ঘন ঝোপে ভরা ক্যানিয়ন, খাড়া আকাশছোঁয়া দেয়াল, খালি পায়ে হয়তো এই দেয়াল বেয়ে ওঠা যাবে, কিন্তু ঘোড়ার পিঠে প্রশ্নই ওঠে না। ক্যানিয়ন মুখের মাইলখানেক ভেতরে দুপাশের দেয়াল পরস্প রের সঙ্গে মিশে গেছে, কানা গলিতে পরিণত হয়েছে জায়গাটা। ফাঁদে পড়ে গেছে আবার কলিন, কঠিন ফাঁদ। গত কয়েক দিনে অন্তত তিনবার ওকে কোণঠাসা করেছে ওয়ারেন রাইডাররা, কিন্তু প্রতিবারই ফাঁকি দিয়ে কেটে পড়েছে। কিন্তু এবার মনে হচ্ছে নিস্তার মিলবে না!

এদিকে আঁধার ঘনিয়ে আসছে দ্রুত। বেড়া তুলে বন্ধ করে দিয়েছে ওর। ক্যানিয়ন-মুখ। এখন আগুন জ্বালানোর জন্যে কাঠ জোগাড় করে আনছে, সারারাত পাহারা দেবে। সকালে কলিন যদি স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ না করে, ক্যানিয়নের খরায় শুকিয়ে খড় হয়ে যাওয়া ঘাসে আগুন লাগিয়ে দেবে ব্যাটারা, জ্যান্ত পুড়িয়ে মারবে বিনা দ্বিধায়!

ক্যানিয়ন-মুখ থেকে খানিকটা দূরে শত্রুর দৃষ্টি আড়ালে অপেক্ষ। করছে কলিন। ঘোড়র সামনের বাম পা পরীক্ষা করলে ও, খুরের ওপর থেকে হাঁটু পর্যন্ত ফুলে ঢোল হয়ে কুৎসিত দেখাচ্ছে, পেশীতে টান পড়েছে, বোধ হয়। ঘোড়াটা খুড়িয়ে চলছিলো বলে এখানে ঢুকেছিলো ও, প্যসির চোখকে ফাঁকি দেবার আশায়, কিন্তু আশা পুরণ হয়নি।

বাইরে থাকলেও এ অবস্থায় খুব একটা লাভ হতো না, ভাবলে। কলিন, ধাওয়া খেয়ে বেড়াতে হতো, ধরা পড়ার আশঙ্কা থাকতো ষোলো আনা।

হ্যারলডের দেয়া এই ঘোড়াটা চমৎকার, সহিষ্ণু; পরপর পাঁচ দিন-নাকি ছয়?–শত্রুর হাত থেকে বাঁচিয়ে রেখেছে ওকে। এক টানা পরিশ্রমে কাহিল হয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক, তবে ভাগ্য ভালো বলতে হবে পা-টা ভেঙে যায়নি!

ধোঁয়া দিয়ে বের করবে, সে সুযোগ দেব না শয়তানগুলোকে, আপনমনে বললো কলিন, তার আগেই একটা উপায় বের করে ফেলবে।

হাঁটতে হাঁটতে ক্যানিয়ন-মুখের দিকে এগোলো কলিন ফোর্বস, সতর্ক, যেন শত্রুর চোখে পড়তে না হয়। শেষ বিশ গজ দূরত্ব গির গিটির মতো বুকে হেঁটে এগোলো ও। মাটির সঙ্গে শরীর মিশিয়ে বাইরে তাকালো। চার জায়গায় কাঠ জড়ো করেছে ওয়ারেন রাইডাররা। লাকড়ির স্কুপের সামান্য দুরে ক্যামপ। ছ’ থেকে আটজন লোককে দেখা যাচ্ছে। রাতের খাবার তৈরিতে ব্যস্ত দুজন। দিনের আলো নেই বললেই চলে, তবু কয়েকজনকে চিনতে পারলো কলিন। ওয়ারেনের সঙ্গে আলাপে মগ্ন ডেনিস স্মিথ আর জেফরি আরচার। দাতে দাঁত চাপলো কলিন। গত কদিন ধরে ধাওয়া করছে ওকে প্যসিটা। ওর ধারণা ছিলো সবাই ওয়ারেনের লোক অথচ এখন দেখা যাচ্ছে আরচারসহ আরো কয়েকজন শহরবাসী যোগ দিয়েছে। এক অর্থে অবশ্য ভালোই হয়েছে, কারণ শেষ পর্যন্ত ওয়ারেনের রাইডাররা খটখটে শুকনো ঘাসে ভরা ক্যানিয়নে কায়দা মতো পাওয়ার পর সকালের জন্যে বসে থাকতো না। শেরিফ উপস্থিত থাকায় ওকে বাঁচিয়ে রাখতে বাধ্য হবে ওরা।

