সম্প্রতি যেসব ঘটনা ঘটেছে তাতে অ্যাডাম বিচলিত। এতক্ষণে কিছু খবর আসা উচিত ছিল। কয়েকজন রাইডার, যারা শহরে এসেছে, তারা জানিয়েছে রকিঙ কে বা ত্রী এইচ রেঞ্জে কোন কাউহ্যাণ্ডের ছায়া পর্যন্ত ওরা দেখতে পায়নি।
ঘটনাটা অদ্ভুত আর অযৌক্তিক। রেঞ্জ-ওয়ারে কেমন সাংঘাতিক দাঙ্গা হয় এটা সে জানে। এই নীরবতা ওকে অস্থির করে তুলেছে। সায়মন মারা যাওয়ার পর, ওর পকেট সম্পূর্ণ খালি পাওয়া গেছে শুনে, তখন থেকেই সে দুশ্চিন্তায় ভুগছে। যদি খুনী ওগুলো নিয়ে থাকে, আর ওর পকেটে তাকে অভিযুক্ত করার মত কাগজ থাকে, সেটা এখন খুনীর হাতে-এবং অ্যাডাম জানে খুনী কে।
শেষে খবর এল চারজন রাইডার রকিঙ কে-তে ফিরেছে। কিন্তু ওদের সাথে ড্যাশার ছিল না। সে যদি আবার হাইডআউটে যায়? কিংবা স্টার সিটির মাইনে? সে কি প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারবে তা কিছুই বলা যায় না। লোকটা যে বোকা নয়, সেটা জেমস হার্টকে যে খুন করা হয়েছে, এটা ধরে ফেলা থেকেই বোঝা যায়।
অ্যাডাম অনুভব করছে ভাগ্য চারপাশ থেকে ওকে যেন ঘিরে ফেলছে। অথচ সবকিছুই এত সুন্দর ভাবে এগোচ্ছিল! অবশ্য আউটফিটের যদি কিছু হয়, ওদের সাথে সমার্সও মারা পড়তে পারে। কিন্তু ওর মন থেকে সংশয় দূর হলো না। লোকটার বেঁচে থাকার ক্ষমতা অসাধারণ। ড্যাকোটা জ্যাকের ভাগ্যে কি ঘটেছিল? নিজের লোকই ওকে গুলি করে মেরে ওর ঘোড়া নিয়ে পালিয়েছিল। জেরি সমার্স নিঃসন্দেহে ভয়ানক।
জন মার্সার বারে অ্যাডামকে পার হওয়ার সময়ে বুড়ো আঙুল ঝাঁকিয়ে হ্যারিংটনকে দেখাল। ও তোমার সাথে কথা বলতে চায়।
অ্যাডাম যখন ওর পাশে এসে দাঁড়াল হ্যারিংটন তখন হাসছে। রুমাল দিয়ে ঘাম মুছল অ্যাডাম। গরম, বলল সে।
হ্যাঁ। বিল হ্যারিংটনের উফুল্ল ভাব। এবং আরও গরম হবে। ওরা হেনরি আর ওয়াটসনকে পেয়েছে–দুজনেই মৃত। মনে হয় ওরা দুজন নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি করে মরেছে।
আমার ধারণা ছিল ওরা একসাথেই কাজ করত।
হয়তো। কিন্তু আজকাল মানুষ যে কে কোনদিকে যাবে তা বলা মুশকিল।
কর্ন প্যাচে আর কেউ আছে?
একেবারে খালি।
জনি হিউবার্ট যদি মারা গিয়ে থাকে, তাহলে ফাইট হয়তো এখানেই শেষ।
হঠাৎ ভীষণ ক্লান্ত আর ভীত বোধ করছে অ্যাডাম। ওর সব প্ল্যান ব্যর্থ হয়ে গেল–সম্পূর্ণ ব্যর্থ?
