সবার আগে উঠে দাঁড়াল বেনন। অস্ত্র হাতে একলাফে পৌঁছে গেল জানালার পাশে। দেয়ালের গায়ে পিঠ ঠেকিয়ে উঁকি দিল বাইরে। দুই সেকেন্ড পরেই ব্যাগলেকে আরেক পাশে এসে অবস্থান নিতে দেখল ও। বিদঘুঁটে কোটের ভেতর থেকে অস্ত্র বের করে ফেলেছে ব্যাগলে।
বাকিরা এখনও আকস্মিক আক্রমণে দিশেহারা। ব্যাঙ্কার গিয়ে ঢুকেছে টেবিলের তলায়, আপ্রাণ চেষ্টা করছে কার্পেটের সঙ্গে মিশে যেতে। গলা চিরে বেরিয়ে আসছে চিৎকার। তার ধারণা ব্যাঙ্ক ডাকাতি করছে কেউ। চার হাত-পা মুড়িয়ে হামাগুড়ি দিয়ে ছেলেকে আগলে বসে আছে মস্ত মোটা ভাউবয়েস সি ভাউবয়েস নোয়াক। তাদের দুজনকে গুলির কবল থেকে বাঁচাতে গিয়েই হয়তো সামনে মাথা নিচু করে আধবসা হয়ে আছে মার্লোন ব্র্যান্ডন।
ষাঁড়ের মত চেঁচিয়ো না, ব্যাঙ্কারের উদ্দেশে চেঁচাল বেনন, তোমার ব্যাঙ্ক ডাকাতি করছে না কেউ।
শিকাগো অফিসের গাধাগুলোকে আমি দেখে নেব! গর্জন ছাড়ল ভাউবয়েস। ওরা পেয়েছে কি, মানুষকে এভাবে আততায়ীর সামনে ঠেলে দেবে! আমি ওদের দিয়ে মিলিটারি পাহারার ব্যবস্থা করাব! মাশাল-ল জারি করাব আমি এই স্টেটে!।
উত্তেজিত হয়ো না,বাবা, সাবধান করল ফ্র্যাঙ্ক নোয়াক। ভুলে যেয়ো না ডাক্তার বলেছে মাথা গরম করলে তোমার হাঁপানি বাড়বে।
দ্বিতীয় কোন গুলি হয়নি আর। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল বেনন, তারপর কয়েক লাফে পৌঁছে গেল কনফারেন্স রূমের দরজার কাছে। ব্যাগলে অনুসরণ করল ওকে। মিস হ্যাটারের সঙ্গে সাক্ষাতের ধকল এখনও সইতে পারেনি বিধ্বস্ত ক্লার্ক, টেবিলের তলা থেকে উঁকি দিল লোকটা, ব্যাগলে আর বেনন সিঁড়ির দিকে এগোচ্ছে দেখে ভাঙা গলায় জানতে চাইল, মরেছে কেউ ভেতরে?
না, লোকটাকে আশ্বস্ত করে সিঁড়ি বেয়ে রাস্তায় নেমে এলো বেনন।
সাগরে এক ফোঁটা বৃষ্টির পানি যেমন কিছুই নয়, তেমনি টেইলহল্টেও গুলির মাত্র একটা শব্দ বিন্দু মাত্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেনি। বিস্ফোরণের আওয়াজ শহরের হৈ-চৈ, কোলাহলেই হারিয়ে গেছে।