ভালোই হলো, ভাবলো কলিন, কিছু সময় পাওয়া গেল হাতে। পালানোর জন্যে সময়টা কিভাবে কাজে লাগানো যায়?

ঊধ্ব শ্বাসে ঘোড়া ছুটিয়ে ক্যানিয়ন থেকে বেরিয়ে যাবে, সেটা সম্ভব নয়–দৌড়াতে পারবে না ঘোড়াটা। অন্ধকার ঘনিয়ে আসার পর আগুনের পাশে যারা সতর্ক পাহারায় থাকবে তাদের চোখে ধুলো দিয়ে পালানোর সুযোগও কম। দেয়াল টপকে ক্যানিয়নের ওপাশে যাওয়ার চেষ্টা করা যায়, কিন্তু ঘোড়া ছাড়া পাহাড়ী রুক্ষ এলাকায় খুব বেশি সময় টিকে থাকতে পারবে না ও। খাবারের ভাঁড়ার শূন্য, তামাক নেই, গুলিও প্রায় শেষের পথে।

খোঁচা খোঁচা দাড়িভর্তি গাল চুলকালে কলিন। মরণ অথবা আত্মসমর্পণ–এছাড়া পথ নেই মনে হচ্ছে। চিৎকার করে শেরিফের কাছে আত্মসমর্পণের কথা বলে বেরিয়ে পড়বে নাকি? দৃশ্যটা কল্পনা করলো ও : সোজা হয়ে মাথার ওপর হাত তুলে এগিয়ে যাচ্ছে সামনে, পরাস্ত। কিছুই হয়তো ঘটবে না। গ্রেপ্তার করে ওকে জেলে ভরে রাখা হবে সম্ভবত কিংবা…অদৃশ্য কোনো অবস্থান থেকে ছুটে আসা একটা বুলেট ওর প্রাণ কেড়ে নিতে পারে। হত্যাকারী পরে বলে দেবে ফোর্বসের আত্মসমর্পণের প্রস্তাব সে শুনতে পায়নি, ব্যস। ব্যাপারটা স্বভাবতই কেউ কেউ মেনে নিতে চাইবে না, সমালোচনার ঝড় উঠবে হয়তো, কিন্তু তাতে কলিন আবার প্রাণ ফিরে পাবে না!

জাহান্নামে যাক আত্মসমর্পণ!

আবার পেছনে চলে এলো কলিন, একটু ডানে সরলো, তারপর ফের ক্রল করে এগোলো সামনে। গোধূলি-ধূসর প্রকৃতি। ক্রমশ গাঢ় থেকে গাঢ় হচ্ছে ছায়ার, আর দশ পনেয়ে মিনিট পরেই নিকষ অন্ধকার নেমে আসবে। ঠিক সামনেই এক স্তূপ লাকড়ি দেখা যাচ্ছে। লাকড়ির বানডিল হাতে এগিয়ে এলে এক লোক, স্থূপটার ওপর ওগুলো ফেলে আবার ফিরে গেল। চট করে অন্যান্য স্থূপ আর ক্যামপের দিকে তাকালে কলিন। এদিকে কারো দৃষ্টি নেই। ক্রল করে আরো সামনে এগোলো ও, বেড় গলে পৌঁছে গেল লাকড়িস্তুপের কাছে, প্রথমে হাঁটু গেড়ে বসলো, সোজা হয়ে দাড়ালো তারপর, সামনে ঝুঁকে লাকড়ি সাজানোর ভান করলো, কেউ ওকে লক্ষ্য করেছে বলে মনে হলো না।

