বিশাল লিভিংরুমের টেবিলে বসে আছে ছেলেটা, বাম হাতে একটা ছোট গ্লাস। টেবিলের ওপর রাখা হুইস্কির বোতল দেখছে শূন্য দৃষ্টিতে। বেন স্লেজেলকে ঠেলে কামরায় ঢুকিয়ে দিতে চোখ তুলে তাকাল সে।
এখান থেকে দূরে থাকার বুদ্ধিটুকুও কি হারিয়ে ফেলেছ, বেন? উত্মা ভরে জানতে চাইল জেফরি।
একই প্রশ্ন তো আমারও, জেফ।
হাসল সে, যেন ভেঙচি কাটল। শূন্য গ্লাস ভরে নিল মুখ খোলার আগে। বিল আমাকে খুনই করে ফেলত, তুমিও জানো সেটা।
আসলেই কি কোন চান্স ছিল ওর? মাতাল বা পুরো সুস্থির থাকুক, কখনোই তোমার সঙ্গে পারত না ও। ওর চেয়ে অনেক ফাস্ট তুমি, জেফ, নিশানাও দারুণ। তোমার ধারে-কাছেও যেতে পারত না বিল।
গাঢ় চোখে বেনকে নিরীখ করছে ছেলেটা। তাহলে ওটা একটা দুর্ঘটনা, তাই না?
আড়চোখে স্টিভ হারকারকে দেখল বেন। ছেলেটার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখেছে গানম্যান। অ্যাগনেস আর র্যামরডের উপস্থিতিতে অসহায় হয়ে আছে জেফরি, ওকে কোন সাহায্যই করতে পারবে না। তাছাড়া ফ্রেড মোরিস তো আছেই। এদের মতই নোংরা হয়ে গেছে জেফরির হাত, হয়তো তারচেয়েও বেশি, কারণ নিজের রক্তের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে সে।
ঠিক বলেছি না, বেন? তাগাদা দিল ছেলেটা।
বলো ওকে, স্লেজেল, শীতল স্বরে নির্দেশ দিল হারকার।
জেফরির দিকে ফিরল বেন। বিলের শরীরে যেখানে ইচ্ছে বুলেট লাগাতে পারত স্টিভ হারকার। বিলের হাতে বুলেটটা লাগিয়ে নিরস্ত্র করতে পারত ওকে, কিন্তু বদলে ওকে খুন করেছে সে।
বরফের ন্যায় শীতল নীল চোখ জোড়া বিদ্ধ করল বেনকে, তাচ্ছিল্য আর উম্মা ঝরে পড়ছে র্যামরডের চাহনিতে। দৃষ্টি সরে গিয়ে মুহূর্তের জন্যে বেনের বুকের তারায় স্থির হলো। সেদিন স্রেফ ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেছ, বেন। আজ কিন্তু তোমার মরণ ঠেকাতে পারবে না কেউ, ওই তারাটাও পারবে না!
দেরি করছ কেন? পাল্টা উন্মা প্রকাশ করল বেন।
এত তাড়ার কি আছে? ধীরে ধীরে, সবই হবে, কুৎসিত হাসি ফুটে উঠল হারকারের ঠোঁটে। ওপরে বাপের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে গেছে, অ্যাগনেস। রিও ফ্রিয়ো উপত্যকার ইতিহাঁসে আজ অন্য একটা দিন-এখন থেকে লেযি-এন কিংবা উপত্যকায় কর্তৃত্ব করবে অ্যাগনেস নোলান!
টম নোলান সেটা মেনে নেবে?
আলবৎ! না মেনে উপায় থাকবে না। বয়সের একটা ধর্ম আছে, সেটা মেনে নিতে হয় সবাইকে–একসময় নতুনদের জায়গা ছেড়ে দিতে হয়!
জোর করে বাপের কাছ থেকে কর্তৃত্ব কেড়ে নেবে অ্যাগনেস?
সেটা পাওনা হয়েছে ওর।
আড়চোখে জেফরিকে দেখল বেন, খানিকটা বিস্ময় লেগে আছে তরুণের চোখে। টম নোলানকে যতটা চিনি, র্যামরডের দিকে ফিরে খেই ধরল বেন। মনে হয় না মেনে নেবে সে।
নিতান্ত অবজ্ঞার সঙ্গে বাতাসে একটা হাত নাড়ল হারকার, যেন এভাবেই বসের সমস্ত আপত্তি বা অসন্তোষ নিমেষে বাতিল হয়ে যাবে। নেবে। অ্যাগনেসকে এখনও ঠিক চিনতে পারোনি তুমি, স্লেজেল। প্রত্যাশিত জিনিসটা পেয়ে অভ্যস্ত ও, প্রয়োজনে আদায় করে নেয়; আর এভাবেই ওকে বড় করেছে নোলান। আর টম নোলানের ক্ষেত্রে বলতে হয়বয়স হয়েছে, এবং বেসিনে কর্তৃত্ব করার মত দৃঢ়তা হারিয়ে ফেলেছে মানুষটা। এমন বোঝা দরকার নেই লেযি-এনের।
লেযি-এন মালিক এখানে উপস্থিত থাকলে বোধহয় খাবি খেত, বিস্ময় বা চমকের চেয়ে বোধহয় হতাশাই বেশি আহত করত, তাকে। শুধু অধীন লোকেরাই নয়, সম্ভবত নিজের মেয়েও বিশ্বাসঘাতকতা করছে তার সঙ্গে। উড কিনলের ধারণা অনুযায়ী, এরাই কি তৃতীয় পক্ষ?