ফ্রেইট ওয়্যাগনের ফাঁকফোকর দিয়ে এক দৌড়ে রাস্তা পেরল বেনন। ওর পেছনেই ব্যাগলে; সর্বক্ষণ অভিশাপ দিচ্ছে সাদা বুটজুতো জোড়াকে। সেলুনের দরজা খুলে ঝড়ের বেগে ভেতরে ঢুকল ওরা, চারপাশে একবার নজর বুলিয়ে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে এলো দোতলার করিডরে। যে ঘর থেকে গুলি ছোঁড়া হয়েছে সে ঘরের দরজাটা বন্ধ। অস্ত্র বাগিয়ে ধরে কাঁধের ধাক্কায় দরজা খুলে ফেলল বেনন। যা আশা করেছিল তাই দেখল, ঘর খালি, নেই কেউ। বাতাসে ভাসছে পোড়া করডাইটের নীলচে ধোয়া আর কটু গন্ধ। জানালার সামনে পড়ে আছে গুলির একটা খালি খোসা।
চলো, বারটেন্ডারের সঙ্গে কথা বলে দেখি। ব্যাগলেকে নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো বেনন।
তেমন কোন তথ্য যোগাতে পারল না বারটেন্ডার, শুধু জানাল একদল চাইনিজ তাস খেলার জন্যে ঘরটা ভাড়া নিয়েছিল। রেলওয়ের মজুররা প্রায়ই বিনোদনের জন্যে এই সেলুনের ঘর ভাড়া নিয়ে থাকে।
আবার ডক্টর ওয়াং? বাইরে এসে নিজেকেই প্রশ্ন করল বেনন।
যদি তাই হয় তাহলে কাকে মারার জন্যে? জানতে চাইল। ব্যাগলে।
জানি না, বলল বেনন, হয়তো ভাউবয়েস বা হয়তো আর কেউ। আবার এমনও হতে পারে শুধুই ভয় দেখাতে চেয়েছে কাউকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্য ছিল না। চাইনিজরা এমনিতে শান্তিপ্রিয়। সেই জন্যেই কেন জানি না আমার মনে হচ্ছে এসবের পেছনে ওয়াঙের হাত আছে।
চলো অফিসে গিয়ে ওদের জানিয়ে আসি যে লোকটা ধরা পড়েনি।
ওরা নিজেরাই এতক্ষণে জেনে গেছে। কিছুক্ষণ চুপ করে ভাবল বেনন, তারপর বলল, আমরা এখান থেকেই আলাদা হয়ে যাব, ব্যাগলে। আমি যাব এন্ড অভ স্টীলে বিগ জিমি নর্টনের সঙ্গে দেখা করে পরিস্থিতি বুঝতে; তুমি টেইলহল্টেই থাকবে, চেষ্টা করবে ডক্টর ওয়াংকে খুঁজে বের করে স্পারটা কেড়ে নিতে।
তুমি একা মজা মেরে দেবার তাল করছ, বেনন, অনুযোগ করল ব্যাগলে।
উঁহু, স্রেফ সাবধানতা অবলম্বন করছি। চিন্তা করে দেখো, দুজনেই যদি আমরা এন্ড অভ স্টীলে যাই আর এই সুযোগে কেউ যদি ভাউবয়েসের ঢাউস পেটটা গুলি করে ফাঁসিয়ে দেয় তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের আর কাজ দেবে কেউ?
ওই লোকটার দেখভাল করতে মোটেই ভাল লাগবে না আমার।
কিন্তু চিন্তা করে দেখো, ফ্র্যাঙ্ক নোয়কের ধারেকাছে থাকলে কতকিছু শিখতে পারবে তুমি!
ওই ছেড়া ফাজলামো করলে ওর কান ছিঁড়ে নেব আমি, হুমকি দিল ব্যাগলে। পরমুহূর্তে উজ্জ্বল হয়ে উঠল চেহারা। আচ্ছা, শহরে থাকলে ছদ্মবেশ ছাড়া থাকতে পারব আমি?
