পাপালোকে পুলিশে দিল ওরা! বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল রবিন। কাজটা উচিত হয়নি।

হ্যাঁ, আস্তে মাথা দোলাল মুসা। আমার কিন্তু এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না, লেন্সগুলো ও চুরি করেছে। কিশোর, তুমি কি বল?

কোন জবাব দিল না গোয়েন্দাপ্রধান, যেন শুনতেই পায়নি। দুই বন্ধুর কাছ থেকে দূরে, লিভিং রুমের আরেক প্রান্তে সোফায় বসে আছে। গভীর চিন্তায় মগ্ন।

বিকেলের মাঝামাঝি। বাইরে ঝমোঝম বৃষ্টি। সারাদিন বাইরে বেরুতে পারেনি ওরা। বৃষ্টি না থাকলেও অবশ্য পারত না। মিস্টার আমানের কড়া নির্দেশঃ একা কোথাও যেতে পারবে না ওরা। যেতে হলে তাঁকে জানাতে হবে। লোক সঙ্গে দিয়ে দেবেন। গতকাল বিকেলে ছেলেদের অবাধ্যতার ওপর কড়া বক্তৃতা দিয়েছেন তিনি। আন্তরিক দুঃখিত হয়েছেন ওদের কাজে, সেটাও জানিয়েছেন বার বার।

কিশোরা গলা চড়িয়ে ডাকল মুসা। কি বলছি, শুনিছ? আমার ধারণা, লেন্স পাপু চুরি করেনি। তুমি কি বল?

কেশে উঠল কিশোর। এখনও পুরোপুরি যায়নি সর্দি।

না, বলল গোয়েন্দাপ্রধান। পাপু চুরি করেনি। সাক্ষী প্রমাণ সব ওর বিরুদ্ধেই যাচ্ছে যদিও। ওর ছুরি পাওয়া গেছে ট্রেলারের ভেতর, তাজ্জব কান্ড!

দুই দিন আগে হারিয়েছিল ওটা, বলল রবিন। ও তাই বলেছে।

এখন কেউ বিশ্বাস করবে না একথা, বলেই আবার কাশতে লাগল কিশোর। কাশি থামলে বলল, ধরেই নিয়েছে সিনেমা কোম্পানি, তাদের সমস্যা শেষ। চোর ধরা পড়েছে, আর কি?

কঙ্কাল দ্বীপের রহস্যটা আসলে কি? জিজ্ঞেস করল রবিন। অনুমান করেছ কিছু??

কেউ একজন চায় না, কঙ্কাল দ্বীপে লোক যাতায়াত করুক, কিংবা বাস করুক, বলল কিশোর। এ-ব্যাপারে। আমি শিওর। কিন্তু কেন চায় না, বুঝতে পারছি না এখনও।

দরজায় টোকা পড়ল। সাড়া দিল মিসেস ওয়েলটন। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল। পেছনে পুলিশ চীফ হোভারসন। রেনকোট থেকে পানি ঝরছে।

এই যে, ছেলেরা, বলল বাড়িওয়ালি, চীফ কথা বলতে চান তোমাদের সঙ্গে।

মিসেস ওয়েলটন, বলল হোভারসন, ওদের সঙ্গে একটু একা কথা বলতে চাই, প্লীজ…

ওহ, শিওর শিওর, দরজা ভেজিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেল মিসেস ওয়েলটন।

রেনকোটটা খুলে দরজার পাশের হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখলেন চীফ। সোফায় বসলেন। সিগারেট বের করে ধরালেন ধীরেসুস্থে।

তারপর, ছেলেরা, কথা শুরু করলেন হোভারসন, পাপুর পজিশন খুব খারাপ। লেন্স দুটো পাওয়া গেছে। ওর বিছানার তলায়।

কিন্তু পাপালো চুরি করেনি, রাগ প্রকাশ পেল রবিনের গলায়। আমরা জানি, ও করেনি।

হয়ত করেনি, মাথা ঝোঁকালেন হোভারসন। কিন্তু সব সাক্ষীপ্রমাণ ওর বিরুদ্ধে যাচ্ছে। সবাই জানে, বাবার চিকিৎসার জন্যে গ্ৰীসে ফিরে যাবার জন্যে, পাগল হয়ে উঠেছে ও।

উঠেছে, ঠিক, বলল মুসা। কিন্তু সেজন্যে চুরি করবে না সে। তাছাড়া টাকা তার আছে। এবং আরও পাবার সম্ভাবনা আছে।

তাই। তিনজনের দিকেই একবার করে তাকালেন হোভারসন। ওর টাকা আছে? আরও পাবার সম্ভাবনা আছে! কি করে?