সিঁড়িতে অ্যাগনেস ব্রেনেলের পায়ের শব্দ শোনা গেল, কিছুক্ষণ পর দরজায় এসে দাঁড়াল মেয়েটি। নির্লিপ্ততার একটা মুখোশ পরেছে যেন, বিন্দুমাত্র ভাবান্তর নেই। জলদি ঝামেলা চুকিয়ে ফেলতে হবে, দ্রুত বলল নোলান-কন্যা।
বুড়ো? জানতে চাইল মোরিস।
নিকুচি করি তোমার! বেনের কথা বলছি আমি! বিরক্তি প্রকাশ করল অ্যাগনেস। বুড়োকে নিয়ে ভাবতে হবে না তোমাদের! ঝামেলা চুকিয়ে ফেলেছি।
কি করেছ? উৎসুক স্বরে জানতে চাইল হারকার, স্রেফ কৌতূহল প্রকাশ করছে সে, উদ্বেগ বা সহানুভূতির ছোঁয়াও নেই কণ্ঠে।
অফিস-কামরায় আটকে রেখেছি ওকে। কিছুক্ষণ ওখানে কাটাক, এদিকে সবকিছু গুছিয়ে নেব আমরা।
দাঁত বের করে হাসল ফ্রেড মোরিস। একে একে সবার পালা আসবে, এক ভাইকে দিয়ে শুরু করি…
চুপ করো! দাবড়ানি দিল হারকার।
এক চুমুকে গ্লাসের পানীয় শেষ করে ফেলল জেফরি ব্রেনেল। কি বলছে ও, অ্যাগনেস?
এগিয়ে গিয়ে ছেলেটার কাঁধে একটা হাত রাখল অ্যাগনেস। তুমি কি বুঝতে পারছ না, ডিয়ার? এখানে থাকলেই ঝামেলা করবে বেন, লেযি-এনের ধারে কাছেও ওকে চাই না আমরা। চাই?
না।
তাহলে কি চাও তুমি, জেফরি? কর্কশ স্বরে জানতে চাইল বেন।
ওর দিকে ফিরল জেফরি, কিছু বলার জন্যে মুখ খুলেছিল, কিন্তু তৎক্ষণাৎ বন্ধ হয়ে গেল। অসহায় দৃষ্টি ফুটে উঠল চোখে, পরিস্থিতির পরিবর্তন পুরোপুরি উপলব্ধি করতে না পারলেও সন্দেহ আর বিপদের আশঙ্কা ঠিকই তটস্থ করে তুলেছে ওকে। ধীরে ধীরে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল সে, সরাসরি তাকাল অ্যাগনেসের দিকে। এসব পছন্দ হচ্ছে না আমার! হয়তো খুব বেশি তাড়াহুড়ো করছ তুমি। তাছাড়া…
এতে জড়িয়ে গেছ তুমি, কিড, কর্তৃত্বের স্বরে মনে করিয়ে দিল হারকার। যা বলা হয়েছে তাই করবে তুমি!
পিঠে পিস্তলের নলের খোঁচা অনুভব করল বেন, মূল দরজার দিকে ওকে এগোতে বাধ্য করল ফ্রেড মোরিস।
ওকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছ তোমরা? বয়স্ক, দৃঢ় একটা কণ্ঠ শোনা গেল।
চরকির মত ঘুরল মোরিস। সিঁড়ি ভেঙে ধীর গতিতে নেমে আসছে টম। নোলান। মাথায় হ্যাট নেই, নিরস্ত্র সে, এবং ঠিক পেছনে মিরিয়াম ব্রেনেল। সবাই যখন ব্যস্ত, দেয়াল টপকে বেনের মতই ব্যালকনিতে উঠে টম নোলানের অফিসে চলে যায় মিরিয়াম; দরজায় তালা ছিল না, স্রেফ হুড়কো তুলে দেয়া হয়েছিল, তাই খুলতে কোন সমস্যাই হয়নি ওর।
নিষ্ঠুর অহঙ্কারী বলে কুখ্যাতি আছে টম নোলানের, কিন্তু ভদ্রলোক বলেও সুখ্যাতি আছে তার, অন্তত কোন মহিলার সঙ্গে কখনও অসৎ আচরণ করেনি সে। মিরিয়ামের সঙ্গে তেমন কোন কথাই বলেনি, স্রেফ হাতের ইশারায় সঙ্গে আসতে বলেছে। মেয়ের ওপর দারুণ নাখোশ হয়ে আছে সে।
বুড়োর দিকে ফিরে তাকাল সবাই। কঠোর দেখাচ্ছে টম নোলানের মুখ, মানুষটা যে দৃঢ়চেতা তাতে কোন সন্দেহ নেই; এই বয়সেও অধীন লোকদের সমীহ আর শ্রদ্ধার পাত্রলেযি-এন ক্রুদের চোখে সন্ত্রস্ত দৃষ্টি দেখে বোঝা যাচ্ছে। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকল ফ্রেড মোরিস, এমনকি স্টিভ হারকারও খানিকটা ভড়কে গেছে। স্বভাবসুলভ আত্মবিশ্বাস আর ঔদ্ধত্যের ঘাটতি দেখা গেল গানম্যানের মধ্যে, নিচু স্বরে সাফাই গাইল সে, লেযি-এন বস্ প্রশ্ন করার আগেই আমাকে ধরতে এসেছিল ও, মি. নোলান।
কারণ ডাবল-বিতে বিল ব্রেনেলকে গুলি করে হত্যা করেছ তুমি?
