ব্যান্ডেজের জন্যে পুরানো কাপড় আর গরম পানি আনতে গেল ডেইজি। আহত হ্যাটারের পাশে দাঁড়িয়ে বেনন। হাজারটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে ওর মাথায়। সর্বক্ষণ ভ্রূ কুঁচকে রেখেছে। সোবর সুয়েড? কেন বলল র‍্যাঞ্চার কথাটা? কি আছে ওখানে? ওয়াং কেন তার লোকদের কয়েকদিনের জন্যে মাইনার হতে বলেছিল?

প্রশ্নই আছে শুধু, কোন জবাব জানা নেই। ডেইজি যখন ফিরল আঁধার রাতে গিটারের ভেতর ঢুকে পড়া দিশে হারানো পোকার মত অসহায় লাগছে ওর।

ডেইজি কাপড় ছিঁড়ে ফালি ফালি করছে। বেননও হাত লাগাল। ভেজা কাপড় দিয়ে ক্ষতটা পরিষ্কার করতে লাগল ও। আততায়ীর বুলেট হ্যাটারের মাথায় লেগেছে। পুরানো ক্ষতটা থেকে খুব একটা দূরে নয়।

সোবার সুয়েড, আপন মনে বলল বেনন। পাথর ধস নেমেছে যে টিলায় সেটার গোড়ায় খনিটা। হ্যাটার কি বলতে চেয়েছিল? এমন কি হতে পারে ওখানে সোনা রয়ে গেছে? স্পারের সঙ্গে খনিটার কোন না কোন সম্পর্ক আছে, তা নাহলে এত ঝুঁকি নিয়ে র‍্যাঞ্চে এসে হামলা করত না ওয়াং।

দক্ষ হাতে ব্যান্ডেজ বাধছে ডেইজি। বেনন দেখল হাত কাঁপছে মেয়েটার। তবে ঠোঁট চেপে কান্না আটকে রেখেছে। বেননের কথা শুনে মাথা নাড়ল। ওখানে সোনা নেই এটা নিশ্চিত। আমার জন্মের আগেই খনি বন্ধ হয়ে গেছে। সোনা ছিলই না আসলে। সোবার সুয়েড নামকরণ হয়েছে কেন তা জানো? কাজ না থামিয়েই বলে চলল ডেইজি। চাইছে মনটা অন্যদিকে সরিয়ে রাখতে। কয়েকজন ঠগবাজ মিলে সোনার লোভ দেখিয়ে এক মাতাল সুইডিশের কাছে খনিটা বেচে দেয়। তারপর লোকটা যখন মাইনিং করতে এসে দেখল কি ঠকাটা ঠকেছে, এক পলকে নেশা ছুটে গেল তার। আবার কে কখন ঠকিয়ে দেয় সেই ভয়ে দেরি না করে অবশিষ্ট টাকা নিয়ে, তাড়াতাড়ি দেশে ফিরে গেল সে। তারপর থেকে পড়ে আছে খনি, কেউ আর ভুলেও ওটা কেনেনি। আমার বয়স যখন ছয় কি সাত, পাথর ধস নেমে বন্ধ হয়ে গেল খনি-মুখ।

ডেইজি ঠিকই বলেছে, দরজার কাছ থেকে বলল হুলাহান। ওয়াংকে না পেয়ে ফিরে এসেছে ব্র্যান্ডন আর সে। খাটের পাশে এসে দাঁড়াল দু’জন। বাইরে এখনও খোঁজাখুঁজি করছে। কাউহ্যান্ডরা। হ্যাটারের ওপর থেকে বেননের ওপর স্থির হলো ব্যাঙ্কারের দৃষ্টি। কি অবস্থা ওর?

আঘাতটা মারাত্মক। ওয়াংকে ধরতে পারলে তোমরা?

