অশরীরীর আতংক
১৮৯১ সালের বসন্তে ফ্রান্সের লি পোর্টের এক বাড়িতে উত্তেজনা ছড়িয়ে দেয় এক অশরীরী। খনি এলাকার কাছেই বাড়িটার অবস্থান। অনেক সময় এই এলাকাটায় হাজার দুয়েক লোকেরও সমাগম হয়। তবে প্রেতাত্মাটা নানান কাণ্ড-কীর্তি করে বেড়ালেও ওটাকে দেখেছে এমন দাবি করেননি কেউ। বাড়ির বাসিন্দাদের এভাবে পিটিয়েছে ওটা যে চেহারায় কালশিটে পড়ে গিয়েছিল কারো কারো। পুলিশকেও বিষয়টি জানানো হয়। ভীতিকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন এমন অনেকের মুখ থেকে ঘটনাটা শোনেন তাঁরা। আঁটঘাট বেঁধে রহস্যের সমাধানেও নামে। মানুষের হাত থাকতে পারে এমন সব ধরনের সম্ভাবনা যাচাইবাছাই আর অনুসন্ধান করেন। কিন্তু এর পিছনে রক্ত-মাংসের কোনো মানুষ জড়িত এটা বের করতে ব্যর্থ হন।
একটি ঘটনা বলা যাক। বাড়ির আলোকিত তিনটি কামরায় তেরোজন লোক বসে ছিলেন। এদের কয়েকজন বেশ কিছুটা সময় ধরে সময় কাটানোর জন্য তাস খেলছিলেন। তবে তাদের শান্তিতে থাকতে না দেওয়ার পণ করেছিল কিছু একটা। কারণ পুরো সময়টা জুড়ে বাড়ির নানা প্রান্ত থেকে অদ্ভুত সব শব্দ ভেসে আসতে লাগল। একবার মনে হলো বাড়ির প্রধান সিঁড়ি পথ ধরে সেনাদের একটা দল হুড়মুড় করে নেমে আসছে। দেয়ালে ঝুলানো ছবিগুলো গ্রহণযোগ্য কোনো কারণ ছাড়াই ভয়ানকভাবে দুলতে শুরু করল। তারপর দেয়ালে প্রচণ্ড ধাক্কার শব্দ শোনা গেল। আবার মনে হলো বন্ধ দরজা আর জানালাগুলোর ওপর কিছু দিয়ে দুম দুম করে বাড়ি দিচ্ছে কেউ। শব্দটা অনেকটা কাপড়ে পেঁচিয়ে বিশালাকার কোনো হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করলে যেমন মনে হবে তেমন।
দু-বার একতলার একটা কামরা কালিগোলা অন্ধকারে ডুবে গেল, অথচ বাইরে সূর্য অবিরাম আলো ঢেলে যাচ্ছে। আরেকবার কয়েকজন মানুষ এখানে উপস্থিত হলেন আসলেই ভৌতিক কোনো ব্যাপার ঘটে নাকি পরীক্ষা করে দেখার জন্য। মাঝরাতের ঠিক আগে বাড়ির সব বাতি হঠাৎ নিভে গেল। সেই সঙ্গে চারপাশ থেকে শোনা যেতে লাগল চিল্কার আর বিকট হাসি। বিশেষ করে খালি কামরাগুলো থেকে আওয়াজ এল সবচেয়ে বেশি। যারা তখন বাড়িতে উপস্থিত থাকলেন তাঁর অদৃশ্য কারো হাতে বেদম মার খেলেন। শুধু তা-ই না, সিঁড়ি থেকে কালির বিশাল একটা বোতল ছুঁড়ে মারা হলো।
এই অস্বাভাবিক ঘটনার উৎস আবিষ্কারের জন্য সব ধরনের চেষ্টাই ব্যর্থ হলো। মাঝখানে কয়েক মাসের জন্য এই ধরনের অস্বাভাবিক কীর্তি-কলাপ বন্ধ ছিল। তারপর আবার শুরু হয়। এরপর থেকে বিরতি দিয়ে চলতেই থাকে। কি একবার ঢুঁ মেরে আসবেন নাকি ফ্রান্সের এই ভুতুড়ে বাড়িতে?
<