সোনা নিয়ে আরেক দুশ্চিন্তা। ওগুলো স্টার সিটির মাইনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রেডও নেই যে ওগুলো পাহারা দেবে। বোকার মত জের সাথে ওকে থ্রী এইচে যোগ দেয়ার অনুমতি দিয়েছে সে। ভেবেছিল ওখানে সে সমার্সের ওপর নজর রাখতে পারবে। কিন্তু বিগ গানফাইটার নিজের ইচ্ছামত কোনদিকে গেলে ওকে অনুসরণ করার মত যুক্তিসঙ্গত কোন অছিলাই রেডের থাকবে না। অ্যাডাম ভেবেছিল জেরিকে সে বাগে রাখতে পারবে। কিন্তু এখন ভাবতে গিয়ে মনে পড়ছে, লোকটা তার কথা আপাত সম্প্রমের সাথে শুনলেও সবসময়ে নিজের ইচ্ছে মতই চলেছে। অ্যাডাম তার শুকনো ঠোঁট চাটল।
রাতে যে ওর ভাল ঘুম হয়নি, তার চেহারায় এর স্পষ্ট ছাপ পড়েছে। দরজার কাছে এগিয়ে লিভারি আস্তাবলের দিকে তাকাল সে। শহরে কেউ এলে ওখানেই প্রথম থামে।
কোন খবর না পেলে আমি শান্তি পাচ্ছি না, রাগের সাথে বলল সে। এই নীরবতা আমাকে টেনশনের মধ্যে ফেলে রেখেছে।
চিন্তাযুক্ত ভাবে ওর দিকে চাইল বিল। এর ভিতর তোমার স্বার্থটা কোথায়? তুমি হিউবার্টদের সাথে নেই, এবং আর যাদের ক্ষতি হতে পারে তারা হচ্ছে রাসলার। যদি না, সে সাবধানে যোগ করল, যদি না সেটা স্টেজ ডাকাতি সম্পর্কিত হয়।
তুমি কি ইঙ্গিত করছ ওদের সাথে আমার সম্পর্ক আছে?
তুমি? নিরীহ সুরে প্রশ্ন করল সে। এমন কথা কে ভাবতে পারবে? একটু থেমে আবার বলল, সমার্স? এখন সেটা সম্পূর্ণ আলাদা কথা। ওর কাছে সব সময়েই টাকা থাকে, কিন্তু কোথা কে সে তা পায়, সেটা আমি কখনও বুঝে পাইনি। একটা চুরুট ধরাল সে। আসি, পরে আবার দেখা হবে, অ্যাডাম।
ওর যাওয়ার পথের দিকে চেয়ে রইল অ্যাডাম, ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বসেছে। ওকে এখন থেকে আরও সাবধান থাকতে হবে।
জন মার্সার ওকে লক্ষ করছিল, গোপনে হাসল সে। অ্যাডাম যদি সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়, তাতে ক্ষতির চেয়ে তার লাভই হবে বেশি। রনি ড্যাশার আসার পর থেকেই, নিজে নগণ্য খেলোয়াড় বলে জন মনেমনে ছোট বলে তাকে কেউ খেয়াল করবে না, এবং সে সাধারণত আড়ালেই থাকে। এটাই ওর পছন্দ। নগণ্য হয়েও বেঁচে থাকাটা ওর কাছে অনেক বেশি কাম্য।
জনি হিউবার্ট শেষ পর্যন্ত একটা ঘোড়া ধরতে সক্ষম হলো। জোরে ঘোড়া ছুটিয়ে থ্রী এইচে পৌঁছে খালি করাল আর নীরবতাই কেবল দেখতে পেল। র্যাঞ্চে কোন খাবার বা গোলাগুলি নেই। তার ভাই বা লোকজনের কোন চিহ্নও নেই। দুশ্চিন্তায় অস্থির হয়ে দূরবীন নিয়ে কাছেই একটা পাহাড়ের মাথায় উঠে চারপাশ খুঁটিয়ে দেখল। প্রথমে কিছুই দেখতে পায়নি, তারপর দেখল একটা সরু কালো রেখা যেন নড়ছে। হয়তো একটা গরুর দল-ওয়াটারহোলের দিকে যাচ্ছে।
চেষ্টা করেও ওটা কি বা কে বুঝতে পারল না সে। আসলে, ওরা তারই লোকজন। গরমে আর পিপাসায় ওদের ঠোঁট ফেটে গেছে। পুরু ধুলোয় ঢাকা সারা দেহ-মেজাজ চড়া।