কথা বলল ব্র্যান্ডন। না, পালিয়ে গেছে। সম্ভবত একা এসেছিল, দলবল নিয়ে এলে কাউকে না কাউকে ধরা যেত। হ্যাটারের খোঁজ নিতে আমরা চলে এলাম। কাউহ্যান্ডরা এখনও খুঁজছে।

ব্যান্ডেজ বাঁধা শেষ হতেই এক এক করে সবাইকে দেখল ডেইজি। চেহারায় ফুটে উঠল দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। শান্ত স্বরে বলল, আজকেই বাবাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে, নাহলে বাঁচানো যাবে না।

সবচেয়ে কাছের ডাক্তার আছে টেইল হল্টে, জানাল ব্র্যান্ডন।

আমরা ওকে ওয়্যাগনে করে এন্ড অভ স্টীলে নিয়ে যাব, বলল হুলাহান, সেখান থেকে ট্রেনে করে টেইল হল্টে।

মাথা ঝাঁকিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল ব্র্যান্ডন। ডেইজি অনুসরণ করল তাকে। দিনটা খুব খারাপ কাটল। আড়মোড়া ভেঙে ব্যাঙ্কারের দিকে তাকাল বেনন। সারাদিন অপেক্ষা করেছে ও স্পারের রহস্যটা জানতে পারবে আশা করে। যখন জানার সময় হলো একটা বুলেট মুখ বন্ধ করে দিল হ্যাটারের। কোনদিন আর কিছু জানা যাবে কিনা সন্দেহ। হ্যাটারের অবস্থা গুরুতর। না-ও বাঁচতে পারে। বিপজ্জনক ক্যানিয়নের ভেতর দিয়ে লোকটাকে নিয়ে এখন যেতে হবে এন্ড অভ স্টীলে। পথে ওয়াং তার গুণ্ডাদের নিয়ে হামলা করলে সর্বনাশের ষোলোকলা পূর্ণ হবে।

একই চিন্তা খেলছে ব্যাঙ্কারের মাথায়, কারণ লোকটা বলল, হ্যাটারের ক্রুদের সঙ্গে করে নিয়ে গেলে পথে বিপদ ঘটবে না আশা করি।

র‍্যাঞ্চটা খালি রেখে যাওয়া যাবে না, কালকে রাতে কাসি র‍্যাঞ্চে হামলা করতে চেয়ে ছিল সে-কথা মনে পড়তেই দ্বিমত পোষণ করল বেনন। ব্র্যান্ডনের দেরি দেখে অধৈর্য হয়ে বলল, একটা ওয়্যাগনে ঘোড়া জুড়তে আর কতক্ষণ লাগাবে!

সোবার সুয়েডের ব্যাপারে কি যেন বলছিলে শুনলাম? জানতে চাইল হুলাহান।

জ্ঞান ফিরে পেয়ে খনিটার নাম নিয়েছে হ্যাটার।

আশ্চর্য! খনির সঙ্গে হ্যাটারের কি সম্পর্ক?

শ্রাগ করল বেনন। সেটা বলতে পারবে ডক্টর ওয়াং।

ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো বেনন। বাড়ির কোণা ঘুরে বার্নের দিকে এগোল। সচেতন হয়ে আছে। জানে, আঁধারে লুকিয়ে থাকতে পারে সশস্ত্র ওয়াং। হাল ছেড়ে খোজাখুঁজি বাদ দিয়ে উঠানে জড়ো হচ্ছে কাউহ্যান্ডরা। অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে সুযোগ বুঝে ওয়াং ফিরে এলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। লোকটা দুঃসাহসী।

ছায়ার মত বার্নের দরজায় এসে হাজির হলো বেনন। বার্নের দরজা খোলা। ভেতরে লণ্ঠনের হলুদ আলো দেখা যাচ্ছে। হালকা একটা ওয়্যাগনে ঘোড়া জুতছে ব্র্যান্ডন। ডেইজি দাঁড়িয়ে আছে তার পাশে। সরে আসতে গিয়েও থেমে গেল বেনন। গাঢ় স্বরে কথা বলে উঠেছে ব্র্যান্ডন।

ডেইজি, আমি ভবিষ্যতের কথা ভাবছি। জানি এখন এসব বার সময় নয়, তবু আমি ঠিক করেছি আজই তোমার মতামত জানতে চাইব। আমি তোমাকে ভালবাসি, ডেইজি। তুমি চাইলে টেইল হল্টে গিয়ে আমরা বিয়েটা সেরে নিতে পারি।

কোন জবাব দিল না, মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকল ডেইজি।

মেয়েটার মনের অবস্থা বুঝে কাশি দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে আলোর বৃত্তে এসে দাঁড়াল বেনন। ও মুখ খোলার আগেই ঝট করে ওর দিকে ফিরল ডেইজি। দু’চোখে আগুন ঝরছে। চেহারায় অসহায় রাগ।

বলো! বলে দাও ওকে যে হ্যাটার আমার বাবা নয়! বলে দাও কেন আমি ওকে বিয়ে করতে পারব না! বলছ না কেন যে আমি আসলে চোরের মেয়ে? গতকালও হুলাহান বলেছে আমি আমার বাবার মত হয়েছি!