মুখ ফসকে কথা বেশি বলে ফেলেছে, এখন আর ফেরার পথ নেই। মোহরের কথা বলতেই হবে চীফকে। তবু চুপ করে রইল মুসা।

ছেলেরা, আবার বললেন হোভারসন, পাপুকে আমি পছন্দ করি, তার ভাল চাই। এখন বলত, সত্যি সত্যি কি ঘটেছিল গতকাল। বিপদে পড়েছি, এবং উদ্ধার করে আনা হয়েছে, ঠিকই। কিন্তু কেন পড়েছ বিপদে? কেন গিয়ে ঢুকেছ ওই সুড়ঙ্গে। শুধুই কৌতূহল? নিশ্চয় না। হয়ত তোমাদের ভয়, গুপ্তধনের কথা ফাঁস হয়ে গেলে দলে দলে ছুটে আসবে লোক। শুটিঙে বিন্ন ঘটাবে। কিন্তু পাপুর দিকটাও ভেবে দেখতে হবে তোমাদের। ওকে হাজত থেকে বের করে আনতে চাও না?

দ্বিধা করছে তিন গোয়েন্দা। শেষে মন স্থির করে নিল কিশোর। হ্যাঁ, স্যার, চাই। মুসার দিকে ফিরল। থলেটা নিয়ে এসো।

দোতলায় চলে গেল মুসা। পাপালোর থলেটা নিয়ে ফিরে এল। থলের মুখ খুলে হোভারসনের পাশে ঢেলে দিল মোহরগুলো। মৃদুটুংটাং আওয়াজ তুলে সোফায় পড়ল পয়তাল্লিশটা স্প্যানিশ ডাবলুন।

বড় বড় হয়ে গেল হোভারসনের চোখ। মাই গাডা জলদস্যুর গুপ্তধন। পাপু পেয়েছে?

পাপু, মুসা আর রবিন, বলল কিশোর। দ্য হ্যান্ডের গুহায়। ফিরে গিয়ে আরও খোঁজার ইচ্ছে আছে পাপালোর। সেজন্যেই গোপন রেখেছি ব্যাপারটা।

হুমমা ঝট করে চোখ তুললেন হোভারসন। আমিও তোমাদের দলে। মোহর পেয়েছ, কাউকে বলব না।

তাহলে বুঝতেই পারছেন, স্যার, আগের কথার খেই ধরল রবিন, টাকার জন্যে চুরি করার দরকার নেই পাপুর।

কিন্তু, বললেন হোভারসন, তাতে প্ৰমাণ হয় না, পাপু চুরি করেনি। মোহরগুলো পাওয়া গেছে লেন্স চুরি যাবার পর। পাপালো তখন জানত না, মোহর পাবে।

ঠিকই বলেছেন পুলিশ চীফ। মুখ কালো করে ফেলল। আবার রবিন। সজোরে পকেটে হাত ঢোকাল মুসা।

রুমাল বের করা নাক মুছল কিশোর। তারপর বলল, রাফাত চাচা, মিস্টার সিমনস আর মিস্টার গ্র্যাহামের ধারণা স্কেলিটন আইল্যান্ডের রহস্যের সমাধান হয়ে গেছে। তাঁরা মনে করছেন, যত নষ্টের মূলে ছিল ওই পাপু। কিন্তু, তাঁরা ভুল করছেন। সমস্ত শয়তানীর পেছনে রয়েছে অন্য কেউ। ঘটনাগুলো সব খতিয়ে দেখলেই অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে যায়। গোড়া থেকেই শুরু করছি. কেশে উঠল সে।

