মিরিয়াম আর নিজের জন্যে নাস্তা তৈরি করল বেন। ভোর হওয়ার খানিক আগে পুরো মাতাল অবস্থায় র‍্যাঞ্চে ফিরেছে বিল। নিজের বেডরূমে অঘোরে ঘুমাচ্ছে সে, বিকেলের আগে ঘুম ভাঙার সম্ভাবনা নেই।

প্রায়ই আনমনা হয়ে যাচ্ছে বেন। চুলোয় কফির পানি চড়িয়েছে, এখানে আসার পর থেকে ঘটে যাওয়া ঘটনা এবং সুদূর অতীত বারবার তাড়া করছে ওকে। ওপাশের দেয়ালের লাগোয়া ডাইনিং টেবিলে বসে আছে মিরিয়াম, উৎসুক দৃষ্টিতে ওর কাজ দেখছে মেয়েটা। মাঝে মধ্যেই শান্ত, স্বল্পভাষী মিরিয়ামের দিকে চলে যাচ্ছে বেনের দৃষ্টি। এখন বোধহয় মেয়ে বলা উচিত হবে না ওকে, মহিলা বলা উচিত, ভাবল বেন। রক্তের সম্পর্ক নেই ওদের, কিন্তু ভাই-বোনের মত বড় হয়েছে। তিন ভাইয়ের মধ্যে ওকেই বেশি পছন্দ করত মেয়েটা, মনে পড়ল বেনের, ছোট থেকে প্রায় ছায়ার মত লেগে থাকত ওর সঙ্গে।

ভাবছি জেগে ওঠার পর বিল যখন দেখবে অ্যাগনেস চলে গেছে কি প্রতিক্রিয়া হবে ওর, মৃদু স্বরে নীরবতা ভাঙল মিরিয়াম।

শ্রাগ করল বেন। হয়তো এ থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত ওর। কি মনে হয় তোমার, মিরিয়াম, সত্যিই কি বিলকে ভালবাসত অ্যাগনেস?

নিজেকে ছাড়া কখনও কাউকে ভালবাসেনি ও, এমনকি বাপকেও নয়। তবে টম নোলানকে বোধহয় সমীহ করে। আসলে নিজের ইচ্ছেমত যাকে চালানো সম্ভব নয়, তাকেই সমীহ করে অ্যাগনেস।

যেমন তোমাকে?

ক্ষীণ হাসল মেয়েটি। আমার ব্যাপারটা ব্যতিক্রম। তুমি বোধহয় ওকে সামলে রাখতে সক্ষম, বেন।

বাতিলের ভঙ্গিতে একটা হাত নাড়ল বেন। কিন্তু বেসিন ছাড়ার আগে আমাকে ইচ্ছেমত নাচিয়ে ছেড়েছে ও।

কফির মগের কিনারার ওপর দিয়ে ওকে নিরীখ করছে মিরিয়াম। মনে হচ্ছে শেষপর্যন্ত ওর ভেতরটা ঠিকই দেখতে পেয়েছ তুমি।

ছয় বছর আগে যেমন দেখেছি, অ্যাগনেস যে আগের মত নেই সেটা বোঝার মত যথেষ্ট দেখতে পেয়েছি। অনেক বদলে গেছে ও।

উঁহু, বরাবরই এরকম ছিল ও•••ওর আগের রূপটা সম্পর্কে জানতে না তুমি, যা এখন জানো। ও সত্যিই বিপজ্জনক, তাই না?

নোলানদের রক্ত ওর শরীরে, সংক্ষেপে মন্তব্য করল বেন, ফের মগে কফি ভরে ফিরে এসে টেবিলে বসল। বিলকে কবে বিয়ে করেছে ও?

তুমি চলে যাওয়ার আগে বোধহয় শুধু তোমাকে নিয়ে ভাবত অ্যাগনেস। কিন্তু…তুমি চলে যাওয়ার পর, কিছু দিন কয়েকজনের সঙ্গে মেলামেশা করল। মন্ট্যানার স্কুলে পড়ার সময়ও কিছু-গুজব রটেছে ওর নামে, বাধ্য হয়ে ওকে ফিরিয়ে আনে টম নোলান। কিন্তু বেসিনের স্বার্থে বোধহয় ওকে সেখানেই রেখে আসা উচিত ছিল মি. নোলানের। কথাটার তাৎপর্য অনুধাবন করে নিজেই হেসে উঠল মিরিয়াম।

কিন্তু বিলকে বিয়ে করল কেন?

বাবা যতদিন বেঁচে ছিল, ডাবল-বির কারও পক্ষে কোন নোলানকে বিয়ে করা কোন দিনই সম্ভব ছিল না। বাবাকে তো চিনতে তুমি।

জানি, শুকনো স্বরে বলল বেন। অ্যাগির প্রতি আমার আগ্রহ দেখে বাবা কয়েকবারই কথাটা বলেছে আমাকে।

বাবার কারণেই ব্যাপারটা ঘটেনি, বিলকে পাত্তা দেয়নি অ্যাগনেস। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর, হঠাৎ করেই যেন রিও ফ্রিয়ের ব্যালে আচমকা আগ্রহী হয়ে উঠল বিলের প্রতি। বিল তো আনন্দে আত্মহারা, ঠিক তখনই সিরেনোর ওই ফাইট সম্পর্কে বড়াই করা শুরু করল ও, দাবি করল তুমি নও, বরং সে-ই ফ্রেড মোরিসের চ্যালেঞ্জ উতরে গিয়েছিল।