আলতো করে মেয়েটার কাঁধে হাত রাখল বেনন। অনুভব করল বাঁশপাতার মত থরথর করে কাঁপছে ডেইজি। দু’চোখে জল। মৃদু স্বরে ও বলল, গত দু’দিন তোমার ওপর দিয়ে খুব চাপ গেছে, ম্যাম। চলো, তোমার বাবাকে নিয়ে শহরে যেতে হবে আমাদের। তোমারও বিশ্রাম দরকার।

সহানুভূতির ছোঁয়ায় সহজ বোধ করল ডেইজি। আস্তে করে ছাড়িয়ে নিল নিজেকে। চোখের জল মুছে বলল, ঠিকই বলেছ তুমি।

একটা শেড থেকে চাবুকটা নিয়ে ওয়্যাগনের ড্রাইভিং সীটে বসল ডেইজি। ওয়্যাগন থামাল বারান্দার সামনে। কাউহ্যান্ডদের জড়ো করে নির্দেশ দিল বেনন যাতে সতর্ক প্রহরার ব্যবস্থা করা হয় র‍্যাঞ্চে। হ্যারি হুলাহান সঙ্গে কয়েকজনকে নেয়ার কথা বলতেই নাকচ করে দিল ও। যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিল র‍্যাঞ্চ রক্ষা করাটাই বেশি প্রয়োজন, এমনিতেও আঁধারে তেমন কোন কাজে আসবে না কাউহ্যান্ডদের প্রহরা। বরং বাড়তি লোক সঙ্গে গেলে ওয়াঙের দৃষ্টি আকর্ষণের ভয় বাড়বে।

বেননের পরামর্শে কয়েকজন একটা পুরু ম্যাট্রেস এনে বিছিয়ে দিল ওয়াগন বক্সে। তিনজন কাউহ্যান্ড ধরাধরি করে সেটার ওপর আহত হ্যাটারকে শোয়াল। স্পারটা নিয়ে ব্র্যান্ডনের হাতে দিল বেনন।

এটা তোমার কাছে রাখো। রেল অফিসে সিন্দুক থাকলে ভেতরে রেখে তালা দিয়ে রেখো। জিনিসটা সবাই চাইছে।

আমার কাছে নিরাপদেই থাকবে। স্পারটা পকেটে পুরল ব্র্যান্ডন।

আমিও যাচ্ছি তোমাদের সঙ্গে, বলল ব্যাঙ্কার।

আমিই বা বাদ পড়ি কেন! শ্রাগ করে আঁধারের দিকে তাকাল বেনন। ওর ইচ্ছে ওয়াঙের ট্রেইল খুঁজে নিয়ে অনুসরণ করে, কিন্তু এটাও বুঝতে পারছে যে নিকষ কালো এই বিপদসংকুল রাতে ডেইজিদের সঙ্গে থাকাটাই বেশি জরুরী। ডেইজির দিকে তাকাল বেনন। আমাকে অবশ্য আরেকটা ঘোড়া ধার দিতে হবে।

বলতে ভুলে গেছিলাম তোমার নেয়া ঘোড়াটা আজকে বিকেলে ফিরে এসেছে। করালের গেটে দাঁড়িয়ে ছিল। কাউহ্যান্ডরা দেখতে পেয়ে ধরেছে।

তারমানে আস্তানা ছেড়ে চলে গেছে ওয়াং, বলল বেনন। যাওয়ার সময় বাড়তি ঘোড়াটা নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। ব্র্যান্ডনের দিকে ফিরল সে। তোমার তাহলে আর ক্রুদের নিয়ে খুঁজতে বেরনোর মানে হয় না। আমাদের পাখি উড়ে গেছে।

তুমি ইচ্ছে করলে আমার পাশে বসতে পারো, বেনন; বলল ডেইজি।

ওয়াগন চালাবার ব্যাপারে বিড়বিড় করে কি যেন বলল বেনন। জবাবে ডেইজি জানাল এলাকাটা সে ভাল চেনে। তার পক্ষেই দ্রুত এগোনো সহজ হবে। অগত্যা উঠে বসল বেনন ডেইজির পাশে। ঘোড়াগুলোর কানের পাশে চাবুক হাকাল ডেইজি। গড়গড়িয়ে চলতে লাগল ওয়্যাগন। শিগগিরই বেরিয়ে এলো উঠান থেকে। ওয়্যাগনের দু’পাশে ঘোড়ায় চড়ে ওদের পাহারা দিয়ে নিয়ে চলেছে ব্র্যান্ডন আর হ্যারি হুলাহান। একটু পরেই অনেক পিছনে পড়ে গেল র‍্যাঞ্চের আলো।