আপনি সবই জানেন, কাশি থামলে বলল কিশোর, তবু গোড়া থেকেই শুরু করছি। মাঝে অনেক দিন বিরতি দিয়ে, হঠাৎ করে আবার স্কেলিটন আইল্যান্ডে ভূতের উপদ্রব শুরু হল কেন? সিনেমা কোম্পানির ওপর ওই বিশেষ নজর কেন চোরের? প্লেন থেকে নামতে না নামতে কার কি এমন ক্ষতি করে ফেললাম, যে ঝড়ের রাতে দ্য হ্যান্ডে নির্বাসন দিয়ে আসা হল আমাদেরকে? সবগুলো প্রশ্নের একটাই সহজ উত্তরঃ কেউ একজন চায় না, স্কেলিটন আইল্যান্ডে লোক যাতায়াত করুক, কিংবা বাস করুক, কিংবা ওটার ব্যাপারে খোঁজখবর করুক। এবং সেটার প্রমাণও পেয়েছি। গতকাল বিকেলে ডাক্তার রোজারের চেম্বার থেকে ফিরছিলাম, হঠাৎ পাশের গলি থেকে বেরিয়ে এল। একজন লোক। ঢেঙা, রোগাটে, হাত উল্কি দিয়ে আঁকা জলকুমারীর ছবি…

ডিক, চোয়ালে হাত ঘষছেন। চীফ। ডিক ফিশারা মাত্র জেল থেকে বেরোল ব্যাটা, এরই মাঝে শুরু করে দিলা.ঠিক আছে বলে যাও।

দ্বীপগুলোর আশপাশে খুব বেশি ঘোরাফেরা করে পাপু, তাই তার নৌকা ভেঙে দেয়া হল, বলল কিশোর। শুধু তাই না, চক্রান্ত করে তাকে জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করল।

কিন্তু কেন? প্রশ্ন করল রবিন।

সেটাই বুঝতে পারছি না, বলল কিশোর। তাহলে সব রহস্যেরই সমাধান হয়ে যেত।

হু-হা চিন্তিত দেখাচ্ছে হোভারসনকে। ব্যাপারটা ভাল করে ভেবে দেখব। এখন আমি উঠি।। দেখি, পাপুর কোন ব্যবস্থা করা যায়। কিনা। হাক স্টিভেন ওরা জামিন হতে রাজি আছে। কাগজপত্র তৈরি করতেও দেরি হবে না। জজ সাহেব একটা কাজে বাইরে গেছেন। তিনি ফিরে এলেই সই করিয়ে নেয়া যায়। হ্যাঁ, আমাকে না জানিয়ে কোন কিছু করে। বোসো না। বিপদে পড়ে যেতে পার। চলি, গুড বাই।

বেরিয়ে গেলেন হোভারসন।

তাড়াতাড়ি আবার মোহরগুলো থলেতে ভরে নিল মুসা। মুখ বেঁধে নিয়ে গিয়ে রেখে এল দোতলায়, নিজেদের ঘরে, সুটকেসে। ফিরে এল নিচের ঘরে।

ঘরে ঢুকল মিসেস ওয়েলটন। খাবার দেবে কিনা জানতে চাইল। দিতে বলল ছেলেরা।

টেবিলে খাবার দেয়া হল। খেতে বসল। ছেলেরা। কাছেই একটা চেয়ারে বসে এটা ওটা বাড়িয়ে দিচ্ছে মিসেস ওয়েলটন। বলি বলি করছে কি যেন। শেষ পর্যন্ত আর থাকতে না পেরে বলেই ফেলল, গুপ্তধন খোঁজার জন্যেই তাহলে এসেছে তোমরা। দেখলাম…

ঝট করে মাথা তুলল কিশোর। কি দেখেছেন?

সত্যি বলছি, চুরি করে কারও কিছু দেখার অভ্যোস নেই আমার। দেখতে এসেছিলাম, চীফ চলে গিয়েছে কিনা। দেখলাম, বসে আছে, পাশে একগাদা ডাবলুন। ভাবলাম, খুব জরুরী কোন কথা আলোচনা করছ তোমরা। বিরক্ত না করে চলে গেলাম।

একে অন্যের দিকে চাওয়া-চাওয়ি করল তিন গোয়েন্দা। খাওয়া বন্ধ।

কাউকে বলেছেন একথা? জিজ্ঞেস করল কিশোর।

কোন কথা?