থেমে বেনের দিকে তাকাল মিরিয়াম। বাবার মৃত্যুর পর বিলের সঙ্গে মেলামেশা শুরু করে অ্যাগনেস, ঘন ঘন ডাবল-বিতে আসত, তিক্ত হাসি ফুটল মেয়েটার ঠোঁটের কোণে। এখানকার কোন্ জিনিসটা আগের মত আছে? সবকিছু বদলে ফেলেছে ও। টাকার বিনিময়ে ঝামেলা এনেছে। বিল আর জেফরির মধ্যে। বিরোধ হলো ওর কারণে, আমার আর বিলের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হলো। টেকোস ফারমিনকে অন্দর মহল থেকে বের করে দিল, দায়িত্ব দিল পাঞ্চারদের রান্নার; নিজের জন্যে সান্তা ফে থেকে কুক নিয়ে এল। বিল মদের প্রতি আগ্রহী হওয়ার পর থেকে বাথানের ভরাডুবি শুরু হলো। সত্যটা তুমিও বুঝতে পারছ এখন, বেন, শিগগিরই হয়তো চূড়ান্ত ভরাডুবি হবে আমাদের।

জমিটা এখনও আছে, একগুয়ে স্বরে বলল বেন।

মর্টগেজ সহ, যার দেনা কখনোই শোধ করতে পারব না আমরা।

কি বললে?

নড করল মিরিয়াম। র‍্যাঞ্চ বন্ধক রেখে প্রচুর টাকা ধার করেছে বিল। কিছু দিনের মধ্যে প্রথম কিস্তি শোধ করার কথা। কিন্তু অত টাকা আমাদের হাতে নেই, বেন, জোগাড় হওয়ার কোন সম্ভাবনাও নেই।

সময়টা কি বাড়ানো যায় না?

চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল মিরিয়াম, জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। অন্য কেউ হলে হয়তো সেটা সম্ভব হত।

কিন্তু কোথাও নিশ্চয়ই কেউ একজন আছে যে তোমাদের সাহায্য করতে পারে।

মাথা নাড়ল মেয়েটি। না, কেউ সাহায্য করবে না আমাদের। বন্ধক থেকে বাথানটা ছাড়ানোর অধিকার থেকে বঞ্চিত হব আমরা।

কথা বলতে তো দোষ নেই, চিন্তিত স্বরে বলল বেন, টেবিল ছেড়ে মিরিয়ামের পাশে এসে দাঁড়াল। কার কাছে বন্ধক রেখেছে বাথান?

ধীরে ধীরে ঘুরে দাড়াল মেয়েটা। টম নোলানের কাছে।

খোদা! আর লোক পেল না বিল? সেই ছোট থেকেই জানি আমি, এই জমিটা আজীবন চেয়ে এসেছে টম নোলান।

হ্যাঁ। বাবা বেঁচে থাকতে ডাবল-বিতে থাবা বসাতে পারেনি সে, কখনও পারতও না। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর ডাবল-বির দুরবস্থার শুরু, টম নোলানের মেয়ে সেটাকে ত্বরান্বিত করল। আমি বিশ্বাস করি স্রেফ আমাদের সর্বনাশ করার জন্যেই বিলকে বিয়ে করেছে অ্যাগনেস, শেষে বাপের হাতে তুলে। দেবে ডাবল-বি। মনে হচ্ছে সফল হয়েছে ও, বেন। গতরাতে ওর ওপর চড়াও না, হলে হয়তো রাজি করানো যেত ওকে, আমাদের হয়ে টম নোলানের সঙ্গে কথা বলে সময়টা বাড়ানো যেত।

হতাশায় মাথা নাড়ল বেন। নিশ্চিত ভরাডুবি হতে যাচ্ছে ডাবল-বির। ভাবাই যায় না মাত্র একজন মানুষের অনুপস্থিতিতে বদলে গেছে পুরো পরিস্থিতি-দেনার দায়ে ডুবতে বসেছে ডাবল-বি, তিন ভাই-বোনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। সবকিছুর জন্যে কি বিল ব্রেনেলের অযোগ্যতা আর খামখেয়ালীপনাই দায়ী, নাকি অ্যাগনেসেরও ভূমিকা আছে এসবে? মিরিয়াম হয়তো ঠিকই বলেছে, অ্যাগনেস নোলান সত্যিই বিপজ্জনক এবং ওর বিলাসী জীবনযাপনের ব্যয় বহন করতে গিয়ে কাঁধে ঋণের পাহাড় জমিয়েছে বিল ব্রেনেল।

জেফকে খুঁজে বের করতে হবে, মিরিয়ামের প্রসঙ্গ বদলে সংবিৎ ফিরে পেল বেন।

ভাবছি আবার বেরোব।

তোমার সঙ্গে যাব আমি।

না।

কেন, বেন? চ্যালেঞ্জ মেয়েটার চোখে।

মিরিয়ামের কাঁধ দুটো চেপে ধরল ও। কারণ বাইরে মৃত্যুর আশঙ্কা আছে, সংক্ষেপে আগের দিনের অভিজ্ঞতা জানাল বেন। হয়তো লেযি-এনের জমি পাড়ি দিতে হবে আবার, তুমি সঙ্গে থাকলে সহজে বেরিয়ে আসতে পারব না।

অজান্তে খানিকটা কেঁপে উঠল মিরিয়াম। ওই লোকটা, কারাঞ্চো…ওকে খুন করা উচিত ছিল তোমার, বেন। এভাবে বলা ঠিক হচ্ছে না বোধহয়, কিন্তু ওকে যা করেছ…আসলে নিজের মৃত্যু পরোয়ানায় সই করেছ।