নিশ্চিন্তে। আমার তো ধারণা ওই লোকটা তোমাকেই গুলি করেছিল তোমার ছদ্মবেশের কষ্ট দূর করতে…আমি তাহলে যাচ্ছি, ব্যাগলে, বড় রকমের কোন বিপদ দেখলেই তোমাকে ডেকে পাঠাব।
সাবধানে থেকো, বেনন।
বিদায় নিয়ে রেল স্টেশনে চলে এলো বেনন। প্ল্যাটফর্ম ধরে একশো ফুট দৌড়াতে হলো ওকে। আজকের শেষ ট্রেন এন্ড অভ স্টীলের উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে গেছে। হাঁপাতে হাঁপাতে ওটাতে গিয়ে উঠল ও। কোচের ভেতরে গাদাগাদি করে বসে আছে রেলওয়ের শ্রমিকরা। চাইনিজ আর আইরিশ। আইরিশরা রোদে কাজ করায় চামড়ার রং টুকটুকে লাল। উঁচু বুট আর লিপট্টি মারা প্যান্ট সবার পরনে; গায়ে রংজ্বলা ফ্লানেলের শার্ট। সর্বক্ষণ নেশা করে আছে লোকগুলো। ঢুলু ঢুলু চোখে ঝিমাচ্ছে। চাইনিজরা উদাস; ভাবনায় ডুবে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে।
বাইরে তাকাল বেননও। শহর ছাড়ার কয়েক মাইল পর থেকেই বদলে গেল প্রাকৃতিক দৃশ্য। সবুজের পরিমাণ কমতে লাগল, জমি হয়ে উঠল রুক্ষ আর পাথুরে। গভীর একটা গিরিখাদের ওপর দিয়ে ব্রিজ, সেই ব্রিজ ধরে এগিয়েছে ট্রাক উইটিগোর দিকে। ঘুরে ঘুরে উঠছে ট্রেন পাহাড়ের ওপর।
কিছুক্ষণ পর শুরু হলো ক্যানিয়নের রহস্যময়তা। অন্তহীন খাদগুলোর পাশ দিয়ে চলেছে এখন ওরা; কখনও বা ধবধবে সাদা দেয়ালের পাশ দিয়ে। সবগুলো ক্যানিয়ন এসে মিশেছে মস্ত বড় একটা ক্যানিয়নে। নিচের দিকে তাকালে তলা দেখা যায় না। বাতাস এখানে স্থির আর শীতল। পরিবেশটা ভূতুড়ে আর প্রাচীন। বিচিত্র আকৃতির পাথরের ছড়াছড়ি চারধারে। একেকটার একেক রং। কোনটা সাদা, কোনটা লাল আবার কোনটা কুচকুচে কালো। অজানা একটা অনুভূতির ছোঁয়ায় শিউরে উঠল বেনন। অস্বাভাবিক নয় যদি দুর্গম এই আদিমতায় ডায়নোসরের দল আজও বেঁচে থাকে।
টেইলহল্ট ছাড়ার দুই ঘণ্টা পর এন্ড অভ স্টীলে পৌঁছে গেল ফ্রেইট ট্রেন। আর এগোয়নি লাইনের কাজ।
এন্ড অভ স্টীলেই ক্যানিয়নটা সবচেয়ে চওড়া। ধুলো-বৃষ্টিতে মলিন তাঁবু, যন্ত্রপাতি রাখার কাঠের ঘর আর ছড়ানো ছিটানো সাজ সরঞ্জামে ভরে উঠেছে ক্যানিয়নের মেঝে। ওগুলোর চারধারে পিপড়ের মত গিজগিজ করছে অসংখ্য মজুর। সুশৃঙ্খল ভাবে যার যার কাজ করছে সবাই। একধারে পাহাড়ের মত উঁচু করে রাখা আছে অব্যবহৃত রেইল। ঝনঝন শব্দে স্লেজ হাতুড়ি পড়ছে অবিরত। রেইলগুলোকে লাইনে বসানোর উপযুক্ত করে তোলা হচ্ছে। এগিয়ে চলেছে রেলরোডের কাজ। একেকটা রেইল বসানো হচ্ছে আর পরফাইরির দিকে আটাশ ফুট করে এগিয়ে যাচ্ছে লাইন। ব্রিজের শ্রমিকরা কাজ করছে সামনে। আরও দূরে পিঠ কুঁজো সেই টিলার কাছে আছে টানেল শ্রমিকরা।