আমরা গুপ্তধন খুঁজে পেয়েছি…

নাহ, এদিক ওদিক মাথা নড়ল মিসেস ওয়েলটন, তেমন কাউকে না। ফোনে শুধু আমার ঘনিষ্ঠ তিন বান্ধবীকে জানিয়েছি। আমারই মত কম কথা বলে। পেটে বোমা মারলেও আমারই মত মুখে তালা লাগিয়ে রাখবে। কাউকে কিছু বলবে না…

হুঁ, চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকাল কিশোর। কয়েকটা মোহর পেয়েছে মুসা আর রবিন। তবে স্কেলিটন আইল্যান্ডে নয়।

আমাকে বোকা বানাতে পারবে না, ইয়ং ম্যান, নিজের বুদ্ধির ওপর খুব বেশি ভক্তি মিসেস ওয়েলটনের। আগামী কাল ভোর থেকেই লোক যেতে শুরু করবে। স্কেলিটন আইল্যান্ডে। গুপ্তধন খুঁজতে… বলতে গিয়েই থেমে গেল। মনে পড়ে গেছে, একটু আগে বান্ধবীদের প্রশংসা করে। বলেছে, মুখে তালা লাগিয়ে রাখবে ওরা। কথা ঘোরানোর চেষ্টা করল, মানে, আমি বলতে চাইছি, যদি আর কেউ শুনে ফেলে। আর কি! চীফ হোভারসনও তো জেনে গেল….

তিনি কাউকে বলবেন না, কথা দিয়েছেন, বলল কিশোর।

ওহ, আমি যাই। তাড়াতাড়ি উঠে পড়ল মিসেস ওয়েলটন। দুধ পুড়ে যাচ্ছে…

কাম সারছে কিশোরের মুখে শোনা বাঙালি বুলি ঝাড়ল মুসা। এতক্ষণে জেনে গেছে হয়ত আদেক শহর আগামী কাল ভোর হতে না। হতেই ভিড় লেগে যাবে কঙ্কাল দ্বীপে। শুটিঙের বারোটা বাজলা সব দোষ আমাদের!

এরপর রাফাত চাচাকে মুখ দেখাব কি করে আমরা বলল রবিন।

লোক ঠেকাতে না পারলে সর্বনাশ হয়ে যাবে ফিল্ম কোম্পানির! বলল মুসা। কিশোর, তুমি কিছু বল।

চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে কিশোর। নির্লিপ্ত। মুখ তুলল, একটা বুদ্ধি এসেছে আমার মাথায়। আগে খেয়ে নিই, তারপর বলছি। তোমরাও খেয়ে নাও।

শেষ হল খাওয়া। হাতমুখ ধুয়ে এসে বসল। আবার আগের জায়গায়।

কি বুদ্ধি, বল, জানতে চাইল মুসা।

খুলে গেল দরজা। ঘরে এসে ঢুকলেন মিস্টার আমান, পেছনে পিটার সিমনস।

মিস্টার আমান জানালেন, আগামী কাল সকালেই এসে পৌঁছুবেন। পরিচালক জন নেবার। এসকেপ ছবির শুটিং শুরু হবে।

আঁতকে উঠল মুসা আর রবিন।

কিশোর নির্লিপ্ত। ধীরে ধীরে জানাল, কি ঘটেছে। আগামী কাল সকালে কি ঝামেলায় পড়তে যাচ্ছে সিনেমা কোম্পানি।

মুখ কালো হয়ে গেল পিটার সিমানসের।

গেল, সব সর্বনাশ হয়ে গেলা প্ৰায় চেঁচিয়ে উঠলেন মিস্টার আমান। পিঙ্গপালের মত ঝাঁপিয়ে পড়বে গুপ্তধন শিকারির দলা বলে কাউকে বোঝাতে পারব না, মোহর নেই কঙ্কাল দ্বীপে।

বলে বোঝানোর দরকার কি? বলল কিশোর।

ভুরু কুঁচকে গেছে, হাঁ করে কিশোরের দিকে তাকিয়ে আছেন। মিস্টার আমান।

একটা বুদ্ধি এসেছে মাথায়, বলল কিশোর। এক কাজ করলেই তো হয়। গুপ্তধন শিকারিদের ছবি তুলে নিন। কোথায় খুঁজছে, কি করছে। না করছে, সব। ট্রেজার হান্টার নাম দিয়ে কম দৈর্ঘ্যের একটা ছবি বানিয়ে ফেলুন। ভাড়া করে লোক এনে গুপ্তধন খোঁজার ছবি বানানো সম্ভব, কিন্তু এত নিখুঁত, এত জ্যান্ত হবে না।