ফিরে আসার পর থেকেই মার খাচ্ছি আমি, মিরিয়াম। খুন করার জন্যে গুলি ছুঁড়ছে ওরা। পরিস্থিতি এমন হবে আশা করিনি, কিন্তু বিস্মিত বা বেচাল হইনি, কারণ এভাবেই নিজেকে গড়ে নিয়েছি আমি। …এবার যাও,তত, বিলকে জাগাও। ওর সঙ্গে কথা বলব।

বেরিয়ে গেল মেয়েটা।

লিভিংরূমে এসে কোল্ট আর উইনচেস্টার বের করে তেল দিয়ে, যত্ন নিল বেন। পাশের কামরায় মিরিয়াম আর বিলের কথোপকথন অস্পষ্ট ভাবে কানে আসছে। জড়ানো স্বরে প্রতিবাদ করছে বিল।

বেন! উত্তেজিত, চড়া স্বরে ওকে ডাকল মিরিয়াম।

বলো।

এক্ষুণি এদিকে এসো, প্লীজ!

হলঘর হয়ে দ্রুত এগোল ও, বিলের কামরায় ঢুকল। বিছানায় জবুথুবু হয়ে পড়ে আছে বিল ব্রেনেল। দরজার উল্টোদিকে বিশাল জানালার কাছে দাঁড়িয়ে। আছে,মিরিয়াম, দৃষ্টি রিও ফ্রিয়োর দিকে।

দেখো! উত্তেজনার ছোঁয়া মেয়েটার কণ্ঠে।

মিরিয়ামের কাঁধের ওপর দিয়ে তাকাল বেন। ডাবল-বি র‍্যাঞ্চ হাউসের দিকে আসছে তিন ঘোড়সওয়ার। বলা উচিত, দু’জন পূর্ণ বয়স্ক লোক এবং এক তরুণ-জেফরি ব্রেনেল। স্টিভ হারকারের পাশাপাশি ঘোড়া ছোটাচ্ছে সে; পোশাক, আচরণ কিংবা সামর্থ্যের বিচারে যাকে নিজের আদর্শ মনে করে ছেলেটা। একজন খুনীর প্রতি সমীহ বোধ করছে সে, পরোক্ষ ভাবে আসলে খুনী হতে চাইছে, তিক্ত মনে ভাবল বেন।

তৃতীয়জন ডড কিনলে। লোকটার উপস্থিতি ঘোলাটে করে তুলেছে। পরিস্থিতি। একেবারে স্বল্পভাষী মানুষ, সারাক্ষণই নির্বিকার। মনে কি ভাবনা চলছে বোঝা কঠিন। কিন্তু একটা ব্যাপার পরিষ্কার হয়ে গেছে, গত ছয় বছরে বেন স্লেজেলের ভূমিকা সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা রাখে সে। জ্যাক হারলো তাকে স্টক ডিটেকটিভ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেও যথেষ্ট সন্দেহ আছে বেনের।

শীতল একটা আঙুল যেন মেরুদণ্ডে স্পর্শ বুলিয়ে দিচ্ছে, টের পেল বেন। তিনজন কঠিন মানুষ। কিন্তু ওকে সাহায্য করার মত নেই কেউ। যে: ক’জন পাঞ্চার ছিল, প্রত্যেকেই বাইরে আছে এখন। কিন্তু এরা থাকলেও এমন কিছু যেত-আসত না, কারণ মানুষগুলো নিতান্তই নিরীহ। বেঁচে থাকতে কিছু কঠিন লোককে ভ্যাকুয়েরোর কাজ দিয়েছিল কার্ল ব্রেনেল, মালিকের বিদায়ের পর এরাও বিদায় নিয়েছে। হয়তো অ্যাগনেস ব্রেনেলের আঙুলের ইশারায় মেরুদণ্ডহীন হয়ে পড়েছে ডাবল-বি!

কি করবে, বেন? উদ্বিগ্ন স্বরে জানতে চাইল মিরিয়াম।

ক্ষীণ হাসল ও। কি করব? দেখি, কি বলার আছে ওদের।

নড করে পিছিয়ে গেল মেয়েটা। আরও আগেই ফিরে আসা উচিত ছিল তোমার, বেন, অন্তত আমি তাই মনে করি। প্রায়ই ভাবতাম তুমি যদি থাকতে হয়তো সবকিছু এভাবে শেষ হয়ে যেত না!

হাসিটা প্রসারিত হলো বেনের ঠোঁটে। তাই? ফিরে আসার পর থেকে কেবলই মনে হচ্ছিল এখানে এসে ভুল করেছি। টম নোলান আর ওর লোকেরা কিংবা অ্যাগনেসও সেটাই মনে করিয়ে দিচ্ছিল আমাকে। কিন্তু অন্তত একজন মনে-প্রাণে আমাকে আশা করেছে এখানে…শুনে সত্যিই ভাল লাগছে। যাকগে, নিশ্চয়ই বাথানের কথা চিন্তা করে কথাটা বলেছ?