দ্রুত চিন্তা করছে জনি। একটা ঘোড়া ওর এখন সব থেকে বেশি প্রয়োজন। কিন্তু র্যাঞ্চে কোন ঘোড়া নেই। ম্যাণ্ডালেই সবচেয়ে কাছে যেখানে ঘোড়া পাওয়া যাবে। সে জানে না যে ওগুলোকেও তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যে মাসট্যাঙটার পিঠে চড়ে সে র্যাঞ্চে ফিরেছে, সেই ক্লান্ত ঘোড়াটার পিঠেই আবার চাপল জনি। হঠাৎ তার মনে পড়ল ম্যানডালের থেকে রকিঙ কে অনেক কাছে। রাইডাররাও সব বাইরে থাকবে।
ঘোড়ার মুখ পশ্চিমে ঘুরাল সে। ম্যাণ্ডালেতে গেলে ওর নিশ্চিত মৃত্যু হত না। যেটাকে সে খালি র্যাঞ্চ মনে করেছিল, সেখানে কেবল দু’জন ভাড়া বাকি সবাই উপস্থিত। শর্টি মাইক সঙ্গীদের ফাঁকি দিয়ে সরে পড়েছিল। এখন সে রনিকে ট্রেইল করছে। ওর সাহায্যের দরকার হতে পারে মনে করে শর্টি পিছু নিয়েছে।
তপ্ত সূর্যের নিচে পুব দিকে যাচ্ছে ড্যাশার, তারপর পক্ষণে ফিরল। দক্ষিণে কতগুলো ছোট টিলার পরেই ট্রিনিটি পর্বত-শ্রেণীর প্রথম উঁচু চূড়াটা দেখা যাচ্ছে। চওড়া হ্যাটের ধারের তলা দিয়ে কঠিন নীল চোখে সে পুরো এলাকাটা সার্চ করে দেখল। প্রথমে কাছে থেকে শুরু করে পরে দূরে-আরও দূরে সবই সে খুঁটিয়ে দেখল। ফোঁটাফেঁটা ঘাম ওর ঘাড় বেয়ে নিচে নামছে। ঘোড়ার প্রতি পদক্ষেপে চিকন ধুলো আকাশে উড়ে টপার আর রনির ওপরই পড়ে স্থির হচ্ছে।
হঠাৎ সায়মনের পকেটে পাওয়া কাগজগুলোর কথা ওর মনে পড়ল। ঘটনার চাপে ওগুলোর কথা সে একেবারেই ভুলে গিয়েছিল। বর্ষাতির পকেট থেকে সব বের করে পরীক্ষা করে দেখল। কয়েকটা চিঠি রয়েছে ওখানে। প্রথম চিঠিটার ঠিকানাঃ সিম সায়মন, মবীটি, টেক্সাস।
চিঠির বক্তব্য:
একশো ডলার পাঠাচ্ছি। পৌঁছলে তুমি আরও চারশো পাবে। বাকি পনেরোশো কাজ শেষ হলে পাবে। জেরি সমার্সের নাম হয়তো তুমি শুনেছ। কেমন করে, কোথায়, এবং কখন সেটা তোমার ওপর। কিন্তু যত শীঘ্র হয় ততই ভাল।
‘এ’
ওই ‘এ’টা হয়তো অ্যাডামের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে। বোঝা যাচ্ছে জেরি সমার্সকে হত্যা করার জনেই গানম্যানকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। রনির বিশ্বাস অ্যাডাম স্টেজ ডাকাতিতে জেরির সাথে জড়িত। হয় সে ওকে সোনার ভাগ দিতে চায়নি, কিংবা ভেবেছিল সমার্সের বেঁচে থাকা তার জন্যে বিপজ্জনক। সায়মনকে হত্যা করার কারণটা পরিষ্কার হলো। কিন্তু কে কিজন্যে ওকে ডেকে পাঠিয়েছে জেনেও কেন সে অ্যাডামকে মারেনি? এর কারণ একটাই হতে পারে-নিজের স্বার্থেই ওকে ব্যবহার করার জন্যে অ্যাডামকে আরও কিছুদিন বাচিয়ে রাখতে চায় সে।
দ্বিতীয় চিঠিটা শেরিফের অফিস থেকে এসেছে।
চিঠির বক্তব্য:
জেরি সমার্স সম্পর্কে তোমার প্রশ্নের জবাবে বলছি, নামটা আমার কাছে অপরিচিত।
কিন্তু ওর বিবরণ বন্ড নব পরিবারের ভাস্কো গ্ৰেহামের সাথে মেলে। দু’জন যদি একই লোক হয় তবে জেনো ভাস্কো একজন নিষ্ঠুর খুনী
এবং পিস্তলে ওর হাত ভয়ানক চালু।
বাকি চিঠিগুলো ব্যক্তিগত। তবে ওতে সায়মনের টাকা পাঠাবার একটা ঠিকানা পাওয়া গেল। ওকলাহোমায় ওর মেয়ে থাকে।
এই ভাস্কো গ্ৰেহামই তার পার্টনার ডেকোটা জ্যাককে খুন করে ওর ঘোড়া নিয়ে পালিয়েছিল। এই জন্যেই এলাকাটা জেরির এত পরিচিত।
