নডি কোলমানের সাথে খোলাখুলিই আলাপ করল জুলিয়াস। বলল কাজটা সে নিচ্ছে বটে কিন্তু কতদিন যে থাকতে পারবে তার কোন ঠিক নেই। মেডকের সাথে গোলমাল বাধলে নডির এখানে কাজ করে বলে নডিও গোলমালে জড়াক এটা সে চায় না।
যে-কোনদিন যে-কোন মানুষের সাথেই মেডকের লাগতে পারে, বলল নডি। শুধু সে-ই নয়, ওর সাথের লোকগুলোও সবাই ঝগড়াটে। গায়ে পড়ে ঝগড়া করাই ওদের স্বভাব।
কিন্তু আমার কারণে ঝগড়া হোক, এটা আমি চাই না।
জুলিয়াস কাজে যোগ দিয়েছে জেনে মারিয়া কোলম্যান খুব খুশি হয়েছে। গুজবের কারণে কোন অস্বস্তি যদি তার থেকেও থাকে তা কারও বোঝার উপায়। নেই। সে কিছুতেই বিশ্বাস করে না সেবাস্টিন দত্ত তাঁর ছেলেকে অমন কথা বলতে পারে। মারিয়া জোর দিয়েই বলেছিল, তোমাকে তোমার বাবা খুব। ভালবাসেন জানি আমি। তুমি দেখে নিয়ো, ওঁর মাথা একটু ঠিক হলেই আবার তিনি তোমাকে ডেকে পাঠাবেন।
এ নিয়ে আর তর্ক করেনি জুলিয়াস। পরদিন সকাল থেকে ইনডির সাথে কাজে লেগে গেল সে। গরু-মহিষের গায়ে মার্কা মারা, খড় কেটে সেগুলো। সংগ্রহ করে পশুর শীতকালের খাবার হিসাবে জড়ো করা, খুঁটি বদল করে বেড়া মেরামত করা, ইত্যাদি প্রচুর কাজ বাকি পড়ে আছে।
চতুর্থ দিনের দিন শহর থেকে জনি এসে হাজির হলো জুলিয়াসের খোঁজে। রান্নাঘরে জুলিয়াস, নুডি আর মারিয়ার সাথে বসল সে। জনিকে খুব বিচলিত দেখাচ্ছে।
কিছু একটা করা দরকার, কে জানে এরপরে আবার কি ঘটবে? চিন্তাগ্রস্ত ভাবে বলল জনি।
কেন, তোমার আবার কি হলো? প্রশ্ন করল জুলিয়াস।
না, আমার কিছু হয়নি, কিন্তু হতে কতক্ষণ? জেরিকে চিনতে? মারা গেছে। গত সন্ধ্যায় হিউ গুলি করে মেরেছে ওকে।
হিউ! কি হয়েছিল?
এখন ওরা বলছে জেরিই নাকি মদ খেয়ে মাতাল হয়ে হিউ-এর সাথে ঝগড়া বাধিয়েছিল। হিউকে মারার জন্যে পিস্তল বের করতে দেখেই হিউ ওকে গুলি করে। কিন্তু মদ খেয়ে মাতাল হবার মানুষ জেরি নয়। যাহোক, ওদের কথার ওপর হিউকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। মেডককে যদি এখনই থামানো না হয় তবে ওর লোকজনেরা একটার পর একটা এই ধরনের কাজ করেই চলবে।
চট করে লোলার কথা মনে পড়ল জুলিয়াসের। মেয়েটার ভাব ছিল জেরির সাথে। এখন কেমন লাগছে ওর? শূন্য? অবশ? হয়তো কাদছে সে-কিন্তু তাতে আর কি লাভ হবে? জেরি তো আর ফিরবে না!
মারিয়া কোন মন্তব্য করেনি। সে শঙ্কিত মুখে স্বামীর দিকে চেয়ে রয়েছে। নডিকেও চিন্তিত দেখাচ্ছে। জনি উত্তেজিতভাবে ঘরময় পায়চারি করে বেড়াচ্ছে।
কি করা যায়, জুলিয়াস? থেমে দাড়িয়ে প্রশ্ন করল জনি। করার আছেই বা কি?
ওদের পরবর্তী পদক্ষেপের জন্যে অপেক্ষা করতে হবে আমাদের, জবাব দিল জুলিয়াস। দেখি ওরা কি করে।
চারদিন পর রাতের বেলা আর একজন অতিথি এসে হাজির হলো। দরজায় কড়াঘাতের শব্দে নড়ি পিস্তল হাতে সন্তর্পণে এগোল দরজার দিকে-জুলিয়াস দূর থেকে ওকে কাভার করে রয়েছে।
তোমার একজন গেস্ট এসেছে, জুলিয়াস, চিৎকার করে জানাল নডি।
লোলা বেইলি!