ট্রেন থামতেই হুড়মুড় করে নেমে গেল সবাই। টেলিগ্রাফ বসানো হয়েছে একটা ছোট ঘরে। অনবরত টক-টক টিক-টিক আওয়াজ করছে যন্ত্রটা। সেদিকে এগোল বেনন। তারপর দিক বদলাল। বাড়তি একটা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে সুদৃশ্য একটা বগি। ওটাই অফিশিয়ালদের কার্যালয়। ওখানেই থাকবে বিগ জিমি নর্টন।
লোকটা থাকবে জানত বেনন, কিন্তু সে যে এই আকৃতির লোক হবে তা বেনন কল্পনাও করতে পারেনি। বিগ জিমি নর্টন ল্যাটিগোর হাতুড়ি মাথা ডবসনকেও লম্বা-চওড়ায় হার মানিয়ে দিয়েছে। বেনন নিজেও ছয় ফুট লম্বা, কিন্তু জ্বলজ্যান্ত এই পাহাড়টার মাথা ওর চেয়েও দেড় ফুট ওপরে। বুকের ছাতি আটচল্লিশ ইঞ্চির কম হবে না। বাইসেপ দুটো বেননের উরুর চেয়েও মোটা, অথচ দেহে বিন্দুমাত্র চর্বি নেই। সারা শরীরে পেশি কিলবিল করছে। খোঁচা খোঁচা দাড়ি ভরা হাঁড়ির মত চেহারায় বদ রাগের ছাপ। রেলরোড নির্মাণ কর্মকর্তারা আইরিশ হবে এই চিরাচরিত নিয়মটিকে কাঁচকলা দেখিয়ে মেজাজের গুণেই বোধহয় চাকরিটা পেয়ে গেছে স্কটিশ লোকটা।
কী ব্যাপার, ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হচ্ছেটা কী, সবচেয়ে বদখত চেহারার বুলডগকে হার মানিয়ে দিয়ে ভ্রূ কুঁচকে বেননকে দেখল লোকটা। মনে করেছে বেনন নতুন শ্রমিকদের কেউ হবে।
একগাদা অফিশিয়াল কাগজ সামনে নিয়ে একটা ডেস্কের পেছনে বসে আছে সে, ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে টেবিলটা আছাড় মেরে ভেঙে ফেলে এখনই তেড়ে আসবে টুটি চেপে ধরতে।
আমি রক বেনন, তাড়াতাড়ি করে বলল রক। আজই আমাকে গোয়েন্দার চাকরি দিয়েছে মার্লোন ব্র্যান্ডন। আপাতত তোমাদের সমস্যা সম্বন্ধে একটা পরিষ্কার ধারণা দাও আমাকে। কোথা থেকে কাজ শুরু করলে সুবিধা হয় তোমাদের?
সমস্যার কি শেষ আছে? খেকিয়ে উঠল দানব। বেনামী হুমকি, মালের ভাণ্ডারে লুটপাট, শ্রমিকদের বেতন ডাকাতি, দূর থেকে লুকিয়ে গুলি করা কোন সমস্যাটা নেই! কেউ একজন চাইছে না স্পারটা শেষ হোক। তবে আপাতত সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে পাগলা হ্যাটার নামের এক র্যাঞ্চার। আমাদের ক্রুরা ওর জমি পর্যন্ত প্রায় পৌঁছে গেছে; আর যাতে না এগোতে পারে সেজন্যে রাইফেলে তেল দিয়ে নতুন বুলেট ভরে রেখেছে লোকটা। বুঝিয়ে শুনিয়ে তাকে মানিয়ে নেয়া তোমার প্রথম কাজ হতে পারে, সংশয়ের দৃষ্টিতে বেননকে দেখল নর্টন; অবশ্য তোমার যদি ওই লোকের মুখোমুখি হবার সাহস থাকে। আমি যখন গিয়েছিলাম ভাগ্যিস হ্যাটার ছিল না। দেখা হলো মেয়েটার সঙ্গে। দারুণ সুন্দরী মেয়ে! কিন্তু হাতে চুমু দেব বলে এগোতেই চাবুক নিয়ে ধাওয়া করল! কালো হয়ে গেল স্কটিশের মুখটা। বললে বিশ্বাস করবে না পিঠে দুই দুইবার চাবুক মেরেছে মেয়েটা!