হ্যাঁ।
তাহলে বরং ওর সঙ্গে যাওয়াই উচিত হবে তোমার, হারকার।
নীরবতা নেমে এল কামরায়, মিনিট খানেক কেউই কিছু বলল না।
না, মৃদু স্বরে শেষে বলল র্যামরড।
এখানে নির্দেশ আমি দেই! তীক্ষ্ণ স্বরে বলল লেযি-এন মালিক, তারপর কিছুটা কোমল হয়ে এল কণ্ঠ। চিন্তা কোরো না, তোমার জন্যে কাউন্টির সেরা ল ইয়ার ভাড়া করব আমি।
না, মি. নোলান, সসমে বলল হারকার।
আরও কয়েকটা ধাপ নেমে এল টম নোলান। স্লেজেলের সঙ্গে যাবে তুমি! নিকুচি করি! কোথাও যাব না আমি!
রাগে লাল হয়ে গেল বুড়োর মুখ। তাহলে তো দেখছি অন্য ছেলেদের ডাকতে হয়, দেখি ওরা তোমাকে সিরেনোয় পৌঁছে দেয় কিনা।
টম নোলানের প্রভাব অস্বীকার বা অতিক্রম করার স্পর্ধা বোধহয় একমাত্র তার মেয়েরই আছে। তাই প্রমাণ হলো আবারও! হেসে উঠল অ্যাগনেস। কোন ছেলেরা? বিদ্রুপের স্বরে জানতে চাইল ও। এরা তোমার ক্রু, বাবা?
কঠিন দৃষ্টিতে মেয়েকে দেখল নোলান, রমরড আর মোরিসকে দেখল একনজর, তারপর অ্যাগনেসের দিকে ফিরল। একেবারে নির্বিকার দেখাচ্ছে তার মুখ। আমার কু? মনে হচ্ছে, তা আর নেই এখন, তোমার অনুগত হয়ে গেছে ওরা।
বেন স্লেজেলের সঙ্গে কোথাও যাচ্ছে না স্টিভ।
এক হাতে সিঁড়ির রেলিং চেপে ধরল টম নোলান। এখানে আমি নির্দেশ দেই, অ্যাগনেস!
হেসে উঠল মেয়েটা। তুমি অবসর নিচ্ছ না কেন, বাবা? অনেক তো হলো, এবার বিশ্রাম নাও। এখন থেকে লেযি-এন আর ডাবল-বি আমিই চালাব।
নড করল বুড়ো, দু’একটা কথায় বুঝে নিয়েছে আসল পরিস্থিতি। ডাবল-বির সঙ্গে তোমার ব্যবসা বা রফা যাই বলো, কানে এসেছে আমার। নিজের চেয়েও বেশি শিক্ষিত করেছি আমি তোমাকে, অথচ মেয়ে হয়েও পুরুষদের নোংরা খেলায় যোগ দিয়েছ তুমি। আমার জাতশত্রুও বলতে পারবে না সারা জীবনে এমন কোন নোংরা খেলা খেলেছে টম নোলান। ছি! তোমাকে মেয়ে বলতেও বাধছে আমার! ক্ষণিকের জন্যে থামল নোলান, অন্যদের কিছু বলার সুযোগ দিল না, বেনের দিকে ফিরে সহানুভূতি আর দুঃখ প্রকাশ করল নিচু কণ্ঠে: এ ব্যাপারে কিছুই জানতাম না আমি, বেন।
নড করল বেন। জানি আমি।
বাপের কথায় বিকার নেই অ্যাগনেসের, মৃদু তাচ্ছিল্যের হাসি ওর মুখে। নিজের ক্ষমতা উপভোগ করতে শুরু করেছে। রিও ফ্রিয়ো উপত্যকার সবচেয়ে প্রভাবশালী মানুষটিও এখন ওর করুণার পাত্র!