সরু একটা রাস্তা দিয়ে দক্ষ হাতে দ্রুত ওয়্যাগন ছোটাল ডেইজি। রাস্তাটা গেছে অপেক্ষাকৃত সমতল জমির ওপর দিয়ে। টিলাটক্কর পাশ কাটিয়ে এঁকেবেঁকে এগিয়েছে, তারপর ঢুকেছে ক্যানিয়নের গোলকধাঁধায়।

ক্যানিয়নে ঢুকতেই আরও ঘন হয়ে এলো আঁধার। ভাগ্যকে ধন্যবাদ দিল বেনন, ভাগ্যিস ডেইজির রাস্তা চেনা, তা নাহলে ক্যানিয়নের ভেতর ঘুরপাক খেতে হত; দেরি হয়ে যেত অনেক।

পাথুরে মেঝেতে ওয়্যাগনের চাকা আর ঘোড়ার খুরের শব্দ উঠছে; দু’পাশের দেয়ালে বাড়ি খেয়ে শতগুণ জোরাল শোনাচ্ছে প্রতিধ্বনি। মনে হচ্ছে চারদিক থেকে ছুটে আসছে অসংখ্য ওয়্যাগন। যত এগোচ্ছে চিন্তা বাড়ছে বেননের, কাছেই কোথাও আছে ওয়াং। হয়তো দলবল নিয়ে সুবিধেজনক জায়গায় অপেক্ষা করছে, সুযোগ মত অ্যাম্বুশ করবে ওদের।

গা ছমছমে একটা পরিবেশ। চাঁদ ওঠেনি আজ রাতে। তারাগুলো ঢেকে দিয়েছে কুচকুচে কালো মেঘ। বাতাস স্তব্ধ। গুমোট। আসন্ন ঝড়ের আভাস সুস্পষ্ট। ক্যানিয়নে ঝড় হলেই বের হয় সেই অতিকায় দানব!

ওয়াঙের তরফ থেকে আক্রমণের আশঙ্কা আছে, সে-কথা বেননের মতই ব্র্যান্ডনও বুঝেছে। স্কাউটিং করার জন্যে ঘোড়া দাবড়ে আঁধারে মিলিয়ে গেল সে। কিছুক্ষণ পরপর ফিরে এসে জানাতে লাগল সামনের ট্রেইলে কেউ নেই। খানিকটা নিশ্চিন্ত হলো ওরা।

মাঝে মাঝে ওয়াগন চালাবার দায়িত্ব বেননকে দিয়ে হ্যাটারকে দেখতে গেল ডেইজি। প্রত্যেকবার ফিরল আরও গম্ভীর হয়ে। শেষ পর্যন্ত বলেই ফেলল, এখনও বাবার জ্ঞান ফেরেনি। কিছুক্ষণ পর বেনন টের পেল নিঃশব্দে কাঁদছে মেয়েটা। বুঝল বেনন ডেইজির দুঃখ। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছে মেয়েটা। মানুষ হয়েছে হ্যাটারের কাছে। বাবার স্নেহ-যত্ন দিয়ে ওকে বড় করে তুলেছে যে মানুষটা সে এখন আহত হয়ে পড়ে আছে; বাঁচবে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। বেনন চাইল ডেইজির কাঁধ জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেয়; কিন্তু একটু চিন্তা করে মত পাল্টাল। যার কাজ তাকেই সাজে।

পরেরবার ব্র্যান্ডন ফিরতেই ও বলল, এবার তুমি সীটে বসে বিশ্রাম নাও, আমি কিছুক্ষণ ঘোড়ায় চড়ে শরীরের জং ছাড়িয়ে নিই।

ওয়্যাগনটাকে পেছনে ফেলে সিকি মাইল এগিয়ে গেল বেনন। থামল তারপর। কান পেতে শুনল অস্বাভাবিক কোন শব্দ পাওয়া যায় কিনা। না, আগুয়ান ওয়্যাগনের একটানা ঘড়ঘড়ানি ছাড়া আর কোন আওয়াজ নেই। আবার ফিরে এলো বেনন ওয়্যাগনের কাছে।