কাঁপা হাত তুলে আলতো ভাবে বেনের মুখ স্পর্শ করল মিরিয়াম, বেন দৃষ্টি নামিয়ে তাকাতে অনিশ্চয়তা দেখতে পেল মেয়েটির চোখে।

হ্যাঁ, এক অর্থে তাই, নিচু স্বরে স্বীকার করল মেয়েটি।

বেরিয়ে এসে পোর্চে অপেক্ষায় থাকল বেন। সিঁড়ির ধাপে দাঁড়িয়ে আছে ও, সিগারেট রোল করছে সময় নিয়ে। দূর থেকে দেখল স্যাডল ছেড়ে গেট খুলে দিয়ে অন্যদের ঢোকার সুযোগ দিল জেফরি, তারপর গেট বন্ধ করে নিজের ঘোড়ায় চেপে অনুসরণ করল অন্যদের। দুলকি চালে ঘোড়া ছুটিয়ে স্টিভ হারকারের পাশে চলে এল।

ছেলেটার অন্ধ ভক্তি বিতৃষ্ণা ধরিয়ে দিল বেনের মনে। একটা বিষধর কেউটেকে মানুষ ভয় পেতে পারে, কিন্তু সমীহ বোধ করে না কেউ। করলেই সেটা অস্বাভাবিক, আনমনে ভাবল ও।

আমি আর আমার ছায়া, বিড়বিড় করে স্বগতোক্তি করল বেন, স্থির দৃষ্টিতে দেখছে জেফরি ব্রেনেলকে।

ঠিক বিশ ফুট দূরে এসে ঘোড়া থামাল ওরা।

হাউডি, সম্ভাষণ জানাল কেন

স্টিভ হারকার আর কিনলে নড় করলেও এক চুল নড়ল না জেফরি। শীতল মাপা চাহনিতে নিরীখ করছে বেনকে।

তোমাদের জন্যে কি করতে পারি? তিনজনকে ছাড়িয়ে রিও ফ্রিয়োর দুই তীরে চলে গেল বেনের দৃষ্টি, নদীর ধারে কটনউড় আর উইলোর সারির ফাঁকে লুকিয়ে থাকা কোন কাঠামো খুঁজছে-লোকটার হাতে হয়তো একটা রাইফেল দেখা যাবে।

পেছনে নেই কেউ, শান্ত স্বরে বলল স্টিভ হারকার।

তোমার কি ধারণা পেছনে কাউকে দরকার আছে আমাদের বিদ্রুপের স্বরে জানতে চাইল জেফরি, কণ্ঠে স্পষ্ট চ্যালেঞ্জ।

আমাদের? আনমনে হাসল বেন। গাট-হূক ক্রুদের সঙ্গে রাইড করছ তুমি এখন, জেফ?

যেখানে বা যার সঙ্গে খুশি রাইড করি আমি!

বেশ তো, তোমার যেমন ইচ্ছে।

মিস্টার নোলান পাঠিয়েছে আমাদের, বলল হারকার, আর কিছু যোগ করল।

মিসেস ব্রেনেলের জিনিসপত্র নিতে এসেছ?

ক্ষীণ নড করল, লেযি-এন র্যামরড। তারপর কিছুটা সামনে ঝুঁকে এল সে, পমেলে একটা কনুইয়ের ভর চাপিয়েছে। আরও একটা কারণ অবশ্য আছে, স্লেজেল।

বলে যাও।

মেয়ের গায়ে কেউ হাত তুলবে ব্যাপারটা বরদাস্ত করতে রাজি নয় মি. নোলান।  

স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকল বেন, ঠোঁট থেকে সিগারেট সরিয়ে ছাই ঝাড়ল। উঁহু, ভুল শুনেছ। কোন পুরুষ পেটায়নি ওকে। ননদের সঙ্গে খানিকটা বাতচিৎ করছিল অ্যাগি, কিন্তু আচমকা আবিষ্কার করে বসেছে ভুলে বাঘের লেজ ধরে ফেলেছে। নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে হয়তো খানিকটা ঝামেলাই পোহাতে হয়েছে ওর।

বুঝতে পেরেছি, শুকনো স্বরে বলল স্টিভ হারকার, মুখে পাথুরে নির্লিপ্ততা। ‘এবার বিল ব্রেনেলকে নিয়ে এসো এখানে, স্লেজেল!

কেন?

বাতাসে ঘুরতে শুরু করল উইন্ডমিল, গম্ভীর অদ্ভুত শব্দটা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে সবাই। বাড়ির ভেতরে কোথাও সশব্দে বন্ধ হলো একটা দরজা।

স্থির দৃষ্টিতে বেনকে দেখছে লেযি-এন র্যামরড। প্রশ্ন করার ধরন কিংবা খোদ প্রশ্নটাই পছন্দ হয়নি তার, কারণটাও পরিষ্কার-স্টিভ হারকারের মত লোক কাউকে ব্যাখ্যা দিতে পছন্দ করে না, অন্তত বেন স্লেজেলকে তো নয়ই। সম্ভবত একমাত্র টম নোলানকে জমা-খরচ দিয়ে চলে লোকটি। এটাই স্বাভাবিক, আনমনে ভাবল বেন, ব্যক্তিগত বেপরোয়া স্বভাব বাদ দিলেও, অন্যদের ওপর হুকুমদারি করার মত উপযুক্ত একটা পরিবেশে থাকে সে-বেসিনের সবচেয়ে টাফ আউটফিটের ফোরম্যান!

তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে একটা কাঁধ উঁচাল স্টিভ হারকার, যেন নিতান্ত অনিচ্ছার সঙ্গে কারণটা ব্যাখ্যা করছে। ওকে ডেকে আনো, স্লেজেল। কিছু কথা বলব। স্ত্রীর সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করেছে সে, কথাগুলো না বললেই নয়।

বললাম তো, মিরিয়াম আর অ্যাগনেসের মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল। বিল তখন ছিলই না এখানে।

নিতান্ত আলস্য ভরে থুথু ফেলল লেয়ি-এন র্যামরড, কিন্তু মুখে অধৈর্যের চিহ্ন ফুটে উঠেছে। জলদি! চাপা স্বরে গর্জে উঠল সে। ব্রেনেলকে নিয়ে এসো এখানে, স্লেজেল। প্ৰন্তো!

এখনও মাতাল হয়ে আছে ও, হারকার।

মাতাল আর পাগল যাই হোক, ওকে সামনে দেখতে চাই আমি!

ধৈর্য হারাল বেন, তলে তলে শীতল বিতৃষ্ণা বোধ করছে। এটা ডাবল-রি, হারকার, নিশ্চয়ই ভুলে যাওনি? তোমার দুই সাইড-কিককে নিয়ে চলে যাও এখান থেকে। অন্তত যতক্ষণ না কারও সঙ্গে কথা বলার মত সংযত–বিল, কারও সঙ্গে দেখা হবে না ওর। ও সামলে নেয়ার পর, কোন একসময় এসে সত্যটা জেনে নিয়ে ওর কাছ থেকে।

নিষ্ঠুর হাসি ফুটে উঠল স্টিভ হারকারের ঠোঁটে। ডাবল-বির জমি থেকে আমাদের তাড়াবে কে, স্লেজেল?

নিরুদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে বেনকে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে আসলে যথেষ্ট বিচলিত। পরিস্থিতিটা পছন্দ হচ্ছে না ওর। জানে যে কোন উসিলায় ওকে উস্কে দিতে চাইছে হারকার, পিস্তলে হাত দিতে বাধ্য করতে চায়; কিন্তু মনে-প্রাণে সেটা চাইছে না বেন, অন্তত এখন। নিশ্চিত জানে অন্তত দু’জন ওর চেয়ে ফাস্ট, তারপরও এদের যে কারও মুখোমুখি হওয়ার সাহস আছে ওর, কিন্তু একসঙ্গে তিনজনের মোকাবিলা করতে যাওয়া চরম বোকামি হরে। ডড় কিনলেকে জানা নেই ওর, হতে পারে অন্য দু’জনের মত সেও ফাস্টগান।

ছেঁচড়ে স্যাডল ছাড়ল জেফরি, তারপর দ্রুত পা ফেলে পোর্চের দিকে এগোল। বিলকে নিয়ে আসছি আমি, স্টিভ, বলল সে।

দাঁড়াও! বাধা দিল বেন। দেখো, বাছা, এদের কারও সঙ্গে তোমার কোন সম্পর্ক নেই। অ্যাগনেসকে স্পর্শও করেনি তোমার ভাই।

অ্যাগনেস কিন্তু এ কথা বলেনি আমাকে।

মিথ্যে বলেছে ও, জেফ।

কি বললে তুমি, স্লেজেল? উস্কানির স্বরে জানতে চাইল হারকার।

সরাসরি তার চোখে চোখ রাখল বেন। ঠিকই শুনেছ তুমি, হারকার, গতরাতের ঘটনা নিয়ে তোমাদের মিথ্যে বলেছে অ্যাগনেস ব্রেনেল।

আমার সঙ্গে মিথ্যে বলতে পারে না ও! তপ্ত স্বরে দাবি করল জেফরি।

টেকোসের মৃত্যুর কি ব্যাখ্যা দিয়েছে ও তোমাকে, জেফরি-নিশ্চয়ই বলেছে তাকে খুন করেছ তুমি?

উত্তর দিল না জেফরি, পোর্চের সিঁড়ির গোড়ায় চলে এসেছে।

ফিরে যাও, বাছা, কোমল স্বরে বলল বেন।

জেফরি ব্রেনেলের গাঢ় নীল চোখ জোড়া স্থির হলো বেনের মুখে। শুরুটা যেভাবেই হোক, একজনকে খুন করেছি আমি, কাটা কাটা স্বরে বলল সে, দম্ভ ঝরে পড়ছে বলার: সুরে। দ্বিতীয় লোকটাকে খুন করতেও হাত কাঁপবে না। আমার। বিশ্বাস করো, বেন, একটুও কাপবে না!

অযথা বড়াই করছ, বাছা। হার্ট অ্যাটাকের কারণে মারা গেছে টেকোস, তোমার গুলিতে মারা যায়নি। যদি তোমার গুলিতেও মারা যেত, তারপরও বলা যায় স্রেফ দুর্ঘটনা ছিল সেটা।’

মুহূর্তে কুঁচকে গেল জেফরির মুখ, অবিশ্বাস নিয়ে তাকিয়ে আছে বেনের দিকে। খ্যাতি চায় সে, চায় অন্যরা ফাস্টগান হিসেবে সমীহ করুক ওকে, কিন্তু তাড়াটা বড় বেশি। সেজন্যে যে সময় আর ধৈর্য লাগে, সেটা বেমালুম বিস্মৃত হয়েছে।

স্যাডল ছাড়ল স্টিভ হারকার। তোমার ভাইকে নিয়ে এসো, কিড! প্রায় নির্দেশ দিল সে।

তিনটে সিঁড়ি ভাঙল জেফরি। কিন্তু বেনের চোখের দৃষ্টি দেখে থমকে দাঁড়াল। অনিশ্চয়তা ফুটে উঠেছে চোখে।