লাকড়ি হাতে আরেকজন এগিয়ে এলো এবার। চট করে পেছন ফিয়ে দাড়ালো কলিন। লোকটা কাছাকাছি আসামাত্র পিস্তল বের করে ঘুরে দাড়ালো। প্রতিপক্ষের চোখেমুখে বিস্ময়ের ছাপ পরিষ্কার দেখতে পেলো ও।

খুব আস্তে, বললো কলিন, লাকড়িগুলো ফেলো, তারপর এক সঙ্গে আবার কাঠ আনতে যাবো আমরা।

লোকটার হাত থেকে খসে পড়লো লাকড়ি। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজালো সে। চোয়াল ওঠানামা করলে তার, কিন্তু কোনো কথা বের হলো না।

কই, চলো, লোকটার দিকে এগোলে কলিন, নাকি আমার কথা কানে যায়নি? আরো লাকড়ি আনতে যাচ্ছি আমরা।

পিস্তলটা একটু নিচু করে শরীরের সঙ্গে চেপে রাখলো ও, যাতে হঠাৎ করে কেউ বুঝতে না পারে। লাকড়ির অন্য তিনটা স্কুপের আশপাশে লোকজনের চলাচল টের পাওয়া যাচ্ছে, ক্যামপেও ব্যস্ত তার আভাস। ক্যামপের এপাশে বেঁধে রাখা হয়েছে ঘোড়াগুলো।

আমার সঙ্গে এগোও, বললো কলিন, স্বাভাবিক থাকবে, যদি বাঁচার ইচ্ছে থাকে!

লোকটা কলিনের অপরিচিত, ওয়ারেনের রাইডার হতে পারে, কিংবা শহরবাসী কেউ। মাঝবয়সী লোক, ছোটখাট, দুর্বল স্বাস্থ্য, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি।

কোণাকুণিভাবে ঘোড়াগুলোর দিকে এগোবে আমরা, আবার বললো কলিন।

এভাবে পার পাবে না, মিস্টার!

চেষ্টা করা যাক না!

ঘোড়াগুলোর উদ্দেশে এগোলে ওরা। গন্তব্যে পৌঁছে থামলো। সবচেয়ে কাছের ঘোড়াটাকে পরখ করলো কলিন, জেব্রা ডান মাসট্যাং, পিঠে জিন বা লাগাম নেই। একটা দড়ি দিয়ে গাছের সঙ্গে বাঁধা। কলিনের কাছে ছুরি আছে। সঙ্গের লোকটার দিকে তাকালো ও।

তুমি, বললো, বরং আবার লাকড়ি আনতে চলে যাও, কিন্তু সাবধান, কোনো রকম চালাকী করতে যেয়ো না। তুমি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছ জানতে পারলে ওয়ারেন তোমাকে আস্ত রাখবে না।

দেখো, কিছু করবো না আমি, বললো লোকটা, কিন্তু তুমি কিছুতেই পালাতে পারবে না, কোনো আশা নেই, ফোর্বস, আপাতত এখান থেকে যদি যেতে পারোও আগামী কাল রাতের মধ্যেই ঠিক আবার পাকড়াও করা হবে তোমাকে।

যাও তো, লাকড়ি আনো গে! ওর কথায় আমল না দিয়ে বললো কলিন।

ঘনায়মান অন্ধকারে হারিয়ে গেল লোকটা। পিস্তলটা হোলস টারে রেখে বেলট থেকে ছুরি বের করলো কলিন।

অ্যাই। হলো কি! আগুন জ্বালছো না কেন? ওয়ায়েনের চিৎকার শোনা গেল। সবাই চোখ কান খোলা রাখবে! আমার ভুল না হলে ফোর্বস ব্যাটা পালানোর চেষ্টা চালাবেই!