ছয় মাইল পিছনে রনিকে ট্র্যাক করছে শর্টি। সাধারণত কাজটা কঠিন হওয়ার কথা নয়, কারণ ট্র্যাক লুকাবার কোন চেষ্টা ড্যাশার করেনি। কিন্তু ছোট ছোট ঘূর্ণি-বাতাস (dust devil) মরু-এলাকার ধুলো
উড়িয়ে অনেক জায়গাতেই ট্রাক নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে। এগিয়ে চলল শর্টি। সামনের রেঞ্জটা খুঁটিয়ে দেখে সে বোঝার চেষ্টা করছে এদিকে আসার পিছনে তার ফোরম্যানের কি উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
শক্ত বাদামী রঙের মুখটা মুছে, গরমকে একটা গালি দিল শর্টি। বৃষ্টি হোক মনেমনে এই কামনাই করছে সে। ভেজা আঙুলে সিগারেট তৈরি করে তাতে একটা লম্বা টান দিয়ে, পাহাড়ের ভাঙা অংশটার দিকে এগোল মাইক। কোন একটা বিরাট বিশৃঙ্খলা পাহাড়টাকে ওখানে ভেঙে ফেলেছে, ভাবল সে। একটা শকুন বিরাট চক্কর দিয়ে আকাশে ঘুরছে। কোন তাড়া নেই। ওর অভিজ্ঞতায় সে জানে শেষে সবকিছু তার কাছেই আসে।
ঘোড়াটার সাথে কথা বলল শর্টি। ঘোড়া সামনে এগোল। প্রচণ্ড তাপের হাত থেকে রেহাই পেতে ওটা যেকোন জায়গায় যেতে রাজি। সেভেন পাইনস রেঞ্জের ওপর মেঘ জমেছে। হয়তো শর্টির কামনা পুরো হবে। বৃষ্টি হতে পারে।
ইনডোর স্টেডিয়ামের মত পাথরের দালানটা হয়তো কোন বিলুপ্ত ইণ্ডিয়ান ট্রাইব তৈরি করেছিল। রোদ আড়াল হয়েছে বলে ভিতরটা আরামদায়ক ভাবে ঠাণ্ডা। একটা ভোলা বোতল সামনে নিয়ে টেবিলের ধারে বসে আছে জেরি। লারামির দিকে চেয়ে হাসছে সে।
ডাকির সাথে কথা বলেছ তুমি? লারামি প্রশ্ন করল।
অবশ্যই না। লোকটা ভাল কিন্তু ওর এঞ্জিন একবার চালু হলে সে তোমার বাহু টেনে উপড়ে ফেলবে।
তোমার মনে হয় রেড রিভার রেগানই ড্যাশার?
নিশ্চয়। কিন্তু সে কিভাবে এই হাইডআউট খুঁজে পেল সেটা সত্যিই একটা বিস্ময়কর ব্যাপার। যতবারই আমি বাইরে যাই এটা আবার খুঁজে বের করতে আমার ঝামেলা হয়।
তোমার ধারণা সে আবার এখানে আসবে?
আসবে। কিন্তু যখন আসবে, ওকে আমরা কবর দেব। ঢোকার পথে গার্ড আছে। ওকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সে যেন ড্যাশারকে ঢুকতে বাধা না দেয়। মুখ তুলে তাকিয়ে ঠাণ্ডা চোখে লারামিকে পরখ করে দেখল জেরি। এটা একটা চরম মোকাবেলা। অ্যাডাম আমাকে হত্যা করার জন্যে সায়মনকে এখানে আনিয়েছিল। জেমস হার্টকেও সে একই কাজে নিয়োগ করার চেষ্টা করেছিল।
জেমস কখনও কাউকে টাকার বিনিময়ে হত্যা করতে পারত না।
অ্যাডাম চেষ্টা করেছিল। আমি ওদের কথা বলতে দেখে জেমসকে সরাসরি জিজ্ঞেস করেছিলাম। সে আমাকে স্পষ্ট কোন জবাব দেয়নি। কেবল জিজ্ঞেস করেছিল অ্যাডাম আর আমার মধ্যে কোন রিরোধ আছে কিনা।
ওটাই কি যথেষ্ট? নিশ্চয় তাই। পুরো সোনাই অ্যাডাম চায়। সবটাই।
কাঁধ উঁচাল লারামি। ওকে কখনও আমি বিশ্বাস করিনি।
অল্পক্ষণের মধ্যেই ড্যাশারের ব্যাপারটা মিটবে। এরপর অ্যাডামের সাথে আমি বোঝাপড়া করব। এভাবে সব ফাস না হলে হয়তো ওকে আমরা কাজে লাগাতে পারতাম। কিন্তু এখন আর তা হয় না। সোনা নিয়ে এখান থেকে আমরা সরে পড়ব। তারপর সোনা বিক্রি করে অন্য কোথাও রাজার হালে কাটাব।
জনি হিউবার্টের কি হলো?