স্লেজেলকে যেতে দাও, হারকার, নির্দেশ নয়, বরং অনুরোধের মত শোনাল টম নোলানের কণ্ঠ। ঠিক আছে, এখন থেকে তোমাদের কথায় চলবে এই বাথান, কিন্তু স্লেজেলকে যেতে দাও। নিজের চোখের সামনে ছেলেটাকে মরতে দেখার। ইচ্ছে নেই আমার। ইতোমধ্যে যথেষ্ট রক্তপাত হয়েছে।
শোনো বুড়োর কথা! বিদ্রূপ করল ফ্রেড মোরিস।
ফ্রেড? ডাকল হারকার। যাও তো, অন্য ছেলেদের ডেকে নিয়ে এসো। দলে হালকা হয়ে গেছি আমরা, শক্তি বাড়ানো দরকার।
সপাটে খুলে গেল সামনের দরজা, প্রত্যেকটা চোখ ঘুরে গেল সেদিকে। দরজায় দাঁড়িয়ে আছে ডড কিনলে। ফ্রেড মোরিসের হাতের নগ্ন পিস্তল দেখল সে নির্বিকার মুখে, তারপর বেনের দিকে তাকাল। জানতাম এই হবে, হেসে বলল সে। কিন্তু খোদার দয়া যে সময়মত পৌঁছতে পেরেছি।
এগিয়ে আসছে ডিটেকটিভ, দেখতে পেল পিস্তল বের করছে স্টিভ হারকার, কিন্তু গ্রাহ্য করল না সে। সিঁড়ির গোড়ায় এসে দাঁড়াল। কাউন্টি থেকে এইমাত্র ফিরেছি আমি, মি. নোলান। অবিশ্বাস্য একটা তথ্য জানতে পেরেছি, কিন্তু সেটাই সত্যি। মিসেস নোলানের খোঁজ নিতে গিয়ে এতটাই আগ্রহী হয়ে উঠেছিলাম যে আমার প্রথম কাজ, কার্ল ব্রেনেলের খুনীর পরিচয় যে বের করতে হবে, বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম।
বলে যাও।
ঘুরে দাঁড়াল ডিটেকটিভ। অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে এল পাসোয় মারা গেছে ল্য নোলান, কিন্তু মরার আগে এমন এক সত্যের স্বীকারোক্তি দিয়ে গেছে, প্রায় পঁচিশ বছর চাপা পড়ে ছিল তথ্যটা। স্বামীকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করত মহিলা, জানত যে সন্তান হিসেবে ছেলেই কামনা করত মি. নোলান, কিন্তু বদলে একটা মেয়ে উপহার দেয় সে।
অ্যাগনেসের দিকে ফিরল টম নোলান, কিন্তু দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল মেয়েটা।
আঙুল চালিয়ে হ্যাট পেছনে ঠেলে দিল কিনলে। যা বলছিলাম, টম নোলানকে লেযি-এনের সম্পত্তির দলিল দিয়ে যায় সে, কিন্তু কিছুটা কারসাজি করেছে তাতে। রিও ফ্রিয়োর মূল অংশ নিয়ে দুটো বাথানের মধ্যে বিবাদ, এই দলিল তাতে আরও ইন্ধন জোগাল। কারণ দুটো বাথানই রিও মাকে নিজের বলে দাবি করে আসছে। অথচ রিও ফ্রিয়ের মূল অংশের মালিকানা আসলে ডাবল-বির। ইচ্ছে করেই কাজটা করেছে ল্য নোলান, টম নোলানকে চিরস্থায়ী এক সংঘর্ষের পথে নিয়ে যেতে চেয়েছিল।
মানে? কর্কশ স্বরে জানতে চাইল অ্যাগনেস।
টম নোলানের দিকে ফিরল ডিটেকটিভ। সূর্য নোলান সত্যিই এক হাত দেখিয়েছে তোমাকে, মি. নোলান, দুটো বাথানের মধ্যে চিরশত্রুতার পথ তৈরি করে দিয়ে গেছে বেসিন ছাড়ার আগে। জানত দলিল অনুযায়ী রিও ফ্রিয়োর ওই অংশ দাবি করবে তুমি, কার্ল ব্রেনেলও সেটা মেনে নেবে না কারণ আদপে আসল। মালিক তো সে-ই। ফলাফল: দুই বাথানের শত্রুতা। তাই হলো দুই যুগ ধরে!
তাহলে অযথাই ডাবল-বির সঙ্গে এতদিন.. ক্ষীণ হয়ে গেল বুড়োর স্বর, অনুশোচনা আর হতাশা প্রকাশ পেল কণ্ঠে।
দুঃখজনক হলেও, এভাবেই তোমার ওপর শোধ নিতে চেয়েছিল মিসেস নোলান, বলল কিনলে। শেষ দিকে বোধহয় অনুশোচনায় পুড়ছিল সে, তাই মারা যাওয়ার আগে নার্স মহিলার কাছে স্বীকার করে গেছে সব।
মুহূর্তের মধ্যে যেন টম নোলানের বয়স দশ বছর বেড়ে গেছে। শূন্য দৃষ্টিতে ডিটেকটিভের দিকে তাকাল সে, তারপর বেনের ওপর স্থির হলো দৃষ্টি। খোদা, ম্লান স্বরে বিড়বিড় করল। সত্যিই আমাকে ঘৃণা করত ও!