শেরিফও কথা বললো এবার। ফোর্বস। চিৎকার করে উঠলো সে, তোমার সঙ্গে আমার কথা আছে! শুনতে পাচ্ছে, ফোর্বস?

পরিষ্কার, বিড়বিড় করে বললো কলিন। মাসট্যাংয়ের আরো কাছে এগিয়ে এলো ও, ছুরির এক পোচে কেটে ফেললো দড়ির বাধন। পরমুহূর্তে ঘোড়ার পিঠে উঠে বসলো, দু’হাটুতে ওটার পেট চেপে সামনে ঝুঁকে পড়লো, তারপর তুফান তুলে ছুটলো সামনে। চেঁচামেচি শুরু হয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গে, তারপর বিক্ষিপ্ত গোলাগুলি। চিৎকার করে নির্দেশ করলো ওয়ারেন, শেরিফের ভারি গলার আওয়াজ ভেসে এলো। বিদ্রুপের হাসি সিলো কলিন, বাড়িয়ে দিলো ছোটার গতি।

আকাশজোড়া মেঘ, একে একে অদৃশ্য হয়েছে সব তারা, চাদের আলো এখন ফ্যাকাসে। জোর বাতাস বইছে। বৃষ্টির পূর্বাভাস। ঘণ্টাখানেক যেতে না যেতে বিজলি চমকান শুরু হলো, মেঘের গুরুগুরু গর্জন, তারপর হঠাৎ শুরু হলো ঝমঝম বৃষ্টি। এক মিনিটেই ভিজে চুপসে গেল কুলিন। তবু মনে মনে খুশি হয়ে উঠলো ও। এই বৃষ্টিটা কাজে আসবে, ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে ঘোড়ার খুরের ছাপ। এক সপ্তাহ আগে যেখানে ছিলো ঠিক সেই অবস্থায় ফিরে যাবে প্যসি। আরচাররা বুঝতেই পারবে না বেসিনের ঠিক কোন্ জায়গায় খুজতে হবে ওকে। অবশ্য ইতিমধ্যে ওদের জেনে যাবার কথা, ওর সঙ্গে খাবার নেই, সুতরাং এলাকার সব কয়টা র‍্যাঞ্চের ওপর কড়া নজর রাখা হবে, যাতে রসদের খোঁজে গেলেই ওকে ধরে ফেলা যায়। কিন্তু ফোর্বস র‍্যাঞ্চে ওকে খোঁজার কথা ভাববে কি ওরা?

এই মুহূর্তে ওখানেই যাচ্ছে কলিন। অনেক আগেই র‍্যাঞ্চে যাবার কথা ছিলো ওর। দুদিন আগে ওখানে হারলডের সঙ্গে দেখা করবে বলেছিলো। কোনো অঘটন না ঘটলে হ্যারলডের সঙ্গে ফোর্বস র‍্যাঞ্চের অন্যান্য কাউহ্যানডও থাকবে ওখানে।

ভোরের দিকে র‍্যাঞ্চে পৌঁছুলো কলিন ফোর্বস, এখনো বৃষ্টি থামেনি। আস্তাবলের একপাশে ঘোড়া থামিয়ে র‍্যাঞ্চ হাউসের দিকে তাকালো ও। শীতে জমে যাবার দশা। র‍্যাঞ্চে পৌছেও স্বস্তি পাচ্ছে না। বৃষ্টির বরফ শীতল পানি যেন মাংস ভেদ করে হাড় স্পর্শ করছে। ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে পড়লো কলিন, একটা চাপড় দিলে ওটার পাছায়, ভোরের আবছা অন্ধকারে হারিয়ে গেল ঘোড়াটা। পছন্দসই আশ্রয় না মেলা পর্যন্ত বৃষ্টির মধ্যে একটানা ছুটতে থাকবে, পরে, বৃষ্টি থামলে ফিরে যাবে আপন ডেরায়। প্যসি ওটার খোঁজ পেলেও ব্যাকট্র্যাকিংয়ের উপায় থাকবে না ওদের।