বলতে পারি না। ওর ঘোড়াটা কর্ন প্যাচে মরে পড়ে আছে। ওদিকে ওয়াটসন আর হেনরি দু’জনেই গান ডুয়েলে মরেছে। কাঁধ উঁচাল জেরি। ভাবিনি হেনরির ভিতর এতও ছিল।
না। লারামি তার চেয়ারে একটু নড়ে বসল। অন্যমনস্ক হয়ে খালি টেবিল আর বোতলটার দিকে চেয়ে আছে সে। এটাই কি এই সবের পরিণতি? লুকিয়ে থাকা, পালিয়ে বেড়ানো, একটা ভাল মানুষকে ফাঁদে ফেলার জন্য অপেক্ষা করা? মানুষকে এসব ভাবতে বাধ্য করে, সে বলে উঠল হঠাৎ। বিল ওয়াটসন শক্ত লোক ছিল। মানুষের জন্যে সে ছিল আতঙ্ক আর বিভীষিকার কারণ। কিন্তু কি হলো? কুপির মত দপ করে নিভে গেল সে। বিল যদি এত সহজে মরতে পারে, যেকেউ পারে।
নীরবে বসে আছে ওরা। দূর থেকে মেঘের গর্জন ভেসে এল। দুজনেই মুখ তুলে তাকাল। বৃষ্টি! ভালই হলো, পৃথিবীটা এবার ঠাণ্ডা হবে।
সিগারেট ধরাল সমার্স। তারপর আগুনের ধারে গিয়ে ওটাকে উস্কে কিছু কাঠ চাপিয়ে কফি বসাল।
ড্যাশারের ডীলটা কি? আমরা ওকে ভিতরে ঢুকতে দেব? প্রশ্ন করল লারামি।
নিশ্চয়। ওকে আমরা সামনে থেকে আক্রমণ করব, আর পিছনে থাকবে ডাক বেইলি। মাঝখানে খোলা জায়গায় ফাঁদে পড়ে ঝাঁঝরা হয়ে যাবে সে।
বেইলি বাইরে পথটার ওপর নজর রেখেছে বটে, কিন্তু রনি সেই আগের পথ ব্যবহার করে ক্যানিয়নে ঢুকে পড়েছে। বিকেল হয়ে আসছে। সেভেন পাইনসের ওপর স্তরে-স্তরে মেঘ জমে আকাশটা কালো হয়ে আসছে। ক্যানিয়নের নিচে পৌঁছে রনি আর কিছুরই তোয়াক্কা করছে না। এখন ওর উদ্দেশ্য একটাই–জেমস হার্টের খুনের জন্যে যারা দায়ী তাদের শুটিঙের আওতায় পাওয়া। ওরা আর কি করেছে তা সে মোটেও বিবেচনা করছে না। একজন আহত আর অসহায় মানুষকে ওভাবে খুন করার মত জঘন্য অপরাধ আর দুটো নেই।
দেয়ালের কাছঘেঁষে একটা পাথরের আড়াল থেকে পরিস্থিতিটা বোঝার চেষ্টা করল ড্যাশার। পাথরের দালানটা থেকে ধোঁয়া উঠছে। বুঝল বাইরের দিকের ক্যানিয়নে, যেখানে ট্রেসারের সাথে ফাইট হয়েছিল, কেবল সেখানেই নয়, এখানেও লোক আছে।
এখানে প্রচুর আড়াল রয়েছে। আড়ালকে পুরো কাজে লাগিয়ে ধীরে পাথরের দালানের দিকে এগোল সে। ভিতরের দুজনই দক্ষ পিস্তলবাজ। যেকোনজন হয়তো তার সমকক্ষ হতে পারে। দু’জনে মিলে তারচেয়ে অনেক শক্তিশালী, এতে সন্দেহ নেই। এসব লোকের বিরুদ্ধে ঝুঁকি নেয়া বোকামি। একটা ভুল করলে সেটাই হবে তার শেষ ভুল।
আবার মেঘের গর্জন শোনা গেল, এবার আরও কাছে। শুনে একটু থামল রনি। এতে তার অভিযানে কতটা লাভ বা ক্ষতি হতে পারে তা সতর্ক ভাবে যাচাই করে নিয়ে আবার এগোল।
আধ মাইল দূরে প্রবেশ পথের কাছে গার্ড দেয়া ছেড়ে ফিরে আসার জন্যে রওনা হলো বেইলি। ওদিকটা পুরো কালো হয়ে গেছে। কালো মেঘের ভিতর থেকে উজ্জ্বল রেখায় বাজ পড়ছে। ঝোড়ো মেঘ প্রায় তার মাথার উপর পৌঁছে গেছে। বুঝতে পারছে তাকে ভিজতে হবে। এত উঁচুতে যেকোন সময়ে তার ওপর বাজ পড়তে পারে। দ্রুত নামতে নামতে ক্যানিয়নের পাথরের দালানটার দিকে চেয়ে সে চমকে উঠল।
কে যেন ওটার দেয়াল ঘেঁষে সন্তর্পণে এগোচ্ছে!
