারে ওদের র্যাঞ্চ দখল করবো, দেখি কিভাবে ঠেকাও।
পরস্পরের দিকে তাকালো ছেলেরা। শুধু কিশোরকে অবাক মনে হলো। মর্টগেজটা যে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে এটা এখনও জানানো হয়নি তাকে।
শনিবার, বুঝলে শার্লকের বাচ্চারা? আবার চেঁচালো টেরিয়ার। এইবার হেরে গেলে আমার কাছে। পরক্ষণেই শোনা গেল গা জ্বালানো হাসি।
হাসতে হাসতে চলে গেল টেরিয়ার। তার হাসি মুছে যাওয়ার পরও কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইলো চার কিশোর। ইয়ার্ডে কোনো শব্দ নেই। শুধু মাথার ওপরে ট্রেলারের হাতে বৃষ্টির ঝমঝমানি ছাড়া।
অবশেষে কিশোর বললো, আমাদের ধোঁকা দিতে চেয়েছে…
না, পিনটু বললো। ঠিকই বলেছে ও।
মিস্টার ডয়েলের কাছে মর্টগেজ বিক্রি করা হয়েছে, একথা কিশোরকে জানালো
শনিবারে আমাদের পয়লা পেমেন্ট দেয়া হবে, একমুহূর্ত চুপ থেকে আবার বললো নিট।
জিতেই গেলেন মিস্টার ডয়েল, আনমনে বিড়বিড় করলো কিশোর।
হার মানবো! রবিন অবাক।
কিশোর পাশা হেরে যাবে, মুসাও বিশ্বাস করতে পারছে না। কিশোর, তুমি…তুমি একথা বলছো!
ক্ষণিকের জন্যে হাসি ঝিলিক দিলো কিশোরের চোখের তারায়। দুটো শব্দ বাদ দিয়েছি। বলতে চেয়েছি মনে হয় জিতে গেলেন। একটা সুবিধে হয়েছে এতে। আমাদের থামাতে আসবে না এখন আর কেউ। সময় যেটুকু পেলাম, তার পুরো সদ্ব্যবহার করতে হবে। তবে খুব বেশি সময় নেই আমাদের হাতে।
সময়ও নেই, সূত্রও নেই,নাক কুঁচকে বললো মুসা।
অনেক আছে, কিশোর বললো। ঠিকমতো এতোদিন কাজে লাগাতে পারিনি ওগুলো। আরও একটা জিনিস পেয়েছি। পকেট থেকে একটা কাগজ বের করলো সে। রবিনের আন্দাজ ঠিক। গুহায়ই লুকিয়েছিলেন ডন পিউটো।
লুকিয়েছিলেন? তাহলে পরে কি হলো তাঁর? বন্ধুরা দেশ থেকে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলো?
হতে পারে। তবে আমার তা মনে হয় না। ওরকম হলে কোনো না কোনো দলিলে প্রমাণ পাওয়া যেতোই। পালাতে পারেননি তিনি। পর্বতের মধ্যেই কিছু একটা ঘটেছিলো তার। কেউই হয়তো জানে না, কি হয়েছিলো। এবং আমার বিশ্বাস, ওটা জানতে পারলেই রহস্যের সমাধান করে ফেলতে পারবো।
কেউই যদি না জানে, আমরা জানবো কি করে?
জেনে নেবো নিজেরাই। কারণ আমি জানি কোথায় লুকানোর পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। চিঠিতেই সেকথা স্পষ্ট বলে দিয়েছেনঃ কনডর ক্যাসল। ওই পাহাড়ের কাছেই রয়েছে রহস্যের জবাব। তোমরা খুঁজতে গিয়েছিলে বটে, তবে নিশ্চয় কিছু একটা মিস করেছিলে, বুঝতে পারোনি। কাল ইস্কুল ছুটির পর আবার যাবো আরা কনডর ক্যাসলে।
<