দু’হাত ডলতে ডলতে বার্নের দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাড়ালে। কলিন, শরীরের আড়ষ্টতা কাটানোর চেষ্টা করলো। হ্যারলড ফিরেছে কিনা কে জানে! আদালতের পক্ষ থেকে ডাক পিটকে কেয়ারটেকার নিয়োগ করা হয়েছে এখানে, ওর আগমন সে সুনজরে নাও দেখতে পারে।

দু’হাতে আবার অনুভূতি ফিরে পেলো কলিন, হোলসটার থেকে পিস্তল বের করে পরখ করলো, আলগোছে ঢুকিয়ে রাখলো। আবার। তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো নীরব র্যাঞ্চ হাউসের দিকে। কিছু বোঝা যাচ্ছে না। উঠোন ধরে হাঁটা ধরলো ও, ঠিক এই সময় বার্নের দরজা থেকে হুকুমজারি করলো একটা কণ্ঠস্বর।

মাথার ওপর হাত তোলো, মিসটার।

আদেশ পালন করে বার্নের দরজার দিকে ঘুরে দাড়ালো কলিন। রাইফেল বাগিয়ে এগিয়ে এলো একটা লোক, হঠাৎ থমকে দাড়ালো সে।

কলিন! মনে হচ্ছিলো তুমিই, কিন্তু ঠিক ঠাওর করা যাচ্ছিলো না।

দ্রুত এসে কলিনের সঙ্গে হাত মেলালো লোকটা, ছিপছিপে গড়ন তার, থ্যাবড়া নাকটা চোখে পড়ে সবার আগে। আমি জেলারম্যান, বললো সে। টেরি জেলারম্যান। আমার কথা হয় তো এতদিন পর তোমার মনে নেই।

কি বলো, মনে নেই মানে! বললো কলিন। কি খবর, টেরি। ইয়ে, ঘরের ভেতর আগুন আছে? ঠাণ্ডায় যে জমে গেলাম।

জ্বালিয়ে নিতে কতক্ষণ! বললো জেলারম্যান। এসে। দুজন একসঙ্গে র‍্যাঞ্চ হাউসের দিকে এগোলে ওরা। দরজায় টোকা দিলো জেলারম্যান, হ্যারলডকে ডাকলো জোর গলায়।

দরজা খুলে গেল, ভেতরে বাতি জ্বাললো কে যেন, ওকে এক রকম ঠেলে ভেতরে ঢোকালে জেলারম্যান। হ্যারলড, আরথার শেরিডান আর হনডো স্টার্নকে দেখতে পেলো কলিন। চুলোয় আগুন জ্বেলে কফি বানানোর জন্যে পানি চাপানো হলো। শুকনো কাপড় বের করে দেয়া হলো ওকে, আর গা মোছার জন্যে তোয়ালে। বার্নে নিজের অবস্থানে ফিরে গেল টেরি জেলারম্যান। জানালাগুলোর পর্দা ঠিক মতো টানানো আছে কিনা দেখে নিলো হ্যারলড। গা মুছে পোশক পাল্টে নিলো কলিন, ওকে ঘিরে দাঁড়ালো এবার সবাই।

আজই এসেছি আমরা, বললো হ্যারলড। পথে: ওয়াগোনারে থেমেছিলাম, একটা খবর শুনলাম, বিশ্বাস করবে কিনা বুঝছি না। এখানে তোমার জন্যে চব্বিশ ঘণ্টা অপেক্ষা করবো ঠিক করে রেখেছিলাম, তারপর কি করতাম জানি না।

কফিটা শেষ হোক, তারপর আলাপ করা যাবে, বললে কলিন। কতদিন যে কফি খাই না। পাঁচ দিনের কম না।

তাহলে বেঁচে আছো কিভাবে? কায়দা করে বললে হনডো।

ঠেকা হলো আসল কথা, বললে কলিন। পারলারে পেটমোটা চুলোর কাছে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে পড়লে কলিন, পরিচিত কামরার চারপাশে নজর বোলালো। বাবার শোবার ঘরের দিকে চোখ গেল আপনাআপনি, মনে হলো এই বুঝি দরজা ঠেলে বেরিয়ে আসবে বাবা, ভারি গলায় জিজ্ঞেস করবে সাত সকালে এত হৈচৈ কিসের?