কি ঘটেছে বুঝতে পেরে ওর বুকের ভিতরটা ধড়াস করে লাফিয়ে উঠল। ড্যাশার ক্যানিয়নে ঢুকে পড়েছে।
বোঝার সঙ্গে সঙ্গে সে নিচে নামার জন্যে ছুটল। হঠাৎ প্রবেশ পথের মুখে একজন আরোহীকে দেখতে পেল ডাক। লোকটা তারই দিকে চেয়ে আছে। আরোহী শর্টি মাইক। রনির ট্রেইল হারিয়ে সেটার খোঁজে সে হেলে-পড়া পাথরের গোলক-ধাঁধায় ঘুরছিল।
বেইলি ক্যানিয়নের নিচে পৌঁছেই পাথরের দালানটার দিকে ছুটল। এবার ওরা ড্যাশারকে বাগে পেয়েছে। ওর বাঁচার কোন পথ নেই।
পাথরের দালানের দরজা ঠেলে খুলে সে চিৎকার করল, ড্যাশার ভিতরে! হাঁপাতে-হাঁপাতে বলল বেইলি। কি করে ঢুকল জানি না, কিন্তু সে ভিতরে! আমি ওকে দেখেছি!
একটা বাঙ্কে শুয়ে ম্যাগাজিন পড়ছিল লারামি। ওটা নামিয়ে রেখে, উঠে পিস্তলের বেল্টটা পরে নিল সে। বুকের ভিতরটা ধড়াস-ধড়াস করছে-মুখের ভিতরটা শুকিয়ে এসেছে।
ক্ষছছ তাদের পক্ষে হলেও, সে জানে কার বিরুদ্ধে লড়তে যাচ্ছে। স্বস্তি বোধ করছে না ও।
রনি গর্তটার পিছনে করালটার কাছে পৌঁছেছে। কোন ঘোড়ার পিঠেই জিন নেই। জেরি সমার্সের হয় আউফিটে ফেরার ইচ্ছে নেই, কিংবা তার ঘোড়াটা আউটার করালে।
পাথরের দালানটা দোতালা। কিন্তু উপরের তালার পুরো সংস্থা করা হয়নি। ক্লিফের ধারেই ওটার পিছনের দেয়াল। কয়েকটা পাইন আর ফার গাছ দালান ঘেঁষেই উঠেছে। আরও তিন-চারটে করালের কাছে।
দালানের ভিতরে ঢোকার সবথেকে সহজ উপায় দোতালার ভাঙ কোনা দিয়ে। দালানটা স্যাওস্টোনের তৈরি। যদি একতালার ছাদটাও পাথরের তৈরি হয় তবে হয়তো নিঃশব্দে নিচের লোকগুলোর অজান্তে সে ওটা পার হতে পারবে।
এখন ক্যানিয়নের উপর চলে এসেছে মেঘ। ভিতরে কেউ একটা তেলের বাতি জ্বালাল। দেয়ালের দিকে এগোতে যাচ্ছে, দেখল সব ক’টা ঘোড়া কান খাড়া করে সদর দরজার দিকে কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে আছে। ওত পেতে চিলের বাঁটে হাত রেখে তৈরি হয়ে অপেক্ষা করছে রনি।
একটু নড়াচড়া দেখা গেল। পরক্ষণেই অদৃশ্য হলো। বুঝল আউটার ক্যানিয়ন থেকে কেউ এসে সন্তর্পণে লুকাল। সে জানে এখানে তার কোন বন্ধু নেই। তবে কি ফিনলে হার্ট এই গোপন আজ্ঞা খুঁজে পেয়েছে? সেটার সম্ভাবনা খুব কম। অর্থাৎ লোকটা তার শত্রু। সে জানে রনি এখানে আছে।
দেয়াল ঘুরে পিস্তল হাতে এগিয়ে আসছে ডাক বেইলি। এখনও বেশ দূরে থাকলেও লোকটা রনির দিকেই আসছে। করালের কোনায় ওত পেতে বসে পরিস্থিতিটা নতুন করে বিচার করে দেখল সে। সম্ভবত গোলাগুলি করে এখান থেকে ও নিরাপদেই সরে পড়তে পারবে। কিন্তু একবার যা প্ল্যান করেছে সেটা থেকে সহজে সরে যাওয়া ওর স্বভাব নয়।
ক্লিফের ওপর কিছুটা বেয়ে উঠে লাফিয়ে দালানের ভাঙা কোনাটা ধরে ফেলল রনি। নিজেকে টেনে তুলে একতালার ছাদে সটান শুয়ে পড়ল। বেইলি বা লারামি কেউই ঘনিয়ে আসা অন্ধকারে ওকে দেখতে পায়নি। ওরা দুজন দু’দিক থেকে আসছিল।
লোকটা গেল কোথায়?