যাও, বাছা! পেছন থেকে উৎসাহ দিল লেযি-এন র্যামরড।

আমার পথ থেকে সরে দাঁড়াও, বেন! ত্যক্ত স্বরে বলল জেফরি, স্টিভ হারকারের তাগাদায় আবারও নিজেকে ফিরে পেয়েছে।

না।

বিপজ্জনক নীরবতা নেমে এল। নিজের ঘোড়ার কাছ থেকে কিছুটা দূরে সরে গেছে স্টিভ হারকার, দুই পা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে, বাম হাতের দস্তানার উল্টো পিঠ ডলছে সে অন্য হাতে। হ্যাটের ব্রিম নিচু হয়ে গেছে, কিন্তু চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে-শীতল তাচ্ছিল্যের দৃষ্টি খুঁড়ে যাচ্ছে বেন স্লেজেলকে।

আবারও বলছি, খেপা সুরে তড়পে উঠল জেফরি। আমার পথ ছাড়ো!

দেখো, বাছা। তোমাকে ব্যবহার করছে ওরা। অ্যাগনেস মিথ্যে বলেছে। তোমাকে! এই যেমন তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমি, ঠিক ততটাই সত্য যে অ্যাগনেস তোমাকে মিথ্যে বলেছে।

কথাটা বোলো না আবার!

মিথ্যে বলেছে ও!

স্থির দৃষ্টিতে পরস্পারের দিকে তাকিয়ে থাকল ওরা। নীরব, উদ্বেগ ভরা কিছু মুহূর্ত পেরিয়ে গেল। বেনের আশঙ্কা হচ্ছে হয়তো খেপে গিয়ে সত্যিই ড্র করবে জেফরি। পরিস্থিতিটা মনে-প্রাণে ঘৃণা করছে ও, কারণ তাহলে প্রাণ বাঁচাতে ওকেও ড্র করতে হবে।

ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ল জেফরি, দৃষ্টি সরিয়ে নিল।

আলগোছে ডান দিকে দু’পা সরে এল বেন, স্টিভ হারকার আর নিজের মধ্যে ফেলল জেফরিকে, একই সঙ্গে মাথা থেকে হাতে তুলে নিয়েছে হ্যাট। চোখের পলকে সক্রিয় হলো ও-এক পা এগিয়ে জেফরির মুখে হ্যাটটা চেপে ধরল, তারপর সপাটে ঘুসি হাঁকাল তরুণের চিবুক লক্ষ্য করে।

টলে উঠল ছেলেটা। যন্ত্রণার চেয়ে বিস্ময় আর হতাশার ছাপ বেশি পড়ল মুখে। মুহূর্তের মধ্যে জ্বলে উঠল চোখ দুটো, বেন বুঝল এবার পাল্টা আঘাত হানবে জেফরি। একটা ঘুসি শারীরিক ভাবে যতটা না আঘাত করেছে ওকে, প্রতিক্রিয়াটা হলো আরও গভীর এবং তেতে ওঠা কোণঠাসা মানুষের মত-আত্মসম্মান বোধ আর মিথ্যে অহমিকায় লেগেছে যেন ঘুসিটা!

কিন্তু হিসেবে ভুল করেছে ও, পাল্টা আঘাত করল না জেফরি, বরং পিস্তলের দিকে হাত বাড়াল।

জেফরিকে সামলে নেয়ার বা চড়াও হওয়ার সুযোগ দিল না বেন। বাম হাতে ওর কজি চেপে ধরল, ততক্ষণে কক্ করা পিস্তল হোলস্টার থেকে বের করে। ফেলেছে জেফরি! এক লহমায় ডান হাতে নিজের পিস্তল বের করে ফেলল বেন। সজোরে পিস্তলের বাঁট দিয়ে জেফরির পেটে আঘাত করল। বাতাসের অভাব। অনুভব করতে টলমল পায়ে দু’পা পিছিয়ে গেল জেফরি, মুখ হা হয়ে গেছে।

পুরো ব্যাপারটাই ঘটেছে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে। জেফরির পেটের সঙ্গে কোল্টের নল চেপে ধরেছে বেন। এবার কি করবে, জেফ? তরুণের বিস্ফারিত চোখে চোখ রেখে শীতল স্বরে জানতে চাইল ও।

অক্ষম রাগে ঘুরে দাঁড়িয়েছে স্টিভ হারকার, চোখের কোণ দিয়ে দেখতে পেল বেন। দু’পা পিছিয়ে এল ও। কোল্টের নল স্থির হলো নিজেকে সামলে নিতে ব্যস্ত জেফরি আর হারকারের মাঝামাঝি। শীতল দৃষ্টিতে লেযি-এন ফোরম্যানকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিল ও। একটু আগেও বলেছি, হারকার, এটা ডাবল-বি, তোমার গাট-হক র‍্যাঞ্চ হাউস নয়। এবার জলদি বিদায় হও এখান থেকে!

নিস্পৃহ দৃষ্টিতে পিস্তলের নগ্ন নলটা দেখল গানম্যান, তারপর দৃষ্টিটা উঠে গিয়ে বেনের মুখে স্থির হলো। যথেষ্ট কারিশমা দেখিয়েছ তুমি, বেন স্লেজেল! শীতল নিরুত্তাপ স্বরে বলল সে। ফিরে যাচ্ছি আমরা। কিন্তু শোধ-বোধটা বাকি থাকল। কি বলো?

ভাগো!