রাইফেল হাতে এগিয়ে এল জুলিয়াস। যেমন অবাক হয়েছে তেমনি দুশ্চিন্তাও হচ্ছে তার এই অসময়ে লোলাকে দেখে। রাত বারোটা ঠিক, বেড়াতে আসার সময় নয়। কিন্তু হয়েছে, লোলা? উদ্বিগ্ন স্বরে প্রশ্ন করল জুলিয়াস।
কিছু হয়নি, কিন্তু তোমার সাথে কথা বলা খুব দরকার।
তোমরা ভিতরে এসো, ডাকল নডি।
আমি বাচ্চাদের বা মারিয়ার ঘুম ভাঙাতে চাই না।
আমি জেগেই আছি, বলতে বলতে মারিয়া বেরিয়ে এল। আর বাচ্চাদের নিয়ে চিন্তা নেই, ভূমিকম্প হলেও জাগবে না ওরা। বাতি জ্বালাচ্ছি আমি।
ভিতরে ঢুকল ওরা। বুট, জীনস আর ব্লাউজের ওপর সোয়েটার পরেছে লোলা। চুলগুলো ছাড়া। ক্লান্ত দেখাচ্ছে ওকে।
আমি কফি চাপিয়ে দিচ্ছি, বেশি দেরি হবে না।
ওসব ঝামেলা করার কোন দরকার নেই, এখনই ফিরতে হবে আমাকে। অনেকদূর পথ-সকালেই আবার রেস্টুরেন্ট খুলতে হবে।
তাহলে আর ঘুমাবে কখন তুমি? বলে উঠল জুলিয়াস। একদিন তোমার মা চালিয়ে নিতে পারবেন না?
মা জানেন না আমি এখানে এসেছি। কেউই জানে না। শনিবারে শহরে যাচ্ছ তুমি?
নডির দিকে চেয়ে মাথা ঝাঁকাল জুলিয়াস। হ্যাঁ, কিছু জিনিস কেনা দরকার, শনিবারেই শহরে যাব ঠিক করেছি।
যেয়ো না! কথা দাও, প্লীজ! বলো যাবে না তুমি?
লোলাকে টলতে দেখে জুলিয়াস এগিয়ে এসে ওকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিল। ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে গোলার মুখ-কথা বলতে পারছে না মেয়েটা।
কারও কোন আপত্তি শুনতে চাই না-কফি চাপাচ্ছি আমি, বলল মারিয়া।
কফিতে চুমুক দিয়ে একটু সুস্থির হয়ে ধীরে ধীরে সব খুলে বলল লোলা। রেস্টুরেন্টের কাজে টুকরো টুকরো কথাই কানে আসে। তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কথা কিছুটা কানে এসেছে আমার।
কার কাছ থেকে শুনলে? প্রশ্ন করল জুলিয়াস।
বিভিন্ন লোকের কাছে। মেড, হিউ, এড, আরও অনেকে।
আমার সম্বন্ধে কিছু বলছিল?
হ্যাঁ, শনিবারের কথা বলছি। ওদের ধারণা শনিবারে তুমি শহরে যাবে। ওদের টেবিলের পাশ দিয়ে যাবার সময়ে শুনলাম মেডক বলছে, কাজটা ঠিকমত করতে পারলে শেরিফ কিছুই করতে পারবে না। হিউ বলল, আমার হাতে ছেড়ে দাও কাজটা-মিস করি না আমি। এড বলল, লোকে ওকে বেশ পছন্দ করে। আর একটা হত্যা এই মুহূর্তে ঠিক হবে না। মেডক ধমক দিয়ে ওকে থামিয়ে দিল।
বিশ্বাস করছ আমার কথা?
মাথা ঝাঁকাল জুলিয়াস। তোমার কথা মোটেও অবিশ্বাস করছি না আমি।
তাহলে শনিবারে শহরে যাচ্ছ না তো?
হাসল জুলিয়াস। প্রশ্নটার সরাসরি জবাব না দিয়ে বলল, সেটা ভেবে দেখতে হবে। একদিন না একদিন শহরে যেতেই হবে-সারা জীবন তো আর পালিয়ে বেড়ানো যাবে না?
কেন? প্রতিবাদ করল লোলা। পার্কেই তোমাকে থাকতে হবে এমন কোন কথা নেই-অন্য কোথাও চলে যাও না কেন তুমি?