অবাক কাণ্ড! সত্যি বলছি, এখানেই আমি ওকে দেখেছি! কোথায় যেতে পারে সে?
কিছুক্ষণ কান পেতে শুনে বুঝল, বাইরে দু’জন লোক কথা বলছে। দেয়াল হাতড়ে এগোল রনি। নিচে থেকে একচিলতে আলো উপরে আসছে। ওদিকে গিয়ে দেখল এvা চোরা দরজার ফাঁক দিয়েই আলোটা আসছে। ফাঁক দিয়ে চেয়ে বুঝ ওনি থেকে কোন সিঁড়ি নিচে নামেনি। অদূরেই একটা গর্ত হয়েছে দেয়ালে। ওখান দিয়ে আলো আসছে। সেইসাথে নিচে থেকে মৃদু কথাবার্তার শব্দ শোনা যাচ্ছে।
জেরি সমার্স কথা বলছিল। ওখানে নেই? মনে হচ্ছে ডাক নার্ভাস হয়ে উল্টো-পাল্টা দেখছে।
যাক, সে এই জায়গাটা চেনে। সন্দেহ নেই আমার খোঁজে ও আসবে। ওটা কি?
কোনটা?
মনে হলো কি যেন একটা শুনলাম।
লারামি উঠে দাঁড়াল। ওই দরজা ছাড়া এখানে ঢোকার আর কোন পথ আছে?
আমার জানামতে নেই। তবে ওই চোরা দরজার পাশে দেয়ালে একটা গর্ত আছে। কেউ যদি ছাদে ওঠে-
দুজনেই একসাথ ওদিকে ফিরল। অন্ধকারে চৌকাঠের আড়ালে রনি দাঁড়িয়ে আছে ডান হাতটা কনুইয়ের কাছে একটু বাঁকা হয়ে তৈরি।
সাহস হারিয়ে আতঙ্কিত বোধ করছে জেরি। এই লোকটা তাকে হত্যা করার জন্যেই এখানে এসেছে। তার জটিল আর সুষ্ঠু প্ল্যান এড়িয়ে সে ভিতরে ঢুকে পড়েছে। নিচু স্বরে একটা চিৎকার করে পিস্তলের দিকে হাত বাড়াল জেরি।
রনির বাঁকা হাতটা বিদ্যুৎ বেগে সক্রিয় হলো। ওর পিস্তলের মুখে আগুন দেখা গেল। সমার্স পিস্তল উঁচানোর পথেই মাথার পাশে একটা প্রচণ্ড আঘাতে সে মেঝের ওপর পড়ল। ওর বুলেটটা ছাদে লাগল।
লারামির পিস্তলটা লাফিয়ে হাতে উঠে এসেছে। ওর গুলিটা চৌকাঠে বিধল। পাল্টা গুলি করল ড্যাশার।
তারপর দোতালার মেঝেটা দুলে উঠল। একটা দেয়ালে ফাটল ধরল। পরক্ষণেই মেঝেটা ধসে পড়ল। বাইরে থেকে ভয়ের একটা বুনো চিৎকার শোনা গেল। রনি লাফিয়ে দরজার দিকে এগোল। বাইরে বেরিয়ে লম্বা একটা বিজলির আলোয় দেখল করাতের দাঁতের মত পাহাড়গুলো পরস্পারের দিকে সরে আসছে। পাথরের সাথে পাথর ঘষা খেয়ে ভয়ঙ্কর আওয়াজ করছে। পরিচিত বেরোবার পথের দিকে ছুটল সে।
পর মুহূর্তে একজন আরোহী ঘোড়া ছুটিয়ে এসে রনির সামনে আড়াআড়ি ভাবে থেমে দাড়াল। পিস্তল উঁচাল। বিজলি চমকাল, ড্যাশার দেখল লোকটা হার্ট।
ফিনলে! সে চিৎকার করল। আমি ড্যাশার! জলদি এখান থেকে বেরিয়ে পড়ো! পথটা যেকোন সময়ে বন্ধ হয়ে যেতে পারে!