কি যেন ভাবল সিমনস। বলল, ঠিকই বলেছ। শুধু এভাবেই গুপ্তধন শিকারিদের হাত থেকে নিস্তার পাব আমরা। ডাক্তার রোজারকে বলে পাঠাব, স্থানীয় রেডিওতে গিয়ে ঘোষণা করুক, আগামী কাল গুপ্তধন খোঁজা চলবে ব্যাপক হারে। যে গুপ্তধন খুঁজে পাবে, পাঁচশো ডলার পুরস্কার পাবে সে আমাদের কোম্পানির কাছ থেকে। তবে, একটা শর্ত থাকবে, নাগরদোলা নাগরদোলার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। খুঁজেপেতে কিছুই না পেয়ে চলে যাবে ওরা। বুঝে যাবে, কোন গোপন ম্যাপ পাইনি আমরা, গুপ্তধন খুঁজতে আসিনি। তাহলে এভাবে লোককে আমন্ত্রিত করতাম না। আর কখনও আমাদের বিরক্ত করতে আসবে না ওরা। নিরাপদে এসকেপ ছবির শুটিং চালিয়ে যেতে পারব। মাঝে থেকে গুপ্তধন শিকারের ওপর চমৎকার একটা ছবিও তৈরি হয়ে যাবে। খুব ভাল বুদ্ধি

হুঁ-উঁ! ধীরে মাথা ঝাঁকালেন মিস্টার আমান। ঠিকই। তাহলে এখুনি ফোন করে সব কথা জানানো উচিত মিস্টার নেবারকে। তিন গোয়েন্দার দিকে ফিরলেন। রাত অনেক হয়েছে। আর জেগে থেকে না। শুতে যাও। সকালে উঠে দেখতে পাবে খেলা…

কিন্তু বাবা, পাপু… বলতে গিয়ে বাধা পেল মুসা।

ওই চোরটার কিছু শিক্ষা হওয়া দরকার, উঠে দাঁড়ালেন মিস্টার আমান। পিটার, চল যাই। ডাক্তার রোজারকেও খবর পাঠাতে হবে…

তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেল দুজনে। উফফা বাঁচলাম আরাম করে হেলান দিয়ে বসল মুসা। কি ঘাবড়েই না গিয়েছিলাম! কিন্তু পাপুর ব্যাপারটা কি হবে? কানই দিল না বাবা!

বড়রা ছোটদের কথায় কান দেয় না, এটাই নিয়ম, ক্ষোভ প্ৰকাশ পেল রবিনের কথায়। তারা যা ভাবে, সেটাই ঠিক, আমাদের কথা কিছু না…। যাকগে, কিশোরের কথায় কান দিয়েছে ওরা, এটাই বাঁচোয়া। আমি তো কোন উপায়ই দেখছিলাম না. তুমি আবার কি ভাবতে শুরু

অত বেশি ভেব না, হাসল মুসা। মগজটাকে একটু বিশ্রাম দাও। নইলে বেয়ারিং জ্বলে যাবে…

কেশে উঠল কিশোর। থামল। স্বস্তি ফুটেছে চেহারায়।

কি, কিশোর? জিজ্ঞেস করল রবিন। প্রশ্নের জবাব পেয়ে গেছ মনে হচ্ছে?

কণ্ঠে বলল কিশোর।

পারছ। চেঁচিয়ে উঠল মুসা। বলে ফেল! জলদি!

চল, ওপরে চলে যাই বলল কিশোর।

কিশোরের পিছু পিছু দোতলায় শোবার ঘরে এসে ঢুকল দুই সহকারী গোয়েন্দা। উত্তেজিত।

বল এবার, ঘরে ঢুকেই বলে উঠল রবিন।

নিজের বিছানায় গিয়ে বসল কিশোর। ক্যাপ্টেন এক কান-কাটা কোথায় ধরা পড়েছিল, মনে আছে? হস্তে। মোহরগুলো রেখে খালি সিন্দুকটা উপসাগরে ফেলে দিয়েছিল সে। দ্বীপে গিয়ে উঠেছিল। তারপর টিলার ওপরের গর্ত দিয়ে সব মোহর ফেলে দিয়েছিল নিচের গুহায়। এজন্যেই একটা মোহরাও খুঁজে পায়নি ব্রিটিশ যুদ্ধ-জাহাজের ক্যাপ্টেন। তাহলে আরও অনেক মোহর আছে গুহায়! উত্তেজনায় কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দিয়েছে মুসার। পাপুর কথাই ঠিক