বাড়তি ঘোড়া আছে? জানতে চাইল বেনন। হ্যাটারের র্যাঞ্চে যাব আমি, চেষ্টা করে দেখব লোকটার মত পরিবর্তন করতে পারি কিনা।
যাচ্ছ যাও, পরে দোষ দিতে পারবে না। করালে গিয়ে আমার নাম করে চাইলেই দিয়ে দেবে ওরা আমাদের সেরা ঘোড়াটা।
হাত বাড়িয়ে দিল বেনন। আন্তরিকতার সঙ্গে করমর্দন করল দৈত্য। বেননের হাতের হাড় প্রায় চুরচুর করে দিয়ে বলল, দোয়া করি যাতে আস্ত ফিরতে পারো।
হাসল বেনন, বেরিয়ে যাবার জন্যে ঘুরেছে এমন সময় বগিতে এসে ঢুকল সবুজ ভাইজার পরা টেলিগ্রাফার। কড়া চোখে বেননকে একবার দেখে নিয়ে নর্টনের হাতে গুঁজে দিল হলুদ একটুকরো কাগজ।
আপনার টেলিগ্রাম, চীফ; এইমাত্র এলো।
নিশ্চই কাজ শেষ করার জন্যে তাড়া দিয়েছে। কাগজে মনোনিবেশ করল বিগ জিমি। ধীরে ধীরে কুঁচকে জোড়া লেগে গেল শুয়োপোকার মত মোটা ভ্রূ। টকটকে লাল হয়ে উঠল হাঁড়ির মত মুখটা। হঠাৎ উঠে দাঁড়াল সে, প্রকাণ্ড হাতের থাবায় আঁকড়ে ধরল বেননের কাঁধ।
কী ব্যাপার? জানতে চাইল বিস্মিত বেনন।
জবাবে দুকাঁধ ধরে এক ঝাঁকিতে ওকে শূন্যে তুলে ফেলল দৈত্য। রাগের চোটে ঘনঘন ঝাঁকি দিল। দুলে উঠল ট্রেনের বগি। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে দেখল বেনন। অসম্ভব একটা কাজ। ছটফট করাই সার হলো। হাড়ের ওপর চেপে বসেছে দানবের লোহার আঁকশির মত দু’হাত। এখনই কাঁধের হাড় মুড়মুড় করে ভেঙে যাবে বলে মনে হলো ওর। তীব্র ব্যথা অবশ করে তুলল ওকে।
আরও কয়েকবার ঝাঁকি দিয়ে গর্জন ছাড়ল নর্টন। মনে করেছ জিমি নর্টনকে ঠকিয়ে পার পাওয়া যাবে? না! হাড় গুড়ো করে ফেলব আমি তোমার!
কেন…
ওর নাকের সামনে টেলিগ্রামটা ধরল নর্টন। পা দুটো মাটি থেকে আধফুট উঁচুতে, বেড়াল ছানার মত ঝুলছে বেনন। টেলিগ্রাম পড়ানোর জন্যে কাঁধ ছেড়ে দিয়ে ওর ঘাড় ধরে ওপরে তুলেছে। দৈত্যটা।
কাগজে চোখ বোলাল অপমানিত বেনন। ওতে লেখা :
রক বেনন নামের এক লোকের ব্যাপারে চোখ খোলা রাখো। আউট-ল ছিল লোকটা। কোন
একটা বদ মতলবে এদিকে ঘুরঘুর করছে, নিজেকে পরিচয় দিচ্ছে রেলরোডের ট্রাবল শুটার বলে।
মিথ্যুকটাকে
ধরতে পারলে আটক করে রাখবে
বা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।
মার্লোন ব্র্যান্ডন
মুখ খুলে লাভ হবে না বুঝে গেল বেনন জিমি নর্টনের চেহারা দেখে। ওর কথায় প্রভাবিত হওয়ার বান্দা নয় লোকটা। টেলিগ্রামটা বিশ্বাস তো করেইছে, ভীষণ রেগে গেছে ঠকে, গিয়েছিল চিন্তা করে।
মুখ বুজে চুপ করে থাকল বেনন। ঝড়ের গতিতে চিন্তা চলছে মাথায়। টেলিগ্রামটা ভুয়া তাতে কোন সন্দেহ নেই। ভুল ভেঙে গেলে ছেড়ে দেবে ওকে নর্টন। কিন্তু তার আগেই ছাড়া পেতে হবে। যেই ওকে বন্দী করাক না কেন নিশ্চয়ই কোন উদ্দেশ্য আছে তার, চাইছে না ও মুক্ত ঘুরে বেড়াক। তদন্ত করুক। জানতে হবে কে সেই লোক।
<