কেন নয়? মুখিয়ে উঠল অ্যাগনেস। এবার আমার কথা শোনো! সবকিছু শুনতে মন্দ লাগেনি আমাদের। ভুয়া দলিলে কিছুই যাবে-আসবে না আমার। লেয়ি-এনের কর্তৃত্ব আমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে তুমি, এবং ডাবল-বির মালিকানা শিগগিরই পেয়ে যাব। বন্ধকের টাকা কোন ভাবেই জোগাড় করতে পারবে না ওরা। এই বেসিনে কর্তৃত্ব করবে অ্যাগনেস নোলান।
তোমাকে নিজের মেয়ে বলে স্বীকার করতে বাধছে আমার!
তাই নাকি? ঠিক আছে, স্বীকার কোরো না! চাঁছাছোলা স্বরে জবাব দিল নোলান-কন্যা। কিন্তু কাগজপত্রে স্বাক্ষর করা পর্যন্ত না হয় স্বীকার করো, তারপর। যেখানে ইচ্ছে চলে যেতে পারো তুমি, কিংবা থাকতেও পারো, আপত্তি নেই আমার, কিন্তু মনে রেখো, আমার কথায় চলবে লেযি-এন।
এখনও কোন বাথানেরই মালিকানা পাওনি তুমি! নিখাদ বিতৃষ্ণা প্রকাশ করল লেযি-এন মালিক। পাবেও না। অন্তত আমি যতক্ষণ বেঁচে আছি…
সরু চোখে বাপের দিকে তাকাল অ্যাগনেস, কুৎসিত দেখাচ্ছে মুখটা। ঢাল তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দার? বাবা, হাসাচ্ছ আমাদের! যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়। স্রেফ খানিকটা নাটক করার জন্যে এতকিছু করিনি আমি। ঘাম ঝরাতে হয়েছে এই দিনটির জন্যে। এবার আমার সবকিছু বুঝে নেওয়ার পালা। স্টিভ হারকারের দিকে ফিরল মেয়েটা।-এবার তোমার খেল দেখানোর সময়, স্টিভ। সবকিছু হারানোর ঝুঁকি নিতে পারি না আমরা, কিংবা তীরে এসে তরীও ডোবাতে পারি না!
নড করল গানম্যান। একে একে বেন, কিনলে, মিরিয়াম এবং সবশেষে টম নোলানের ওপর স্থির: হলো তার দৃষ্টি। মরা মানুষ কথা বলতে পারে না, মৃদু, দার্শনিক সুরে বলল সে।
মিরিয়ামের সঙ্গে চোখাচোখি হলো বেনের।
বেন! চাপা স্বরে বেনের মনোযোগ আকর্ষণ করল মেয়েটা, একটা কোল্ট দেখা যাচ্ছে হাতে। কোল্টটা ছুঁড়ে দিল। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেটা লুফে নিল বেন।
ওর দিকে চোখ রাখো! চিৎকার করল ফ্রেড মোরিস।
ঘুরেই স্টিভ হারকারের চাঁদিতে কোল্টের ব্যারেল নামিয়ে আনল বেন। টলমল পায়ে পিছিয়ে গেল লেযি-এন র্যামরড, দু’হাতে মাথা চেপে ধরেছে; অস্ফুট স্বরে কাতরে উঠল, চোখে বিস্ময়।
সবার আগে তৎপর হয়ে উঠল মোরিস। খোলা পিস্তল ছিল তার হাতে, চোখের নিমেষে গুলি করল। কিন্তু তাড়াহুড়ো করলে যা হয়, ফস্কে গেল গুলি। মাথা নিচু করে ফেলল বেন, একইসঙ্গে কমলা আগুন ওগরাল ওর পিস্তল। বুলেটের ধাক্কায় পেছনে উড়ে গেল মোরিসের দেহ, রিফ্লেক্সের বশে আঙুলের চাপ পড়ে গেল ট্রিগারে। একের পর এক গুলি বিদ্ধ হলো ছাদে।
চরকির মত আধ-পাক ঘুরে দাঁড়িয়েছে ডড কিনলে। ঘূর্ণনের মধ্যে স্টিভ হারকারের পিস্তল থেকে আসা গুলিটা লাগল তার কাঁধে। হুড়মুড় করে মেঝেয় আছড়ে পড়ল বিশালদেহ।
ধরো ওকে, জেফরি! চিৎকার করে নির্দেশ দিল অ্যাগনেস।
স্টিভ হারকার আর বেনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে তরুণ, কি করবে বুঝতে পারছে না। বেনের দিকে ফিরল সে।
ফেলে দাও ওকে!
সামনে থেকে সরে দাঁড়াও, কিড! দাবড়ানি দিল স্টিভ হারকার।
ঘুরে দাঁড়াল ছেলেটা। করো গুলি, নিকুচি করি তোমার!