মনে হয় না, মাথা নাড়ল কিশোর। তিনশো বছর ধরে জোয়ার আসছে। গুহায়। নিশ্চয় বেশির ভাগ মোহরই বের করে নিয়ে গেছে খোলা সাগরে। ওপরে যা ছিল, পেয়ে গেছ। আর কিছু থাকলেও, বালির অনেক গভীরে ঢুকে গেছে। ওগুলো। খুঁজে পাওয়া কঠিন।

চেপে রাখা শ্বাসটা ফেলল মুসা। ঠিকই বলেছ। তবে আরও কিছু পাওয়া গেলে খুব ভাল হত, উপকার হত পাপুর। ওর বাবাকে গ্ৰীসে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারত।

পাপালোর কথা উঠতেই আবার চুপ হয়ে গেল ওরা। বন্ধুকে সাহায্য করার কোন উপায় ঠিক করতে পারল না। বিষণ্ণ মুখে শুতে গেল।

শোবার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ল মুসা আর রবিন। কিশোরের চোখে ঘুম এল না। ভাবনার ঝড় বইছে মাথায়। অনেক দিন পরে হঠাৎ আবার দেখা দিল কেন স্যালি ফ্যারিংটনের ভূত? কঙ্কাল দ্বীপে লোক যাতায়াত করলে কার কি অসুবিধে? তাদেরকে হস্তে ফেলে রেখে এসেছিল। কেন হান্ট গিল্ডার? কেন হুমকি দিল ডিক.ডিক.তড়িাক করে। লাফিয়ে উঠে বসল কিশোর। বুঝে গেছে!

মুসা, রবিন, জলদি ওঠা চেঁচিয়ে ডাকল কিশোর। রহস্যের সমাধান করে ফেলেছি।

চোখ মেলল দুই সহকারী গোয়েন্দা। হাই তুলতে তুলতে তাকাল কিশোরের দিকে।

কি হয়েছে? ঘুমজড়িত গলায় জানতে চাইল মুসা। দুঃস্বপ্ন দেখেছ?

না উত্তেজিত কণ্ঠ কিশোরের। জলদি কাপড় পর কঙ্কাল দ্বীপ যেতে হবে! রহস্যের সমাধান করে ফেলেছি।

লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে বসিল মুসা আর রবিন।

ইয়াল্লা! চেঁচিয়ে উঠল মুসা। বল বল…

বলল কিশোর।

কিশোর, তোমার তুলনা নেই? বন্ধুর প্রশংসা না করে পারল না রবিন। ঠিক ঠিক বলেছ একেবারে খাপে খাপে মিলে যাচ্ছে সব কিছু।

ইস্‌স্‌, একটা গাধা আমি রবিনের কথায় কান দিল না কিশোর। আরও আগেই বোঝা উচিত ছিল জলদি যাও। আমিই যেতাম, কিন্তু সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা…

না না, তোমার যাবার দরকার নেই, হাত নেড়ে বলল মুসা। তুমি শুয়ে থাক। আমরাই পারব। কিন্তু বাবাকে জানালেই তো পারি। জিমকে নিয়ে তারাও আমাদের সঙ্গে গেলে…

না, মাথা নাড়ল কিশোর। আমার অনুমান ভুলও হতে পারে। তা হলে খেপে যাবেন রাফাত চাচা। তোমরা দুজনেই খুঁজে বের করগে আগে। পেলে, সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে জানাবে তাদেরকে।

পাঁচ মিনিটেই কাপড় পরে তৈরি হয়ে গেল। রবিন আর মুসা। টর্চ নিলো দুজনেই। দরজা খুলে বেরিয়ে গেল নিঃশব্দে।

শুয়ে পড়ল আবার কিশোর। ঘুম এলো না। ক্ষোভে-দুঃখে ছটফট করছে। কেন লাগল ঠাণ্ডা? কেন এই হতচ্ছাড়া সর্দি ধরে বসল। তাকে! নইলে তো রবিন আর মুসার সঙ্গে সে-ও যেতে পারত। রাতটা দ্বীপেই থেকে যেত। তারপর ভোর না হতেই গুপ্তধন শিকারিদের খেলা. গুপ্তধন শিকারি! আবার লাফিয়ে উঠে বসল কিশোর। ভুল হয়ে গেছে, মস্ত ভুল! ভয়ানক বিপদে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। রবিন আর মুসাকে! খুন হয়ে যেতে পারে ওরা, খুন…

<

Super User