ঘোড়াটাকে কাছে নিয়ে এল হার্ট। ওঠো! চেঁচিয়ে বলল সে। আমার পিছনে!
বিধ্বস্ত দালান থেকে ছুটে খোলা জায়গায় বেরিয়ে এল লারামি। রনিকে ঘোড়ার পিঠে উঠতে দেখে পিছলে থেমে দাঁড়িয়ে পিস্তল তুলল। ফিনলে হার্টের লম্বা ব্যারেলের পিস্তলটা উঠে এসেছে ওর হাতে। প্রায় একই সাথে গর্জে উঠল দুটোই। লারামি এক-পা পিছিয়ে আধ-পাক ঘুরে শক্ত মাটির ওপর আছড়ে পড়ল।
পরক্ষণেই বেরোবার মুখটার দিকে ঘোড়া ছুটাল হার্ট। সামনে একজন আরোহীকে আসতে দেখা গেল। রনি? শটি মাইক হাঁকল।
বেরিয়ে পড়ো! চিৎকার করে নির্দেশ দিল ড্যাশার। জলদি!
জোর বৃষ্টি নেমেছে। ভূমিকম্প এখনও থামেনি। সাময়িক বিরতির পর এক বন্ধনে পর আবার চারপাশ কেঁপে উঠল। বড় বড় পাথর গড়িয়ে পড়ল নিচে–কিন্তু ততক্ষণে ওরা খোলা জায়গায় বেরিয়ে এসেছে।
ঘোড়া ঘোরাও, সুপারিশ করল রনি। রিজের অন্যপাশে আমার ঘোড়াটা জুনিপারের সাথে বাঁধা আছে।
জেরি কি শেষ? হঠাৎ প্রশ্ন করল হার্ট।
মনে হয়। ভূমিকম্পটা সব ওলটপালট করে দিল। আমার গুলিতে সে আছড়ে মেঝের ওপর পড়ার সাথে সাথে লারামি আমার দিকে গুলি চালাল।
ওকে আমি খতম করেছি-ডেড সেন্টার। তোমার ভাইকে সমার্সই খুন করেছিল। আঁচ করেছিলাম। সে অথবা অ্যাডাম। অ্যাডামও এর সাথে জড়িত আছে।
আমার ধারণা, জবাব দিল ফিনলে, সোনার চালান কখন যাচ্ছে, খবরটা অ্যাডামই ওদের জানাত। তবে এব্যাপারে আমি নিশ্চিত না।
তোমার সাহায্য ছাড়া ওই জায়গা খুঁজে পাওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব ছিল, হঠাৎ বলে উঠল হার্ট। পোকার গ্যাপ থেকে জেরিকে ট্র্যাক করছিলাম আমি, কিন্তু ওর ট্রেইল হারালাম। পরে তোমার ট্র্যাক দেখতে পেয়ে অনুসরণ করলাম। সেটাও হারালাম। নিরুপায় হয়ে তুমি যেদিকে গেছ মনে হলো, অনুমান করে সেদিকে এগিয়ে আবার জেরির ট্র্যাক দেখতে পেলাম।
টপারের পিঠে চড়ে ট্রেইল ধরল রনি। বাকি দুজনও ওর পাশাপাশি চলল।
ওদের পিছনে পাথরের টুকরো ভরা মেঝের ওপর একজন রক্তাক্ত মানুষ, ককিয়ে উঠে নড়ার চেষ্টা করল। গড়িয়ে টেবিলের তলায় চলে যাওয়ায় ধসে পড়া ছাদের পাথরের নিচে সে থেঁতলে যায়নি। কানের কিছুটা উপরে একটা গভীর রক্তাক্ত খাজ। বিদ্যুৎ চমকাল। লারামির লাশটা বাইরে পড়ে আছে দেখতে পেল সে। যে এসব কাণ্ড ঘটিয়েছে, তাকে সে খুন করবে।
<