স্টিভ হারকার ভাল মতই বুঝতে পারছে পাশার দান উল্টে গেছে। পিস্তল তুলল সে, কিন্তু ছেলেটা আরও…অনেক বেশি ক্ষিপ্র। নিমেষে হাতে উঠেছে। জোড়া পিস্তল, কেশে উঠল ভয়াল দর্শন কোল্ট। পরপর কয়েকবার ট্রিগার টানল জেফরি ব্রেনেল, শব্দ শুনে মনে হলো মাত্র দুটো গুলি করেছে। কিন্তু ফলাফলটা তৎক্ষণাৎ দেখতে পেল অন্যরা। স্টিভ হারকারের বুকে অন্তত তিনটা গুলি বিধেছে। মেঝেতে পড়ে আছে গানম্যানের নিষ্প্রাণ দেহ।
জেফরির দিকে ফিরল বেন। ছেলেটার অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় বিহ্বল হয়ে পড়েছে। খোলা পিস্তল ছিল স্টিভ হারকারের হাতে, কিন্তু সুযোগই পায়নি বেচারা। একটা গুলিও করতে পারেনি র্যামরড, তার আগেই পিস্তল ড্র করে তিনটা গুলি করেছে জেফরি।
পাক খেয়ে সিলিংয়ের দিকে উঠে যাচ্ছে গান পাউডারের ধোয়া। কটু গন্ধে কেশে উঠল মিরিয়াম আর টম নোলান। রক্তের পুকুরের মধ্যে পড়ে আছে দুটো লাশ। যন্ত্রণায় ককাচ্ছেডড কিনলে। তাকে সাহায্য করতে ছুটে গেল মিরিয়াম।
বেনের দিকে ফিরল জেফরি। এই প্রথম, শান্ত নিরুদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে ছেলেটাকে, দৃষ্টিতে তাচ্ছিল্য বা চ্যালেঞ্জ নেই। আমি দুঃখিত, বেন, মৃদু আন্তরিক স্বরে বলল
কেন দুঃখ হবে তোমার? এই মাত্র আমার জীবন বাঁচিয়েছ তুমি!
হারকারের দিকে তাকাল জেফরি, ঘৃণায় কুঁচকে গেছে মুখটা। আমার ভাইকে খুন করেছে ও, নিস্পৃহ স্বরে বলল সে। ধীরে ধীরে গানবেল্ট খুলে মেঝেয় ফেলে দিল। আর কখনও পিস্তল ছোঁব না আমি, বেন, কক্ষনো না!
অ্যাগনেসের দিকে ফিরল টম নোলান। তো?
স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেয়েটা, পরিস্থিতির পরিবর্তনে বিল, হতচকিত। বাঙ্ক হাউসে আছে ওরা… ভাষা খুঁজে পেল অ্যাগনেস। কারাঞ্চো, স্লিম…গুলির শব্দ শুনে চলে আসবে ওরা এখনই…
আসবে না, বাধা দিল বেন। এখানে যাতে না আসতে পারে সেটা নিশ্চিত করেই বাড়িতে ঢুকেছি আমি।
শূন্য দৃষ্টি দেখা গেল মেয়েটির চোখে, কাঁধ ঝুলে পড়েছে। কিন্তু এখনও পিঠ টানটান করে দাঁড়িয়ে আছে, পরাজয় মেনে নেয়নি। ঠিক আছে, তোমরাই জিতলে! কিন্তু ডাবল-বির মালিকানা আমার হাতে আসছে। এখানে থাকব না আমি, ডাবল-বিতে গিয়ে উঠব!
বাঁকা হাসি খেলে গেল টম নোলানের মুখে। মেয়ে জাতটাকে চিনতে পারি বলে গর্ব করতাম আমি। কিন্তু এখন দেখছি ওদের সম্পর্কে আমার অনেক ধারণাই ভুল। হয়তো অন্যায়, কুরেছি আমি তোমার মা-র ওপর, আর তোমার সঙ্গে ভাল আচরণ করে তারচেয়েও বড় অন্যায় করেছি। দুধ দিয়ে আসলে একটা জাতসাপ পুষেছি এতদিন! বাপকে চোখ রাঙাবে এমন কোন মেয়ে দরকার নেই আমার, অ্যাগনেস! আর কোন ভুল করতে চাই না। এক্ষুণি বেরিয়ে যাবে তুমি!
কিছু বলতে যাচ্ছিল অ্যাগনেস, কিন্তু হাত তুলে তাকে থামিয়ে দিল বুড়ো। উঁহু, কোন কথাই শুনব না তোমার। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বলে ফেলেছ। আমার অজান্তে কূটকৌশল খাটিয়েছ, নাছোড়বান্দা কিছু শত্রু তৈরি করেছ তুমি। যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়! আর…ডাবল-বিও পাবে না তুমি। ব্রেনেলদের হয়ে আমিই তোমার দেনা শোধ করে দেব। অযথা রিও ফ্রিয়োর দখল নিয়ে ওদের সঙ্গে শত্রুতা তৈরি করেছি আমি, তার খেসারত না হয় এভাবেই দেব! যাকগে, কত পাওনা তোমার? বিলের স্ত্রী হিসেবে একটা অংশ পাওনা তুমি, ওটার জন্যে কত চাও? সব মিলিয়ে…
অবিশ্বাসের সঙ্গে বাপকে দেখছে অ্যাগনেস। বাবা, আমাকে এভাবে তাড়িয়ে দেবে তুমি?
একটু আগে কিন্তু আমাকে তাড়াতে একটুও বাধেনি তোমার!