ডার্ক পিটকে ওখানে বেঁধে রেখেছি, বললো হ্যারলড, আমাদের এখানে দেখে বেজায় অসন্তুষ্ট সে। আমাদের নাকি এখানে আসার কোনো অধিকার নেই! ও হ্যাঁ, ওয়াগোনারে একটা কথা সবাই বলাবলি করছে, আমার অবশ্য বিশ্বাস হয়নি।

কি?

তুমি নাকি মিসেস ওয়ারেনকে অপহরণ করার পর মেরে লাশ গুম করে ফেলেছে! হাহ! মাত্র দুদিন আগে স্প্রীংগারভিলে, নিজের চোখে দেখেছি ওকে, জ্যান্তই তো মনে হয়েছে।

দুদিন আগে? পুনরাবৃত্তি করলো কলিন, ঠিক তো, হ্যারলড?

বিলকুল।

চেয়ারে গা এলিয়ে দিলো কলিন, কুঁচকে উঠলো ওর ভুরু জোড়া। স্প্রীংগারভিলে কি করছে লিনডা? সপ্তাহখানেক আগে ওকে স্টেজে তুলে দিলো, এতদিনে ক্যানসাস সিটিতে পৌঁছে যাবার কথা! মাথা নাড়লো ও, হতবুদ্ধি।

যা ইচ্ছে করুক গে সে, ওর কি? লিনডা যদি ক্যানসাস সিটির বদলে স্প্রীংগারভিলে থাকবে স্থির করে থাকে, ওর কি করার আছে?

যাদের কবর পাওয়া যায়নি, ওই তিনজনের কোনো খবর মিললো? সোজা হয়ে বসে জানতে চাইলে কলিন।

কাপে আবার কফি ঢেলে ওকে দিলল হ্যারলড লেভিট।

নাহ। কোনো চিহ্ন নেই। তবে একটা দারুণ খবর জোগাড় করেছি আমরা।

কি?

ওয়ারেন রাইডাররা যখন আমাদের গরু বিক্রি করছে, অ্যারন হেলার তখন প্রীংগারভিলে ছিলো।

উত্তপ্ত কফিতে জিভ পুড়ে যাবার দশা হলো কলিনের।

বলো কি?

হ্যাঁ। ওখানকার জাজ, ফসেট, আমার পুরোনো বন্ধু। অনেক দিন হলো প্রীংগারভিলে বসবাস করছে, এখানকার অনেককেই চেনে, ওর কাছে জানতে চেয়েছিলাম এখান থেকে মাস দুয়েকের মধ্যে প্রীংগারভিলে কে কে গিয়েছিলো, কয়েকজনের মধ্যে যারন হেলারের নামও বলেছে সে। হোটেলেও খোঁজ নিয়েছি, ক্লাইভ কাসলার যেদিন আমাদের গরু বিক্রির টাকা নেয়, সেদিনই হোটেলে ওঠে হেলার, বলা যায় না, দুটোর মধ্যে কোনো সম্পর্ক নাও থাকতে পারে তবে

পিরিচে কফি ঢেলে ফু দিয়ে জুরিয়ে নিয়ে চুমুক দিলো কলিন। হেলার, ভাবলো ও, মহা ধুরন্ধর লোক।

চুল্লীর আগুনে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে কামরা। হেলারকে ঘিরে চিন্তার ধারা একীভূত করার চেষ্টা করলে কলিন। কিন্তু বারবার মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে। ক্লান্ত, অবসন্ন ও। চোখ বুজে ক্লান্তি দূর করতে চাইলো। জানতেও পারলো না হ্যারলড কখন ওর গায়ে চাদর টেনে দিয়েছে।

<

Super User