হয়তো পার্কের মায়া কাটাতে পারি না বলেই যেতে পারি না।
কিন্তু শনিবারে শহরে না গেলেও তোমার চলবে।
তা ঠিক। চিন্তাযুক্ত মুখে জবাব দিয়ে জানালার ধারে সরে গেল জুলিয়াস। লোলার কথাগুলোই মনেমনে উল্টেপাল্টে ভেবে দেখছে সে। আসলে এতে খুব একটা অবাক হয়নি ও। এড তাকে পার্ক ছেড়ে চলে যাবার পরামর্শ দিয়েছিল। জারভিস, মেডক-ওরাও একই কথা বলেছে। জুলিয়াস পার্কে থাকুক এটা সহ্য হচ্ছে না ওদের-কিন্তু কেন? এক সপ্তাহের ওপর হয়ে গেল রকিং এইচের ধারে কাছেও যায়নি সে। বরং ওখান থেকে বহুদূরে ও এই কাজটা নিয়েছে।
কেউ যদি তোমার পিছনে লেগে থাকে সে তো এখানে এসেও তোমাকে মারতে পারে? আলোচনায় যোগ দিল নডি।
পারে, কিন্তু সেটা হবে খুন। শহরে ব্যাপারটা যদি ওরা ঠিক মত সাজাতে পারে তবে ঘটনাটা গান-ফাইটের মত দেখাবে। আমাকে উস্কে দিয়ে ওরাই ঝগড়াটা বাধাবে।
তোমার কোমরে পিস্তল বাধা না থাকলে?
অন্য পথ খুঁজে নেবে ওরা।
শহরে সর্বক্ষণ যদি তোমার সাথে সাথেই থাকি আমি?
তাতে তুমিও ঝামেলায় জড়িয়ে পড়বে।
কিন্তু এতে কাজ হতে পারে।
সেটা ভাল করে ভেবে দেখতে হবে।
রাত অনেক হয়েছে, উঠল লোলা। জুলিয়াস ওকে বিদায় দিতে ওর সাথেই বাইরে এল। বাইরে দাঁড়িয়ে জেরির কথা তুলে লোলার জবাব শুনে খুব অবাক হলো জুলিয়াস।
ওর কথা ভেবে আমার জন্য দুঃখ কোরো না, জুলিয়াসের কনুই-এর ওপর হাত রেখে বলল লোলা। জেরি খুব ভাল লোক ছিল, পছন্দ করতাম, কিন্তু ভালবাসতাম না। ওকে কখনোই বিয়ে করতাম না আমি।
তাহলে তোমার এখনও কোন মনের মানুষ মেলেনি?
দুর্ভাগ্য আমার।
হেসে উঠল জুলিয়াস। তাড়াহুড়োর কিছু নেই, এখনও অনেক সময় আছে। চলো তোমাকে শহরে পৌঁছে দিয়ে আসি।
সুন্দর পরিষ্কার আকাশ। দুজনে গল্প করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছে। লোলার বাবা বেঁচে থাকতে তার ছেলেবেলাটা নিজেদের খামারেই কেটেছে। সেখানেই সে বন্দুক ছোড়া, ল্যাসো ব্যবহার করা, ঘোড়ায় চড়া, এসব শিখেছে।
জুলিয়াসই বেশির ভাগ কথা চালিয়ে গেল সারাটা পথ। শহরের কাছাকাছি এসে নীরবেই পথ চলছিল ওরা। হঠাৎ লোলা প্রশ্ন করল, ফেরার পরে ওর সাথে তোমার দেখা হয়েছে, জুলিয়াস?
অবাক হয়ে ওর দিকে চাইল জুলিয়াস। সে যে জিনার কথাই ভাবছে কি করে বুঝল মেয়েটা? হ্যাঁ, দেখা হয়েছে, বলল।
অন্ধকারেও লোলার মুখ ভঙ্গি নজরে পড়ল তার। কি হয়েছে বলো তো?
না, কিছু না, থেমে থেমে উচ্চারণ করল জুলিয়াস। তারপর কি ভেবে। আবার বলল, জিনা ওর ভাইয়ের মৃত্যু ভুলতে পারেনি।
কিন্তু সেটা তো আকস্মিক দুর্ঘটনা। সে জন্যে
ভাইকে খুব ভালবাসত সে।
কিন্তু-
কথাটা শেষ করল না লোলা। আবার নীরবে পথ চলল ওরা। এরপরে যখন আবার মুখ খুলল তখন সে সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়ে কথা বলল। শনিবারে ঠিকই শহরে আসবে তুমি-তাই না?
সম্ভবত।
তাহলে তোমাকে সাবধান করতে আসাটা একেবারে বৃথা হলো আমার?
না, তা কেন হবে? সতর্ক হয়ে গেলাম। শহরে যখন ঢুকব চোখ-কান খোলা রাখব আমি।
সোজা জুলিয়াসের দিকে চাইল লোলা। আমি জিনা হলে বলতাম, দূরে কোথাও আমাকে নিয়ে চলো-পৃথিবীর যে-কোন দেশে।
আর জিনা ওকথা বললেও আমি জবাব দিতাম, সেটা সম্ভব নয়।
অন্তত সাবধানে থাকবে তো তুমি?
হ্যাঁ, থাকব।
এগিয়ে চলল ওরা। শনিবারের কথা ভাবছে জুলিয়াস। শহরে সেদিন কি ঘটবে? কতটা সাবধান থাকতে পারবে ও? আসলে মেডকের প্ল্যানটা তার জানা দরকার। হয়তো জারভিস বা পেপির সাথে তার কথা বলা উচিত। পেপির সাথে কথা হলেই ভাল হয়।
<