ঠিক আছে। ঠিকই নিজের পথ খুঁজে নেব আমি। ডাবল-বির বন্ধক বাবদ বিশ হাজার…
কিন্তু ডাবল-বির কাছে তোমার একটা দেনা রয়ে গেছে যে? মৃদু স্বরে জানতে চাইল বেন।
ঝট করে ওর দিকে ফিরল অ্যাগনেস। কিসের দেনা?
অ্যাগনেসের দিকে এগোল ও। কাউন্টির ডেপুটি শেরিফ হিসেবে খুনের সম্ভাব্য আসামী সন্দেহে তোমাকে গ্রেফতার করছি আমি।
আঁতকে ওঠে দু’পা পিছিয়ে গেল মেয়েটা। কি বলতে চাও?
নির্বিকার সুন্দর মুখটা নিরীখ করল বেন। কার্ল ব্রেনেল যে রাতে খুন হয়, রিও ফ্রিয়োর ধারে ওর অপেক্ষায় ছিলে তুমি। ফর্টি-ফোর রাইফেল দিয়ে ওকে গুলি করেছ তুমি। কেবল এভাবেই তাকে সরাতে পারতে। নিজে কাজটা করা ছাড়া উপায় ছিল না তোমার, অ্যাগি, কারণ কাউকে বিশ্বাস করোনি তুমি ব্ল্যাকমেলিংয়ের ভয়ে।
দ্রুত মূল দরজার দিকে পিছিয়ে গেল মেয়েটা। প্রমাণ করতে পারবে না।
পারব, অ্যাগি। তোমার সব খেলাই শেষ হয়ে গেছে।
ঝটিতি হাত বাড়িয়ে দরজার হাতল চেপে ধরল অ্যাগনেস, এক টানে কবাট মেলে ধরল। বিশাল দরজা খুলেই বেরিয়ে গেল। এক পশলা বৃষ্টি ছুটে এসে পড়ল সুন্দর সোনালী চুলের রাশিতে, ভিজিয়ে দিল ছিপছিপে শরীরটা; তারপরই হারিয়ে গেল মেয়েটা। বৃষ্টির ধোঁয়াটে পর্দার জন্যে আর দেখা গেল, না, কেবল দৌড়ানোর শব্দ শোনা যাচ্ছে।
ধরো ওকে! চিৎকার করল ডড কিনলে।
মাথা নাড়ল বেন। কোথায় পালাবে, কি মনে হয় তোমার, কতদূর যেতে পারবে?
ধীর পায়ে এগিয়ে এল টম নোলান। বেনের একটা হাত চেপে ধরল। ধন্যবাদ, বেন, গম্ভীর স্বরে বলল সে। আর এতদিনের সমস্ত অসন্তোষ আর বিদ্বেষের জন্যে দুঃখ প্রকাশ করছি, যদিও জানি তাতে কিছুই হবে না। মিরিয়াম, আমি সত্যিই দুঃখিত! দু’পা পিছিয়ে গেল মানুষটা, তারপর ঘুরে হাঁটতে শুরু করল সিঁড়ির দিকে। কিছুক্ষণ একা থাকতে চাই আমি, বেন। আর…আজ থেকে লেযি-এনের দুয়ার তোমাদের জন্যে সবসময়ই ভোলা থাকল, যে কোন সময়, আসবে তোমরা, সাদর অভ্যর্থনা পাবে!
সিঁড়ি টপকে ওঠা শুরু করল সে, পেছন থেকে দেখল ওরা। দৃঢ় ভঙ্গি, অহঙ্কার বিসর্জন দেয়নি মানুষটা, কিংবা পরাজয়ের ক্লান্তি চেপে বসেনি। মেয়েকে হারানোর শোকও কাবু করতে পারেনি তাকে। নিঃসঙ্গ কিন্তু অহঙ্কারী আত্মমর্যাদা সচেতন একজন মানুষ।
উঠে দাঁড়িয়েছে ডড কিনলে, যন্ত্রণায় মৃদু গোঙাচ্ছে, কিন্তু মুখে স্বস্তি। ওহ্, ঝানু গোয়েন্দাকেও দেখছি হার মানিয়েছ তুমি, বেন! সপ্রশংস দৃষ্টি ঝরে পড়ল তার চোখে। কোত্থেকে জানলে যে অ্যাগনেস নোলানই খুন করেছে কার্ল ব্রেনেলকে?
ডিটেকটিভকে দোতলায় নিয়ে যাওয়ার সময় ব্যাখ্যা করল বেন। কাঁধে লেগেছে গুলিটা, তেমন মারাত্মক জখম নয়। কটা দিন হয়তো বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে। কিনলেকে গেস্টরুমে নিয়ে এল ওরা। ক্ষতের শুশ্রূষায় তখনই ব্যস্ত হয়ে পড়ল মিরিয়াম।
বাথানে যাচ্ছি আমি, বলল জেফরি, পেছন পেছন চলে এসেছে।
ঘাড় ফিরিয়ে ভাইকে দেখল মিরিয়াম। নিচ থেকে লাশ দুটো সরিয়ে নিয়ে যাবে, জেফ? ওগুলো দেখলেই অস্বস্তি লাগছে আমার!