র‍্যাঞ্চ হাউসের দরজা খুলে গেল এসময়। টলমল পায়ে ছুটে এল বিল ব্রেনেল। কোন্ শালা চায় আমাকে? জড়ানো স্বরে জানতে চাইল সে।

ভেতরে যাও, বিল? কোল্ট হোলস্টারে পুরে নির্দেশ দিল বেন।

গোল্লায় যাও তুমি! আমার বউকে নিয়ে গেছে ওরা! অ্যাগনেসকে ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছি আমি!

বাড়ির ভেতরে চলে যাও!

এতক্ষণে যেন নিজেকে সামলে নিয়েছে জেফরি। তোমার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম আমরা, বিল। বেনের সঙ্গে কোন ব্যবসা নেই আমাদের।

পেয়ে গেছ আমাকে! ঝামেলা খুঁজছ তুমি? দেখাচ্ছি তোমাকে ঝামেলা কাকে বলে! বলেই আচমকা ড্র করল সে।

লাফিয়ে পিছিয়ে গেল জেফরি, ছোবল মেরেছে হোলস্টারে। খলিত পায়ে তার দিকে এগোল বিল, কাঁপা হাতে নিশানা করার চেষ্টা করছে। বিলের হাতের আঙুল ট্রিগারে চেপে বসতে যাচ্ছে দেখে পিস্তলটা ছিনিয়ে নিতে হাত বাড়াল বেন..

কিন্তু দেরি হয়ে গেছে ততক্ষণে। বিল ব্রেনেলেরটা নয়, বরং অন্য একটা পিস্তল গর্জে উঠল।

অস্ফুট শব্দ করল বিল, যন্ত্রণায় বিকৃত হয়ে গেছে মুখ। দু’চোখে অবিশ্বাস, নিয়ে পেটের দিকে তাকাল। চরকির মত আধ-পাক ঘুরল সে, তারপর ধড়াস করে সিঁড়ির ওপর পড়ে গেল।

ঝটিতি ঘুরে দাঁড়াল কেন। ত্রিশ ফুট দূরে দাঁড়িয়ে আছে স্টিভ হারকার, উদ্যত সিক্সগানের মাজল থেকে ধোঁয়া উঠছে। বরফের মত শীতল দেখাচ্ছে নীল চোখ দুটো, এবং আবারও গুলি করার জন্যে তৈরি সে।

প্রায় অসুস্থ বোধ করছে বেন। লেযি-এন র্যামরডের চোখে শীতল বিদ্বেষ দেখতে পেল-খুনের নেশায় পেয়ে বসেছে তাকে। যে কোন মুহূর্তে গুলি করবে লোকটা! অথচ কিছুই করার নেই, ওর পিস্তল হোলস্টারে আর এদিকে স্রেফ ট্রিগার টেনে দেবে হারকার। জানে জেফরি বা কিনলে কেউই গুলি করবে না, এবং ওর পায়ের কাছে পড়ে থেকে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে বিল ব্রেনেল।

ভারী ক্যালিবারের গুলির গর্জনে ভেঙে গেল নীরবতা। বেন ভেবেছিল শরীরে প্রচণ্ড একটা ধাক্কা অনুভব করবে, কিন্তু কিছুই হলো না। সংবিৎ ফিরে পেয়ে দেখল স্টিভ হারকার গুলি করেনি এবার। বরং বাড়ির ভেতর থেকে গর্জে উঠেছে একটা রাইফেল।

ঘুরে দাঁড়িয়ে মিরিয়ামকে জানালায় দেখতে পেল ও। একটা উইনচেস্টার মেয়েটার হাতে।

তোমাদের চলে যেতে বলেছে বেন, ঠাণ্ডা নির্লিপ্ত স্বরে অতিথিদের বলল মেয়েটা।

নড়ে উঠল স্টিভ হারকার, পড়ে যাওয়া পিস্তল তুলে নেবে।

উঁহু, ওখানেই থাকুক ওটা, চড়া স্বরে নির্দেশ দিল মিরিয়াম। জেফ, বাড়ির ভেতরে যাও!

নীরবে মাথা নাড়ল তরুণ।

স্যাডলে চাপল স্টিভ হারকার।

তার দিকে তাকাল ডড কিনলে, বরাবরের মত নির্বিকার দেখাচ্ছে স্টক ডিটেকটিভকে। এইমাত্র একজনকে খুন করেছ তুমি, হারকার!

সবাই জানে কোথায় পাওয়া যাবে আমাকে, দম্ভ ভরা কণ্ঠে বলল গানম্যান। ঘোড়া ঘুরিয়ে গেটের দিকে এগোল সে, অনুসরণ করল জেফরি।

ওকে যেতে দাও, তিক্ত স্বরে বলল বেন, ঝুঁকে বসে পড়ল বিলের পাশে। ঠিকই বলেছে ও, আমরা জানি কোথায় পাওয়া যাবে ওকে।

সীমাহীন যন্ত্রণা ফুটে উঠেছে বিল ব্রেনেলের চোখে-মুখে, এক হাতে পেটের ক্ষতটা চেপে ধরেছে সে। আমার সময় শেষ, বেন!