এভাবেই মাইলের পর মাইল পেরিয়ে চলল ওরা। কখনও সখনও স্যাডলে বসেই ঝিমিয়ে নিল বেনন। প্রায় দু’রাত হয়ে গেল ঘুমায় না ও।

একঘেয়ে যাত্রা। সবগুলো ক্যানিয়ন দেখতে একইরকম। সেই অন্ধকার আর দু’পাশে খাড়া উঠে যাওয়া সুউচ্চ দেয়াল। সরু খাদের ভেতর দিয়ে এগোনোর সময় মনে হয় কোথাও কোন গন্তব্যে কখনও পৌঁছানো যাবে না। তার ওপর হ্যাটার যাতে অযথা ঝাঁকি না খায় সেজন্যে আস্তে আস্তে ওয়্যাগন চালাচ্ছে ডেইজি। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ধীরে চলতে হচ্ছে বেননকে। ফলে সময় লাগছে অনেক বেশি।

মাঝরাত পেরনোর অনেকক্ষণ পর চওড়া হয়ে এলো ক্যানিয়ন। জায়গাটা পরিচিত লাগায় চারপাশে তীক্ষ্ণ নজর বোলাল বেনন। অন্ধকারে চোখ সয়ে এসেছে, বুঝতে চেষ্টা করল এ-পথেই ডায়নোসরের তাড়া খেয়েছিল কিনা দু’রাত আগে। ঘোড়া থেকে নেমে ম্যাচের কাঠি জ্বেলে বালুতে ঘোড়ার খুরের দাগ খুঁজল বেনন। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করতেই চোখ কপালে উঠল। একটা নয়, অসংখ্য ঘোড়া যাতায়াত করেছে এই পথে। তারমানে এই ক্যানিয়ন ধরেই রেল রোডের ক্যাম্পে হানা দেয় ওয়াঙের ভাড়াটে আততায়ীরা।

নিশ্চিত হতে আরও সামনে বাড়ল ও। পাথর হয়ে গেল ধুলোয় কয়েকটা অতিকায় পায়ের ছাপ দেখে। পা যদি এই আকৃতির হয় তাহলে আস্ত জন্তুটা কত বড়! ম্যাচের কাঠি ফেলে দিল ও আগুনের ছ্যাকা খেয়ে। টের পেল ঘাড়ের কাছে দাঁড়িয়ে গেছে সমস্ত চুল। মেরুদণ্ড বেয়ে সরসর করে নামছে ঘামের ফোঁটা। স্থাণুর মত চুপ করে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল বেনন, তারপর ওয়্যাগনের কাছে ফিরে এলো। ব্র্যান্ডনের উদ্দেশে বলল, ক্যাম্পের কাছে চলে এসেছি আমরা। ডায়নোসরের তাড়া খেয়ে দু’রাত আগে এখান দিয়েই পালিয়েছিল আমার ঘোড়াটা।

তুমিও দেখেছ ওটাকে! বিস্ময়ে চমকে গেল ব্র্যান্ডন। সামলে নিয়ে একটু পরে বলল, আমি বিকেলে একবার ভেবেছিলাম তোমাকে জিজ্ঞেস করি, তারপর তুমি চোখ বুজে আছ দেখে আর জিজ্ঞেস করা হয়ে ওঠেনি। জিমি নর্টন আর ক্রুরাও দেখেছে। দেখতে কেমন ওটা, বেনন?

চারতলা বাড়ির সমান বা তার চেয়েও বড় হবে। ভালমত দেখার সুযোগ পাইনি, একবার বিজলি চমকে উঠল তারপরেই আঁধারে মিলিয়ে গেল দানব। ছুটতে শুরু করল আমার ঘোড়াটা। …স্কাউটিং করতে গিয়ে একটু আগেই–ওটার পায়ের ছাপ দেখলাম। সে-রাতের সেই গা শিরশিরে অনুভূতি আবার ওকে জড়িয়ে ধরছে স্পষ্ট অনুভব করল বেনন। দিনের বেলা ভাবলে দুঃস্বপ্ন বলে মনে হয়, কিন্তু এরকম থমথমে আঁধার রাতে সেই দুঃস্বপ্ন হয়ে ওঠে নিষ্ঠুর বাস্তব। অসহায় লাগে নিজেকে।

কে জানে সামনেই হয়তো কোথাও ঘুরে বেড়াচ্ছে সেই দানবটা।

<

Super User