মাথা ঝাঁকাল সে, তারপর বেরিয়ে গেল।
নিচে নেমে এল বেন, জেফরিকে সঙ্গে নিয়ে লাশ দুটো সরিয়ে রাখল বারান্দায়। আমার মনে হয় শহরেই যাওয়া উচিত, বলল জেফরি। আন্ডারটেকার আর শেরিফকে খবর দিতে হবে। তাছাড়া ডাক্তারও নিয়ে আসতে হবে। মি. কিনলের চিকিৎসা দরকার।
মাথা ঝাঁকাল বেন। বৃষ্টির মধ্যে যেতে পারবে তো?
নিশ্চয়ই।
ওপরে চলে এল বেন। কার্লি, স্লিম আর অন্যান্য ক্রুদের কথা মনে পড়ল। শেরিফ আসার পরই না হয় এদের মুক্তি দেয়া যাবে, ভাবল ও। গেস্টরুমের দিকে এগোল। পুরো বাড়িটাই শূন্য লাগছে, দোতলার অফিসরূমে আছে টম নোলান, সম্ভবত বোতলের মধ্যে ডুবে থাকবে সে আগামী কয়েকটা দিন। বাড়ির অন্দরমহলে ভৃত্যরা আছে বটে, কিন্তু কেউই দরকার না পড়লে এদিকে আসছে না।
শূন্য একটা প্রাসাদ। নিরানন্দ, নিঃসঙ্গ পরিবেশ।
করিডরে মিরিয়ামের দেখা পেল ও।
ঘুমাচ্ছে ও, জানাল মিরিয়াম।
বারান্দায় দাঁড়াল ওরা। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। বহু রক্তপাত ধুয়ে-মুছে নিঃশেষ করে দিতে বোধহয় এমন বৃষ্টিই দরকার। শুধু বিদ্বেষ আর শক্রতার স্মৃতিই মুছে দেবে না, বরং সতেজ উর্বর করে তুলবে এখানকার মাটি; তাজা ঘাস গজিয়ে উঠবে, মনোরম হয়ে উঠবে তৃণভূমি।
এবার কি, বেন?
পাশ ফিরে মিরিয়ামকে দেখল বেন, তারপর কাছে টেনে নিল মেয়েটিকে। ডাবল-বির বর্তমান মালিক কি ভাবছে, সেটা তো জানা হলো না আমার।
রহস্যময় হাসি দেখা গেল মিরিয়ামের ঠোঁটে। প্রথম দিনই তো বলেছি-তুমি ছাড়া ডাবল-বি চালাতে পারবে না কেউ! এটা তোমার পাওনা, বেন, কারণ ডাবল-বির সবকিছুই নিজের মত করে দেখেছ। ঝামেলার সময় কাঁধে দায়িত্ব। তুলে নিয়েছ, নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিয়েছ। আমাদের মধ্যে তোমাকেই বেশি গুরুত্ব দিত বাবা, যেন জানত সত্যিকার উত্তরসূরী কে হবে, বিপদে কে ভরাডুবি ঠেকাবে।
বুঝলাম, কার্ল ব্রেনেলের হৃদয়ে স্থায়ী একটা আসন ছিল আমার। কিন্তু ওর লাজুক মেয়ে যে এমন নির্লজ্জ ভাবে পালক-ভাইকে দখল করে নেবে…বলো তো, অরিগনের মেয়েগুলোর কি হবে, আমার পথ চেয়ে বসে আছে যারা?
দুম করে কিল বসিয়ে দিল মিরিয়াম, চোখে আগুন, এদিকে রক্তিম হয়ে গেছে মুখ। নির্লজ্জ ভাবে বা জোর করে নয়, আপসে এবং পূর্ণ সম্মতির সঙ্গে, অর্থপূর্ণ স্বরে শুধরে দিল মেয়েটি। অরিগনের মেয়েরা বসে থাকুক না অপেক্ষায়, আমার কি! আজীবন আইবুড়ো হয়ে না থাকতে চাইলে কারও না কারও গলায় ঝুলে পড়া। উচিত ওদের! কিন্তু বেন স্লেজেলকে পাবে না ওরা, আগামী রোববারেই তার গায়ে ব্র্যান্ড বসিয়ে দেব আমি!
হেসে উঠল বেন। এত তাড়াতাড়ি?
উঁহু, কোন ঝুঁকি নিতে রাজি নই আমি। কোন্ দিন আবার ট্রেইলে বেরিয়ে পড়ো, কে জানে! পুরুষ মানুষকে বেশিদিন অপেক্ষা করিয়ে রাখতে নেই, বিগড়ে যায় তাহলে।
আরিব্বাস, এত জ্ঞান পেলে কোত্থেকে? যেন কয়েকটা পুরুষের গায়ে ব্র্যান্ড বসিয়েছ আগে?
আমার পুরুষ একজনই। ছয় বছর আগেই যদি ব্র্যান্ড বসাতাম, তাহলে বেসিন ছেড়ে যেতে হত না তাকে। এবার আর ভুল করতে রাজি নই!
বেঁচে থাকলে কার্ল ব্রেনেল নিশ্চয়ই এখন চাবকাত আমাকে!
নিশ্চয়ই! দুষ্ট হাসি দেখা গেল মিরিয়ামের ঠোঁটে। রাজি না হলে!
<