কিছুই হবে না তোমার, বিল।

উঁহু, জায়গামত লেগেছে গুলিটা। সবকিছু লেজে-গোবরে করে ফেলেছি। আমি নাক গলানো পর্যন্ত ঠিকই ওদের সামলে নিয়েছিলে। মাথার ঠিক ছিল না, বেন।

ডড কিনলের দিকে ফিরল বেন, দেখল নীরবে মাথা নাড়ছে সে। এদিকে কাঁদতে শুরু করেছে মিরিয়াম।

আচমকা নিঃশ্বাস আটকে গেল বিলের, রক্ত উঠে এসেছে মুখে। দুঃখ নেই আমার, বেন, খুশি মনেই যাচ্ছি, যন্ত্রণায় দুমড়ানো কাগজের মত কুঁকড়ে গেল মুখটা, কোত্থেকে কথা বলার শক্তি পাচ্ছে কে জানে। অ্যাগনেস আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, আর জেফরি তো ঘৃণাই করে আমাকে! ডাবল-বিকেও হারিয়েছি আমি, তোমাদের জন্যে কিছুই বাকি থাকল না, ক্ষীণ তিক্ত হাসি দেখা গেল তার ঠোঁটের কোণে। আমি এমনকি কয়েকটা বছর ধরে মিথ্যে বড়াই করেছি, সিরেনোর ওই গানফাইটের নায়ক দাবি করেছি নিজেকে, ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে এল কণ্ঠ, একটা হাত নাড়ল সে। দুঃখ একটাই, বাবার খুনীর পরিচয় জানতে পারিনি। লোকটাকে খুঁজে বের করবে, বেন? প্রতিশ্রুতি দাও আমাকে!

তাই করব আমি, বিল।

বেনের দিকে ফিরল ডড কিনলে, তারপর বিলের মুখে স্থির হলো স্টক ডিটেকটিভের কৌতূহলী দৃষ্টি।

যেই খুনটা করেছে, বাবার অভ্যাস সম্পর্কে ধারণা ছিল লোকটার, সেজন্যেই সহজে ড্রাই গালশ করতে পেরেছে। লোকটাকে খুঁজে বের করবে, বেন?

নিশ্চয়ই, বিল!

আচমকা থরথর করে কেঁপে উঠল বিল ব্রেনেলের শরীর, খিচুনি দিয়েই স্থির হয়ে গেল। নিপ্রাণ দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে খোলা আকাশের দিকে, কিন্তু কিছুই দেখছে না। মারা গেছে বিল ব্রেনেল।

উঠে দাড়িয়ে নদীর দিকে তাকাল বেন। রিও ফ্রিয়োর ওপাড়ে উইলোর কিনারে দেখা যাচ্ছে দুটো ঘোড়া, নদী পেরিয়ে লেযি-এনের জমিতে পা রেখেছে স্টিভ হারকার আর জেফরি ব্রেনেল।

ওদের পিছু নেবে নাকি, স্লেজেল? জানতে চাইল ডড কিনলে।

হ্যাঁ।

ওরা তোমাকে খুন করবে।

হয়তো।

তাই করবে, মাথায় হ্যাট চাপিয়ে ঘোড়ার দিকে এগোল সে, তারপর পমেল আঁকড়ে ধরেও ঘুরে দাঁড়িয়ে ফিরল বেনের দিকে। এক কাজ করা যাক। কিছুটা সময় দাও আমাকে। টম নোলানের সঙ্গে কথা বলব আমি। সে হয়তো হারকারকে আইনের হাতে তুলে দেবে।

সন্দেহ আছে আমার।

শ্রাগ করল ডিটেকটিভ। চেষ্টা করতে তো দোষ নেই।

তোমার ভূমিকাটা কি, কিনলে? এসবের সঙ্গে…

টম নোলানের হয়ে কাজ করছি আমি, স্মিত হেসে ওকে থামিয়ে দিল সে। কিন্তু ওর ভাড়াটে খুনী নই। নিশ্চিত থাকতে পারো, দুই বাথানের ঝামেলার মধ্যে পাবে না আমাকে। দুটো কারণে আমাকে ভাড়া করেছে র‍্যাঞ্চার, তার একটা হচ্ছে কার্ল ব্রেনেলৈর খুনীর পরিচয় জানা।

বিস্ময় নিয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে থাকল বেন। অন্য কারণ?

তোমাকে বলতে বাধ্য নই আমি, অন্তত এখন, নিস্পৃহ স্বরে বলল সে, স্যাডলে চেপে আবারও ফিরল বেনের দিকে। পকেট থেকে দুমড়ানো একটা সিগার বের করে সময় নিয়ে ধরাল। স্বীকার করতেই হবে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে গেছে। আমার পরামর্শ শোনো, শ্লেজেল, বাথান ছেড়ে যেখানেই যাও, দয়া করে লেযি-এনের ধারে-কাছেও যেয়ো না। ভাবছি টম নোলানের সঙ্গে কথা বলব, দেখি বুড়োকে রাজি করাতে পারি কিনা, দরকার হলে আমি নিজেই স্টিভ হারকারকে শেরিফের কাছে নিয়ে যাব।

কিন্তু সে যদি রাজি না হয়?

গাঢ় নীল চোখে বেনকে নিরীখ করল ডড কিনলে। তাহলে ব্যাপারটা শেরিফের ওপর নির্ভর করবে, তাই না? হুট করে কোন কিছু করার আগে তাকেই। সামলাতে দাও।

গাট-হুক করিডায় কোন খুনীকে গ্রেফতার করতে যাবে না এডলে ভার্ন।

হয়তো, স্যাডলে নড়েচড়ে বসল বিশালদেহী মানুষটা। এসবের জন্যে দুঃখিত আমি, স্লেজেল।

দু’জনকে মৃত ভাইয়ের কাছে রেখে রিও ফ্রিয়োর দিকে এগোল সে।

<

Super User