ক্লান্ত চালক
সিংগাপুরের এক গাড়ি চালক মালয়েশিয়ান হাইওয়ে ধরে গাড়ি চালাচ্ছিল। কুয়ালালামপুরে আত্মীয়ের বাড়িতে যাবে সে। পথে এক জায়গায় গাড়ি নষ্ট হয়ে গেল। আশপাশে কোনো বসতি চোখে পড়ল না। শুধু রাবারের বন। সাহায্যের জন্য কোথায় যাবে এ সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। এমনকী পাশ দিয়ে শাঁ শাঁ করে ছুটে চলা একটা গাড়িও দাঁড়াল না তার ইশারায়। চারপাশে আরও একবার ভালভাবে নজর বুলাল উপায়ন্তর না দেখে, যদি জনমানবের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়। এসময়ই রাবার বনের গভীরে একটা আলো নজরে এল। যাক, অন্তত ওখানে সাহায্য করার মত কাউকে না কাউকে পাওয়া যাবে, ভাবল লোকটা। সৌভাগ্যক্রমে রাবার বাগানের ভিতর দিয়ে পায়ে-চলা একটা পথ চলে গেছে। ক্লান্ত শরীরটা টেনে-টেনে আলোটার দিকে এগুতে লাগল এই পথটা ধরে।
কাছাকাছি হতেই নির্মাণ শ্রমিকদের কাঠের তৈরি দু-তলা কাঠামোটা চোখে পড়ল। সিংগাপুর, মালয়েশিয়ায় নির্মাণ প্রকল্পের এলাকায় এক সময় এ ধরনের অস্থায়ী বাড়ি বেশ দেখা যেত। কিন্তু বাড়িতে পৌঁছার আগেই বৃষ্টি শুরু হলো। অল্প সময়ের মধ্যে বৃষ্টির বেগ বেড়ে গেল। চালাঘরটার সামনে যখন পৌঁছল ততক্ষণে ভিজে একসা হয়ে গেছে।
জোরে দরজায় ধাক্কা দিল সে। গেঞ্জি আর পাজামা পরা একটা লোক দরজা খুলল। তার সমস্যাটা খুলে বলল সিংগাপুরের লোকটা। তারপর জানতে চাইল তাদের এখানে ফোন আছে কিনা আর সেটা সে ব্যবহার করতে পারবে কিনা। শ্রমিক লোকটা তখন বলল, গাড়িটা যদি ঠিকও করতে পার তাহলেও এই আবহাওয়ায় গাড়ি চালানো ঠিক হবে না তোমার। তার চেয়ে বরং রাতটা এখানে কাটিয়ে দাও। সকালে আমরা দেখব তোমার গাড়ির জন্য কী করতে পারি।
সিংগাপুরিয় মনে-মনে কৃতজ্ঞ হয়ে উঠল লোকটার ওপর। ভিতরে তাকিয়ে আরও দুজনকে দেখতে পেল। তিনজনে মিলে তাস খেলছিল। লোকগুলো তাকে বলল ওপরতলায় উঠে বিছানায় শুয়ে পড়তে। তারা রাতভর খেলা চালিয়ে যাবে। লোকগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে এল সে। এখানে এসে অবাক হয়ে দেখল কিছু আসবাবপত্র এমনকি আয়নাসহ একটা ড্রেসিং টেবিলও আছে কামরাটায়। তবে ওটা নিয়ে বেশি একটা চিন্তা করল না। কাপড় ছেড়ে চারটা বিছানার একটায় শুয়ে পড়ল।
রাতের কোনো এক সময় সিংগাপুরিয় লোকটার ঘুম ভেঙে গেল। এসময়ই দেখল সাদা পোশাক পরা এক মহিলা ড্রেসিংটেবিলে বসে ধীরে-সুস্থে তার লম্বা চুল আঁচড়াচ্ছে। এক পর্যায়ে লোকটাকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখল মহিলাটি। চিরুনিটা নামিয়ে রেখে তার দিকে ফিরে একটা হাসি দিল। কী করা উচিত বুঝতে না পেরে পাল্টা হাসল সিংগাপুরিয় লোকটাও।
তারপরই নিজের মাথাটা ঘাড় থেকে নামিয়ে ড্রেসিং টেবিলের ওপর রাখল মহিলাটি। আতংকে চিৎকার করতে চাইল লোকটা। কিন্তু গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হলো না। মহিলাটি নড়ছে না। তবে টেবিলের ওপর রাখা মাথাটা তার দিকে চেয়ে হাসছে।
থর থর করে কাঁপছে লোকটা। তবে শেষ পর্যন্ত নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ খুঁজে পেল। পড়িমরি করে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে এল সে।
দেখল নীচের তিনজন এখনও শান্তভাবে তাস পিটিয়ে যাচ্ছে। বাঁচাও, বাঁচাও, হাঁফাতে-হাঁফাতে বলল সিংগাপুরিয়, ওপরে একটা মহিলা দেখে এলাম, মাথা খুলে ফেলল চোখের সামনে।
তিন তালুড়ে খেলা থামিয়ে তার দিকে তাকিয়ে হাসল। তারপর একজন-একজন করে নিজেদের মাথা খুলে টেবিলে রাখতে লাগল।
<